পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/দ্বিপক্ষ পতঙ্গ/কুকুরে-মাছি

কুকুরে-মাছি

 কুকুরের গায়ের মাছি তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। ইহাদের চেহারা যেন গোলাকার, কতকটা কাঁক্‌ড়ার আকৃতির মত। গোরুর গায়েও এই রকম মাছি অনেক বসিয়া থাকিতে দেখা যায়।

 কুকুরে-মাছির জীবন বড়ই অদ্ভুত। ইহারা ডিম পাড়ে না এবং বাচ্চাও প্রসব করে না। পেটের ভিতরেই ডিম ফোটে। তার পরে মায়ের পেটের খাদ্য খাইয়া বাচ্চারা পেটের ভিতরেই বড় হয় এবং সেখানেই পুত্তলি-অবস্থা পায়। কুকুরে-মাছিরা এই পুত্তলি-সন্তানদিগকেই প্রসব করে। সাধারণ মাছিরা পচা জায়গায় ডিম পাড়ে, কারণ ডিম ফুটিলে যে বাচ্চা হয়, তাহা পচা জিনিসই খায়। কুকুরে-মাছিরা পুত্তলি বাচ্চা প্রসব করে; পুত্তলিরা কিছুই

চিত্র ৬২—কুকুরে-মাছি।

খায় না; খোলসের ভিতরে মড়ার মত পড়িয়া থাকে। এজন্য কুকুরে-মাছিরা পুত্তলি বাচ্চা পচা জায়গায় প্রসব করে না। প্রায়ই শুক্‌নো ধূলামাটির বা আবর্জ্জনার মধ্যে ইহাদিগকে দেখা যায়। গোরু কুকুর প্রভৃতির রক্তই এই মাছিদের প্রধান খাদ্য।

 কেবল কুকুরে-মাছিই যে গোরুর উপরে অত্যাচার করে, তাহা নয়। একজাতীয় মাছি গোরুর গায়ে ঘা করিয়া ভয়ানক উৎপাত করে। কেবল গোরু নয়, ঘোড়া ভেড়া ইত্যাদিও ইহাদের হাত হইতে উদ্ধার পায় না।

 এই মাছিরা গোরু বা ঘোড়ার গায়ে ডিম পাড়ে। সেগুলি কয়েক দিন গায়ের লোমে জড়াইয়া থাকিয়া ফুটিয়া উঠিলে ছোট বাচ্চা বাহির হয়। গোরুরা কি-রকমে নিজেদের গা চাটে তাহা তোমরা দেখিয়াছ। গায়ে মাছির বাচ্চা বেড়াইতে আরম্ভ করিলে, তাহারা বাচ্চাগুলিকে গা হইতে চাটিয়া গিলিয়া ফেলে। মাছির বাচ্চার মুখে যে বাঁকানো বঁড়শি থাকে, তাহার কথা তোমরা আগেই শুনিয়াছ। গোরুর মুখের ভিতরে গেলেও এই বাচ্চাদের সকলগুলি পেটে গিয়া পৌঁছে না; তাহাদের মধ্যে অনেকগুলিই বাঁকানো বঁড়শি দিয়া গোরুর গলার নালী কাম্‌ড়াইয়া পড়িয়া থাকে এবং ক্রমে গলার মাংস কাটিয়া সেখানে বাসা বাঁধে। এই রকমে আশ্রয় পাইয়া বেশ বড় হইয়া দাঁড়াইলে, বাচ্চারা গলার নালীর মধ্যে থাকিতে চায় না। তখন তাহারা বাহিরে আসে এবং গোরুর পিঠের চামড়া কাটিয়া নূতন ঘর বনায়। এই রকমে পোকারা চামড়ার নীচে প্রবেশ করিলে, গোরুর গায়ের সেই জায়গাটা ফুলিয়া উঠে এবং তাহার অসুখ করে।

 বাতাসের অক্সিজেন্ না পাইলে কোনো প্রাণীই বাঁচে না। মাছির বাচ্চারা যখন গোরুর পিঠের ঘায়ে বাস করে, তখন তাহাদেরো বাতাসের দরকার হয়। এই জন্য ইহারা কখনই ঘায়ের মুখ বন্ধ হইতে দেয় না। গোরুর গায়ের চাম্‌ড়া গোলাকারে কাটিয়া ঘা খোলা রাখে এবং বাতাস হইতে অক্সিজেন টানিতে থাকে।

 যাহা হউক, ঘায়ে থাকিয়া বেশ বড় হইয়া পড়িলে, পোকাগুলি আর সেখানে থাকিতে চায় না। তখন ধীরে ধীরে ঘা হইতে বাহির হইয়া কোনো নিরিবিলি জায়গায় পুত্তলি-অবস্থায় পড়িয়া থাকে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডানাওয়ালা মাছির আকারে উড়িতে আরম্ভ করে। এই মাছিরা গোরুদের কি-প্রকার শত্রু একবার ভাবিয়া দেখ! ইহাদের উৎপাতে আমাদের দেশের গোরুগুলা জখম হইয়া যায়।

 কাঁটালে-মাছিরাও গোরুর কম শত্রু নয়। গায়ের কোনো জায়গায় একটু ঘা দেখিলেই তাহারা ঘায়ে বসিয়া বাচ্চা প্রসব করিতে থাকে। পরে সেই সকল বাচ্চা ঘায়ের পচা মাংস খাইয়া বড় হইলে ঘা বাড়িয়া উঠে এবং শেষে গোরু মারা পড়ে।