বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ/সরকারের বে-সরকারী পরামর্শদাতা

সরকারের বে-সরকারী পরামর্শদাতা

 বিদ্যাসাগর এখন আর সরকারের বেতনভোগী কর্মচারী ন’ন। না হইলেও, বেসরকারী পরামর্শদাতা হিসাবে তিনি সরকারের উপকার সাধন করিতে লাগিলেন। পর পর বহু ছোটলাটই তাঁহার পরামর্শ গ্রহণ করিতেন।

সংস্কৃত কলেজ

 বিদ্যাসাগরের অবসরগ্রহণের অল্পদিন পরেই শিক্ষা বিভাগের ডিরেক্টর সংস্কৃত কলেজের সংস্কার সংক্রান্ত এক প্রস্তাব এবং উড্রো, রোয়ার ও সংস্কৃত কলেজের নূতন অধ্যক্ষ—কাওয়েল সাহেবের তদ্বিষয়ক মন্তব্যগুলি রাংলা-সরকারের কাছে পেশ করিলেন। ডিরেক্টরের মত এই, সংস্কৃত কলেজ এক অতিপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হইলেও বর্তমান যুগের কিছু পিছনে পড়িয়া আছে, আরও উন্নতির দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থার সহিত অধিকতর পরিমাণে সুসঙ্গত করিবার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে স্কুল এবং কলেজ এই দুই ভাগে বিভক্ত করা উচিত। স্কুলে প্রবেশিকা পর্য্যন্ত পড়ানো হইবে এবং কলেজের আণ্ডার-গ্রাজুয়েট ছাত্রগণ সংস্কৃত পাঠের সঙ্গে সঙ্গে অল্প মাহিনায় প্রেসিডেন্সী কলেজে অন্যান্য বিষয়ের লেকচার শুনিতে পাইবে।

 বিদ্যাসাগর কিছুদিন পূর্ব্বেই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ছোটলাট তাঁহার পরামর্শ চাহিলেন। উত্তরে পণ্ডিত লিখিলেন,—

কাওয়েল, রোয়ার এবং উড্রো সাহেব লিখিত সংস্কৃত কলেজ সম্পর্কিত তিনটি বিবরণী আমি যত্ন ও মনোযোগসহকারে পড়িয়াছি।...কাওয়েল সাহেব কলেজে স্মৃতি ও বেদান্তের পাঠ বন্ধ করিতে চাহেন। দুঃখের বিষয়, এ বিষয়ে তাঁহার সহিত আমার মত মেলে না। আমার মনে হয়, এই বিষয়গুলিতে আপত্তি থাকিতে পারে না। স্মৃতি সম্বন্ধে যে-সকল পাঠ্যপুস্তক নির্দ্ধারিত আছে, সেগুলির সাহায্যে শুধু উত্তরাধিকার, পোয্যপুত্রগ্রহণ প্রভৃতি দেওয়ানী আইন শেখানো হয়। এই সকল জিনিষ অধিগত করিবার প্রয়োজনীয়তা সকলেই স্বীকার করেন, অতএব এ-সম্বন্ধে বেশ কিছু বলিবার প্রয়োজন নাই। ভারতবর্ষে প্রচলিত দর্শনসমূহের মধ্যে বেদান্ত অন্যতম। ইহা অধ্যাত্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয়। কলেজে ইহার অধ্যাপনা বিষয়ে কোনো যুক্তিসঙ্গত আপত্তি থাকিতে পারে, ইহা আমি মনে করি না। এই দুইটি বিষয় এখন যে-ভাবে শেখানো হয় তাহাতে ধর্ম্মগত কোনো আপত্তি থাকিতে পারে না। আমার বিনীত মত এই, এ-সকলের অধ্যাপনা বন্ধ করিলে কলেজের পাঠ্য-বিষয় অসম্পূর্ণ থাকিয়া যাইবে।.....
“ডাঃ রোয়ার প্রস্তাব করিয়াছেন, কলেজ উঠাইয়া দেওয়া হোক এবং উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারী ইংরেজী স্কুল ও কলেজ সমূহে সংস্কৃত-চর্চ্চা চালাইবার জন্য ব্যয়িত হোক। স্কুল-কলেজে সংস্কৃত-শিক্ষা প্রচলনের আমি যতটা পক্ষপাতী, ততটা আর কেহ নয়। কিন্তু সংস্কৃত কলেজের বিলোপ করিয়া তৎপরিবর্ত্তে এইরূপ ব্যবস্থা প্রবর্তনের আমার অপেক্ষা অধিকতর বিরোধীও কেহ নাই। কাওয়েল সাহেব সত্যই বলিয়াছেন, সংস্কৃত যদি শিখিতেই হয় তাহা হইলে সম্পূর্ণরূপে শিক্ষা করা ভাল। ইংরেজী স্কুল-কলেজে ইহা উপযুক্তরূপে শিক্ষা করা যায় কি না সে বিষয়ে আমার খুব সন্দেহ আছে, বিশেষ যখন ঐ বিদ্যালয়গুলিতে ভালরূপে বাংলা শিখাইবার চেষ্টা সফল হয় নাই। ডাঃ রোয়ারের কল্পনা কার্য্যে পরিণত করিলে, যে-ভাষা ও সাহিত্য পূর্ণরূপে রক্ষা করাই সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠাতৃগণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, সেই ভাষা ও সাহিত্য ভারতবর্ষের এই অংশ হইতে একেবারে বিলুপ্ত হইয়া যাইবে।” (১৭ই এপ্রিল, ১৮৫৯)

