পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(৭)

করিতেন,তাহা হইলেও কেবল এই কার্য্যে তাহার নাম চিরস্মরণীয় হইত। দামুন্যার দরিদ্র ব্রাহ্মণ দশ আড়া মাত্র ধানে পরিতুষ্ট হইয়া যে কাব্যপ্রণয়ন করেন, সেই কাব্যের প্রসাদেই তিনি বাঙ্গালার কবিকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পদ অধিকার করিয়াছেন। বিদ্যাসাগর আর কোনও কার্যে হস্তক্ষেপ না করিলেও, তাহার অমৃতময়ীলেখনী- বিনিঃসৃত গ্রন্থাবলীর গুণে তিনি চিরকাল বাঙ্গালা সাহিত্যসংস্কার চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিতেন। তিনি বাঙ্গালা সাহিত্যের পিতা না হইলেও স্নেহময়ী মাতার ন্যায় উহার পুষ্টিকর্ত্তা ও সৌন্দর্য্যবিধা। তাহার যত্নে গদ্য-সাহিত্যের উন্নতি, পরিপুষ্টিও সৌন্দর্য্য সাধিত হয়। দশভুজা দুর্গার প্রতিমায় খড়কঁশ ও দড়ির উপর সামান্য মাটির কাজ হইয়াছিল, তিনি ঐ মাটি যথাস্থানে বিন্যস্ত করেন, এবং মৃত্তিকাময়ী মূর্ত্তি নানাবর্ণে সুরঞ্জিত ও বিচিত্র বেশে সজ্জিত করিয়া, দেবমণ্ডপ শ্রীসম্পন্ন করিয়া তুলেন। মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় বাঙ্গালায় গ্রন্থাবলীপ্রণয়ন করেন তাহার গদ্যরচনায়যুক্তিবিন্যাসনৈপুণ্য এবং ওজস্বিতাদি গুণ থাকিলেও, উহা তাদৃশ মাধুর্যসম্পন্ন হয় নাই। এক সময়ে উচ্চশ্রেণীর বিদ্যালয়ে “পুরুষপরীক্ষা” ও “প্রবোধচন্দ্রিকার” অধ্যাপনা হইত। কিন্তু উৎকট শব্দাবলীর জন্য উহাও তাদৃশ প্রীতি- প্রদ হইয়া উঠে নাই। উহার “মলয়াচলানিল উচ্ছলচ্ছীরাত্যচ্ছ- নিঝরান্তঃকণাচ্ছন্ন হইয়া আসিতেছে”, এইরূপ বিভীষিকাময়ী ভাষায় বোধ হয়, পাঠার্থীদিগকে শীতসঙ্কুচিত বৃদ্ধের ন্যায় সর্ব্বদা সশঙ্ক থাকিতে হইত।পণ্ডিতপ্রবর কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ও “বিদ্যা- কল্পদ্রুম” নাম দিয়া, ইংরেজী ও বাঙ্গালায় অনেক গ্রন্থ প্রচার করেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয়ই বাঙ্গালায় গদ্যরচনার উৎকর্ষসাধক। তাহার মহাভারত ও বেতালপঞ্চবিংশতিতে যেরূপ ওজস্বিতা ও শব্দ- প্রয়োগবৈচিত্র্য দেখা যায়,—তাঁহার সীতার বনবাসে ও শকুন্তলায়