তৃতীয় স্বর্গ।


যমুনার জল করে থল্ থল্
কলকলে গাহি প্রেমের গান।
নিশার আঁচোলে পড়ে ঢোলে ঢোলে
সুধাকর খুলি হৃদয় প্রাণ!
বহিছে মলয় ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
নুয়ে নুয়ে পড়ে কুসুমরাশি
ধীরি ধীরি ধীরি ফুলে ফুলে ফিরি
মধুকরী প্রেম আলাপে আসি।
আয় আয় সখি! আয় দুজনায়
ফুল তুলে তুলে গাঁথিলো মালা!
ফুলে ফুলে আলা বকুলের তলা।
হেথায় আয়লো বিপিনবালা!

নতুন ফুটেছে মালতীর কলি
ঢলি ঢলি পড়ে এ ওর পানে।
মধুবাসে ভুলি প্রেমালাপ তুলি
অলি কত কি যে কহিছে কাণে।
আয় বলি তোরে, আঁচলটি ভোর
কুড়া না হোথায় বকুল গুলি
মাধবীর ভরে লতা নুয়ে পড়ে
আমি ধীরি ধীরি আনিলো তুলি।
গোলাপ কত যে ফুটেছে কমলা
দেখে যা দেখে যা বনের মেয়ে।
দেখ্ সে হেথায় কামিনী পাতায়
গাছের তলাটি পড়েছে ছেয়ে।
আয় আয় হেথা ওই দেখ ভাই
ভ্রমরা একটি ফুলের কোলে,
কমলা ফুঁদিয়ে দেনালো উড়িয়ে
ফুলটা আমিলো নেব যে তুলে।
পারিনালো আয়, আয় হেথা বসি
ফুল গুলি নিয়ে দুজনে গাঁথি!
হেথায় পবন, থেলিছে কেমন
তটিনীর সাথে আমোদে মাতি!

আয় ভাই হেথা, কোলে রাখি মাথা
শুই এক টুকু ঘাসের পরে
বাতাস মধুর বহে ঝুরু ঝুরু
আঁখি মুদে আসে ঘুমের তরে!
বল্ বনবালা, এত কিলো জ্বালা!
রাত দিন তুই কাঁদিবি বসে
আজো ঘুম ঘোর ভাঙ্গিল না তোর
আজো মজিলিনা সুখের রসে!
তবে যালো ভাই। আমি একেলাই
রাশ্ রাশ্ করি গাঁথিয়া মালা
দুই নদী তীরে কাঁদ‍্গেলো ধীরে
যমুনারে কহি মরম-জ্বালা!
আজো তুই বোন! ভুলিবিনে বন?
পরণ কুটীর যাবিনে ভুলে?
তোর ভাই মন, কেজানে কেমন।
আজো বলিলিনে সকল খুলে?”
“কিবলিব বোন! তবে সব শোন!”
কহিল কমলা মধুর স্বরে
“লভেছি জনম, করিতে রোদন
রোদন করিব জীবন ভোরে!

ভূলির সে বন?—ভূলিব সে গিরি?
সুখের আলয় পাতার কুঁড়ে?
মৃগে যাব ভুলে—কোলে লয়ে তুলে
কচি কচি পাতা দিতাম ছিঁড়ে।
হরিণের ছানা একত্রে দুজনা
খেলিয়ে খেলিয়ে বেড়াত সুখে!
শিঙ্গ ধরি ধরি খেলা করি করি
আঁচল জড়িয়ে দিতাম মুখে:
ভুলিব তাদের থাকিতে পরাণ?
হৃদয়ে সে সব থাকিতে লেখা?
পারিব ভুলিতে যত দিন চিতে
ভাবনার আহা থাকিবে রেখা?
আজ কত বড় হয়েছে তাহারা
হয়ত আমার না দেখা পেয়ে
কুটীরের মাঝে খুজে খুজে খুজে
বেড়াতেছে আহা ব্যাকুল হয়ে।
শুয়ে থাকিতাম দুপুর বেলায়
তাহাদের কোলে রাখিয়ে মাথা
কাছে বসি নিজে গলপ কত সে
করিতেন, আহা তখন মাতা