 বাংলা-সরকার ডিরেক্টরের সঙ্গে একমত হইয়া তাঁহার প্রস্তাবটি বড়লাটের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাইলেন (২৫ এপ্রিল)। বড়লাটও একটি বিষয় ছাড়া সকলই মঞ্জুর করিলেন। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মৃতি-অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়াতে, পাঠ্যতালিকা হইতে ইহা বাদ দিবার প্রস্তাব ছোটলাটকে পুনর্বিবেচনা করিতে বলা, হইল।[১]

 ছোটলাট ক্যাম্পবেলের সময়ে সংস্কৃত কলেজের নূতন ব্যবস্থা হইল। তাঁহার নীতিই ছিল সকল বিষয়ে ব্যসঙ্কোচ করা। ১৮৭১, ৩০ মে বাংলা-সরকার ডিরেক্টরের উপর আদেশ জারি করিলেন, যেন সুযোগ পাইলেই কলেজের নির্দিষ্ট ব্যয় সংক্ষেপ করা হয়। স্মৃতির অধ্যাপক ভরতচন্দ্র শিরোমণি, অবসরগ্রহণ করিতেই ডিরেক্টর প্রস্তাব করিলেন ঐ পদটি উঠাইয়া দেওয়া হোক (১০ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৭২)। সংস্কৃত কলেজের উচ্চতম ইংরেজী-বিভাগও উঠাইয়া দিবার আদেশ হইল। ঠিক হইল, প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া সংস্কৃত কলেজের ছাত্রেরা প্রেসিডেন্সি কলেজে সংস্কৃত ছাড়া সব বিষয়ই পড়িবে।

 কিন্তু স্মৃতির অধ্যাপনা উঠাইয়া দিবার প্রস্তাব শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ অসন্তোষের সৃষ্টি করিল। সনাতন ধর্ম্মরক্ষিণী সভা এবং ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েশন এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আবেদন করিলেন। ছোটলাট আবার বিদ্যাসাগরের পরামর্শ চাহিলেন। তিনি লিখিলেন, যে-সকল দেশীয় ভদ্রলোক সংস্কৃত-শিক্ষায় আগ্রহশীল, বিদ্যাসাগর যদি তাঁহাদের মতামত জানিয়া এবং তাঁহাদের সহিত আলাপ করিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করেন তাহা হইলে। বড় ভাল হয়।[২]

 তদনুসারে বিদ্যাসাগর ছোটলাটের সহিত দেখা করিলেন। বিদ্যাসাগর জানাইলেন, তাঁহার অভিমত স্মৃতির জন্য স্বতন্ত্র অধ্যাপকের পদ থাকা দরকার। ছোটলাট এরূপ আশা করেন নাই। যাহা হউক, পরিশেষে তিনি আদেশ জানাইলেন, দর্শন অলঙ্কারের সহিত স্মৃতির অধ্যাপকের পদ এক হইয়া যাইবে। কলিকাতা গেজেটে প্রকাশিত, শিক্ষা-বিভাগের ডিরেক্টরের প্রতি বাংলা- সরকারের আদেশের মর্ম্ম এই:—

“....ছোটলাট এ সম্বন্ধে বাদানুবাদের গোড়াতেই জানাইয়াছিলেন, হিন্দুসমাজের বহু ব্যক্তির অভিপ্রায় অনুসারে তিনি পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক প্রসন্নকুমার সর্ব্বাধিকারীর সহিত সাক্ষাৎ আলাপে এবং অন্যরূপেও এ-বিষয় পর্য্যালোচনা করিয়াছেন। তিনি উক্ত দুই ভদ্রলোক এবং অপরাপর যোগ্য ব্যক্তির প্রস্তাব এতই পরিমিত ও সঙ্গত বলিয়া মনে করেন যে তিনি মূলতঃ তাঁহাদের অভিপ্রায়ে সম্মত হইতে পারিয়া আনন্দিত হইতেছেন....। (১৭ মে, ১৮৭২)[৩]

