পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(২৭)

মহৎগুণে সেইরূপ গৌরবাতি। তাহার অভিমান ও তেজস্বিতা যেরূপ অতুল্য, তাহার 'কোমলতা ও দয়াশীলতাও সেইরূপ অসামান্য। আত্মাভিমান, আত্মদর ও আত্মনির্ভরের বলে তিনি কোনও বিষয়ে পরের নিকট অবনত বা কোনও বিষয়ে পরমুখ। প্রেক্ষী হইতেন না। ইহা তাহার হৃদয়ের অসামান্য শক্তির নিদর্শন স্বরূপ। লোকের শিক্ষাবিধান হেতু তিনি স্নেহময় পিতা, এবং •লোকের পালন ও শান্তিবিধান হেতু তিনি করুণাময়ী মাতা ছিলেন। এইরূপে তাঁহাতে প্রতিভার সহিত লোকশিক্ষাবিধায়িনী ও লোকপালনী প্রবৃত্তির সমাবেশ ছিল। তিনি যখন শাস্ত্রজ্ঞানের পরিচয় দিতেন, তখন তাঁহার অনুপম লিপিনৈপুণ্য, অসাধারণ বুদ্ধিপ্রাখর্য্য ও অপূর্ব যুক্তিবিন্যাসকৌশল দেখিয়া, শাস্ত্রদর্শী পণ্ডিতগণ তদীয় প্রশংসাবাদে প্রবৃত্ত হইতেন, তিনি যখন অভিমান ও তেজস্বিতায় উন্নত হইয়া, আত্মস্বার্থেও পদাঘাত করিতেন, তখন লোকে সেই অপূর্ব তেজস্বিতার প্রখর দীপ্তিতে চমকিত হইয়া, বিস্ময়বিস্ফারিতনেত্রে হতবুদ্ধি হইয়া থাকিত; আর তিনি যখন দরিদ্রের পর্ণকুহরে দুর্দশাগ্রস্ত দুঃখিতের সম্মুখে উপস্থিত হইতেন, তখন সেই অনাথগণ তাহার অপরিসীম দয়ায় ও প্রতিস্নিগ্ধ মুখমণ্ডলের প্রশান্তভাবে বিমুগ্ধ হইয়া অশ্রুপাত করিত। এইরূপ বিভিন্ন শক্তির সমবায়ে, তিনি প্রকৃত মনুষ্যত্বের পূর্ণাবতারস্বরূপ মহাপুরুষ ছিলেন[১]

 এই মহাপুরুষের মহাদৃষ্টান্ত কি আমাদের উপেক্ষার বিষয় হইবে? আমরা কি ইহাতে কিছুই শিক্ষালাভ করিব না? যিনি লোকহিতব্রতে জীবনোৎসর্গ করিয়াছিলেন, আমরা কি তাঁহারই


  1. প্রবন্ধ-লেখক, প্রকৃতিপত্রিকায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সম্বন্ধে, যে প্রস্তাব লিখিয়াছিলেন, তাহারই সারাংশ এই স্থলে উদ্ধৃত হইল।