পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(২০)

প্রাপ্তির কামনায়, তিনি এই কার্য্যর অনুষ্ঠান করিতেন না। তাহার কার্য্য নীরবে সম্পন্ন হই। ধনী পূর্ব্বসঞ্চিত ধনরাশির মধ্যে অবস্থিতি করিয়া অর্থ দান করিতে পারেন, কিন্তু তাহার দান, এই দানের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে না। যিনি বিলাসসুখ পরিত্যাগ করিয়াছিলেন—দুঃখ দারিদ্রে নিপীড়িত হইয়া, যিনি শেষে প্রভূত অর্থের অধিকারী হইয়াছিলেন, তিনি আত্মভোগে উপেক্ষা দেখাইয়া, ভবিষ্যতের দিকে দৃকপাত না করিয়া, অপরের প্রশংসা বা নিন্দা তুচ্ছ ভাবিয়া, কেবল যথার্থ কৃপাপাত্রদিগের জন্য যে ব্রত পালন করিতেন, সে ব্রত চিরপবিত্র— চিরন্তন ধর্মের মহিমায় মহিমান্বিত-চিরস্থায়ী গৌরবে গৌরবযুক্ত। বঙ্গের মহাকবি এই চিরপবিত্র ব্রতের মহিমায় মুগ্ধ হইয়া, এক দিন গম্ভীর স্বরে গাইয়াছিলেন,

“বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে
করুণার সিন্ধু তুমি। সেই জানে মনে
দীন যে, দীনের বন্ধু।”
সমগ্র ভারতও একদিন বিমুগ্ধ হইয়া গাইবে;—
“বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে
করুণার সিন্ধু তুমি।”

 ফলতঃ নিঃস্বার্থভাবে পরোপকারসাধনে—নিঃস্বার্থভাবে পরপ্রয়োজনের জন্য উপার্জিত অর্থরাশির দানে মহাত্মা বিদ্যাসাগরের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। এখন সেই দানবীর চিরদিনের জন্য অন্তর্হিত হইয়াছেন। কোমলতাময়ী করুণা এখন আশ্রয়ের অভাবে দুর্দশাপন্ন। দুঃখদারিদ্র্যময় জনপদ এখন অধিকতর দারিদ্রভারে নিপীড়িত। নিরাশ্রয়, নিঃসম্বল ও নিরন্ন জীবগণ এখন কাতরকণ্ঠে লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাপ্রার্থী। প্রলয়পয়োধির জলোচ্ছ্বাসে যেন