 উপরিলিখিত পত্রখানি যে দ্ব্যর্থব্যঞ্জক ভাষায় লিখিত হইয়াছে তাহাতে হিন্দুরা ভাবিলেন, বিদ্যাসাগর স্মৃতির অধ্যাপক পদের ব্যবস্থা সম্বন্ধে ছোটলাটের মতে সায় দিয়াছেন। এজন্য বিদ্যাসাগরকে দেশবাসীর নিকট হইতে বহু গালাগালি সহ্য করিতে হইয়াছিল। তিনি ছোটলাটকে এই পত্র লিখিলেন,—

“সংস্কৃত-শিক্ষা প্রচারে যাঁহারা আগ্রহশীল, হিন্দুসমাজের এমন-সব প্রধান ব্যক্তিগণের সহিত পরামর্শ করিতে আমাকে বলা হইয়াছিল। লোকের এইরূপ ধারণা জন্মিতে পারে যে প্রস্তাবগুলি আমার নিকট হইতে আসিয়াছে। সেজন্য আমি আপনাকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া কর্ত্তব্য মনে করি যে, স্মৃতি-অধ্যাপনার ব্যবস্থা সম্বন্ধে প্রস্তাব আমার নিকট হইতে আসে নাই। বস্তুতঃ আমি আপনাকে পরিষ্কার করিয়া বলিয়াছিলাম, বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করিলে স্মৃতির একজন স্বতন্ত্র অধ্যাপক দরকার; এখনও আমার সেই মত। আপনি জানেন, স্মৃতিশাস্ত্রের বিষয়বস্তু বিপুল, সারাজীবনের চেষ্টায় ইহা শিখিতে হয়। একথা সত্য, এমন কেহ কেহ আছেন, সংস্কৃতসাহিত্যে যাঁহাদের জ্ঞান গভীর এবং স্মৃতিশাস্ত্রেও যাহাদের পাণ্ডিত্য প্রগাঢ়; কিন্তু এইরূপ বহুমুখী জ্ঞান অল্পই দেখা যায়। অন্য বিষয়ের অধ্যাপক পদের সহিত স্মৃতির পদ এক করিয়া ফেলিলে এই বিষয়টিকে খাটো করা হইবে এবং ইহার কার্যকারিতাও কমিয়া যাইবে, কেন-না যে-অধ্যাপক অবসর-মত ইহা পড়াইবেন তিনি বিষয়ের বিপুলতা অনুসারে ইহাতে যতটা মনোেযাগ দেওয়া দরকার তাহা দিতে পারিবেন না। আমি সরকারী পত্রে দেখিয়াছি, কলেজের অধ্যক্ষের মতে ‘অপরাপর কাজ করিয়াও অধ্যাপক মহাশয় এখন অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে স্মৃতিশাস্ত্র পড়াইয়া থাকেন।’ ভূতপূর্ব্ব অধ্যক্ষ হিসাবে কলেজের কাজে যতদুর অভিজ্ঞতা আছে, তাহাতে আমি এই মত সমর্থন করিতে পারি না। যিনি কলেজে আইন পড়িয়াছেন মাত্র, কিন্তু শুধু আইনই যাঁহার গভীর অধ্যয়নের বিষয় নয়, প্রেসিডেন্সি কলেজের সাহিত্য দর্শন অথবা গণিতের এমন-কোনো অধ্যাপককে আপনি যদি তাঁহার অন্যান্য কাজের সঙ্গে তাঁহাকে আইন পড়াইতে নিযুক্ত করেন, তাহা হইলে তাহার যে ফল হয়, তাহা বিবেচনা করিলে প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটির গোলযোগ সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা করিতে পারিবেন। আইন-ব্যবসায়ীরা যে এই পদ্ধতি সমর্থন করিবেন না সে-সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নাই, অথচ সংস্কৃত কলেজে স্মৃতিশাস্ত্র শিক্ষা দিবার জন্য এইরূপ বন্দোবস্তের প্রস্তাবই করা হইয়াছে। পণ্ডিত মহেশচন্দ্রের গুণ এবং পাণ্ডিত্য সম্বন্ধে আমি উচ্চ ধারণা পোষণ করি, কিন্তু আমার ভয় হয়, এতগুলি কাজের ভার একসঙ্গে তাঁহাকে দিলে শুধু স্মৃতির অধ্যাপনা কেন, যে-বিষয়গুলি পড়াইতে তিনি বিশেষরূপে উপযুক্ত সেইগুলির অধ্যাপনাতেও ত্রুটি হইবে। আপনি বলিয়াছেন, ‘স্মৃতিশাস্ত্রের অধ্যাপনার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করা হইবে, এই ইচ্ছা আছে এবং বরাবরই ছিল।’ কিন্তু আপনি যে ব্যবস্থা করিয়াছেন তাহাতে আপনার ইচ্ছা সুসিদ্ধ হইবে না। অতএব আপনার আদেশের এই অংশটি পুনর্বিবেচনা করিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করি। এই অধ্যাপক পদ তুলিয়া দেওয়াতে মাসে একশত টাকা মাত্র ব্যয়সঙ্কোচ হইবে, এই টাকা এতই অল্প যে আমি একান্তভাবে আশা করি, হিন্দুসমাজের কথা ভাবিয়া আপনি এ-বিষয়ে এই সুবিধাটুকু করিয়া দিবেন।...
“স্মৃতির অধ্যাপক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত ব্যবস্থার পরামর্শ, আপনাকে আমি দিয়াছি—সরকারী পত্রের লিখনরীতি হইতে ইহা অনুমিত হইতে পারে। এ-সম্বন্ধে হিন্দুসমাজের আগ্রহ এত বেশী যে তজ্জন্য লোকে আমাকে ভুল বুঝিতে পারে। এই কারণে আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করিতেছি, সংস্কৃত কলেজের পুনর্গঠনের প্রস্তাব সম্পর্কে অতি অনির্দ্দিষ্টভাবে আমার নামের উল্লেখে সাধারণের মনে যে ভ্রমাত্মক ধারণা জন্মিতে পারে, তাহা অপনীত করিলে আমার প্রতি সুবিচার করা হইবে।” (২৩ মে, ১৮৭২)

