পাতা:হাস্যকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আর্য ও অনার্য

 চিন্তামণি। ওই দেখুন― ওই আর্য ব্রাহ্মণ প্রাতঃকালে যে ফুল তুলছে—কেন তুলছে বলুন দেখি।

 অদ্বৈত। পূজার সময় দেবতাকে দেবে বলে।

 চিন্তামণি। ছি ছি, আপনারা কিছুই গভীর তলিয়ে দেখেন না। সকালে ফুল তুলতে যখন ঋষিরা অনুমতি করেছেন তখন স্পষ্টই প্রমাণ হচ্ছে যে, বাতাসে অক্সিজেন বাষ্প যে আছে এ তাঁরা জানতেন। তা যখন জানা ছিল, তখন অবশ্য অন্যান্য বাষ্পের কথাও তাঁরা জানতেন সন্দেহ নেই। এই রকম একে একে অতি স্পষ্ট করে প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে, আধুনিক য়ুরোপীয় রসায়নশাস্ত্রের কিছুই তাঁদের অগোচর ছিল। হাই তোলবার সময় তুড়ি দেওয়া কেন? সেও ম্যাগনেটিজ্‌ম। উত্তানবায়ুর সঙ্গে আধানশক্তির যোগ হয়ে যখন ভৌতিক বলে পরিচালিত নিধানশক্তি স্বশক্তির প্রভাবে প্রাণ, কারণ এবং ধারণ এই তিনটেকে অতিক্রম করতে থাকে তখন সত্ত্ব, রজ এবং তম এই তিনেরই ব্যতিক্রমদশা ঘটে। এমন সময়ে মধ্যমা এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ঘর্ষণজনিত বায়ব তাপের কারণভূত স্নায়ব তাপ সৌর তাপের সঙ্গে মিলিত হয়ে জীবদেহের ভৌতিক তাপের আত্যন্তিক প্রলয়দশা ঘটতে দেয় না। একে বিজ্ঞান বলে না তো কাকে বিজ্ঞান বলে? অথচ আমাদের আর্য ঋষিগণ ডারুয়িনের কোনো গ্রন্থই পড়েন নি।

 লেখকগণ। আশ্চর্য! ধন্য! ধন্য আর্য-মহিমা! আমরা এতদিন এ-সকল কথার কিছুই বুঝতুম না!

 হরিহর। (স্বগত) এবং আজও কিছু বুঝতে পারছি নে।

 চিন্তামণি। মাটিতে পাখা ঠোকার বিষয়ে যদি জিজ্ঞাসা করেন তো সেও ম্যাগনেটিজ্‌ম! সম্প্রসারণ এবং নিঃসারণ, বিপ্রকর্ষণ এবং নিকর্ষণ এই কটা ভৌতিক ক্রিয়ার যোগে―

৫১