পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(২২)

সম্পাদনে নিয়োজিত হইয়াছিলেন, কিন্তু পরের নিকট স্নায়ুবিক্রয় করেন নাই; তিনি পরের আদেশপালনে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু পরের অনুচিত আদেশানুসারে কার্ঘ্য করিতে সম্মত হইয়া আত্মাভিমানের মর্যাদানাশ করেন নাই। তাঁহার হৃদয় এইরূপ অটল ও এইরূপ শক্তিসম্পন্ন ছিল। বহু অনুরোধে, বহু অনুনয়েও তাহার অভিমান অন্তর্হিত—তেজস্বিতা বিচলিত, বা কর্তব্যবৃদ্ধি অবনত হইত না। মিবারের রাজপুতগণ অনেকবার আপনাদের ভূসম্পত্তি হইতে স্খলিত হইয়াছেন; অনেকবার অনেক বিষয়ে স্বার্থত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখাইয়াছেন; তথাপি আপনাদের তেজস্বিতা বা অভিমানে জলাঞ্জলি দেন নাই। সহৃদয় উড় এই অসামান্য গুণদর্শনে বিমুগ্ধ হইয়া, তেজস্বিগণের বরণীয় প্রাচীন গ্রীকদিগের সহিত মিবা রের রাজপুতদিগের তুলনা করিয়াছেন। বঙ্গদেশের জন্য যদি এক জন টডের আবির্ভাব হয়, এক জন টড় যদি বাঙ্গালীর সুকীর্তি না অপকীর্ত্তির বর্ণনায় ব্যাপৃত হয়েন, তাহা হইলে তিনি এই অধঃপতিত ভূখণ্ডে এই চিরাবনত জাতির মধ্যে মহাত্মা বিদ্যাসাগরে এমন প্রভাব দেখিতে পাইবেন, যাহার অচিন্তনীয় মহিমায় তাহার অপরিসীম বিস্ময়ের আবির্ভাব হইবে; তিনি সেই মহাপুরুষকে গৌরবান্বিত গ্রীকদিগের পার্শ্বে বসাইয়া, মুক্তকণ্ঠে ও ভক্তিরসার্জ হৃদয়ে তদীয় স্তুতিবাদ করিবেন।

 এইরূপ তেজস্বী, এইরূপ অভিমানসম্পন্ন বিদ্যাসাগর, জনসাধারণের সমক্ষে কখনও অহঙ্কারে স্ফীত হইয়া; হীনতা প্রকাশ ‘করেন নাই। তাহার তেজস্বিতা যেরূপ অতুল্য, তাহার মহত্ত্ব সেইরূপ অপরিমেয় ছিল। দরিদ্র প্রচুর অর্থের অধিকারী হইলে আত্মগর্বে অধীর হইয়া, আত্মগৌরবের বিস্তারে উদ্যত হইয়া থাকে। কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রশস্ত হৃদয় এরূপ হীনভাবে কলুষিত ছিল