 বিদ্যাসাগরের পত্রে কোনোই ফল হয় নাই। তবে এই ব্যাপারে ছোটলাট তাঁহাকে সম্পূর্ণরূপে দোষমুক্ত করিয়াছিলেন। তিনি সমস্ত চিঠিপত্র ১অই জুন তারিখের ‘হিন্দু পেটি য়ট’ পত্রে প্রকাশিত করিয়া জনসাধারণের মন হইতে তাঁহার সম্বন্ধে ভুল ধারণা অপসারিত করিয়াছিলেন।

গণশিক্ষা

 জনসাধারণের জন্য অল্প খরচার বিদ্যালয়ের কিরূপ ব্যবস্থা করা যায় সেই বিষয়ে এবং সাধারণভাবে বাংলা-শিক্ষার বিস্তার ও উন্নতিসাধনের উপায় সম্বন্ধে ভারত-সরকার বাংলার ছোটলাট গ্র্যাণ্ট সাহেবের মতামত জিজ্ঞাসা করিলেন। নিজের মত প্রকাশ করিবার পূর্ব্বে ছোটলাট শুধু শিক্ষা বিভাগের কর্ম্মচারীদের নহে, গ্রাম্য বিদ্যালয় সম্বন্ধে যাঁহাদের অভিজ্ঞতা আছে অথবা কৃষকের কল্যাণসাধনে যাঁহারা সচেষ্ট এরূপ কয়েকজন ইউরোপীয় এবং ভারতবর্ষীয় ভদ্রলোকের বক্তব্য জানিতে চাহিলেন। ইহার মধ্যে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন। বিদ্যাসাগর এ বিষয়ে ছোটলাটকে যাহা লিখিয়াছিলেন তাহার সারাংশ নিয়ে উদ্ভূত হইল:—

