বাইশ

 ৩০শে জানুয়ারী কলিকাতার নাগরিকবৃন্দের পক্ষ হইতে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে এক মহতী জনসভায় নবনির্ব্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে যে অভিনন্দন প্রদান করা হয় তাহার উত্তরে সুভাষচন্দ্র বলেন, “আমার জয়লাভে নীতি ও আদর্শের জয় হইয়াছে। ইহার মধ্যে ব্যক্তিত্বের কথা আসে না।” দক্ষিণপন্থীদের পরাজয়ের ফলে কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে যাহাতে কোন প্রকার দলাদলির সৃষ্টি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই সুভাষচন্দ্র ঘোষণা করিলেন, ইহা আনন্দ প্রকাশের সময় নহে—যে গুরু কর্ত্তব্যের বোঝা আমাদের উপরে ন্যস্ত হইয়াছে আশা করি আমার সমর্থকগণ সে সম্বন্ধে অবহিত হইবেন। ঐ দিন নির্ব্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে তিনি যে বিবৃতি প্রচার করেন তাহাতে তিনি বলেন, “ভারতের স্বাধীনতা লাভের শত্রুরা হয়ত এই ভাবিয়া উৎফুল্ল হইয়াছেন যে, এই নির্ব্বাচনদ্বন্দ্বের ফলে কংগ্রেসের মধ্যে দলাদলি সূচিত হইতেছে। কিন্তু আমি সুস্পষ্ঠভাবে সকলকে জানাইয়া দিতেছি যে, কংগ্রেস পূর্ব্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ রহিয়াছে— কোন দলাদলি ঘটিতে পারে নাই। কোন কোন বিষয়ে কংগ্রেসকর্ম্মীদের মধ্যে মতভেদ থাকিতে পারে, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সকলেই একমত। দেশের সাম্রাজ্যবাদ- -বিরোধী দল ও প্রতিষ্ঠান সমূহের ঐক্য ও সংহতি বর্ত্তমানে পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর প্রয়োজনীয়। যাহাতে সেই ঐক্য ও সংহতি পরোক্ষভাবেও ক্ষুন্ন হইতে পারে, এমন কোন কাজ করা বা কথা বলা আমাদের পক্ষে উচিত হইবে না।” সুভাষচন্দ্র দেশবাসীকে তাঁহার জয়লাভে হর্ষ প্রকাশে বিরত থাকিতে পরামর্শ দিলেও সমগ্র ভারতবর্ষে এখন ইহাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হইয়া দাঁড়াইল। দলাদলিপ্রিয় কোন কোন সংবাদপত্র দক্ষিণপন্থীদের এই পরাজয়ে কংগ্রেসের ইতিহাসে গান্ধীযুগের যবনিকাপাত হইল বলিয়া বিদ্রূপ করিতেও ছাড়ে নাই। এই শ্রেণীর অনিষ্টকারী সমালোচকদের ভেদসৃষ্টিকর উক্তির প্রতিবাদে সুভাষচন্দ্র শীঘ্র এক বিবৃতি প্রচার করিয়া ঘোষণা করিলেন, “সমস্ত সময় আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকিবে মহাত্মার বিশ্বাস অর্জ্জন করা; কারণ, অন্য সকলের আস্থা লাভ করিয়াও যদি মহাত্মার বিশ্বাসভাজন হইতে না পারি তবে আমার পক্ষে তাহা অত্যন্ত পরিতাপের বিয়য় হইবে।”

