পূরবী/পূরবী/গানের সাজি

গানের সাজি

গানের সাজি এনেছি আজি
ঢাকাটি তা’র লও গো খুলে
দেখো তো চেয়ে কী আছে।
যে থাকে মনে স্বপন-বনে
ছায়ার দেশে ভাবের কূলে
সে বুঝি কিছু দিয়াছে।
কী যে সে তাহা আমি কী জানি,
ভাষায় চাপা কোন্ সে বাণী
সুরের ফুলে গন্ধ খানি
ছন্দে বাঁধি’ গিয়াছে,
সে ফুল বুঝি হ’য়েছে পুঁজি,
দেখো তো চেয়ে কী আছে।

দেখো তো, সখি, দিয়েছে ও-কি
সুখের কাঁদা দুঃখের হাসি,
দুরাশা-ভরা চাহনি?
দিয়েছে কি না ভোরের বীণা,
দিয়েছে কি সে রাতের বাঁশি
গহন-গান-গাহনি?
বিপুল ব্যথা ফাগুন-বেলা,
সোহাগ কভু, কভু বা হেলা,
আপন মনে আগুন-খেলা
পরাণমন-দাহনি,—
দেখো ত ডালা, সে স্মৃতি-ঢালা
আছে আকুল চাহনি?


ডেকেছে, কবে মধুর রবে
মিটালে কবে প্রাণের ক্ষুধা
তোমার কর-পরশে,
সহসা এসে করুণ হেসে
কখন চোখে ঢালিলে সুধা
ক্ষণিক তব দরশে,—

বাসনা জাগে নিভৃতে চিতে
সে সব দান ফিরায়ে দিতে
আমার দিন-শেষের গীতে;
সফল তা’রে করো সে।
গানের সাজি খোলো গো আজি
করুণ কর-পরশে।

রসে বিলীন সে সব দিন
ভ’রেছে আজি বরণ ডালা
চরম তব বরণে।
সুরের ডোরে গাঁথনি ক’রে
রচিয়া মম বিরহ মালা
রাখিয়া যাবো চরণে।
একদা তব মনে না র’বে,
স্বপনে এরা মিলাবে কবে,
তাহারি আগে মরুক তবে
অমৃতময় মরণে
ফাগুনে তোরে বরণ ক’রে
সকল শেষ বরণে॥


(ফাল্গুন, ১৩৩০)