“...সরকার যে ভাবিয়াছেন বিদ্যালয়-পিছু মাসিক পাঁচ-সাত টাকা মাত্র ব্যয় করিয়া কোনো শিক্ষা-পদ্ধতির প্রবর্ত্তন করিবেন, আমার মতে দেশের বর্ত্তমান অবস্থায় তাহা কার্য্যকর হইবার কোনো সম্ভাবনা নাই। পাঠ, লিখন এবং কিঞ্চিৎ গণিত শিখাইতে যাঁহারা কোনরূপে সমর্থ, নিজ নিজ গ্রামের প্রতি আকর্ষণ যতই থাক এমন যৎসামান্য বেতনে তাঁহাদিগকে কার্য্যগ্রহণে প্রবৃত্ত করিতে পারা যাইবে না...
“উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হালকাবন্দি বিদ্যালয়গুলিতে যে-প্রণালী অনুসৃত হইয়াছে তাহার সঠিক খবর আমি জানি না। বিহারের বিদ্যালয়গুলিতে ঐ একই প্রণালী অবলম্বিত হইয়াছে ধরিয়া লইলেও আমি বলিব বাংলার পাঠশালাগুলিতে যে ব্যবস্থা আছে ইহা অনেকাংশে তদনুরূপ। যতটা বুঝিতেছি, বিহারের বিদ্যালয়গুলির শিক্ষণীয় বিষয়ের সীমা হইতেছে পত্রলিখন, জমিদারী হিসাব ও দোকানের খাতাপত্র রাখা পর্যন্ত। বিহারের এবং বাংলার পাঠশালাগুলির মধ্যে প্রভেদ এই যে, কিছু উন্নত ধরণের কয়েকখানি ছাপা বই বিহারে নামমাত্র ব্যবহৃত হয়। বাংলা দেশে এইরূপ শিক্ষা-পদ্ধতির প্রচার যদি সরকারের উদ্দেশ্য হয়, তাহা হইলে গুরুমহাশয়দের অল্পকিছু মাসিক বেতনের ব্যবস্থা, তাহাদের পাঠশালাগুলিতে খানকয়েক মুদ্রিত পুস্তকের প্রবর্ত্তন এবং সেগুলি সরকারী পরিদর্শনের অধীন করিলে সহজেই উদ্দেশ্য সাধিত হইবে। কিন্তু আমি বলিতে বাধ্য, এরূপ শিক্ষা নগণ্য হইলেও জনসাধারণের মধ্যে (যদি জনসাধারণ কথার অর্থে শ্রমিক-শ্রেণী বুঝিতে হয়) বিস্তৃত হইবে না। কেননা, এখন পর্যন্ত বিহারে বা বাংলায় এই শ্রেণী হইতে অতি অল্পসংখ্যক বালকই পাঠশালায় শিক্ষার্থী হয়।
“শ্রমিক-শ্রেণীর অবস্থার উপরই ইহার কারণ আরোপিত করা যায়। সাধারণতঃ অবস্থা এতই খারাপ যে ছেলেদের শিক্ষার দরুণ তাহারা কোনরূপ ব্যয়ভার বহন করিতে অসমর্থ। একটু বড় হইলেই যখন কোনরূপ কাজ করিয়া যৎসামান্য কিছু উপার্জন করিবার উপযুক্ত হ’বে তখন আর তাহারা ছেলেদের পাঠশালায় রাখিতে পারে না। তাহারা ভাবে—এবং সম্ভবতঃ এ ভাবনা যথার্থ—যে ছেলেদের কিছু লেখাপড়া শিখাইলেই তাহাদের অবস্থার উন্নতি হইবে না, তাই ছেলেদের পাঠশালায় পাঠাইতে তাহাদের কোনরূপ প্রবৃত্তি থাকে না। তাহারা যে কেবল জ্ঞানার্জনের জন্যই ছেলেদের লেখাপড়া শিখাইবে, এ আশা করিতে পারা যায় না,— বিশেষতঃ উচ্চশ্রেণীর লোকেরাই যখন শিক্ষার সুফলের কথা এখনও প্রকৃতরূপে ধারণা করিতে পারে না। এরূপ অবস্থায় শ্রমিক-শ্রেণীর শিক্ষা-ব্যবস্থার চেষ্টায় কোনো কাজ হইবে না। এ-বিষয়ে পরীক্ষা করা সরকারের উদ্দেশ্য হয়, তাহা হইলে সরকার যেন অবৈতনিকভাবে শিক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকেন। এস্থলে উল্লেখ করা যাইতে পারে,এরূপ পরীক্ষা ব্যক্তিগত এবং বে-সরকারীভাবে করা হইয়াছে, কিন্তু সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায় নাই।
“বিলাতে এবং এদেশে এমনি একটা ধারণা জন্মিয়াছে যে উচ্চশ্রেণীর শিক্ষার জন্য যথেষ্ট করা হইয়াছে, এখন জনসাধারণের শিক্ষার দিকে মন ফিরাইতে হইবে। শিক্ষা-সংক্রান্ত রিপোর্ট ও মিনিটগুলি অত্যন্ত অনুকুল ভাবের হওয়ায় বোঝা যাইতেছে এই ধারণার সৃষ্টি হইয়াছে। কিন্তু এ-বিষয়ে অনুসন্ধান করিলে ভিন্ন অবস্থার কথা প্রকাশ পাইবে।
“একমাত্র কার্যকর উপায় না হইলেও বঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের শ্রেষ্ঠ উপায়স্বরূপ সরকার, আমার মতে, উচ্চশ্রেণীর মধ্যে ব্যাপকভাবে শিক্ষাবিস্তার-কার্যে নিজেকে বদ্ধ রাখিবেন। একশত বালককে লিখনপঠন এবং কিছু অঙ্ক শেখানো অপেক্ষা একটিমাত্র ছেলেকে উপযুক্ত রূপে শিক্ষিত করিয়া তুলিতে পারিলে প্রজাদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষাপ্রচারে সরকার অধিকতর সহায়তা করিবেন। সমস্ত দেশটাকে শিক্ষিত করিয়া তোলা নিশ্চয় বাঞ্ছনীয়, কিন্তু কোনো রাজসরকার এরূপ কার্যভার গ্রহণ করিতে অথবা সাধন করিতে পারে কিনা সন্দেহ। বলা যাইতে পারে, বিলাতে সভ্যতার অবস্থা অতি উন্নত হইলেও, শিক্ষা-বিষয়ে তথাকার জনসাধারণের অবস্থা তাহাদের এদেশের ভ্রাতৃগণের অপেক্ষা কোনপ্রকারে ভাল নয়।” (২৯এ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৯)[৪]

ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশন

 ১৮৫৪, ১১ই নভেম্বর ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় অ্যাক্ট ২৬ পাস হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য—‘কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের তত্ত্বাবধানে নাবালক জমিদারগণের শিক্ষার উন্নততর ব্যবস্থা।’ সাক্ষাৎভাবে একজন বিশ্বস্ত সরকারী কর্মচারীর পরিচালনায় ৮ হইতে ১৪ বৎসর বয়সের নাবালকদিগকে একটি স্বতন্ত্র বাটীতে একত্র রাখিয়া উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হইল। এই উদ্দেশ্যে ১৮৫৬, মার্চ মাসে কলিকাতায় ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশন খোলা হয়।[৫] ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল মিত্র মাসিক তিনশত টাকা বেতনে ইহার পরিচালক নিযুক্ত হইলেন।

 কিছুদিন পরে সরকার স্থানীয় চারিজন ভদ্রলোককে এই প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শকরূপে নিযুক্ত করিলেন; তাহারা পর্য্যায়ক্রমে ইহা পরিদর্শন করিবেন এবং কোনরূপ উন্নতির প্রয়োজন বোধ করিলে সরকারের নিকট তাহা জ্ঞাপন করিতে পারিবেন। সরকারের নির্বাচিত প্রথম চারিজন পরিদর্শক ছিলেন—পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ, কুমার হরেকৃষ্ণ দেব এবং বাবু রমানাথ ঠাকুর। প্রত্যেকেই বৎসরে তিন মাস করিয়া পরিদর্শন করিবেন স্থির হয়।

 ১৮৬৩ নভেম্বর হইতে বিদ্যাসাগর পরিদর্শন আরম্ভ করেন। এই পরিদর্শনের অভিজ্ঞতাস্বরূপ তিনি ১৮৬৪, ৪ এপ্রিল সরকারের নিকট এক বিবরণী পাঠাইলেন। ছাত্রদের শিক্ষা-বিষয়ে অধিকতর উন্নতি ও ব্যুৎপত্তি সংক্রান্ত কতকগুলি ব্যবস্থার প্রস্তাব ইহাতে ছিল। বৎসরের প্রারম্ভে তিনি আর একটি বিবরণী দাখিল করেন। তাহার কিয়দংশ উদ্ধৃত করিতেছি,—

ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশন পরিচালনার্থ নিয়মাবলীর ১১ সংখ্যক নিয়মের দিকে আমি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে চাই। এই নিয়মে আছে ‘কেবল অতি গুরু অপরাধেই শারীরিক শাস্তির বিধান হইবে।’ অর্ডার-বুক হইতে দেখা যাইতেছে প্রায় প্রতিমাসেই এক অথবা অধিকসংখ্যক বালক চার হইতে বার ঘা পর্য্যন্ত বেত্রাঘাত লাভ করিয়াছে। যেসকল কারণে তাহারা এইরূপ শাস্তি পাইয়াছে তাহা ‘গুরু অপরাধের’ পর্যায়ে পড়ে বলিয়া আমার মনে হয় না। একটিমাত্র ঘটনা সম্ভবতঃ ইহার ব্যতিক্রমস্থল, সেটিও আবার ভালরূপে বর্ণিত হয় নাই। কিন্তু আমার মতে অপরাধের প্রকৃতি যাহাই হোক না, নাবালকদের শিক্ষায় দৈহিক শাস্তি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা কর্ত্তব্য। এই শাস্তি অনিষ্টকর পরিণামের জন্য সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হইতেই বর্জ্জিত হইয়াছে। বেত্র ব্যবহার না করিয়াও সেই সকল প্রতিষ্ঠানে শত শত ছাত্র পরিচালিত হইতেছে। ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশনে ইহার প্রয়োজন কিছুমাত্র অনুভূত হয় না। আমার মতে এই প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত নাবালক জমিদারদের প্রতি এরূপ কঠোর ব্যবহার মোটই শোভন নয়। বালকদের শিক্ষাদান-কার্য্যে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, দৈহিক শাস্তি পরিণামে অশুভজনক; ইহাতে শাস্তিপ্রাপ্ত বালক না শোধরাইয়া বরং নষ্ট হইয়া যায়। এই কারণে আমি দৃঢ়ভাবে প্রস্তাব করিতেছি, এই নিয়ম যেন অবিলম্বে উঠাইয়া দেওয়া হয়।” (১১ই জানুয়ারি, ১৮৬৫)

