[ ২ ]

 পরদিন প্রাতঃকালে, পূর্ব্বে যে বৃদ্ধ ভিক্ষুর কথা বলিয়াছি, তিনি আসিয়া নগরের প্রধান ব্যক্তিগণকে প্রান্তরে সমবেত করিলেন। পরে ক্রমশঃ রাজা ও তদ্বংশীয় ব্যক্তিগণও তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। কিয়ৎক্ষণ কথোপকথনের পর বৃদ্ধ সেই জনসঙ্ঘকে সম্বোধন করিয়া বলিলেনঃ—

 “আমি ত্রিংশদ্বর্ষ পূর্ব্বে আমার জন্মভূমি মগধ পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছি। বাল্যকালে আমি মহারাজ প্রিয়দর্শীকে রাজগৃহের পথে দেখিয়াছি; কিন্তু সে কথা আমার ভাল স্মরণ হয় না। যে ধর্ম্মপ্রচারের জন্য তিনি আজীবন চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন ও যে ধর্ম্মের জন্য তিনি বৃদ্ধাবস্থায় গিরিব্রজের বনমধ্যে বাস করিয়াছিলেন, সে ধর্ম্ম তখন বিশেষ সমাদৃত। তখন পূর্ব্বে প্রাগ্‌জ্যোতিষপুর হইতে পশ্চিমে কপিশা পর্য্যন্ত ও উত্তরে খশদেশ হইতে দক্ষিণে সমুদ্র পর্য্যন্ত সে ধর্ম্মের প্রভাব অক্ষুণ্ণ। তাঁহার চেষ্টায় যে প্রবল ধর্ম্মলিপ্সা সিন্ধু হইতে ব্রহ্মপুত্র পর্য্যন্ত দেশবাসী জনসাধারণের মধ্যে দুর্দ্দমনীয় হইয়া উঠিয়াছিল, তাহারই জন্য বিংশতিবর্ষ বয়ঃক্রমকালে আমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিয়াছিলাম। ধর্ম্মাশোকের মৃত্যুর পর দশরথ, সঙ্গত, শালিশুক প্রভৃতি রাজগণ তাঁহার সযত্ন প্রতিষ্ঠিত ধর্ম্মের মর্য্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছিলেন। উত্তরপশ্চিমকোণে গান্ধার, উদ্যান, কপিশা, বাহ্লীক প্রভৃতি প্রদেশে এই ধর্ম্মের এতদূর উৎকর্ষ সাধন হইয়াছিল যে, বিজেতৃ যবনগণও আসিয়া তথাগতের ধর্ম্মে দীক্ষিত হইয়াছিল। কয়েক বৎসর পূর্ব্বে যে যবন রাজা অন্তর্ব্বেদী অতিক্রম করিয়া সাকেত অবরোধ করিয়াছিলেন তাঁহার পূর্বপুরুষেরা শতবর্ষপূর্ব্বে, স্বর্গগত চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের শ্বশুরবংশের অধীনে বাহ্লীক ও কপিশার শাসনকর্ত্তা ছিলেন। যে আন্তিয়োক সপ্তসিন্ধু বিজয় করিতে আসিয়া সৌভাগ্যসেনের নিকট হইতে পঞ্চশত সংখ্যক হস্তিযূথ প্রাপ্ত হইয়া আপনাকে সৌভাগ্যবান মনে করিয়াছিলেন, তাঁহারই সময়ে ঐরাণে পারদগণ ও বাহ্লীকে বিদ্রোহী যবনগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়াছিল। ক্রমে শক জাতির তাড়নায় ইহারা পূর্ব্বদিকে আসিতে বাধ্য হইয়াছে। বাহ্লীকের যবনরাজ্যের অভ্যুত্থানের সহিত গান্ধারে ও উদ্যানে মৌর্য্যসাম্রাজ্যের মর্য্যাদাহানি আরব্ধ হইয়াছে। ইহাই মৌর্য্যরাজবংশের ও সদ্ধর্ম্মের অবনতির সূত্রপাত। বাল্যে আমি হিরণ্যবহা তীরে পাষাণ-নির্ম্মিত কুক্কুটপাদবিহারে বাস করিতাম। তখন শ্রমণাচার্য্যগণ ঐরাণ, বাবিরুষ, মিশর ও যবন দ্বীপপুঞ্জে পরিভ্রমণ করিয়া আসিয়াছেন; প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জগতে সদ্ধর্ম্মের মহিমা ঘোষিত হইয়াছে। তখন নগরে প্রতিদিন