পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(৫)

মদ—যাহা কিছু প্রীতিপ্রদ, তৎসমুয়েই উপেক্ষা দেখাইতে পারিতেন, রাজাধিরাজের নানারত্নসমাকীর্ণ দেববাঞ্ছনীয় সিংহাসনেও পদাঘাত করিতে পারিতেন, কিন্তু মাতাপিতাকে দুঃখাভিভূত করিতে পারিতেন না। মাতার নয়নজলের সমক্ষে তিনি সমস্তই তুচ্ছ জ্ঞান করিতেন। একবার তিনি আপনার ও পোষ্যবর্গের জীবনরক্ষার অদ্বিতীয় অবলম্বস্বরূপ চাকরি পরিত্যাগে উদ্যত হইয়াছিলেন, তথাপি মাতাকে দুঃখসাগরে নিক্ষেপ করিতে সম্মত হয়েন নাই। বহুব্যয়ে তিনি মাতাপিতার উৎকৃষ্ট চিত্র প্রস্তুত করাইয়াছিলেন, তাঁহাদের দেহাত্যয় ঘটিলে অনেক সময়ে সেই প্রতিকৃতির সম্মুখে বসিয়া অশ্রুপাত করিতেন। পরমভক্ত পুরুষ সিংহ, এইরূপে সেই পরম গুরু জনক, সেই স্বর্গাদপিগরীয়সী জননীর অনুপম স্নেহ ও মহীয়সী প্রীতির ধ্যানে নিবিষ্ট থাকিতেন, ' এবং এইরূপ পবিত্র শোকাতে তাঁহাদের পরলোকগত আত্মার * সন্তর্পণ করিতেন। যাহারা এখন শিক্ষাভিমানে আস্ফালন করিয়া বেড়াইতেছেন, মহাপুরুষের মাতাপিতার প্রতি এইরূপ ভক্তি তাঁহাদের উপেক্ষার বিষয় নহে। বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রত্যেক বিষয়ে মাতা পিতার প্রতি যেরূপ ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করিতেন, এবং ' তাঁহাদের মতাবলম্বী হইয়া চলিতেন, সেইরূপ সামাজিক প্রথার সংস্কারে সূক্ষ্ম সূক্ষ্মরূপে শাস্ত্রীয় বিধির বিচারে প্রবৃত্ত হইতেন। সমাজহিতৈষী সংস্কারকগণ যখন অভিনব সহবাসসম্মতির বিধানে আহলাদে উৎফুল্ল হইয়াছিলেন, তখন বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাদের পক্ষসমর্থন করেন নাই। এ সকল বিষয়ে তিনি শাস্ত্রের অর্থ যেরূপ বুঝিতেন, তদনুসারেই চলিতেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় দীন দুঃখী ও অনাথদিগের অদ্বিতীয় আশ্রয়শুল ছিলেন। তিনি দয়ার সাগর; দান তাহার চিরন্তন ধর্ম্ম ও চির