 সুভাষচন্দ্রের এই সকল বিবৃতির পরে সকলেই আশা করিয়াছিল যে দক্ষিণপন্থীরা তাঁহাদের এই পরাজয়কে সহজভাবেই গ্রহণ করিবেন। কিন্তু, এই সময়ে একান্ত অপ্রত্যাশিতভাবে মহাত্মাজী যে বিবৃতি প্রচার করিলেন তাহাতে বিরোধ আরও তীব্র ও শোচনীয় হইয়া উঠিল। কাহারও জানিতে বাকী রহিল না যে গান্ধীজীর আন্তরিক সমর্থন ছিল ডাঃ পট্টভির দিকে এবং সুভাষচন্দ্রের জয়লাভে তিনি সন্তুষ্ট হইতে পারেন নাই। মহাত্মা গান্ধীর সম্পূর্ণ বিবৃতিটি এই:—“শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসু তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী ডাঃ পট্টভি সীতারামিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামে সুস্পষ্টরূপেই জয়লাভ করিয়াছেন। আমাকে স্বীকার করিতে হইবে যে, গোড়া হইতেই আমি তাঁহার (সুভাষচন্দ্রের) পুননির্ব্বাচনের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলাম। ইহার কারণ এস্থলে বর্ণনা করিবার প্রয়োজন নাই। নির্ব্বাচনী প্রচারপত্রে তিনি যে সকল তথ্য ও যুক্তি প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা আমি সমর্থন করি না। আমি মনে করি যে, সহকর্ম্মীদের কথা তিনি যে ভাবে উল্লেখ করিয়াছেন তাহা তাঁহার পক্ষে অযৌক্তিক ও অশোভন হইয়াছে। তথাপি তাঁহার জয়লাতে আমি আনন্দিত। মৌলানা সাহেব তাঁহার নাম প্রত্যাহার করিবার পর আমার চেষ্টাতেই ডাঃ পট্টভি নির্ব্বাচন হইতে সরিয়া দাঁড়ান নাই। অতএব এই পরাজয় তাঁহার অপেক্ষা আমারই অধিক। আমি যদি সুস্পষ্ট নীতি ও কর্ম্মপদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব দাবী করিতে না পারি তবে আমার কোনই মূল্য নাই। অতএব আমার নিকট ইহা সুস্পষ্ট যে, আমি যে নীতি ও কার্য্যপদ্ধতির পরিপোষক, ত্রিপুরী কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা তাহা সমর্থন করেন না। এই পরাজয়ে আমি আনন্দ প্রকাশ করিতেছি।

 দিল্লীতে নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির সভা হইতে সংখ্যালঘিষ্টদলের বাহির হইয়া যাওয়া সম্বন্ধে লিখিত প্রবন্ধে আমি যাহা প্রচার করিয়াছিলাম, সেই নীতি অনুসারে কাজ করিবার এখন আমার একটা সুযোগ হইয়াছে। সুভাষবাবু যাঁহাদিগকে দক্ষিণপন্থা বলেন, এখন তিনি তাঁহাদের অনুগ্রহে সভাপতি না হইয়া প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দ্বারা নির্ব্বাচিত সভাপতি। ইহার ফলে তিনি একমতাবলম্বী সদস্যগণ দ্বারা গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি মনোনয়ন এবং বিনাবাধায় তাঁহার রচিত কর্মপন্থা অনুসারে কার্য্য করিবার ক্ষমতা লাভ করিয়াছেন।

 সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু এই উভয়দলের মধ্যে একটা বিষয়ে মতের মিল আছে। কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ পবিত্রতার জন্য উভয়দলই আগ্রহশীল। হরিজন-পত্রে আমার যে সব লেখা প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে দেখান হইয়াছে যে, কংগ্রেস অতি দ্রুত একটা দুর্নীতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইতেছে—অর্থাৎ কংগ্রেসের খাতার মধ্যে বহুসংখ্যক ভূয়াসদস্যের নাম রহিয়াছে। বিগত কয়েকমাস ধরিয়া আমি এই সকল খাতা বিশেষ করিয়া সংশোধনের প্রস্তাব করিতেছি। এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ যে, এই সকল ভূয়া ভোটারের ভোটে নির্বাচিত বহু সদস্যই পরীক্ষার ফলে অযোগ্য বলিয়া প্রতিপন্ন হইবেন।