মহোৎসব হইত। সদ্ধর্ম্মের সেরূপ উন্নতির দিন আর বোধ হয় আসিবে না। ধর্ম্মেৱ এরূপ দুরবস্থা চিরকাল ছিল না, তাহাই প্রমাণ করিবার জন্য আমি এই শতবর্ষের পুরাতন কাহিনীর পুনরবতারণা করিতেছি। তখন শ্রমণ দেখিলে আবালবৃদ্ধ, উচ্চ-নীচ সকলেই নতশীর্ষ হইত। পশ্চিমে নগরহারে, পুরুষপুর ও তক্ষশিলা, দক্ষিণে উজ্জয়িনী, বিদিশা, ও পূর্ব্বে চম্পা, পুলিন্দ প্রভৃতি স্থান হইতে শিক্ষার্থিগণ পাটলিপুত্রে আসিত। আমি যৌবনে তাহাদিগের সহিত কপোতিক, পারাবত, কুক্কুটপাদ, মহাকাশ্যপীয়, মহাসাঙ্ঘিক প্রভৃতি বিহারে একত্র শিক্ষালাভ করিয়াছি। তখন শ্রমণ ও ভিক্ষুগণ প্রবাসে যাইতে হইলে অন্ধকারের আশ্রয়ে বনান্তরালের পথ গ্রহণ করিতেন না; পরন্তু বঙ্গ হইতে সিন্ধু পর্য্যন্ত রাজপথ বৌদ্ধগণের ব্যবহার্য্য ছিল—ইহা কল্পনা নহে। যে ব্রাহ্মণগণ ধর্ম্মাশোকের শাসনকালে যজ্ঞকালীন পশুবধ হইতে রাজভয়ে বিরত হইয়াছিল, যাহাদিগকে প্রিয়দর্শী দেবপদচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহারা ক্রমশঃ সোমশর্ম্মা, শতধন্বা প্রভৃতি দুর্ব্বল রাজগণের রাজত্বে পুনরায় মস্তকোত্তলন করিতে লাগিল। মৌর্য্যসাম্রাজ্য ধ্বংসের অব্যবহিত পূর্ব্বে সৈন্যমধ্যে অহিচ্ছত্রবাসী মিত্রোপাধিধারী সুঙ্গবংশ অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। অন্তর্ব্বেদীর উত্তরস্থ প্রাচীন অহিচ্ছত্রনগরী ব্রাহ্মণপ্রধান স্থান। পুরুষ পরম্পরায় শুনিয়া আসিতেছি যে, অহিচ্ছত্র নগরে বা মণ্ডলে বৈদিক ব্রাহ্মণগণের প্রভাব অক্ষুণ্ণ, তথায় তথাগতের ধর্ম্মের স্থান নাই। সুঙ্গবংশীয়গণ ব্রাহ্মণগণের শিষ্য ও সদ্ধর্ম্মের বিরোধী। যেদিন পাটলীপুত্রনগরপ্রাকারের বাহিরে বিশ্বাসঘাতক পুষ্যমিত্র বলদর্শন ব্যপদেশে শেষ মৌর্য্যরাজ বৃহদ্রথকে সংহার করিল, প্রাচীন ভিক্ষু বা যতিমাত্রই সেই দিন বলিয়াছিলেন যে, এতদিনে সদ্ধর্ম্মের শুভদিনের অবসান ও দুর্দ্দিনের সূচনা হইল। কে জানিত দশ বৎসরের মধ্যে মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সহিত মাগধ সঙ্ঘেরও বিলোপ হইবে? বৃহদ্রথের মৃত্যুর অত্যল্পকাল মধ্যে দুষ্ট ব্রাহ্মণগণের প্ররোচনায় নাগরিকগণ ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিল। যে নাগরিকগণের উন্নতির ও শিক্ষার জন্য আমরা জীবন অতিবাহিত করিয়াছি, সেই কৃতঘ্নগণই আমাদিগের ধ্বংসসাধনে তৎপর হইল। যে কারণে আমি মাতৃভূমি ত্যাগ করিয়া, পুণ্যক্ষেত্র মগধ ত্যাগ করিয়া মহাকোশলের অরণ্য মধ্যে তোমাদিগের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছি, সেই কারণেই নগরবাসী জনৈক ভিক্ষু তথাগতের ভিক্ষাপাত্র লইয়া পুরুষপুর নগরে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। শাক্যরাজপুত্রের উষ্ণীষ কোথায় গিয়াছে তাহার সন্ধান পাওয়া যায় না। সযত্ন সংগৃহীত বুদ্ধদেবের ভস্মরাশি পাটলীপুত্রের রাজপথের ধূলিরাশির সহিত মিশ্রিত হইয়াছে। কপোতিক সঙ্ঘারামের মহাস্থবিরের ছিন্নশীর্ষ দক্ষিণ নগরদ্বারে কীলকবদ্ধ হইয়া আছে।