গিরিশিরে উঠি, করি ছুটাছুটি
হরিণের ছানা গুলির সাথে
তটিনীর পাশে দেখিতাম বসে
মুখ ছায়া যবে পড়িত তাতে!
সরসী ভিতরে ফুটিলে কমল।
তীরে বসি ঢেউ দিতাম জলে
দেখি মুখ তুলে—কমলিনী দুলে
এপাশে ওপাশে পড়িতে ঢলে!
গাছের উপরে—ধীরে ধীরে ধীরে
জড়িয়ে জড়িয়ে দিতেম লতা
বসি একাকিনী আপনা আপনি
কহিতাম ধীরে কত কি কথা!
ফুটিলে গো ফুল হরযে আকুল
হতেম, পিতার কমে গিয়ে!
ধরি হাত খানি আনিতাম টানি
দেখাতেম তারে ফুলটি নিয়ে!
তুষার কুড়িয়ে—আঁচল ভরিয়ে
ফেলতাম ঢালি গাছের তলে
পড়িলে কিরণ, কত যে বরণ
ধরিত, আমোদ যেতাম গলে!

দেখিতাম রবি বিকালে যখন
শিখরের শিরে পড়িত ঢোলে
করি ছুটাছুটি শিখরেতে উঠি
দেখিতাম দূরে গিয়াছে চোলে।
আবার ছুটিয়ে যেতাম সেখানে
দেখিতাম আরো গিয়াছে সোরে!
শ্রান্ত হয়ে শেষে, কুটীরেতে এসে
বাসিতাম মুখ মলিন কোরে।
শশধর-ছায়া পড়িলে সলিলে
ফেলিতাম জলে পাথর-কুচি
সরসীর জল, উঠিত উথুলে
শশধর-ছায়া উঠিত নাচি,
ছিল সরসীতে—এক হাঁটু জল
ছুটিয়া ছুটিয়া যেতেম মাঝে
চাঁদের ছায়ারে, গিয়া ধরিবারে
আসিতাম পুনঃ ফিরিয়া লাজে।
তট দেশে পুনঃ ফিরি আসি পর
অভিমান ভরে ঈষৎ রাগি
চাঁদের ছায়ায় ছুঁডিয়া পাথর
মারিতাম, জল উঠিত জাগি।

যবে জলধর শিখরের পর
উড়িয়া উড়িয়া বেড়াত দলে
শিখরেতে উঠি বেড়াতাম ছুটি
কাপড় চোপড় ভিজিত জলে!
কিছুই—কিছুই-জানিতাম না রে
কিছুই হায়রে বুঝিতাম না
জানিতাম হারে-জগৎ মাঝারে
আমরাই বুঝি আছি কজনা।
পিতার পৃথিবী, পিতার সংসার
একটি কুটীর পৃথিবী তলে—
জানিনা কিছুই ইহা ছাড়া আর
পিতার নিয়মে পৃথিবী চলে!
আমাদেরি তরে উঠেরে তপন
আমাদেরি তরে চাঁদিমা উঠে
আমাদেরি তরে বহেগো পবন
আমাদেরি হয়ে কুসুম ফুটে!
চাইনা জ্ঞেয়ান, চাইনা জানিতে
সংসার, মানুষ কাহারে বলে।
বনের কুসুম—ফুটিতাম বনে
শুকায়ে যেতেম বনের কোলে।

জানিব অমারি পৃথিবী ধরা—
খেলিব হরিণ শাবক সনে—
পুলকে হরষে হৃদয় ভরা,
বিষাদ ভাবনা নাহিক মনে।
তটিনী হইতে তুলিব জল,
ঢালি ঢলি দিব গাছের তলে
পাখীরে বলিব “কমলা বল”
শরীরের ছায়া দেখিব জলে!
জেনেছি মানুষ কাহারে বলে!
জেনেছি হৃদয় কাহারে বলে!
জেনেছিরে হায় ভাল বাসিলে
কেমন আগুণে হৃদয় জ্বলে!
এখন আবার বেঁধেছি চুলে
বাহুতে পরেছি সোনার বালা!
উরসেতে হার দিয়েছি তুলে,
কবরীর মাঝে মণির মালা!
বাকলের বাস ফেলিয়াছি দূরে—
শত শ্বাস ফেলি তাহার তরে,
মুছেছি কুসুম রেণুর সিঁদূরে
আজো কাঁদে হৃদি বিষাদ ভরে!

