পাতা:হাস্যকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাস্যকৌতুক

 চিন্তামণি। এই দেখুন দেখি! এই সকল বিষয় কিছুমাত্র আলোচনা না করেই, অনুসন্ধান না করেই আপনারা বলেন য়ুয়োপীয় বিজ্ঞান শ্রেষ্ঠ। অথচ আর্যরা হাঁচে কেন, হাই তোলে কেন, তেল মাখে কেন, এ আপনারা কিছু জানেন না!

 হরিহর। আচ্ছা মশায়, আপনিই বলুন। তেল মাখবার পূর্বে ভূমিতে তৈল নিক্ষেপ করবার কারণ কী?

 চিন্তামণি। ম্যাগ্‌নেটিজ্‌ম্! আর কিছু নয়। ইংরেজিতে যাকে বলে ম্যাগনেটিজ্‌ম।

 হরিহর। (সবিস্ময়ে) আপনি ম্যাগনেটিজ্‌ম সম্বন্ধে ইংরেজি বিজ্ঞানশাস্ত্র কিছু পড়েছেন?

 চিন্তামণি। কিছু না! দরকার নেই। বিজ্ঞান শিক্ষা কিম্বা কোনো শিক্ষার জন্য ইংরেজি পড়বার কিছু প্রয়োজন নেই। আমাদের আর্যেরা আরো কী বলেন? প্রাণশক্তি, কারণশক্তি এবং ধারণশক্তি এই তিন শক্তি আছে, তার উপরে তৈলের সাধারণশক্তি যোগ হয়ে ঠিক স্নানের অব্যবহিত পূর্বেই আমাদের শরীরের মধ্যে ভৌতিক কারণশক্তির উত্তেজনা হয়— এই তো ম্যাগনেটিজ্‌ম। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজেরা স্নানের পরে যে গায়ে তোয়ালে ঘষে, তার কত হাজার বৎসর আগে আমাদের আর্যদের মধ্যে গামছা দিয়ে গাত্রমার্জনপ্রথা প্রচলিত ছিল ভেবে দেখুন দেখি।

 লেখকগণ। (সবিস্ময়ে) আশ্চর্য, ধন্য। আর্যদের কী বিজ্ঞানপারদর্শিতা! আর্য কুণ্ডুমশায়ের কী গবেষণা!

 হরিহর। ভালো মূর্খের হাতেই আজ পড়া গিয়েছে। কিন্তু একে চটিয়ে কাজ নেই। নানা কাগজে লিখে থাকে। শুনেছি নাকি এই আর্য কুণ্ডু ভদ্রলোকদের বড্ড গাল দিতে পারে। সেই জন্যেই বিখ্যাত।

৫০