 মগধে সদ্ধর্ম্মের নাম—তথাগতের নাম লোপ পাইয়াছে। যাহারা এখনও বুদ্ধের নাম স্মরণ করিয়া থাকে, দশশীল বিস্মৃত হয় নাই, ভিক্ষু ও শ্রমণগণকে ভক্তি করে তাহারাও প্রকাশ্যে ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের আশ্রয়ে আছে। সদ্ধর্ম্মের লোপের সহিত স্তূপ, গর্ভচৈত্য, বিহার, সঙ্ঘারাম প্রভৃতিরও লোপ হইতেছে। উপাসক-উপাসিকা, ভিক্ষু-ভিক্ষুণী, স্থবির-স্থবিরাগণের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস হইয়া ক্রমশঃ লুপ্তপ্রায় হইয়াছে। তথাগতের ধর্ম্ম সাধারণ লোকে ক্রমশঃ বিস্মৃত হইতেছে, এখনও যাঁহাদের স্মরণ আছে তাঁহারাও মন্দিরবিহারাদির অভাবে যথারীতি উপাসনা করিতে পারেন না। মথুরা হইতে পাটলীপুত্র পর্য্যন্ত ও শ্রাবস্তী হইতে বিদিশা পর্য্যন্ত বৌদ্ধমন্দির, বিহার প্রভৃতির চিহ্নও দেখা যায় না। আমি বিংশতিবর্ষকাল চেষ্টা করিয়া এই নগরে বিদিশার সারীপুত্র ও মৌদ্‌গল্যায়নের ভস্মস্তূপের অনুরূপ, একটি স্তূপ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ সংগ্রহ করিয়াছি। আমাদিগের সংখ্যার এত হ্রাস হইয়াছে যে, একটি স্তূপ নির্ম্মাণের ব্যয় সংগ্রহের জন্য আমাকে পাটলীপুত্র হইতে বিদিশা পর্য্যন্ত সকল নগরবাসীরই সাহায্য প্রার্থনা করিতে হইয়াছে। যখন পুষ্যমিত্রের অত্যাচারে মগধ ত্যাগ করিয়া মহাকোশলে আশ্রয় গ্রহণ করি, তখন তোমাদিগের বর্ত্তমান রাজার পিতা অগরাজু সিংহাসনে আসীন ছিলেন। চিরকাল এই রাজবংশ তথাগতের বাক্যে বিশ্বাস করিয়া আসিয়াছেন, সদ্ধর্ম্মের এই দারুণ দুর্দ্দিনেও ইহাঁদিগের বিশ্বাস অচল রহিয়াছে। চতুর্দ্দিকের উৎপীড়িত প্রকৃত বিশ্বাসীদিগের একমাত্র আশ্রয়স্থল, এই রাজ্যে এতদিন পরে স্তূপ ও মন্দির নির্ম্মাণের উপায় হইল। শুনিয়াছি, মথুরায় সদ্ধর্ম্মের অনুচরগণ একটি স্তূপ নির্ম্মাণ করিতেছেন, তোমাদিগের রাজা ধনভূতি মথুরাবাসীদিগকেও অর্থসাহায্য করিতেছেন ও সেই সাহায্যে স্তূপ-বেষ্টনীর কয়েকটি স্তম্ভ নির্ম্মিত হইতেছে। মহারাজের আনুকূল্যে তোমাদিগের স্তূপের চতুষ্পার্শ্বস্থ তোরণ-চতুষ্টয় নির্ম্মিত হইবে। অবশিষ্টাংশের ব্যয় প্রকৃতবিশ্বাসীগণ বহন করিবেন। ভরসা করি, সদ্ধর্ম্মের পুনরুত্থান ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের পতন হইবে। যে অশ্মরাশি সঞ্চিত হইয়াছে তাহা দ্বারা নির্ম্মিত গগনস্পর্শী স্তূপ আচন্দ্রার্কক্ষিতি সমকাল সদ্ধর্ম্মের উন্নতির সাক্ষীরূপে বিরাজ করিবে।”

 এই সময়ে নগরের দিকে রাজপথে ধূলি উত্থিত হইল; কিয়ৎক্ষণ পরে দৃষ্ট হইল জনৈক অশ্বারোহী দ্রুতবেগে আমাদের দিকে আসিতেছে। নিকটবর্ত্তী হইলে জানা গেল সে ব্যক্তি একজন নগররক্ষী; নগরে পশ্চিম দেশবাসী কয়েকজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির আগমন সংবাদ রাজসমীপে নিবেদন করিতে আসিয়াছে। রাজা ও পূর্ব্বোক্ত বৃদ্ধ, সংবাদ প্রাপ্তি মাত্রেই, নগরে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন। দিন বৃদ্ধির সহিত প্রান্তরে জনসংখ্যার হ্রাস হইতে লাগিল; দ্বিপ্রহরকালে বিশাল প্রান্তর জনশূন্য হইয়া গেল।

