পাতা:হাস্যকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রোগীর বন্ধু

  দুঃখীরাম। ডাক্তার? ডাক্তারের কথা আপনি এক তিল বিশ্বাস করেন? ডাক্তারকে বিশ্বাস করেই কি আমরা অকুল পাথারে পড়ি নি? যখন আসন্ন বিপদ সেই সময়েই তারা বেশি করে আশ্বাস দেয়, অবশেষে যখন রোগীর হাতে পায়ে খিল ধরে আসে, তার চোখ উলটে যায়, তার গা-হাত-পা হিম হয়ে আসে, তার—

 বৈদ্যনাথ। (দুঃখীরামের হাত ধরিয়া) ক্ষমা করুন মশায়, আর বলবেন না মশায়। আমার গা-হাত-পা হিম হয়েই এসেছে। আপনার বর্ণনা সদ্যসদ্যই খেটে যাবে।

বুকে হাত দিয়া

 উ উ উঃ।

 দুঃখীরাম। দেখছেন মশায়। আমি তো বলেইছি— ডাক্তারের আশ্বাসবাক্যে কিছুমাত্র বিশ্বাস করবেন না। আচ্ছা, একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করি – আপনি কি রাত্রে চিত হয়ে শোন্?

 বৈদ্যনাথ। হঁ। চিত হয়ে না শুলে আমার ঘুম হয় না।

 দুঃখীরাম। (নিশ্বাস ফেলিয়া) আমার ভায়েরও ঠিক ওই দশা হয়েছিল। সে একেবারেই পাশ ফিরতে পারত না!

 বৈদ্যনাথ। আমি তো ইচ্ছা করলেই পাশ ফিরতে পারি।

 দুঃখীরাম। এখন পারছেন। কিন্তু ক্রমে আর পারবেন না।

 বৈদ্যনাথ। সত্যি না কি!

 দুঃখীরাম। ক্রমে আপনার বাঁ-দিকের পাঁজরায় একরকম বেদনা ধরবে, ক্রমে পায়ের আঙুলগুলো একেবারে আড়ষ্ট হয়ে যাবে, গাঁঠ ফুলে উঠবে, ক্রমে—

 বৈদ্যনাথ। (গলদঘর্ম হইয়া) দোহাই আপনার, আর বলবেন না। আমার বুক ধড়াস ধড়াস করছে!

৩৩