 কিন্তু আমি এখন সেইরূপ কোন কঠোর পন্থা অবলম্বনের প্রস্তাব করি না। ভবিষ্যতে কংগ্রেসের খাতাগুলি হইতে যদি সমস্ত ভূয়াসদস্যের নাম কাটিয়া দেওয়া হয় এবং প্রবঞ্চনার পথ রোধের যথাযথ ব্যবস্থা করা হয় তাহা হইলেই যথেষ্ট হইবে। সংখ্যালঘিষ্ট দলের নিরুৎসাহ হইবার কোন কারণ নাই। কংগ্রেসের প্রবর্ত্তিত বর্ত্তমান কার্য্যক্রমের উপর যদি তাঁহাদের বিশ্বাস থাকে, তাহা হইলে তাঁহারা দেখিলেন যে, তাঁহারা সংখ্যালঘু অথবা সংখ্যাগুরু যাহাই হউন না কেন, এমনকি তাঁহারা কংগ্রেসের ভিতরে অথবা বাহিরে যেখানেই থাকুন না কেন, এই কার্য্যক্রম অনুসারে কাজ করা চলিবে। কংগ্রেসের এই পরিবর্ত্তনের ফলে একমাত্র পার্লামেণ্টারী কার্য্যক্রমই সম্ভবতঃ প্রভাবিত হইবে।

 এতদিন যাঁহারা সংখ্যাগরিষ্ট ছিলেন, তাঁহারা মন্ত্রীদিগকে নির্ব্বাচিত করিয়াছেন এবং তাঁহাদের কার্য্যক্রমের মধ্যে পার্লামেণ্টারী কার্য্যক্রম একটি অপ্রধান বিষয় মাত্র; অবশ্য কংগ্রেসী মন্ত্রীদের স্থায়িত্ব অনিশ্চিত। যদি কোন বিষয়ে কংগ্রেসের নীতি অনুসারে তাঁহাদিগকে পদত্যাগ করিতে বলা হয়, কিংবা যদি তাঁহারা কংগ্রেসের সহিত একমত হইতে না পারিয়া পদত্যাগ করেন, তাহাতে তাঁহাদের বিশেষ কিছু যায় আসে না।

 হাজার হোক, সুভাষবাবু ত আর দেশের শত্রু নন। তিনি দেশের জন্য নির্য্যাতন ভোগ করিয়াছেন। তাঁহার কার্য্যক্রম এবং নীতিকেই তিনি সর্ব্বাপেক্ষা প্রগতিমূলক মনে করেন। যাঁহারা সংখ্যালঘিষ্ঠ তাঁহারা কেবলমাত্র উহার সাফল্য কামনা করিতে পারেন। তাঁহারা যদি উহার সহিত তাল রাখিয়া চলিতে পারেন তাহা হইলে তাঁহারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের শক্তি বৃদ্ধি করিবেন; কোনক্রমেই বাধা সৃষ্টি করা সংখ্যালঘিষ্ঠদের উচিত হইবে না। যখন তাঁহারা সহযোগিতা করিতে অসমর্থ হইবেন তখন তাঁহারা সহযোগিতা হইতে বিরত থাকিবেন। কংগ্রেসসেবিগণকে আমি স্মরণ করাইয়া দিতে চাই যে, যাঁহারা কংগ্রেসী হইয়াও কংগ্রেসের বাহিরে থাকেন, তাঁহারাই কংগ্রেসের সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। সুতরাং যাঁহারা কংগ্রেসে থাকা অস্বস্তিকর মনে করিবেন তাঁহারা বাহিরে চলিয়া আসিতে পারেন। তাঁহারা কোনপ্রকার বিদ্বেষভাব পোষণ করিয়া বাহির হইবেন না; কার্য্যকরীভাবে দেশের অধিকতর সেবা করার উদ্দেশ্য লইয়াই তাঁহারা বাহিরে আসিবেন।”

 মহাত্মা গান্ধীর এই বিবৃতির উত্তরে রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্দ্র বসু নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রদান করেন:—

 “সম্প্রতি কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচন সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধী যে বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন তাহা আমি বিশেষ মনোযোগের সহিত পাঠ করিয়াছি। নির্ব্বাচন প্রতিযোগিতায় ডাঃ পট্টভি সীতারামিয়ার পরাজয়কে মহাত্মা গান্ধী স্বকীয় পরাজয় বলিয়া গণ্য করিয়াছেন দেখিয়া আমি অত্যন্ত মর্মাহত হইয়াছি। তাঁহার প্রতি যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্ব্বক আমি এই বিষয়ে তাঁহার সহিত ভিন্নমত হইতে চাই! ভোটদাতাগণ অর্থাৎ প্রতিনিধিগণ মহাত্মা গান্ধীর স্বপক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হন নাই। অতএব, আমার এবং অধিকাংশ লোকের মতে নির্বাচন প্রতিযোগিতার ফলাফল ব্যক্তিগত ভাবে তাঁহার জয় পরাজয়ের সূচক নহে।

