বাঙ্গলা ব্যাকরণ/বিশেষণ

বিশেষণ।

 কোন পদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করিবার নিমিত্ত যে পদ প্রয়োগ করা যায়, তাহাকে বিশেষণ কহে। যথা; কোমল অঙ্গ, মৃদু গমন, শুভ্র বস্ত্র, নিদ্রিত শিশু ইত্যাদি।

 বর্ণবাচক, ধাতুবাচক এবং পাপপুণ্যসুখাদিবাচক কতকগুলি শব্দ স্থলবিশেষে কখন বিশেষ্য কখন বা বিশেষণ হইয়া থাকে। যথা, গাঢ় লোহিত, লোহিত পুষ্প ইত্যাদি।

 বিশেষণ ত্রিবিধ। বিশেষ্যের বিশেষণ, বিশেষণের বিশেষণ ও ক্রিয়া বিশেষণ।

 বিশেষ্যের বিশেষণ, যথা; বিশাল তরু, উজ্জ্বল প্রদীপ। এখানে বিশাল ও উজ্জ্বল পদ স্ব স্ব বিশেষ্যের গুণ প্রকাশ করিতেছে; এই নিমিত্ত ঐ দুই পদকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে।

 বিশেষ্য পদের ন্যায় বিশেষণের লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও কারক নাই[১]। যথা; সুশীল শিশুকে, সুশীল শিশুদিগকে।

 স্ত্রীলিঙ্গের বিশেষণের প্রায়ই রূপান্তর হইয়া থাকে। ঐ রূপান্তর করিবার নিয়ম স্ত্রীলিঙ্গ প্রকরণে আছে।

 যে পদ বিশেষণের অবস্থাদি ব্যক্ত করে, তাহাকে বিশেষণের বিশেষণ কহে। যথা; অতিশয় মন্দ, অত্যন্ত কঠিন, বড় ধনী, অতি অপকৃষ্ট ইত্যাদি।

 যে বিশেষণ পদ ক্রিয়ার গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে, তাহাকে ক্রিয়া বিশেষণ কহে। ক্রিয়াবিশেষণের উত্তর এ[২] বা করিয়া এই দুই শব্দ সংযুক্ত থাকে। যথা; উত্তমরূপে দেখিলেন, দৃঢ়চিত্তে কহিলেন, ভাল করিয়া বলিলেন ইত্যাদি।

 পূর্ব্বক, পুরঃসর ইত্যাদি শব্দ যখন পূর্ব্ববর্ত্তী কোন বিশেষ্য পদের সহিত মিলিত হয়, তখন তাহাও ক্রিয়া বিশেষণ হইয়া থাকে। যথা; সতর্কতাপূর্ব্বক রক্ষা করিতেছে, বিনয়পুরঃসর বলিতেছে ইত্যাদি।

 কতকগুলি পদ স্বতঃই ক্রিয়াবিশেষণ। যথা; শীঘ্র চলিতেছে, মৃদু হাসিতেছে ইত্যাদি।


  1. যখন বিশেষণ পদটি বিশেষ্য পদকে অন্তর্ভূক্ত রাখিয়া স্বয়ং ই বিশেষ্যের মত অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাহার লিঙ্গ, বচন ও কারকাদি জন্য বিভক্তি সকলই থাকে। যথা; সতীর, বিদ্বান্‌দিগের, ধনীতে ইত্যাদি।
  2. ক্রিয়াবিশেষণে যে একার সংযোগ করিতে হয়, এটি সাধারণ নিয়ম নহে। বহুব্রীহি সমাসানুসারে যে সমস্ত পদ ক্রিয়ার গুণ প্রকাশ করে, তাহাদিগের উত্তরই একার দিতে হয়। যথা; ভালরূপ যার এ প্রকাবে বলিলেন, এই স্থলে ভালরূপে বলিলেন এই প্রয়োগ হয়। কিন্তু মন্দ মন্দ চলিতেছে; ইত্যাদি স্বতঃসিদ্ধ ক্রিয়াবিশেষণে একার ব্যবহৃত হয় না। পূর্ব্বক ও পুরঃসর এই দুই স্থলে একার দিতে হইবে না।