ফুলের বলয় নাইক হাতে
কুসুমের হার ফুলের সিঁথি—
কুসুমের মালা জড়ায়ে মাখে
স্মরণে কেবল রাখিনু গাঁথি!
এলো এলো চুলে ফিরিব বনে
রুখো রুখো চুল উড়িবে বায়ে!
ফুল তুলি তুলি গহনে বনে
মালা গাঁথি গাঁথি পরিব গায়ে।
হায়রে সে দিন ভুলাই ভালো।
সাধের স্বপন ভাঙ্গিয়া গেছে!
এখন মানুষে বেসেছি ভালো—
হৃদয় খুলিব মানুষ কাছে!
হাসিব কাঁদিব মানুষের তরে
মানুষের তরে বঁধিব চুলে—
মাখিব কাজল আঁখিপাত ভরে
কবরীতে মণি দিবরে তুলে।
মুছিনু নীরজা! নয়নের ধার,
নিভালাম সখি হৃদয় জালা!
তবে সখি আয় আয় দুজনায়
ফুল তুলে তুলে গাঁথিলো মালা।

এই যে মালতী তুলিয়াছ সতি!
এই যে বকুল ফুলের রাশি;
জুঁই আর বেলে—ভরেছ আঁচলে।
মধুপ ঝাঁকিয়া পড়িছে আসি।
এই হলো মালা আর নালো বালা
শুইলো নিরাজা! ঘাসের পরে।
শুন‍্ছিস্ বোন! শোন্ শোন্ শোন্।
কে গায় কোথায় সুধার স্বরে!
জাগিয়া উঠিল হৃদয় প্রাণ!
স্মরণের জ্যোতি উঠিল জ্বলে!
ঘা দিয়েছে আহা মধুর গান
হৃদয়ের অতি গভীর তলে!
সেই যে কানন পড়িতেছে মনে
সেই যে কুটীর নদীর ধারে।
থাক্ থাক্ থাক্ হৃদয়বেদন
নিভাইয়া ফেলি নয়ন ধারে!
সাগরের মাঝে তরণী হতে
দূর হতে যথা নাবিক যত—
পায় দেখিবারে সাগরের ধারে
মেঘ‍্লা মেঘ‍্লা ছায়ার মত।

তেমনি তেমনি উঠিয়াছে জাগি
অফুট অফুট হৃদয় পরে
কি দেশ কি জানি কুটীর দুখানি
মাঠের মাঝেতে মহিষ চরে!
বুঝিসে আমার জনম ভূমি
সেখান হইতে গেছি চলে!
আজিকে তা মনে জাগিল কেমনে
এত দান সব ছিলুম ভুলে।
হেথায় নীরাজ! গাছের আড়ালে
লুকিয়ে লুকিয়ে শুনিব গান
যমুনাতীরেতে জ্যোছনার রেতে
গাইছে যুবক খুলিয়া প্রাণ।
কেও কেও ভাই? নীরদ বুঝি?
বিজয়ের[১] আহা প্রণের সখা!
গাইছে আপন ভাবেতে মজি।
যমুনা পলিনে বসিয়ে একা!
যেমন দেখিতে গুণ ও তেমন
দেখিতে শুনিতে সকাল ভালো

রূপে গুণে মাখা দেখিনি এমন
নদীর ধারটি করেছে আলো।
আপনার ভাবে আপনি কবি
রাত দিন আহা রয়েছে ভোর!
সরল প্রকৃতি মোহন-ছবি
অবারিত সদা মনের দোর!
মাথার উপরে জড়ান মালা—
নদীর উপরে রাখিয়া আঁখি।
জাগিয়া উঠেছে নিশীথ বালা
জাগিয়া উঠেছে পাপীয়া পাখী!
আয়নালো ভাই গাছের আড়ালে
আয় আর এক‍্টু কাছেতে সরে
এই খানে আয় শুনি দুজনায়
কি গায় নীরদ সুধার স্বরে!


গান।


মোহিনী কল্পনে! আবার আবার—
মোহিনী বীণাটী বাজাও না লো!
স্বর্গ হতে আনি অমৃতের ধার
হৃদয়ে, শ্রবণে, জীবনে ঢালো!