 কংগ্রেসের বাম ও দক্ষিণপন্থীদের লইয়া কয়েকদিন যাবৎ অনেকে অনেককিছু বলাবলি করিয়াছেন, সংবাদপত্রেও অনেককিছু প্রকাশিত হইয়াছে। অনেকেই সভাপতি নির্ব্বাচনের ফলকে বামপন্থীদের জয় বলিয়া ধরিয়া লইয়াছেন। আমার বক্তব্য এই যে, এই নির্ব্বাচনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করিতে যাইয়া যেন আমরা অতিরিক্ত কল্পনাশক্তির আশ্রয় গ্রহণ না করি বা অতিরিক্ত রং ফলাইয়া না ফেলি। তর্কের খাতিরে যদি ধরিয়া লওয়া যায় যে, নির্বাচন ব্যাপারে বামপন্থিগণেরই জয় হইয়াছে, তাহা হইলেও বর্ত্তমানে আমাদিগকে বামপন্থিগণের কার্য্যপ্রণালী সম্বন্ধে বিবেচনা করিতে হইবে। বামপন্থিগণ কংগ্রেসের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির দায়িত্ব স্কন্ধে লইবেন না। যদি বিভেদের সৃষ্টিই হয়, তাহা হইলে তাঁহাদের কার্য্যকলাপের জন্যই যে এইরূপ হইবে তাহা নহে, বিভেদ নিবারণে তাঁহারা চেষ্টা করিলেও বিভেদের সৃষ্টি হইবে।

 কংগ্রেসের মধ্যে দলগত বিরোধের যে ধুয়া উঠিয়াছে, আমি তাহার কোন যুক্তি ও কারণ খুঁজিয়া পাইতেছিনা। তবু যদি কোনদিন এইরূপ কোন বিরোধ অনিবার্য্য হইয়া উঠে তবে আমি আমার সমস্ত শক্তি নিয়োগ করিয়া তাহার গতিরোধ করিতে চেষ্টা করিব। আমাদের ভবিষ্যৎ নীতি সম্পর্কে আমি এই কথাই বলিতে চাই যে, আমাদের নির্ব্বাচন-প্রতিশ্রুতি ও পার্লামেণ্টারী কার্য্যসূচি আমরা ভবিষ্যতে অধিকতর যত্নের সহিত সাফল্যমণ্ডিত করিয়া তুলিব। যুক্তরাষ্ট্র প্রবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিবার জন্য এবং পূর্ণ স্বরাজের পথে অগ্রসর হইবার জন্য আমাদের সমস্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত হইবে এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নীতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রক্ষা করিয়াই আমরা আমাদের গন্তব্য পথে অগ্রসর হইব। এই সম্পর্কে আমি ইহাও বলিতে চাই যে, মহাত্মাজীর সহিত আমার মতানৈক্যের জন্য আমি গভীর বেদনা অনুভব করিতেছি। কিন্তু একথা খুবই সত্য যে, মহাত্মাজীর ব্যক্তিত্বের নিকট সর্ব্বদাই আমি আমার মস্তক আনত করিতে গৌরব অনুভব করিব। আমার সম্পর্কে মহাত্মা কিরূপ মত পোষণ করেন তাহা আমি জানি না। কিন্তু তাঁহার মতামত যাহাই হউক না কেন, তাঁহার বিশ্বাস ভাজন হওয়ার জন্য আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। অন্যান্য সকলের আস্থা অর্জ্জন করিয়া আমি যদি ভারতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মানবের আস্থা লাভ করিতে না পারি, তাহা হইলে উহা আমার পক্ষে বিশেষ পরিতাপের বিষয় হইবে।”

