পাতা:Vanga Sahitya Parichaya Part 1.djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৪ বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয়। এই আদিম গ্রাম্য-রচনায় কবিত্বের অভাব নাই। ভগবানকে অন্তরঙ্গ করিয়া তাহাকে নিজেদের মত না করিয়া লইতে পারিলে হিন্দু-গৃহস্থ কখনই সন্তুষ্ট হন না। এখানে বালক-সুর্য্যকে লইয়া যে সকল আদর করা হইয়াছে, তাহ যশোদার গোপালের পূর্ব-কল্পনা। স্বর্য্যের বিবাহেচ্ছার অভিব্যক্তি গ্রাম্য কবির রসিকতায় সুন্দর ও উজ্জ্বল হইয়াছে। গৌরীর শ্বশুর-বাড়ী যাইবার প্রাক্কালে পিতৃ-গৃহের যে করুণ ক্রন্দন, তাহার মর্ম্মস্পর্শী সুর গ্রাম্য কথায় আমাদের প্রাণের তন্ত্রী স্পর্শ করে। গৌরী বিলাপের স্বরে মাঝিকে ধীরে ধীরে নৌকা বাহিতে বলিতেছেন; মাতা-পিতা এবং ভ্রাতা-ভগিনীর যে ক্রন্দনের স্বর তিনি শুনিতেছিলেন, তাহ আরও কিছুকাল শুনিয়া দুঃখমিশ্র সাম্ভুনা পাইবার আশায় মাঝিকে বলিতেছেন— “ভাঙ্গা নাও মাদারের বৈঠা চলকে ওঠে পানী। ধীরে ধীরে বাওরে মাঝি-ভাই মায়ের কাদন শুনি॥” ইত্যাদি। স্বামীর সঙ্গে তাহার নৌকায় যে আলাপ হইয়াছিল, সহজ কথায় তাহাতে হিন্দু গাৰ্হস্থ্যধর্ম্মের সার কথা বলা হইয়াছে,—তাহ পল্লী-বালিকা ও তাহার পতির পবিত্র দাম্পত্য গাহস্থ্যিধর্ম্মের উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত করিতেছে। হিন্দু স্ত্রী শুধু স্বামীর জন্য নহেন, তিনি স্বামীর পরিবারবর্গের সঙ্গে একান্তরূপে মিশিয়া সুগৃহিণী-পদে বাচ্য হন, সহজ কথায় স্থর্য্য গৌরীকে তাহাই বুঝাইয়াছেন। বরিশালের ফুল্লত্র-গ্রামে প্রাপ্ত সূর্য্যের গান। সূর্য্যের রূপ-বর্ণনা ও উদয়-দৃশ্য। স্বর্য্য ওঠে কোন কোন বর্ণ। স্থর্য্য ওঠে আগুন-বর্ণ॥ স্বর্য্য ওঠে কোন কোন বর্ণ। সূর্য্য ওঠে রক্ত-বর্ণ॥ স্বর্য্য ওঠে কোন কোন বর্ণ। স্বর্য্য ওঠে তাম্বুল-বর্ণ। ওঠ স্থর্য্য উদয় দিয়া (১)। বাওনের (২) ঘরের কোণ ছু ইয়া॥ বাওনের মাইয়া (৩) বড় সেয়ান। স্বর্য্যাইর পৈতা জোগায় বেয়ান বেয়ান (৪)॥ (১) পূর্ব্বদিক্ হইতে। (২) ব্রাহ্মণের। (৩) মেয়ে = কন্ত। (৪) প্রত্যহ প্রাতে।