ভুলিব সকল—ভুলেছি সকল
কমল চরণে ঢেলেছি প্রাণ!
ভুলেছি—ভুলিব—শোক অশ্রু জল
ভুলিছি বিষয়, গরব, মান।

শ্রবণ, জীবন, হৃদয় ভরি।
বাজাও সে বীণা বাজাও বালা।
নয়নে রাখিব নয়ন-বারি
মরমে নিবারি মরম-জ্বালা!

অবোধ হৃদয় মানিবে শাসন
শোক বারি ধরা মানিবে বারণ
কি যে ও বীণার মধুর মোহন
হৃদয পরাণ সবাই জানে—
যখনি শুনি ও বীণার স্বরে
মধুর সুধায় হৃদয় ভরে
কি জানি কিসের ঘুমের ঘোরে
আকুল করে যে ব্যাকুল প্রাণে!

কি জানিলো বালা! কিসের তরে
হৃদয় আজিকে কঁদিয়া উঠে।

কি জানি কি ভাব ভিতরে ভিতরে
জাগিয়া উঠেছে হৃদয় পুটে!

অফুট মধুর স্বপনে যেমন
জাগি উঠে হৃদে কি জানি কেমন
কি ভাব কে জানে কিসের লাগি!
বাঁশরীর ধ্বনি নিশীথে যেমন
সুধীরে গভীরে মোহিয়া শ্রবণ
জাগায় হৃদয়ে কি জানি কেমন
কিভাব কেজানে কিসের লাগি।
দিয়াছে জাগায়ে ঘুমন্ত এ মনে
দিয়াছে জাগায়ে ঘুমন্ত স্মরণে
ঘুমন্ত পরাণ উঠেছে জাগি!

ভেবেছিনু হায় ভুলিব সকল
সুখ দুখ শোক হাসি অশ্রু জল
আশা, প্রেম যত ভুলিব—ভুলিব—
অপনা ভুলিয়া রহিব সুখে!
ভেবেছিনু? হায় কল্পনা কুমারী
বীণা স্বর-সুধা পিইয়া তোমারি

হৃদয়ের ক্ষুধা রাখিব নিবারি
পাশরি সকল বিষাদ দুখে!

প্রকৃতি শোভায় ভরিব নয়নে
নদী কল স্বরে ভরিব শ্রবণে
বীণার সুধায় হৃদয় ভরি!
ভুলিব প্রেম যে আছে এ ধরায়
ভুলিব পরের বিষাদ ব্যথায়—
ফেলে কিনা ধরা নয়ন বারি।

কই তা পারিনু শোভনা কল্পনে!
বিস্মৃতির জলে ডুবাইতে মনে
আকা যে মুরতি হৃদয়ের তলে
মুছিতে লো তাহা যতন করি!
দেখলো এখন অবারি হদয়
মরম আধার হুতাশন ময়
শিরায় শিরায় বহিছে অনল
জ্বলন্ত জ্বালায় হৃদয় ভরি।

প্রেমের মূরতি হৃদয় গুহায়
এখনো স্থাপিত রয়েছে রে হায়!
বিষাদ অনলে আহুতি দিয়া

বল তুমি তবে বল কলপনে
যে মূরতি আঁকা হৃদয়ের সনে
কেমনে ভুলিব থাকিতে হিয়া।

কেমনে ভুলিব থাকিতে পরাণ
কেমনে ভুলিব থাকিতে জোয়ান
পাষাণ নাহলে হৃদয় দেহ!
তাই বলি বালা! আবার—আবার
স্বর্গ হতে আনি অমৃতের ধার—
ঢালগো হৃদয়ে সুধার স্নেহ।

শুকায়ে যাউক সজল নয়ান
হৃদয়ের জ্বালা নিবুক হৃদে
রেখোনা হৃদয়ে একটুকু খান
বিষাদ বেদনা যে খানে বিঁধে।

কেনলো—কেনলো—ভুলিব কেনলো—
এত দিন যারে বেশেছিনু ভাল
হৃদয় পরাণ দেছিনু যারে—
স্থাপিয়া যাহারে হৃদয়াসনে
পূজা করছিনু দেবতা সনে
কোন্ প্রাণে আজি ভুলিব তারে।—

দ্বিগুণ জ্বলুক হৃদয় আগুণ।
দ্বিগুণ বহুক বিষাদ ধারা।
স্মরণের আভা ফুটুক দ্বিগুণ
হোক হৃদি প্রাণ পাগল পারা।


