পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১৯)

নামে তোমার দুরবস্থার বিষয় লিখিয়া দিলাম। পত্রখানি ডাকঘরে দিয়া আইস।' আমি তদনুসারে উক্ত পূত্র ডাকঘরে দিয়াছি। এখন আমার অদৃষ্ট।” কর্মচারী বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হইয়া, তাহাকে এই সকল বিষয় জানাইলেন। শুনিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় অবিরলধারায় অশ্রুপাত করিতে করিতে ঐ কর্মচারী মহাশয়ের হস্তে মাদ্রাজবাসীর বাড়ী ভাড়ার দেনা ৩০ টাকা খোরাকী ১৯ টাকা এবং তাহাদের জন্য নয় খানি কাপড় দিয়া বলিলেন, “যদি তাহারা বাড়ী যায়, তাহা হইলে কত হইলে চলিতে পারে, জানি আসিবে। আর এখানে থাকিলে আমি প্রতি মাসে ১৫ টাকা দিব।” কৰ্মচাৰী যথাস্থানে উপনীত হইয়া, উক্ত মাদ্রাজবাসীকে টাকা ও কাপড় দিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কথা জানাইলেন। দয়ার সাগর বিদ্যাসাগরের অসীম দয়ায় দুঃখী মাদ্রাজবাসী স্ত্রীপত্রের সহিত রোদন করিতে লাগিলেন। অনন্তর তিনি বলিলেন, “এক শত টাকা হইলে আমরা সকলে স্বদেশে যাইতে পারি।” ইহা শুনিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় কর্মচারীর হস্তে উক্ত টাকা দেন। কমচারীও তাহাদিগকে ষ্টীমারে রাখিয়া আইসেন।

 বিদ্যাসাগর এইরূপ দয়ার সাগর ছিলেন। তাঁহার অপার করুণ এক সময়ে এইরূপেই দীন হীনদিগের দুঃখসন্তপ্ত হৃদয় শান্তিসলিলে শীতল করিয়াছিল। যাহাদের কাতরতায় কেহই কাতরভাব প্রকাশ করে নাই; যাহাদের কষ্টে কাহারও হৃদয়ে সমবেদনার আবির্ভাব দেখা যায় নাই, যাহাদের উদ্ধারে কাহারও হস্ত প্রসারিত হয় নাই; তিনি এইরূপেই তাহাদিগকে অনন্ত যাতনা হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন। তাহার অর্থ এইরূপে কেবল দরিদ্রপালনের জন্যই ব্যয়িত হইত। এই কার্যে তাহার আড়ম্বর ছিল না—সংবাদপত্রের দিগন্ত ব্যাপী প্রশংসাধ্বনির প্রত্যাশায় বা রাজকীয় গেজেটে ধন্যবাদ