বাঙ্গলা ব্যাকরণ/কাল

কাল।

 ক্রিয়ার সময়কে কাল বলে। কাল প্রথমতঃ প্রধান তিন ভাগে বিভক্ত। যথা; বর্ত্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ।

বর্ত্তমান।

 বর্ত্তমান ত্রিবিধ। বথা; বিশুদ্ধ বর্ত্তমান, নিত্যপ্রবৃত্ত বর্ত্তমান এবং ভূতসামীপ্য ও ভবিষ্যৎসামীপ্য বর্ত্তমান।

 আরব্ধ ক্রিয়ার পরিসমাপন পর্যন্ত কালকে বিশুদ্ধ বর্ত্তমান কহে। যথা; বৃষ্টি হইতেছে ইত্যাদি।

 বাক্য প্রয়োগ কালে যে ক্রিয়ার বর্ত্তমানতা নাই; কিন্তু সেই কাজটি স্বভাবতঃ ঘটিয়া থাকে, এইরূপ ক্রিয়াকে নিত্যপ্রবৃত্ত বর্ত্তমান বলে। যথা; বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় ইত্যাদি।

 বর্ত্তমানে ক্রিয়ার প্রয়োগ হইতেছে, কিন্তু কাজটি, হয় অতীত হইয়াছে, না হয় ভবিষ্যতে ঘটিবে, এইরূপ ক্রিয়াকে যথাক্রমে ভূত- সামীপ্য ও ভবিষ্যৎসামীপ্য বর্ত্তমান কহে। যথা; কখন্ হইয়াছে? এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে, এই হইতেছে, এই উত্তর করিয়া থাকে। এই স্থলে হওয়া ক্রিয়াটি অতীত হইয়াছে, অথচ বর্ত্তমানের ন্যায় প্রয়োগ হইল বলিয়া, উহা ভূতসামীপ্য বর্ত্তমান। আর কখন্ হইবে? এইরূপ প্রশ্নে, এই হইতেছে, এইরূপ বলিলে ভবিষ্যৎসামীপ্য বর্ত্তমান হইবে। কারণ হওয়া ক্রিয়াটি পরবর্ত্তী কালে ঘটিবে।

 বিশুদ্ধবর্ত্তমান ও সামীপ্যবর্ত্তমানে ঠিক একরূপ পদই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নিত্যপ্রবৃত্ত বর্ত্তমানে আর এক প্রকার পদ ব্যবহৃত হইয়া থাকে। অথবা থাকা[১] ক্রিয়ার সহকারিতা। দ্বারা ঐ রূপভেদ প্রকাশ হয়। যথা; গ্রীষ্মে রবিকিরণ বড় খরতর হয় বা হইয়া থাকে।

অতীত।

 যে ক্রিয়া সম্পন্ন হইয়াছে, তাহাকে অতীত কহে। অতীত পাঁচ প্রকার। যথা; অদ্যতন, অনদ্যতন, পরোক্ষ, নিত্যপ্রবৃত্ত ও অসম্পন্ন।

 যে ক্রিয়াটি বাক্য কথনের অব্যবহিত পূর্ব্বে ঘটিয়াছে, তাহাকে অদ্যতন অতীত বলে। যথা; মেঘ হইল, বজ্র পড়িল ইত্যাদি।

 তদপেক্ষা পূর্ব্বকালীন ক্রিয়াকে অনদ্যতন অতীত বলে। যথা; বৃষ্টি হইয়াছে।

 আর যে অতীত ক্রিয়া সর্ব্বাপেক্ষা পূর্ব্বকালে ঘটিয়াছে, তাহাকে পরোক্ষ অতীত বলে। যথা; বৃষ্টি হইয়াছিল।

 যে ঘটনাটি পূর্ব্বকালে স্বভাবতই হইত, তাহাকে নিত্যপ্রবৃত্ত অতীত কহে। যথা; শীতে বড় কষ্ট হইত, বর্ষায় বৃষ্টি হইত|

 যে অতীত ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় নাই, তাহকে অসম্পন্ন অতীত বলে। যথা; আমি যাইতেছিলাম বা যাইতেছি, এমন সময়ে তিনি উপস্থিত হইলেন। এখানে যাওয়া ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় নাই বলিয়া উহা অসম্পন্ন[২] অতীত। কোন কোন বৈয়াকরণেরা বলেন, ঐরূপ ক্রিয়া, প্রয়োগকালানুসারে যদিও অতীত বটে, কিন্তু পরবর্ত্তী ক্রিয়ার কাল অপেক্ষা বর্ত্তমান, সুতরাং উহা বর্ত্তমান মধ্যেই পরিগণিত।

 উক্ত পাঁচ প্রকার অতীত কালে ক্রিয়ার পাঁচরূপ আকার হয়। ঐ সমস্ত পদভেদ ধাতুরূপ স্থলে লিখিত হইবেক।

ভবিষ্যৎ।

 যাহা উত্তর কালে ঘটিবে, ঐ রূপ ক্রিয়াকে ভবিষ্যৎ কহে। ভবিষ্যৎ কালে ক্রিয়ার স্বতন্ত্র রূপ হয়। যথা; বৃষ্টি হইবে ইত্যাদি।

কাল সামান্য।

 সম্ভাবনা ও সমর্থনা বুঝাইলে বর্ত্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ, তিন কালেই ক্রিয়ার রূপান্তর হইবে। যে ক্রিয়া হইলেও হইতে পারে, তাহাকে সম্ভাবনা কহে। আর যে ক্রিয়া দ্বারা ক্ষমতা প্রকাশ বুঝায়, তাহাকে সমর্থনা কহে। দুই স্থলেই পারে[৩] এই ক্রিয়া পদ সহকারী থাকে। যথা; ইহা হইতে পারে, ইহা হইতে পারিত, ইহা হইতে পারিবে। আমি মারিতে পারি, আমি মরিতে পারিতাম, আমি মারিতে পারিব।

 অনুজ্ঞা, জিজ্ঞাসা ও প্রার্থনায় ক্রিয়ার স্বতন্ত্র রূপ হয়। যথা; রাম গমন করুন, তবে আমি গমন করি? আমাকে কিছু দিউন।

 কোন নিয়ম করাকে বিধি কহে। বিধিতে ক্রিয়ার রূপভেদ হয়। যথা; সদা সত্য কহিবে, পিতামাতার সেবা করিবে।

 যদি, পাছে ইত্যাদি শব্দের যোগে সংশয় বুঝাইলে ক্রিয়ার রূপভেদ হয়। যথা; যদি তিনি আইসেন বা আসিতেন, তবে ভাল হয় বা হইত।


  1. যেখানে থাকা পদ সহকারী থাকে, তথায় পূর্ব্ববর্ত্তী ক্রিয়াপদটি, য়া যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ন্যায় হইয়া থাকে। যথা; যাইয়া থাকেন, করিয়া থাকে ইত্যাদি।
  2. অসম্পন্ন অতীতে বর্ত্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ এই ত্রিবিধ ক্রিয়াই ব্যবহৃত হয়।
  3. দুই স্থলেই পূর্ব্ব ক্রিয়াটি তে যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ন্যায় হয়। কখন কখন সম্ভাবনা স্থলে ক্রিয়ার পূর্ব্বে, লেও যুক্ত সেই ক্রিয়াও ব্যবহৃত হয়। যথা; বলিতে পারেন, যাইলেও যাইতে পারেন, করিলেও করিতে পারেন, ইত্যাদি।