প্রেমের প্রতিমা আছে যা হৃদয়ে
মরম-শোণিতে আছে যা গাঁথা—
শত শত শত অশ্রু বারি চয়ে—
দিব উপহার দিবরে তথা।


এত দিন যার তরে অবিরল।
কেঁদেছিনু হায় বিষাদ ভরে,
আজিও—আজিও—নয়নের জল
বরষিবে আঁখি তাহারি তরে।


এত দিন ভাল বেসেছিনু যারে
হৃদয় পরাণ দেছিনু খুলে—
আজিওরে ভাল বাসিব তাহারে
পরাণ থাকিতে যাবনা ভুলে

হৃদয়ের এই ভগন কুটীরে
প্রেমের প্রদীপ করেছে আলা—
যেন রে নিবিয়া না যায় কখনো
সহস্র কেনরে পাই না জ্বালা।

কেবল দেখিব সেই মুখখানি,
দেখিব সেই সে গরব হাসি।
উপেক্ষার সেই কটাক্ষ দেখিব
অধরের কোণে ঘৃণার রাশি।

তবু কল্পনা কিছু ভুলিব না।
সকলি হৃদয়ে থাকুক গাঁথা—
হৃদয়ে, মরমে, বিষাদ-বেদনা
যত পারে তারে দিক না ব্যথা।

ভুলিব না আমি সেই সন্ধ্যা বায়
ভুলিব না ধীরে নদী ব’হে যায়
ভুলিব না হায় সে মুখ শশি।
হব না— হব না—হব ন বিস্মৃত,
যত দিন দেহে রহিবে শোণিত—
জীবন তরকা না যাবে খসি—

প্রেম গান কর তুমি কল্পনা!
প্রেম গীতে মাতি বাজুক বীণা।
শুনিব, কাঁদিব হৃদয়-ঢালি!
নিরাশ প্রণয়ী কাঁদিবে নীরবে।—
বাজাও বাজাও বীণা সুধারবে
নব অনুরাগ হৃদয়ে জ্বালি!

প্রকৃতি শোভায় ভরিব নয়নে
নদী কলস্বরে ভরিব শ্রবণে
প্রেমের প্রতিমা হৃদয়ে রাখি
গাওগো তটিনী প্রেমের গান
ধরিয়া অফুট মধুর তান
প্রেম গান কর বনের পাথী।”

কহিল কমলা “শুনেছিস্ ভাই
বিষাদে দুঃখে যে ফাটিছে প্রাণ!
কিসের লাগিয়া-মরমে মরিয়া
করিছে অমন খেদের গান?

কারে ভাল বাসে? কাঁদে কার তরে?
কার তরে গায় খেদের গান?

কার ভাল বাসা পায় নাই ফিরে
সঁপিয়া তাহারে হৃদয় প্রাণ?

ভালবাসা আহা পায় নাই ফিরে!
অমন দেখিতে অমন আহা!
নবীন যুবক ভাল বসে কিরে?
কারে ভাল বাসে জানিস্ তাহা?

বসেছিনু কাল ওই গাছ তলে
কাঁদিতে ছিলেম কত কি ভাবি-
যুবক তখনি, সুধীরে আপনি
প্রাসাদ হইতে আইল নাবি

কহিল ‘শােভনে! ডাকিছে বিজয়
আমার সহিত আইস তথা।’
কেমন আলাপ। কেমন বিনয়।
কেমন সুধীর মধুর কথা।

চাহিতে নারিনু মুখ পানে তার
মাটি পানেতে রাখিয়ে মাথা
শরমে পা ৱি বলি বলি করি
তবুও বাহির হ’লনা কথা।

কাল হতে ভাই! ভাবিতেছি তাই
হৃদয় হয়েছে কেমন ধারা।
পাকি, থাকি, থাকি, উঠিলাে চমকি,
মনে হয় কার পাইনু সাড়া!

কাল হ’তে তাই মনের মতন,
বাঁধিয়াছি চুল করিয়া যতন,
কবরীতে তুলে দিয়াছি রতন,
চুলে সঁপিয়াছি ফুলেরমালা,
কাজল মেখেছি নয়নের পাতে,
সোণার বলয় পরিয়াছি হাতে,
রজত কুসুম সঁপিয়াছি মাথে,
কি কহিব সখি! এমন জ্বালা!


  1. কমলাকে যিনি সংসারে আনেন।