একবার এমনি যখন কলকাতায় এসেছি, উনি আমাকে লাটসাহেবের বাড়ীর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন। নিজে অসুস্থ বলে যেতে পারেন নি, আমাকে এক মেমের সঙ্গে পাঠালেন—বোধ হয় Lady Phaer। বড় ঠাকুরঝি আমাকে মাথায় সিঁথি প্রভৃতি দিয়ে খুব সাজিয়ে দিলেন, উনি শুয়েছিলেন, তাঁকে আবার নিয়ে গিয়ে দেখালেন। সেখানে ঠাকুরগুষ্টির যাঁরা ছিলেন তাঁরা ঠাকুরবাড়ীর একজন বউ গিয়েছে শুনে লজ্জায় চলে গেলেন—পরে শুনলুম। ওঁকে ছেলেবেলায় একজন পড়িয়েছিলেন, তিনি আমার পরিচয় পেয়ে কাছে এসে কথা বল্লেন। তখনকার লাটসাহেব কে ছিলেন ঠিক মনে পড়ছে না, বোধ হয় Lord Lawrence। বাড়ীর সকলে বল্লেন যে উনি নিজে গেলে ভাল হত, অন্য লোকের সঙ্গে পাঠানো ভাল হয়নি। শুনেছি আমাকে অনেকে মনে করেছিলেন ভূপালের বেগম, কারণ তিনিই একমাত্র তখন বেরতেন। তখন আমি খুবই ছেলেমানুষ ছিলুম। তারপরে অনেকবার অনেক জায়গায় লাটসাহেবের বাড়ী গেছি অবশ্য, তবে শেষ পর্যন্ত হাঁটু নুইয়ে courtesy করাটা ভাল অভ্যাস হয়নি।
প্রথম যখন আমি অন্তঃসত্ত্বা হলুম, তখন আমি কিছু বুঝতুম না বলে দৌড়াদৌড়ি করতুম, তাই দুএকবার সন্তান নষ্ট হয়। তখন আমার দেবর জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে nine-pins খেলতুম মনে আছে। তাই ওখানকার একজন দেশি ডাক্তার আমাকে বই দিয়েছিলেন, তা পড়ে একটু একটু জ্ঞান হল। এরকম অবস্থায় একবার কিছুদিন একলা জোড়াসাঁকোয় এসে ছিলুম। সেই সময়কার ওঁর চিঠি কখানা আমার কাছে রয়েছে। তাতে দেখি উনি আমাকে বিবি বা মেম রেখে ইংরিজী পড়তে বা বলতে শেখবার জন্য খুব উপদেশ দিতেন। নিজে কি কি বই পড়ছেন তাও লিখতেন। চিরকালই মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাধীনতা দেবার দিকে খুব ঝোঁক ছিল। বিলেতে স্বপ্ন দেখেছিলেন যেন জোড়াসাঁকোর বাড়ীর ভিতরের খড়খড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছেন। কাজেও তাই করেছিলেন। বাইরে কিছু অনুষ্ঠান হলে আমরা ঐ