 ছাত্রদের পরবর্ত্তী ব্যবহারে ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশনের সুনাম বাড়ে নাই। দেশীয় সংবাদপত্র-সমূহে বলা হইতে লাগিল, পরিচালক ডাঃ রাজেন্দ্রলাল মিত্রের কুদৃষ্টান্ত নাবালক ছাত্রদের পক্ষে হিতকর নহে; লোকে তাঁহার নৈতিক চরিত্রের উপর প্রকাশ্যভাবে দোষ আরোপ করিতে লাগিল। ১৮৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর তাহেরপুরের জমিদার চন্দ্রশেখর রায় এবং রাজশাহী ও নিকটবর্ত্তী জেলার আরও ষাটজন জমিদার প্রতিষ্ঠানটির নানাবিধ ত্রুটি দেখাইয়া সরকারের নিকট এক আবেদন-পত্র প্রেরণ করিলেন। এই পত্রে প্রার্থনা জানানো হইল, স্ব স্ব জেলা-স্কুলে প্রবেশিকা পর্য্যন্ত পাঠ শেষ করিবার পূর্ব্বে নাবালকদিগকে ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশনে পাঠানো ঠিক হইবে না। ইহাতে তাহারা পারিবারিক প্রভাবের অধীনে থাকিবে, অল্পবয়সে তাহাদিগকে কলিকাতার নাগরিক প্রলোভনের মধ্যে পড়তে হইবে না।

 সরকার প্রথমে প্রতিষ্ঠানটিকে কলিকাতা হইতে মফঃস্বলের কোনো শহরে স্থানান্তরিত করিতে ইচ্ছুক হইলেন, কিন্তু তাহার পূর্ব্বে ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশনের গঠন এবং পরিচালন প্রণালী সম্বন্ধে রিপোর্ট দিবার জন্য এক কমিটি নিযুক্ত করিলেন (২৪ এপ্রিল, ১৮৬৫)। সে কমিটির সদস্য হইলেন—অস্থায়ী ডি. পি. আই. উড্রো, বোর্ড অফ রেভেনিউ-এর জুনিয়ার সেক্রেটারি লেন, এবং পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই ব্যাপারে পণ্ডিত যে স্বতন্ত্র রিপোর্ট দেন তাহা হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত হইল।

“ওয়ার্ডস্ ইনষ্টিটিউশনের উদ্দেশ্য—নাবালক জমিদারদের যথোপযুক্ত শিক্ষাদান করা এবং তাহাদিগকে সমাজের সুযোগ্য সভ্য এবং সৎ জমিদার রূপে গড়িয়া তোলা। কিন্তু এখানে তাহারা যে শিক্ষা পায় তাহা শিক্ষা-নামের অযোগ্য, এবং পল্লীসম্পর্কে প্রায় কিছুই না শিখিয়া, কেবল অল্পস্বল্প ইংরেজীর জ্ঞান লইয়া সাধারণতঃ এই প্রতিষ্ঠান হইতে বিদায় গ্রহণ করে।...
“এখানে-শিক্ষিত কতকগুলি যুবকের পরবর্তী নিন্দনীয় জীবন প্রতিষ্ঠানটির অখ্যাক্তির কারণ হইয়াছে। আমি মনে করি, ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশন হইতে নিষ্ক্রান্ত ছাত্রদের সহিত অন্য তরুণ জমিদারের তুলনা করিলেই দেখা যাইবে শেষোক্ত তরুণরাই ভাল।...
“এখন নাবালকত্বের বয়সের সীমা ১৮ বৎসর। ইহা বাড়াইয়া ২১ বৎসর করিলে, আমার বিবেচনায়, ছাত্রদের পক্ষে খুবই হিতকর হইবে, কেন-না সেক্ষেত্রে তাহারা নিজের উন্নতিসাধনের জন্য দীর্ঘতর অবসর পাইবে এবং এমন বয়সে বিষয়-সম্পত্তির অধিকারী হইতে পারিবে যখন মানুষের চরিত্র একরকম গঠিত হইয়া যায়।” (১ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৫)

