লীলাবতী পঞ্চম পুত্তলিকা

কহিল মহারাজ, বিক্রমাদিত্যের কিঞ্চিৎ গুণ কীর্ত্তন করি শ্রবণ কর।

 এক দিবস দুই ব্যক্তিতে বাদানুবাদ করিয়া এক ব্যক্তি কহিল অদৃষ্ট প্রধান পদার্থ, অন্য ব্যক্তি কহিল বল প্রধান। অদৃষ্টবাদী কহিল অদৃষ্টানুসারে অতি সামান্য ব্যক্তিও মান্য ও ধন ধান্য সম্পন্ন হয়, অতএব অদৃষ্টই শ্রেষ্ঠ। বল-মতাবলম্বী কহিল মনুষ্য বলবান, হইলে সমস্ত পৃথিবী তাহার বশীভূত হয় অতএব বলই শ্রেষ্ঠ।

 এই প্রকার বিবাদ উপস্থিত হইলে, উভয়ে দেবরাজের নিকটে গিয়া করপুটে দণ্ডায়মান হইয়া কহিল, স্বামিন, আমাদিগের এই এই প্রকার বিবাদ উপস্থিত, আপনি আমাদের বিবাদ ভঞ্জন করুন।

 ইন্দ্র বলিলেন আমার দ্বারা বিবাদের মীমাংসা হইবেক না, যে ব্যক্তি যােগ-সিদ্ধ হইয়াছেন তাহার দ্বারা ইহার মীমাংসা হইবেক। অতএব তােমরা মর্ত্য লােকে রাজা বিক্রমাদিত্যের নিকটে যাও, তিনি ইহার নিষ্কর্ষ করিয়া দিবেন।  এই বাক্যে তাহারা দুই জনে রাজা বিক্রমাদিত্যের সভায় আসিয়া বলিল, আমরা ত্রিভুবন ভ্রমণ করিলাম, কিন্তু কেহ আমাদিগের বিচার করিতে পারিলেন না, অতএব তােমার নিকট আসিলাম, তুমি আমাদের বিবাদের সিদ্ধান্ত কর। রাজা বিক্রমাদিত্য সন্দিহান হইয়া বলিলেন সম্প্রতি তােমর গৃহ গমন কর, ছয় মাস অতীত হইলে পুনর্ব্বার আমিও, তখন আমি ইহার উত্তর করিব। ইহা শুনিয়া উভয়ে প্রস্থান করিল।