 মহাত্মাজীর বিবৃতি প্রচারের ফলে অবস্থার উন্নতি হওয়া ত দূরের কথা পরিস্থিতি অধিকতর জটিলাকার ধারণ করিল। এমন কি উক্ত বিবৃতি প্রদানের ফলে যে সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছিল তাহাই শেষ পর্য্যন্ত সুভাষচন্দ্রকে সভাপতিপদে ইস্তফা দিয়া ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠন করিতে বাধ্য করিয়াছিল—ইহাই অনেকের ধারণা। আসল কথা, মহাত্মাজীর বিবৃতিকে তাঁহার অনুচরবর্গ ঠিক মহাত্মার দৃষ্টি দিয়া দেখিতে পারেন নাই—ফলে, এই বিবৃতিতে তাঁহারা যেন তাঁহাদের অভিসন্ধিমূলক কার্য্যের সমর্থন পাইলেন। সুভাষচন্দ্র শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও চিকিৎসকের পরামর্শের বিরুদ্ধে ওয়ার্দ্ধা গিয়া গান্ধীজীর সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। এই সাক্ষাৎকারের ফল প্রথমতঃ শুভ বলিয়াই মনে হইয়াছিল। মহাত্মার অনুমতি লইয়া সুভাষচন্দ্র এই সম্বন্ধে যে বিবৃতি প্রদান করেন তাহাতে প্রকাশ, মহাত্মাজী তাঁহাকে এই আশ্বাস দিয়াছিলেন যে, তিনি গান্ধীজীর পরিচালনা ও পরামর্শ লাভে বঞ্চিত হইবেন না। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় সুভাষচন্দ্রের এই বিবৃতি প্রকাশের পরেই মহাত্মাজী জনৈক সাক্ষাৎকারীকে বলেন যে তিনি (মহাত্মা) সুভাষচন্দ্রকে সুস্পষ্টরূপেই জানাইয়া দিয়াছেন যে সুভাষচন্দ্র নূতন ওয়ার্কিং কমিটি গঠনে তাঁহার পূর্ব্বতন সহকর্মীদের নিকট হইতে কোনরূপ সহযােগিতা আশা করিতে পারেন না। ওয়ার্কিং কমিটির দক্ষিণপন্থী সদস্যগণও বেশ দৃঢ়তার সহিত ইহা ঘােষণা করিয়াছেন যে ত্রিপুরী কংগ্রেসে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্দ্ধারণে তাঁহাদের কিছুই করিবার নাই। ইহার পর হইতেই কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ সংকট তীব্রতর হইয়া উঠিল।

 ২২শে ফেব্রুয়ারী ওয়ার্দ্ধায় ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশন হইবার কথা ছিল। সুভাষচন্দ্রের শরীরের অবস্থা তখন মােটেই সন্তোষজনক নয়। এমতাবস্থায় ওয়ার্দ্ধা যাইবার পথশ্রম ও অধিবেশনের কার্য্য পরিচালনার গুরুভার তাঁহার স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষ ক্ষতিকর হইতে পারে বিবেচনা করিয়া ডাঃ স্যার নীলরতন সরকার সুভাষচন্দ্রকে ওয়ার্দ্ধা যাইতে নিষেধ করেন। মার্চ্চ মাসে ত্রিপুরীতে কংগ্রেসের অধিবেশনও আগতপ্রায়। এ কয়দিন বিশ্রাম গ্রহণ করিলে ত্রিপুরী কংগ্রেসে যােগদান করিতে সমর্থ হইবেন মনে করিয়া সুভাষচন্দ্রও ওয়ার্দ্ধা না যাওয়াই স্থির করিলেন। এদিকে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ—নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভায় উপস্থিত করিবার জন্য প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করিতে হইবে। প্রস্তাব সম্পর্কে সদস্যগণের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সভাপতির উপস্থিত থাকা একান্ত প্রয়ােজন; নতুবা তিনি তাঁহার অনুপস্থিতিতেই বৈঠকের আলাপ-আলোচনা চালাইয়া যাইতে নির্দ্দেশ দিতেন। উপায়ান্তর না দেখিয়া সুভাষচন্দ্র সর্দার প্যাটেল ও গান্ধীজীকে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ত্রিপুরী অধিবেশন পর্য্যন্ত স্থগিত রাখিতে অনুরােধ জানাইয়া এক জরুরী তার প্রেরণ করেন। এই তারের যে উত্তর আসিল তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও হৃদয়বিদারক। সর্দ্দার প্যাটেল সদলবলে ওয়ার্কিং কমিটির সভ্যপদ ত্যাগ করিলেন। অপরদিকে তাঁহারা রটনা করিয়া দিলেন যে ওয়ার্কিং কমিটির সম্মুখীন হইতে সাহস না থাকায় সুভাষচন্দ্র অসুস্থতার ভান করিয়াছেন! এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ত্রিপুরী অধিবেশন পর্য্যন্ত সহজেই স্থগিত রাখা চলিত। সাধারণতঃ নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনের পূর্বদিন কিংবা মাত্র দুই একদিন পূর্বে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হইয়া থাকে।