 পরদিন প্রত্যূষে রাজা ধনভূতি, বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজক ও নগরের কতিপয় প্রধান ব্যক্তি অভিনব পরিচ্ছদধারী চারিজন বিদেশীয়কে সঙ্গে লইয়া শিলাসঞ্চয়স্থলে উপস্থিত হইলেন। ইহার পূর্ব্বে আর কখনও সে জাতীয় মনুষ্য দেখি নাই। যবন সমাগমে ভারতের যখন সর্ব্ববিষয়ে পরিবর্ত্তন সূচিত হইতেছিল, তখন আমি পর্ব্বতসানুদেশে—অর্দ্ধজাগ্রত অবস্থায়। তাহাদের কথা আমি পরে শুনিয়াছি। সেই প্রথম যবন দর্শনের দিনে তাহাদিগকে দেখিয়া যাহা ভাবিয়াছিলাম, তাহা বলিতেছি। দারিদ্র্যপীড়িত হইলেও যেমন লাবণ্য উপলব্ধি করা যায়, ভস্মাচ্ছাদিত হইলেও যেমন অগ্নির অস্তিত্ব বুঝা যায়, সেইরূপ ভারতীয় পরিচ্ছদ ও ভাষা সত্ত্বেও স্পষ্ট বোধ হইতেছিল যে, তাহারা বিদেশীয়। তাহাদিগের নাম ও রূপাকৃতি ব্যতীত তাহাদিগের যবনত্বের আর সমুদায় নিদর্শনই লুপ্ত হইয়াছিল। তাহাদিগের পরিচ্ছদ শীতপ্রধান দেশোপযোগী, তাহারা গান্ধার ও মদ্রদেশে ব্যবহৃত পশুলোম নির্ম্মিত বস্ত্র ও গাত্রাবরণ পরিধান করিয়াছিল; তাহাদিগের বস্ত্র অতি মলিন, অত্যন্ত অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধময়। প্রথম প্রহরে যখন সূর্য্যোত্তাপ ক্রমশঃ প্রখর হইয়া উঠিতে লাগিল তখন তাহারা স্বেদপরিপ্লুত হইলে দুর্গন্ধের ভয়ে রাজা দূরে গমন করিলেন। তাহাদের নামগুলিও বিস্ময়কর যথা,—কিলিকীয় মাখেতা, অলসদ্দবাসী লিওনাত, ঔদ্যানক থৈদোর এবং কপিশাবাসী আর্ত্তিমিদর। পরে জানিয়াছি, অলসদ্দ নগরে শাকেতবিজয়ী যবনরাজ মেনন্দ্র জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ইহাদিগের মধ্যে খোদন ও তক্ষণ শিল্পের ইতিহাস সম্বন্ধে আলোচনা হইত। তাহা হইতে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য শিল্পের সামান্য জ্ঞানলাভ হইয়াছিল। সে কথা পরে যথাসময়ে বলিব।

 রাজা আসিয়া তাঁহার চিরপোষিত আশা অনুসারে সেই প্রান্তর মধ্যে প্রবাহিত ক্ষুদ্র নির্ঝরিণীতীরে স্তূপনির্ম্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন। বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজক তাঁহার প্রস্তাব সমর্থন করিলেন। পরিশেষে যবনগণের পরামর্শ অনুসারে নদী হইতে অল্প দূরে স্তূপ নির্ম্মাণ করাই স্থির হইল। তখন একে-একে, দুইয়ে-দুইয়ে মুণ্ডিতশীর্ষ চীরধারী ভিক্ষুগণ নগর হইতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভিক্ষুগণ স্থবির ধর্ম্মযাজকের পশ্চাদ্দেশে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দণ্ডায়মান হইলেন, নগর হইতে আনীত সদ্যঃ প্রস্ফুটিত পুষ্পরাশি প্রান্তরে স্তূপীকৃত হইল। রাজা, রাণী ও রাজপুত্র