 পরে রাজা বর্ম্ম পরিধান পূর্ব্বক খড়গ চর্ম্ম লইয়া বিদেশ যাত্রা করিলেন, আর প্রতিজ্ঞা করিলেন যে পর্য্যন্ত ইহার মর্ম না পাইব সে পর্যন্ত স্বদেশে প্রত্যাগমন করিব না। এই সংকল্প করিয়া ভ্রমণ করিতে করিতে সমুদ্রতীরে বহুপ্রজ এক নগরে উপস্থিত হইলেন এবং দেখিলেন অনেক উত্তম উত্তম অট্টালিকা রহিয়াছে, তাহা নানা জাতীয় রত্নে খচিত, সুতরাং তাহার অতি অপর্ব্ব শােভা হইয়াছে। তদবলােকনে রাজা মনে মনে ভাবিলেন যে রাজার এই রাজধানী, না জানি তিনি কেমল ধনবন্ত হইবেন। এই চিন্তা করিতে করিতে নগরে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন, এবং যদিও দিবাবসান হইল তথাপি নগরের প্রান্ত পাইলেন না। সন্ধ্যার সময় রাজা দেখিলেন এক বণিক নতশিরা হইয়া স্বীয় পশ্যালয়ে বসিয়া আছেন। তদ্দষ্টে রাজা তাহার সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন। বণিক রাজাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন তুমি কে কোন দেশ হইতে কি প্রয়ােজনে এখানে আসিয়াছ এবং কাহার অন্বেষণ করিতেছ। রাজা বলিলেন আমার নাম বিক্রম। আমার মনােবাঞ্ছা এই যে, রাজকর্মে নিযুক্ত হইব, কিন্তু অদ্য রাজার দর্শন পাইলাম না, এই জন্য তােমার স্থানে আসিলাম, কল্য পুনর্ব্বার তাহার নিকটে যাইব, যদি তিনি উচিত বেতন প্রদান করেন তবে তাহার কর্ম্ম স্বীকার করিব। বণিক জিজ্ঞাসা করিলেন তুমি কি বেতন বাঞ্ছা কর। রাজা উত্তর করিলেন আমি প্রতি- দিন লক্ষ মুদ্রা চাহি। বণিক কহিলেন তুমি এমত কি কর্ম্ম করিবে যে প্রতিদিন রাজা তোমাকে লক্ষ মুদ্রা দিবেন। ভূপতি উত্তর করিলেন আমি যাহার নিকট থাকি তাহার সহস্র বিপদ হইলেও তাহাকে উদ্ধার করিবার ক্ষমতা রাখি। বণিক বলিলেন তবে আমি তােমাকে প্রতিদিন লক্ষ মুদ্র। দিব, তুমি আমার নিকটে থাক। ইহা বলিয়া রাজাকে আপন কর্মে নিযুক্ত করিলেন, এবং পরদিন প্রাতে লক্ষ মুদ্রা দিলেন। রাজা ঐ লক্ষ মুদ্র। প্রথমতঃ দুই ভাগ করিয়া এক ভাগ আপন ইষ্ট-দেবতার প্রত্যর্থ উৎসর্গ করিয়া ব্রাহ্মণদিগকে বিতরণ করিলেন। দ্বিতীয় ভাগের একাদ্ধ বৈষ্ণব অনাথ অন্ধ আতুর দিগকে দিলেন, অপরাদ্ধে অন্ন ব্যঞ্জন রন্ধন করাইয়া দীন দরিদ্র ও ক্ষুধাতুর তাবৎ লােককে ভােজন করাইলেন। এই রূপে সকল মুদ্রা। ব্যয় হইল। পরে এক অতিথি আগত হইয়া প্রার্থনা করাতে, রাজা স্বীয় খজ বন্ধক রাখিয়া তাহাকে ভােজন করাইলেন। এবং আপনি চণক চৰ্ষণ করিয়া রজনী বঞ্চন করিলেন।

 রাজা বণিকের আলয়ে থাকিয়া নিত্য নিত্য এই প্রকার লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করিতে লাগিলেন, তাহাতে অদৃষ্টের পরীক্ষা হইল। তদনন্তর বল পরীক্ষার। বৃত্তান্ত বলিতেছি।

