পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/পতঙ্গ/পতঙ্গের ডানা

ডানা

 পতঙ্গের যে ছবিখানি দেখিতেছ তাহাতে চারিখানি ডানা আছে। এগুলিও গাঁটের গা হইতে বাহির হইয়াছে।

 প্রথম ডানা জোড়াটি হাড়ের মত শক্ত জিনিস দিয়া প্রস্তুত এবং বেশ মোট॥ দ্বিতীয় ডানা জোড়াটি খুব পাত্‌লা। হঠাৎ দেখিলে মনে হয় ইহা যেন ঘন-বুনানি-করা জাল। গাছের পাতায় যেমন শিরা-উপশিরার বুনানি থাকে, ইহাতেও সেই রকম আছে। একটা মাছি বা অপর যে-কোনো পতঙ্গের ডানা লইয়া পরীক্ষা করিলে তোমরা ইহা দেখিতে পাইবে। এই পাত্‌লা ডানাই ইহাদের উড়িতে সাহায্য করে। গোব্‌রে-পোকা প্রভৃতি পতঙ্গেরা যখন মাটির উপরে বেড়ায় তখন তাহার পাত্‌লা ডানা ঐ হাড়ের ডানার মধ্যে লুকানো থাকে। এই জন্য বাহির হইতে সামান্য আঘাত লাগিলে উড়িবার পাত্‌লা ডানা নষ্ট হয় না এবং ভিতরেও সেই আঘাত পৌঁছায় না।

 ইহা হইতে তোমরা বোধ হয় বুঝিতে পারিতেছ—পতঙ্গদের আসল ডানা ছাড়া যে হাড়ের দুখানা ডানা আছে, তাহা উড়িবার জন্য নয়। হাড়ের ডানাই, পাত্‌লা ডানা এবং সমস্ত দেহটিকে ঢাকিয়া রাখে; ইহাতে সামান্য আঘাত লাগিলে দেহের কোনো ক্ষতি করিতে পারে না। এক দিন একটা গোব্‌রে পোকা রাত্রিতে আমার আলোর চারিদিকে ঘুরিয়া ভয়ানক উৎপাত আরম্ভ করিয়াছিল। জুতা দিয়া তাহাকে চাপিয়া ধরিয়াছিলাম,—কিন্তু ইহাতে সে মরে নাই। তাহার সমস্ত শরীরের উপরে যে হাড়ের ডানা ছিল, তাহাই উহাকে রক্ষা করিয়াছিল।

 কিন্তু তাই বলিয়া সকল পতঙ্গের দেহেই যে হাড়ের ডানা আছে, ইহা তোমরা মনে করিয়ো না। গোব্‌রে পোকা জাতীয় পতঙ্গের দেহেই ইহা থাকে। মাছি, প্রজাপতি, মশা প্রভৃতির দেহে হাড়ের ডানা নাই। ইহাদের কাহারো দেহে দুখানা চারিখানা করিয়া পাত্‌লা ডানা দেখা যায়। আবার এ রকম পতঙ্গও অনেক আছে, যাহাদের দেহে ডানার লেশমাত্র নাই। পুরানো বইয়ের মধ্যে যে কাগজ-কাটা সাদা সাদা লম্বা পোকা দেখা যায়, তাহাদের ডানা নাই এবং উকুন ও ছারপোকাদেরও ডানা নাই, কিন্তু তথাপি ইহারা পতঙ্গ।

 গোব্‌রে পোকার মাথা কি রকম তাহা পরীক্ষা করিলে, মাথার নীচে চিংড়ি মাছের দাড়ার মত অনেক অংশ তোমাদের নজরে পড়িবে। এইগুলি লইয়াই গোব্‌রে পোকাদের মুখ প্রস্তুত হইয়াছে। অন্য পতঙ্গদের মুখও প্রায় ঐ-রকম। উপরের ওষ্ঠ, নীচের ওষ্ঠ, খাদ্য চিবাইবার চোয়াল এবং খাদ্য আট্‌কাইবার চোয়াল,—এই চারিটিই মুখের প্রধান অংশ। নীচের ওষ্ঠ ও খাদ্য আট্‌কাইবার চোয়াল, এক-একটা আঙুলের মত অংশ মাত্র। খাদ্য চিবাইবার চোয়াল বড় অদ্ভুত জিনিস। ইহার গায়ে করাতের মত দাঁত-কাটা থাকে, পতঙ্গেরা তাহা দিয়া খাদ্য চিবায়। আমরা প্রায়ই চোয়াল উপর-নীচে নাড়াইয়া খাদ্য চিবাই, পতঙ্গেরা এই রকমে চোয়াল নড়াইতে পারে না। ইহারা চিংড়ি মাছের মত চোয়াল পাশাপাশি চালাইয়া খাদ্য চিবায়।

 প্রজাপতি ও অন্য যে-সকল পতঙ্গ মধু চুষিয়া খায়, তাহাদের মুখের আকৃতি একটু স্বতন্ত্র। আমরা যখন প্রজাপতিদের কথা বলিব, তখন উহাদের মুখের বিবরণ দিব।

 লেজের গঠন প্রায় সকল পতঙ্গেরই এক রকম। পাঁচটা হইতে এগারোটা পর্য্যন্ত আংটি অর্থাৎ গাঁট্ জোড়া দিয়া ইহা প্রস্তুত এবং আংটিগুলি একটার উপরে আর একটা লাগানো থাকে। দূরবীণের নল যেমন একটা আর একটার ভিতরে থাকে, ইহাও যেন সেই রকম। তাই পতঙ্গেরা ইচ্ছা করিলে লেজ ফাঁপাইতে পারে।