পূরবী/পূরবী/উৎসবের দিন

উৎসবের দিন

ভয় নিত্য জেগে আছে প্রেমের শিয়র-কাছে,
মিলন-সুখের বক্ষোমাঝে।
আনন্দের হৃৎস্পন্দনে আন্দোলিছে ক্ষণে-ক্ষণে
বেদনার রুদ্র দেবতা যে।
তাই আজ উৎসবের ভোর -বেলা হ’তে
বাষ্পাকুল অরুণের করুণ আলোতে
উল্লাস-কল্লোলতলে ভৈরবী রাগিণী কেঁদে বাজে
মিলন-সুখের বক্ষোমাঝে।

নবীন পল্লব -পুটে মর্ম্মরি’ মর্ম্মরি’ উঠে
দূর বিরহের দীর্ঘশ্বাস;
ঊষার সীমন্তে লেখা উদয় -সিন্দুর -রেখা
মনে আনে সন্ধ্যার আকাশ।

আম্রের মুকুল-গন্ধে ব্যাকুল কী সুর
অরণ্য-ছায়ার হিয়া করিছে বিধুর;
অশ্রুর অশ্রুত-ধ্বনি ফাল্গুনের মর্ম্মে করে বাস,
দূর বিরহের দীর্ঘশ্বাস।

দিগন্তের স্বর্ণদ্বারে  কতবার বারে বারে
এসেছিলো সৌভাগ্য-লগন।
আশার লাবণ্যেভরা জেগেছিলো বসুন্ধরা,
হেসেছিলো প্রভাত-গগন।
কত না উৎসুক-বুকে পথ-পানে ধাওয়া,
কত না চকিতচক্ষে প্রতীক্ষার চাওয়া
বারেবারে বসন্তেরে ক’রেছিলো চাঞ্চল্যে-মগন,
এসেছিলো সৌভাগ্য-লগন।

আজ উৎসবের সুরে তা’রা মরে ঘুরে ঘুরে,
বাতাসেরে করে যে উদাস।
তা’দের পরশ পায়, কী মায়াতে ভ’রে যায়
প্রভাতের স্নিগ্ধ অবকাশ।
তা’দের চমক লাগে চম্পক-শাখায়,
কাঁপে তা’রা মৌমাছির গুঞ্জিত পাখায়,
সেতারের তারে তারে মূর্চ্ছনায় তা’দের আভাস
বাতাসেরে করিল উদাস।

কালস্রোতে এ অকূলে আলোচ্ছায়া দুলে দুলে
চলে নিত্য অজানার টানে।
বাঁশি কেন রহি’ রহি’ সে আহ্বান আনে বহি’
আজি এই উল্লাসের গানে?
চঞ্চলেরে শুনাইছে স্তব্ধতার ভাষা,
যার রাত্রি-নীড়ে আসে যত শঙ্কা আশা।
বাঁশি কেন প্রশ্ন করে, “বিশ্ব কোন্ অনন্তের পানে
চলে নিত্য অজানার টানে?”

যায় যাক, যায় যাক, আসুক দূরের ডাক,
যাক ছিঁড়ে সকল বন্ধন।
চলার সংঘাত-বেগে সঙ্গীত উঠুক জেগে
আকাশের হৃদয়-নন্দন।
মুহূর্ত্তের নৃত্য-চ্ছন্দে ক্ষণিকের দল
যাক পথে মত্ত হ’য়ে বাজায়ে মাদল;
অনিত্যের স্রোত বেয়ে যাক ভেসে হাসি ও ক্রন্দন,
যাক ছিঁড়ে সকল বন্ধন।


(ফাল্গুন, ১৩৩০)