পাতা:হাস্যকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ভাব ও অভাব

কবিবর কুঞ্জবিহারীবাবু ও বশংবদবাবু

 কুঞ্জবিহারী। কী অভিপ্রায়ে আগমন?

 বশংবদ। আজ্ঞে, আর তো অন্ন জোটে না; মশাই সেই যে কাজের—

 কুঞ্জবিহারী। (ব্যস্তসমস্ত হইয়া) কাজ? কাজ আবার কিসের? আজ এই সুমধুর শরৎকালে কাজের কথা কে বলে?

 বশংবদ। আজ্ঞে, ইচ্ছে করে কেউ বলে না, পেটের জালায়—

 কুঞ্জবিহারী। পেটের জালা? ছিছি ওটা অতি হীন কথা— ও-কথা আর বলবেন না।

 বশংবদ। যে আজ্ঞে, আর বলব না। কিন্তু ওটা সর্বদাই মনে পড়ে।

 কুঞ্জবিহারী। বলেন কী বশংবদবাবু, সর্বদাই মনে পড়ে? এমন প্রশান্ত নিস্তব্ধ সুন্দর সন্ধ্যাবেলাতেও মনে পড়ছে?

 বশংবদ। আজ্ঞে, পড়ছে বই কি। এখন আরও বেশি মনে পড়ছে। সেই সাড়ে দশটা বেলায় দুটি ভাত মুখে গুঁজে উমেদারি করতে বের হয়েছিলুম তার পরে তো আর খাওয়া হয়নি।

 কুঞ্জবিহারী। তা না-ই হল। খাওয়া না-ই হল।

বশংবদবাবুর নীরবে মাথা চুলকন

 এই শরতের জ্যোৎস্নায় কি মনে হয় না যে, মানুষ যেন পশুর মতো কতকগুলো আহার না করেও বেঁচে থাকে! যেন কেবল এই চাঁদের আলো, ফুলের মধু, বসস্তের বাতাস খেয়েই জীবন বেশ চলে যায়!

২৮