 কিয়দ্দিবস পরে ঐ বণিক এক অর্ণবযান প্রস্তুত করিয়া কোন দুর দেশে যাইবার ইচ্ছা করিলেন, এবং বিক্রমাদিত্যকে কহিলেন আমি স্থানান্তরে গমন করিব। বিক্রমাদিত্য বলিলেন আমি প্রতিশ্রুত হইয়াছি যখন তােমার কর্ম্ম উপস্থিত হইবে তখন আমি তােমার সহায়তা করিব, এই কারণ তুমি আমাকে প্রতিপালন করিয়াছ, অতএব তােমার সঙ্গে গমন করা আমার অবশ্য কর্ত্তব্য। এই কথায় বণিক তাহাকে সমভিব্যাহারে লইয়া যাত্রা করিলেন। কিছু দিবস পরে মধ্যসমুদ্রে গমন সময়ে মহাসমীরণ উঠিল। তাহাতে জলযান জলমগ্ন হইবার আশঙ্কায় বণিক ঐ স্থানে লঙ্গর করিয়া থাকিলেন। পরে ঝটিকা নিবৃত্তি হইলে বণিক অজ্ঞা করিলেন লঙ্গর তুলিয়া চল। কিন্তু লঙ্গর জলের মধ্যে মৃত্তিকাতে কেমন বদ্ধ হইয়া গিয়াছিল কেহ উঠাইতে পারিল না, সুতরাং বণিক জীবনাশায় নৈরাশ হইয়া পরমেশ্বরকে স্মরণ করিয়া কহিলেন হে ব্রহ্মাণ্ডপতে, তােম বিনা এ অকূল সমুদ্রে ত্রাণকর্তা কেহ নাই, তুমি অগতির গতি এবং দীন হীনের রক্ষাকর্তা, অতএব আমাদিগকে পরিত্রাণ কর। অনন্তর বিক্রমাদিত্যকে কহিলেন দেখ আমরা এই বিপদ সমুদ্রে পড়িয়াছি, কূল দৃষ্টি হয় না, এখান হইতে গমন করিতে না পারিলে অবশ্যই মৃত্যু হইবে। তুমি অঙ্গীকার করিয়াছিলে আমার বিপদ কালে উদ্ধার করিবে, ইহা অপেক্ষা আর অধিক বিপদ কি আছে, আমরা কালের মুখে পড়িয়াছি, অতএব এই বিপদ হইতে আমাদিগকে উদ্ধার কর। বণিকের এই সকল বাক্য শ্রবণ করিয়া বিক্রমাদিত্য খঙ্গ চর্ম্ম গ্রহণ পূর্ব্বক রজ্জ, ধারণ করিয়া সাগরযানের নিমভাগে জলের মধ্যে ডুবিয়া গেলেন, এবং লঙ্গর উত্তোলন করিবার অনেক কৌশল করিলেন কিন্তু কোন প্রকারে পারিলেন না। তাহাতে তিনি জল হইতে অর্ণবযানে আসিয়া কর্ণধারকে বাদাম তুলিয়া দিতে কহিলেন। কর্ণধার বাদাম উত্তোলন করিলে বিক্রমাদিত্য জলে লম্ফ দিয়া পড়িয়া লঙ্গরের রজ্জ কাটিয়া দিলেন। তাহাতে তৎক্ষণাৎ শ্রোতঃ ও বায়ু সহকারে সাগরযান একবারে উড়িয়া চলিল। বিক্রমাদিত্য সাগরযানে উঠিতে না পারিয়া দৈবনির্ব্বন্ধ ক্রমে সাগরে ভাসিয়া চলিলেন।

 এই দুদৈবের পর রাজা এক দ্বীপে উঠিলেন। ঐ দ্বীপে সিংহবতী নামে এক কন্যা থাকিতেন। রাজা নগর-দ্বারে যাইয়া দেখিলেন দ্বারের উপর লেখা আছে রাজা বিক্রমাদিত্যের সহিত সিংহবতীর বিবাহ হইবেক। তদৃষ্টে রাজা অতিশয় বিস্ময় যুক্ত হইলেন। পরে নগর প্রবেশ করিয়া এক অপূৰ্ব অট্টালিকাতে উপস্থিত হইলেন। ঐ অট্টালিকা নারীতে পরিপূর্ণ, পুরুষ মাত্র ছিল না। রাজা দেখিলেন সিংহবতী মণিময় পর্যঙ্কে শয়ন করিয়া আছেন, দাসীগণ প্রহরী স্বরূপ চতুর্দিকে উপবিষ্ট আছে। রাজা পর্যঙ্কে উপবেশন করিয়া সিংহবতীর নিদ্রা ভঙ্গ করিলেন। সিংহবতী গাত্রোখান করিলে পর রাজা তাহার কর ধারণ পূর্ব্বক তাহাকে লইয়া সিংহাসনে বসিলেন। সহচরীগণ সিংহাসনের চতুর্দিকে দণ্ডায়মান হইল। অনন্তর কুসুম-মাল্য আনীত হইল, এবং রাজা বিক্রমদিত্য সিংহবতীকে গন্ধর্ব্ব বিধানে বিবাহ করিলেন। পরে উভয়ে সুখে কাল যাপন করিতে লাগিলেন, এবং চন্দ্রের সহিত কুমুদের যেমন প্রণয় রাজারও সিংহবতীতে সেই প্রকার প্রণয় জন্মিল। রাজা বিক্রমাদিত্য সিংহবতীর প্রেমে প্রমত্ত-চিত্ত হইয়া আপনার রাজ্যপাঠ সকল একবারে বিস্মত হইলেন।

