পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S একাদশী বৈরাগী ফিরাইয়া আনিল, তখন গ্রামের লোকের নিষ্ঠুর অনুশাসন মাথায় তুলিয়া লইয়া, তাহার এই লজ্জিতা, একান্ত অনুতপ্ত দুৰ্ভাগিনী ভগিনীটিকে আবার গৃহের বাহির করিয়া দিয়া, নিজে প্ৰায়শ্চিত্ত করিয়া জাতে উঠিতে একাদশী কোনমতেই রাজী হইতে পারিল না । অতঃপর গ্রামে তাহার ধোপা-নাপিত, মুদী প্রভৃতি বন্ধ হইয়া গেল। একাদশী নিরূপায় হইয়া ভোক লইয়া বৈষ্ণব হইয়া এই বারুইপুরে পলাইয়া আঁসিল। কথাটা সবাই জানিত ; তথাপি,আর একজনের মুখ হইতে আর একজনের কলঙ্ক কাহিনীর মাধুৰ্য্যটা উপভোগ করিবার জন্য সবাই উদগ্রীব হইয়া উঠিল। কিন্তু, একাদশী লজ্জায়, ভয়ে, একেবারে, জড়সড় হইয়া গেল। তাহার নিজের জন্য নয়, ছোট-বোনটির জন্য। প্রথম-যৌবনের অপরাধ গৌরীর বুকের মধ্যে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করিয়াছিল, আজিও যে তাহা তেমনি আছে, তিলাৰ্দ্ধও শুষ্ক হয় নাই, বৃদ্ধ তাহা ভালরূপেই জানিত। পাছে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিতও তাহার কাণে গিয়া সেই ব্যথা আলোড়িত হইয়া উঠে, এই আশঙ্কায় একাদশী বিবর্ণমুখে নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। তাহার এই সকরুণ দৃষ্টির নীরব-মিনতি আর কাহারও চক্ষে পড়িল না, কিন্তু, অপূর্ব হঠাৎ অনুভব করিয়া বিস্ময়ে অবাক হইয়া গেল। বিপিন বলিতে লাগিল, “আমরা কি ভিখারী যে, দু'কোশ পথ হেঁটে এই রৌদ্রে চারগণ্ডা পয়সা ভিক্ষে চাইতে এসেচি ! তাও আবার আজ নয়-কবে ওঁর কোন খাতকের পাট বিক্ৰী হবে, সেই খবর নিয়ে আমাদের আর একদিন হাঁটুতে হবে। তবে খুন্দি বাবুর দয়া হয়! কিন্তু লোকের রক্ত শুষে সুদ খাও বুড়ো, মনে করেছ জোঁকের গায়ে জোঁক বসে না ? আমি এখানেও না তোমার হাড়ির হাল করি তা আমার নাম বিপিন ভট্টচায্যিই নয়! ছোট-জাতের পয়সা হয়েচে বলে চোখে-কাণে আর দেখতে পাও না ? চল হে অপূর্ব, আমরা যাই।--তার পরে যা জানি, করা যাবে।” বলিয়া সে অপূৰ্বর হাত ধরিয়া টান দিল।