বাধপাল, ধর্ম্মরাজকের উপদেশানুসারে ধরিত্রীকে পুষ্পাঞ্জলি নিক্ষেপে পূজা করিলেন। রাজবংশধর নিক্ষিপ্ত সেই পুষ্পমুষ্টির উপরে সমবেত জনসাধারণ ক্রমাগত পুষ্পবৃষ্টি করিয়া একটি ক্ষুদ্র স্তূপের সৃষ্টি করিল। বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজক তখন উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন যে, তথাগতের বাক্যানুসারে সমুদায় স্তূপ ও গর্ভচৈত্যই অর্দ্ধবৃত্তাকার ও তৎসমুদায়ের উচ্চতা নৈমদৈর্ঘ্যের সমান। তখন ধর্ম্মযাজকেরা পুষ্প লইয়া সেই কুসুমস্তূপের পার্শ্বে পত্র ও পুষ্পদ্বারা গোলাকার বেষ্টনী নির্দ্দেশ করিলেন এবং পুষ্প, চন্দন ও জলদ্বারা স্তূপের অর্চ্চনা করিলেন। ইহার পর রাজা ধর্ম্মযাজকগণ পরিবৃত হইয়া সপ্তবার স্তূপ প্রদক্ষিণ করিলেন। ক্রমে সূর্য্যতাপতাড়িত হইয়া জনসমূহ নগরাভিমুখে চালিত হইল। সেই দিন সন্ধ্যাকালে, অন্ধকারাগমের অব্যবহিত পূর্ব্বে, ভীতচকিত পাদক্ষেপে দুইজন লোক আমাদের সমীপে আসিল। তাহারা বিদেশীয় নহে, ভারতীয় বটে; কিন্তু যেন বন্য জন্তুর ন্যায় অন্ধকারের আশ্রয়ে ভ্রমণ করে। তাহারা যেন মানবজাতির অধিকারচ্যুত হইয়া নিশাচরে পরিণত হইয়াছে। তাহারা ব্রাহ্মণজাতীয়, ঈর্ষ্যায় তাহাদিগের কলেবর কম্পবান, রোষে তাহাদের নেত্র রক্তবর্ণ; আমাদিগকে দেখিয়া তাহারা যেন আর আত্মসম্বরণ করিতে পারিতেছিল না। তাহারা মুখের ভাবে ও কথোপকথনে প্রকাশ করিতে লাগিল যে, তাহাদিগের আশা-ভরসা, সুখ-সম্পদ সকলই দূর হইয়া গিয়াছে। সুদিন প্রত্যাবর্ত্তনের যে আশা ছিল তাহাও যেন এই প্রস্তররাশির আগমনে একেবারে লুপ্ত হইয়াছে। অসহায় প্রস্তররাশির উপর নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিয়া ও পদাঘাত করিয়া তাহাদিগের মনুষ্যপদলোপের পরিচয় দিতে লাগিল। তাহাদিগের কথোপকথনে জানিলাম যে, বহুপূর্ব্বে সে দেশে ব্রাহ্মণেয় প্রভাব অক্ষুণ্ণ ছিল। প্রিয়দর্শীর রাজত্বকালে ব্রাহ্মণের প্রথম মর্য্যাদাহানি হয়, তাহার পর ব্রাহ্মণগণ আর কখনই পূর্ব্বগৌরবলাভে সমর্থ হয়েন নাই। তবে পুষ্যমিত্রের রাজত্বলাভের পর হইতে বৌদ্ধপ্রভাবের হ্রাস হইয়াছিল। কিন্তু সে অত্যল্প কালের জন্য। পাটলিপুত্রবাসী বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজকের আগমনকাল হইতে ব্রাহ্মণগৌরব পুনরায় তিরোহিত হইয়াছে। তাহারা যতবার সেই বর্ষীয়ান যাজকের নাম গ্রহণ করিল, ততবারই ভূমিতে নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিল, তাহারা যেন আর কোন প্রকারে সম্যক্‌ ঘৃণা প্রকাশ করিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। কিয়ৎকাল পরে দূরে নগররক্ষিগণের পদশব্দ শ্রবণে তাহারা অন্ধকারে মিলাইয়া গেল।