 রাজার প্রমত্তভাব দর্শনে সিংহবতীর এক প্রিয়সখী স্বীয় রাজ্ঞীর বিচার ও দয়ার কথা বলিতে বলিতে এক দিবস রাজাকে কহিল হে মানবেন্দ্র তুমি এখানে আসিয়া মায়াজালে বদ্ধ হইয়াছ, এই ভাবে থাকিলে এখান হইতে জীবদ্দশায় কখন প্রস্থান করিতে পারিবে। ইহাতে আমার অন্তঃকরণে অতিশয় দুঃখ জন্মিতৈছে, কেননা তুমি অতি ধর্ম্মাত্মা দাত ও পােপকারী, তােমার নিজ রাজ্যে তােমার অবর্তমানে লক্ষ লক্ষ প্রাণী দুঃখ পাইতেছে। সখীর এই বাক্যে রাজার জ্ঞানােদয় হইল, এবং রাজ্যের চিন্তা করিতে করিতে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন এখান হইতে প্রস্থানের উপায় কি। সখী উত্তর করিল রাজকন্যার অশ্বশালাতে একটা বড় অশ্বিনী আছে, ঐ অশ্বিনী দিবারাত্র সমান ভাবে গমন করিতে পারে, তুমি সেই অশ্বিনীতে আরােহণ করিয়া প্রস্থান কর, নতুবা যাইবার আর অন্য উপায় নাই।

 রাজা পর দিবস রাজ্ঞীর সমভিব্যাহারে অশ্বশালাতে যাইয়া অশ্ব সকল নিরীক্ষণ করিতে করিতে উত্তম উত্তম অশ্বের প্রশংসা করিলেন। রাণী কহিলেন ইহার মধ্যে তােমার যে অশ্বে আরােহণের অভিলাষ হয় তাহাতে আরােহণ করিয়া ভ্রমণ কর। পর দিবস রাজা একটা অশ্বে আবােহণ করিয়া রাণীর সাক্ষাতে অশ্ব চালাইতে লাগিলেন। রাণী তাহা দেখিয়া তুষ্ট হইলেন। এইরূপে কতিপয় দিবস গত হইলে রাজা, দাসীর মুখে যে ঘােটকীর বিবরণ শুনিয়া ছিলেন তাহার পৃষ্ঠে আরােহণ করিলেন। রাণী তাহার অভিপ্রায় না জানিয়া সতর্ক হইতে পারেন নাই। তাহাতে রাজা ঐ অশ্বিনীতে আরোহণ করিয়া কশাঘাত করাতে, অশ্বিনী রাজাকে লইয়া বায়ুবেগে গমন করিল, আর ফিরিল না। রাণী ও সখীগণ অনুতাপ করিতে লাগিলেন।

 রাজা অম্ববতী নগরে উপনীত হইয়া দেখিলেন পঞ্চম পুত্তলিকা। নদীতটে এক সিদ্ধ পুরুষ যােগাভ্যাস করিতেছেন। তাহা দেখিয়া তিনি অশ্ব হইতে অবরােহণ পূর্বক তাহাকে প্রণাম করিয়া তন্নিকটে বসিলেন। অনস্তর যখন ঐ সিদ্ধ পুরুষের যােগ সমাধা হইল, তখন তিনি রাজাকে দেখিয়া তুষ্ট হইলেন, এবং এক ছড়া পুষ্পমাল্য তাহার কণ্ঠ দেশে অর্পণ করিয়া কহিলেন, তােমাকে বিজয় মাল্য দিলাম, তুমি এই মাল্য কণ্ঠ দেশে ধারণ করিয়া যে স্থানে গমন করিবে সেই স্থানেই জয়ী হইবে, আর তুমি সকলকে দেখিতে পাইবে, তােমাকে কেহ দেখিতে পাইবে না। তদনন্তর ঐ মহাপুরুষ তাহার হস্তে এক গাছি যষ্টি দিয়া কহিলেন প্রথম প্রহর রজনীতে এই যষ্টি ধারণ করিয়া রত্ন ও স্বর্ণালঙ্কারাদি যাহা চাহিবে তাহা পাইবে। দ্বিতীয় প্রহর রজনীতে এই যষ্টি তােমাকে অতি রূপবতী যুবতী প্রদান করিবেক। তৃতীয় প্রহর রাত্রে এই যষ্টি হস্তে করিলে তুমি সকলকে দেখিবে, কিন্তু তােমাকে কেহ দেখিতে পাইবে না। এবং চতুর্থ প্রহর নিশায় ইহা কাল স্বরূপ হইবে এবং ইহার ভয়ে কোন শত্রু তােমার নিকটবর্তী হইতে পারিবে না।

