পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(২৬)

তাঁহার যত্নাতিশয়ে—তাহার প্রবর্তিত শিক্ষাপ্রণালীর গুণে, মেট্রোপলিটনের ছাত্রগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রশংসার সহিত উত্তীর্ণ হইয়া, তাঁহাকে শতগুণে আদিত করিয়া তুলিয়াছে। স্বহস্তরোপিত ও যত্নসহকারে বর্ধিত বৃক্ষ সুস্বাদু ফলভারে অবনত হইলে লোকের যেরূপ আলাদের সঞ্চার হয়, তিনিও সেইরূপ মেট্রোপলি টনের উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি দেখিয়া, প্রীতি লাভ করিয়াছেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় কি কারণে এরূপ প্রতিপত্তিশালী হইয়াছেন, কি কারণে এরূপ অতুলনীয় কীর্ত্তির অধিকারী হইয়া, সকলের নিকটে “হৃদয়গত শ্রদ্ধা ও প্রতির পুস্পাঞ্জলি” পাইতেছেন? মণ্ডণাধিপতি সম্রাট অসামান্য ক্ষমতা ও অপরিমিত অর্থের বলে যে সম্মান লাভ করিতে পারেন না, একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান কি গুণে সেই সম্মানের পাত্র হইয়াছেন? ইহার একমাত্র কারণ, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতার সহিত হৃদয়ের অতুল্যশক্তির সামঞ্জস্য। যিনি হৃদয়ের শক্তিতে উপেক্ষা করিয়া, মস্তিষ্কের শক্তিতে মহৎ হইতে চাহেন, তিনি মহত্ত্বের অধিকারী হইতে পারেন না। উদারতা, হিতৈষিতা, পরদুঃখকাতরতা প্রভৃতি মনুযযাচিত গুণ সমূহ তাহা হইতে বহু দূরে অবস্থিতি করে। তিনি কেবল আত্মস্বার্থেই পরিতুষ্ট থাকেন, পরার্থে তাহার দৃষ্টি থাকে না। গৃধুকুল যেমন সুদূর গগনতলে উড্ডীয়মান হইলেও তলস্থ গলিত শবের দিকে সর্বদা দৃষ্টি রাখে, তিনিও সেইরূপ বুদ্ধিবৈভবে, উন্নত হইলেও হৃদয়ের শক্তির অভাবে নিকৃষ্টতর কার্যে মনোনিবেশ করিয়া, ক্রমশঃ নিম্নভিমুখে অবনত হইতে থাকেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় এরূপ শ্রেণীর লোক ছিলেন না। তাহার অসাধারণ প্রতিভার সহিত হৃদয়ের অপূৰ্ব শক্তি ছিল। তিনি এক দিকে জ্ঞানগৌরবে ও বুদ্ধিবৈভবে যেরূপ মহিমান্বিত, অপর দিকে হৃদয়ের