 পরদিন প্রভাতে যবনচতুষ্টয় অসংখ্য শ্রমজীবী সমভিব্যাহারে প্রান্তরে আসিয়া উপস্থিত হইল। শ্রমজীবিগণ তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া কার্য্যে প্রবৃত্ত হইল। একভাগ প্রস্তর সমূহ আচ্ছাদনের নিমিত্ত পর্ণকুটীর নির্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইল; অপর ভাগ ভূমিতে গর্ত্ত খনন আরম্ভ করিল ও তৃতীয় ভাগ সঞ্চিত শিলাখণ্ড সমূহ আকারানুসারে শ্রেণীবিভাগ করিতে লাগিল। সেই দিন অপরাহ্ণে একজন যবন মসৃণ চর্ম্মখণ্ড, মসী ও লেখনী লইয়া চিত্রাঙ্কনে প্রবৃত্ত হইল। যথাসময়ে চিত্রাবলী প্রস্তুত হইলে স্থবির ধর্ম্মযাজক আসিয়া তাহা পর্য্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। যবনগণ কোশলের ও উদ্যানের ভাষা মিশ্রিত করিয়া আপনাদের বক্তব্য তাহাকে বুঝাইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। যথাসময়ে অঙ্কিত চিত্র রাজার অনুমোদিত হইল। তখন বুঝিতে পারি নাই যে, আমাদেরই খণ্ডিত দেহসমূহ শতধা বিভক্ত হইয়া, সহস্র সুতীক্ষ্ণ অস্ত্রাঘাত সহ্য করিয়া যেরূপ শ্রেণীবিন্যাসে ন্যস্ত হইবে এই চিত্রাবলী তাহারই। যথাসময়ে পর্ণশালা নির্ম্মিত হইল, আমাদের উৎপীড়ন আরব্ধ হইল। পাষাণদেহে যদি শোণিত থাকিত তাহা হইলে আমাদিগের শোণিত-প্রবাহে কোশল হইতে চোলমণ্ডল পর্য্যন্ত সমগ্র ভূভাগ প্লাবিত হইয়া সমুদ্রগর্ভে লীন হইত। পাষাণের যদি শ্রবণস্পর্শী আর্ত্তনাদের ক্ষমতা থাকিত তাহা হইলে আমাদিগের আর্ত্তনাদে হিমাচলের পদ কম্পিত হইত; আর্য্যাবর্ত্ত হইতে দক্ষিণাপথ পর্য্যন্ত সমগ্র ভূভাগ শব্দিত হইয়া উঠিত; তোমরাও বহুপূর্ব্বে আবিষ্কার করিতে যে, পাষাণেরও বেদনা অনুভব করিবার শক্তি আছে। জীবনের প্রারম্ভে সমুদ্রসৈকতে যে পরার্দ্ধ পরার্দ্ধ বালুকাকণা একত্র মিলিত হইয়াছিলাম, যাহাদিগের সহিত লক্ষ লক্ষ বর্ষ সমুদ্রগর্ভে, পর্ব্বত-সানু দেশে একত্র বাস করিয়াছি, তাহাদিগের মধ্যে কত সহস্র কণা সুতীক্ষ্ণ লৌহের আঘাতে বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। তাহারা এখন সেই প্রান্তরে বাস করিতেছে। সে প্রান্তর এখন উর্ব্বর শস্যক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে, সে নদী শুষ্ক হইয়াছে, ও তাহার জলস্রোতঃ অন্য পথে প্রবাহিত হইতেছে। এখনও কোল ও মুণ্ডা জাতি হলকর্ষণকালে আমাদিগের উৎপীড়কদিগকে অভিশাপ দিয়া থাকে; কারণ, তাহাদিগের জন্যই দরিদ্র পার্ব্বত্য জাতির হল-ফলক অকালে ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়া থাকে।

 বেদনা দূর হইলে দেখিয়াছি, অসম প্রস্তরশ্রেণী সমান্তরালে স্থাপিত হইয়াছে; তাহা হইতে স্তম্ভ, সূচি, আলম্বন, তোরণ প্রভৃতি তোমরা যাহা কিছু দেখিয়াছ তৎসমুদায় প্রস্তুত হইয়াছে; কেবল যথাস্থানে বিন্যস্ত হইলেই হয়। দূরে রক্তবর্ণ প্রস্তর নির্ম্মিত অর্দ্ধবৃত্তাকার স্তূপ প্রায় সম্পূর্ণ হইয়া আসিয়াছে। আচ্ছাদনখণ্ডসমূহের মার্জ্জনামাত্র অবশিষ্ট আছে। নগর হইতে প্রতিদিন দলে দলে নাগরিক ও নাগরিকাগণ যবনশিল্পিগণের তক্ষণচাতুর্য্য দেখিতে আসিত। পরিষদ্‌ চতুষ্পাঠি ত্যাগ করিয়া ছাত্রগণ, আয়তন হইতে শিশুগণ সূর্য্যোদয় হইতে সূর্য্যাস্তকাল পর্য্যন্ত সেই পর্ণকুটীরের অভ্যন্তরে বসিয়া থাকিত। সন্ধ্যাসমাগমে বিলাসিগণ রথারোহণে, হীনবিত্ত নাগরিকগণ পদব্রজে, দলে দলে, নব খোদিত চিত্রাবলী দেখিতে আসিতেন। তাঁহাদিগের সহিত মিশ্র ভাষায় শিল্পিগণের কথোপকথন হইত, তাহা হইতে যাহা জানিতে পারিতেছি তাহাই বলিয়া যাইতেছি;—