 এই সকল কথা বলিয়া তপস্বী রাজাকে বিদায় দিলেন। রাজা তাহাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া উজ্জয়িনী নগরাভিমুখে আসিতে লাগিলেন। নগরের অনতিদূরে উপনীত হইয়া দেখিলেন নগর হইতে এক ভাট ও এক ব্রাহ্মণ আসিতেছে। রাজা তাহাদের নিকটবর্তী হইলে, তাহারা বলিল মহারাজ আমরা বহু-দিবসাবধি আপনার দ্বারস্থ ছিলাম, কিন্তু আমাদিগের গ্রহ বৈণ্য প্রযুক্ত রক্ত হস্তে আসিতেছি। রাজা এই কথা শ্রবণ মাত্র ব্রাহ্মপকে যষ্টি ও ভাটকে মাল্য প্রদান করিয়া, ঐ যষ্টি ও মাল্যের যে যে গুণ তাহা বর্ণন করিলেন। ব্রাহ্মণ ও ভাট উভয়ে অতিশয় আলাদিত হইয়া রাজাকে আশীৰ্বাদ করিয়া বলিল মহারাজ অধুনা তুমি দাতা কর্ণ, তােমার তুল্য দাতা ধরণীতে আর নাই। এই প্রকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পূর্ব্বক নানা প্রকার আশীর্বাদ করিয়া ব্রাহ্মণ ও ভাট প্রস্থান করিল। রাজাও আপন আলয়ে আসিলেন।

 রাজপুরীতে আসিবামাত্র মন্ত্রী ও আমাত্যবর্গ তন্নিকটে উপস্থিত হইলেন, এবং নগরন্থ তাবৎ প্রজা আনন্দ ধ্বনি করিতে লাগিল। পরে যে দুই ব্যক্তি বল ও অদৃষ্টের তারতম্যাবধারণের প্রার্থনা করিয়াছিল তাহারা রাজার আগমন সংবাদে তন্নিকটে উপস্থিত হইয়া কহিল মহারাজ আপনি যে ছয় মাসের নিয়ম করিয়া ছিলেন তাহা অতীত হইয়াছে, এইক্ষণে আমাদের বিবাদের মীমাংসা করুন। রাজা বলিলেন শুন, অদৃষ্ট বিনা কেবল বল কিছুই করিতে পারে না, এবং বল ব্যতিরেকে অদৃষ্ট দ্বারা সম্পূর্ণ উপকার হয়না। অতএব বল ও অদৃষ্ট উভয়ই তুল্য। এই কথা শুনিয়া ঐ দুই ব্যক্তি বিবাদে ক্ষান্ত হইয়া স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিল।

 পুত্তলিকা কহিল মহারাজ তােমাকে এই বিবরণ কহিবার অভিপ্রায় এই যে, তুমি ইহা শ্রবণ করিয়া সিংহাসন আরােহণের মানস পরিত্যাগ কর, যেহেতু রাজা বিক্রমাদিত্যের তুল্য ক্ষমতাবান, ও সদালালঙ্কৃত ব্যক্তিই এই সিংহাসনে বসিবার যােগ্য। তুমি তদুপযুক্ত নহ। এই কথা বলিতে বলিতে সিংহাসনে উপবেশন করিবার কাল অতীত হইল। পরদিবস রাজা পুনর্ব্বার সিংহাসনারােহণার্থ আগমন করিলে,