 শারীরিক শাস্তিবিধানের সম্বন্ধে উড্রো সাহেব রিপোর্টে কিছুই উল্লেখ করেন নাই। নাবালক জমিদারদের পক্ষে ইহার যে একান্ত প্রয়োজন এবং এতদ্ভিন্ন শৃঙ্খলারক্ষা যে অসম্ভব, পরিচালক রাজেন্দ্র- লালের এই মত লেন সাহেব সমর্থন করিয়াছিলেন। বলা বাহুল্য, সরকারও এই মত গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 ইহার পর বিদ্যাসাগর আর অধিক দিন ওয়ার্ডস ইনষ্টিটিউশনের পরিদর্শক থাকেন নাই। তাঁহার পরিদর্শনের শেষ তারিখ ২৮ মার্চ, ১৮৬৫। খুব সম্ভব, রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সহিত কোনো বিষয়ে মতভেদই তাঁহার পদত্যাগের কারণ।[৬]

উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠ্য-বিষয়ে বিদ্যাসাগরের মত

 সরকার পুনরায় বিদ্যাসাগরের সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। বিশ্ব- বিদ্যালয়ের আর্টস্ পরীক্ষাগুলিতে যে-সকল ভাবী পরিবর্ত্তন সাধিত হইবে তৎসম্পর্কে কলেজীয় এবং জেলা-স্কুলগুলির পাঠ্য-বিষয়ে কতদূর পর্যন্ত সংস্কৃত-চর্চ্চা প্রবর্ত্তন করা যাইতে পারে, তদ্বিষয়ে বিবেচনা করিবার ও রিপোর্ট দিবার জন্য ১৮৬৩, আগষ্ট মাসে এক কমিটি গঠিত হয়। বিদ্যাসাগরকে এই কমিটির একজন সদস্য করা হয়। উড্রো সাহেব ইহার সভাপতি এবং কাওয়েল অন্যতম সদস্য ছিলেন।

 ১৮৭৩, ১১ই জুলাই শিক্ষা-বিভাগের ডিরেক্টর অ্যাটকিনসন্ সাহেব ইংরেজী ও বাংলা স্কুলপাঠ্য পুস্তক-নির্ব্বাচন কমিটির সভ্য হইবার জন্য বিদ্যাসাগরকে অনুরোধ করেন। তাঁহার বিবেচনায় এ-বিষয়ে দেশীয় শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের সাহায্য গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু বিদ্যাসাগর সাহেবের অনুরোধ রক্ষা করিতে পারেন নাই; তিনি লিখিলেন,—

“দুইটি কারণে আমি এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করিতে বাধ্য হইতেছি। আমি গ্রন্থকার, অতএব কমিটির ব্যবস্থার সহিত আমার স্বার্থ সাক্ষাৎভাবে জড়িত। সেইহেতু আমার বিবেচনায় কমিটির আলোচনায় পক্ষগ্রহণ করা উচিত হইবে না। তা ছাড়া, আমি মনে করি আমার উপস্থিতি আমার গ্রন্থগুলির দোষগুণের অপক্ষপাত স্বাধীন আলোচনার অন্তরায় হইবে।”

  1. Home Dept. Education Cons. 20 May 1859, Nos. 16-18.
  2. H. L. Johnson, Private Secretary, to Pandit Ishwar Chandra Vidyasager, dated Belvedere, the 22nd April, 1872.— Education Con. July 1872, Nos. A. 27-29
  3. Education Con. June 1872, Nos. A. 16-28, পত্রখানি ১৮৭২, ২২এ মে তারিখের কলিকাতা গেজেটেও মুদ্রিত হইয়াছিল।
  4. Education Dept. Procdgs. October 1860, No 53.
  5. প্রথমে চিৎপুরে রাজা নরসিংহের বাগানে ওয়ার্ডস্ ইনস্টিটিউশন স্থাপিত হয়। ১৮৬৩, অক্টোবর মাসে ইহা মানিকতলা আপার সার্কুলার রোডে শ্রীকৃষ্ণ সিংহের বাগানে স্থানান্তরিত হইয়াছিল।
  6. বাংলা-গভর্ন্মেণ্টের রাজস্ব-বিভাগের দপ্তরে আমি ওয়ার্ডস ইন্‌স্টিটিউশন সংক্রান্ত বিদ্যাসাগরের তিনখানি রিপোর্ট দেখিয়াছি। সুবলচন্দ্র মিত্রের পুস্তকেও এগুলি মুদ্রিত হইয়াছে বটে, কিন্তু অনেকস্থলে ভুল, এমন কি মূলের সহিত পার্থক্য আছে।