 নাগরিকগণ বলিতেন যে, পারসিক-সমাগমের পূর্ব্বে এতদ্দেশে মন্দির বা স্তূপ নির্ম্মাণের প্রথা বা আবশ্যকতা ছিল না, কারণ ভারতীয় প্রথা অনুসারে দেবার্চ্চনার জন্য মন্দির বা স্তূপের প্রয়োজন হইত না। ব্রাহ্মণগণ পর্ব্বতে, বনে বা নদীতীর্থে যাজন করিতেন, উন্মুক্ত আকাশই তাঁহাদিগের মন্দির ছিল। যখন কপিশা হইতে বাহ্লীক ও উদ্যান পর্য্যন্ত সমগ্র ভূমি পারসিক জাতির পদানত হইয়াছিল, তখন তাহাদিগেরই চেষ্টায় এতদ্দেশে দেবায়তন নির্ম্মাণ আরব্ধ হয়। তখন হইতে মূলস্থানপুরে মিত্র দেবের মন্দির, বরুণ পর্ব্বতে চন্দ্রের মন্দির প্রভৃতি নির্ম্মিত হইতে লাগিল। অবশ্য ইহার বহুপূর্ব্ব হইতেই এতদ্দেশে তক্ষণ-শিল্প বহুলভাবে প্রচলিত ছিল, তবে ভাস্করগণ আপনাদের শিল্পচাতুর্য্য প্রাচীর, স্তম্ভ, দুর্গপ্রাকার প্রভৃতির শোভাসংবর্দ্ধনে নিযুক্ত করিতেন। অদ্যাপি সেই প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্য্যপ্রথা স্তূপ ও মন্দিরবেষ্টন-শোভনকালে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। পারসিকেরা বভেরু বা বাবিরুষ ও নানাদেশীয় শিল্প এতদ্দেশে আনয়ন করেন। কিন্তু ভারতীয় ভাস্করগণ কখনই অবিমিশ্রভাবে বিদেশীয় ভাস্কর্য্য অবলম্বন করেন নাই। যখন ভারতবাসীকে বিদেশীয় জাতির নিকট নতশির হইতে হইয়াছে তখনই বিদেশীয়গণ বর্ব্বর হইলে পদানত জাতির অধীনতা স্বীকার করিয়াছে, কিন্তু সভ্য ও শিক্ষিত হইলে উভয় জাতির মধ্যে শিক্ষার আদান প্রদান চলিয়াছে। যবনগণ ইহার উত্তরে কহিতেন যে, তাঁহারা পাষাণে মনুষ্যাকৃতি যথাযথ খোদিত করিতে পারেন। এই শিল্প তাঁহারা মিজ্রাইম্‌ দেশ হইতে প্রাপ্ত হইয়াছেন। ইহার পূর্ব্বে কোন জাতি এতদূর দক্ষতার সহিত পাষাণে জীবিত মনুষ্যের রূপাকৃতি গঠনে সমর্থ হয়েন নাই। মিজ্রাইম্‌ দেশবাসিগণও মূর্ত্তিগঠনে এতদূর কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। কিলিকীয় মাখেতা কহিতেন যে, যবনদ্বীপপুঞ্জ ও মিজ্রাইম্‌ দেশের মধ্যবর্ত্তী সমুদ্রকূলে কিলিকীয়া দেশে তাঁহার বাস। যৌবনে তিনি মিজ্রাইম্‌বাসী ও আদিম যবন অধিবাসী উভয় জাতিই দেখিয়াছেন; কারণ, স্থলপথে যে সার্থবাহগণ নিগমবদ্ধ হইয়া উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যব্যপদেশে গমনাগমন করিতেন, তাঁহারা অধিকাংশ সময়েই তাঁহার জন্মভূমির মধ্য দিয়া গমন করিতেন, এতদ্ব্যতীত সহস্র সহস্র যবন কিলিকীয়া দেশে বাস করিয়াছিল। তাঁহার পূর্ব্বপুরুষগণও তাহার মধ্যে অন্যতম। সুতরাং বাহ্লীক বা গান্ধারবাসী যবন অপেক্ষা আদিম যবনদেশবাসী স্বজাতিগণ সম্বন্ধে তাঁহার অভিজ্ঞতা অপেক্ষাকৃত অধিক। তিনি শুনিয়াছেন যে, অলিকসুন্দরের সহযাত্রিগণ স্বদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া যে বিবরণ প্রদান করিয়াছেন তাহার অধিকাংশ অমূলক। তিনি দেশে শুনিয়াছিলেন যে, ভারতবাসিরা প্রস্তর খোদনে নিপুণতার অভাবে দারুময় গৃহে বাস করে ও গৃহসমূহ কারুকার্য্যে শোভিত করে; কিন্তু তিনি এ দেশে আসিয়া দেখিয়াছেন যে, এ দেশে বহু প্রাচীন প্রস্তরনির্ম্মিত গৃহনগরাদি বিদ্যমান আছে ও ভারতবাসিগণ প্রস্তর-তক্ষণে বিলক্ষণ নিপুণ। পঞ্চনদবাসিগণ কাষ্ঠখোদনে অত্যন্ত নিপুণ এবং প্রস্তরানভাব সত্ত্বেও খোদিত কারুকার্য্যময় কাষ্ঠনির্ম্মিত গৃহ বহুল পরিমাণে ব্যবহার করিয়া থাকে। নাগরিকগণ কহিলেন যে, পারসিক অধিকার কালে বাহ্লীক হইতে পঞ্চনদ পর্য্যন্ত ভূখণ্ডে ঐরাণদেশীয় ভাস্কর্য্যের সর্ব্বোৎকৃষ্ট অংশ গৃহীত হইয়াছে ও ক্রমে সমগ্র ভারতে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে। যে স্তূপ নির্ম্মিত হইতেছে তাহার চারিটি তোরণ স্তম্ভের শীর্ষদেশে যে সিংহচতুষ্টয় খোদিত হইয়াছে তাহা পারসিক ভাস্কর শিল্প-প্রভাবের অন্যতম ফল। কিলিকীয় মাখেতা ইহা স্বীকার করিয়া কহিলেন যে, স্তম্ভশীর্ষে জীবজন্তুর আকৃতির অনুসরণ প্রাচীন জাতিসমূহের মধ্যে ছিল না। প্রাচীন মিজ্রাইম্ দেশীয়গণও স্তম্ভশীর্ষে প্রস্ফুটিত বা প্রস্ফুটনোন্মুখ পদ্মের অনুকরণ করিতেন। অলসদ্দবাসী লিওনাত কহিলেন যে, প্রাচীন ভারতে চতুষ্কোণ বা অষ্টকোণ স্তম্ভ ব্যবহৃত হইত, অনুমান হয়। কারণ প্রাচীন হর্ম্ম্যমাত্রেই এইরূপ স্তম্ভ দেখা যায়; গোলাকার স্তম্ভ অতীব বিরল। বাহ্লীকনিবাসী যবনগণ যখন শকজাতির তাড়নায় পূর্ব্বাভিমুখে যাত্রা করিতে বাধ্য হয়েন, যখন প্রাচীন বাহ্লীক রাজ্য চিরকালের জন্য ভারতীয়গণের হস্তচ্যুত হয়, তখন হইতেই ভারতে যাবনিক শিল্প-প্রণালীর সূচনা হইয়াছে। কিন্তু ইহা অদ্যাবধি সুবস্তু নদীর দক্ষিণ তীরে প্রবেশ লাভ করে নাই। কোন একজন বিশিষ্ট নাগরিক কহিলেন যে, তাঁহার পিতা আনর্ত্ত দেশ হইতে পোতারোহণে ময়ূর বিক্রয়ের জন্য বভেরু নগরে গমন করিয়াছিলেন। তিনিও এই বাণিজ্যযাত্রায় আরব দেশ অতিক্রম করিয়া ধূপ ও গন্ধদ্রব্য আহরণের জন্য মিজ্রাইম্‌ দেশের দক্ষিণস্থ রাক্ষসগণের দেশে গিয়াছিলেন। সে দেশের অধিবাসিগণ দাক্ষিণাত্যবাসিগণের ন্যায় ঘোর কৃষ্ণবর্ণ ও খর্ব্বাকার। মিজ্রাইম্‌বাসিগণ এই দেশকে পু-আহিত নামে অভিহিত করেন ও ভারতবাসী বণিকগণ উহাকে অপভ্রংশ করিয়া পুণ্য-নাম দিয়াছেন। এইরূপ কথোপকথনে দিবস অতিবাহিত হইত। সন্ধ্যাকালে শিল্পী, শ্রমজীবী ও নাগরিকগণ নগরে প্রত্যাবর্ত্তন করিতেন। কেবল শান্তিরক্ষকগণ খোদিত প্রস্তরের রক্ষণাবেক্ষণ জন্য রাত্রিকালে প্রান্তরের মধ্যে বাস করিত। কারণ, একদা ব্রাহ্মণগণ ঈর্ষ্যাবশতঃ ভাস্করগণের বহু পরিশ্রমের ফল বিনাশ করিবার চেষ্টা করিয়াছিল।