 সর্দ্দার প্যাটেলের নেতৃত্বে ওয়ার্কিং কমিটির বারজন দক্ষিণপন্থী সদস্য পদত্যাগ করিলেন। কংগ্রেসের কার্য্যপদ্ধতির কিরূপ পরিবর্ত্তন হইবে তাহা না জানিয়াই ত্রিপুরী কংগ্রেসের পূর্ব্বেই তাঁহাদের এই পদত্যাগ যে শােভন হয় নাই, তাহা বলাই বাহুল্য। পদত্যাগপত্রে তাঁহারা লিখেন, “* * আমরা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ ত্যাগ করা আমাদের কর্ত্তব্য বলিয়া বিবেচনা করিয়া এতদ্বারা ওয়ার্কিং কমিটির সভ্যপদ ত্যাগ করিতেছি। আমাদের মনে হয়, আপনার মনােমত কর্ম-পরিষদ গঠনে আপনাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়াই কর্ত্তব্য। মনে হয়, কংগ্রেসের বিভিন্ন দলের আপােষ-নিষ্পত্তির ভিত্তির উপর রচিত কোন কর্মনীতির পরিবর্ত্তে কংগ্রেসের একটা সুস্পষ্ট কর্মনীতি অনুসরণের সময় আসিতেছে। এজন্য আপনার নিজ মতানুবর্ত্তীদের মধ্য হইতে আপনার নিজ কর্মপরিষদের সদস্যগণকে বাছাই করিয়া লওয়া কর্ত্তব্য। আপনি দেশের জন্য যে কর্মনীতি রচনা করেন, উহার যে যে স্থলে আমাদের সহযোগিতা করা সম্ভব, আমরা সেই সেই স্থলে আপনার সহিত সহযোগিতা করিব।” ঐ দিনই পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু পত্র যোগে সুভাষচন্দ্রকে জানান যে বর্ত্তমানে, বিশেষ করিয়া কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচনের পর যে আবহাওয়ার সৃষ্টি হইয়াছে, তাহাতে তিনিও আর কংগ্রেস ওয়ার্কিং-কমিটি সদস্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করিতে পারেন না। ওয়ার্কিং কমিটির বারজন সদস্যের পদত্যাগের ফলে বর্ত্তমানে ওয়ার্কিং কমিটির অস্তিত্ব লোপ পাইয়াছে বলিয়াই পণ্ডিতজী মনে করেন, এবং এই পরিণতির ফলে ব্যক্তিগতভাবেও তিনি শ্রীযুক্ত বসুকে কোনরূপ সাহায্য করিতে পারিবেন না। ঐ পত্রের উপসংহারে পণ্ডিতজী লিখেন, “আমি পাকা সমাজতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রে আস্থাবান হইলেও গত ২০ বৎসর যাবৎ অনুসৃত মহাত্মা গান্ধীর অহিংস শান্তিপূর্ণ পন্থা সর্ব্বান্তঃকরণেই গ্রহণ করিয়াছি।” অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুও পদত্যাগ করিলেন।

 সুভাষচন্দ্র ও দক্ষিণপন্থী নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে মতবিরোধ তাহা মূলতঃ সংগ্রামমূলক মনোভাব ও সংগ্রামবিমুখ মনোভাবের বিরোধ মাত্র। সুভাষচন্দ্র সংগ্রামশীল মনোভাবের পরিচয় দিয়াছেন এবং প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম ঘোষণা করিয়াছেন। সংগ্রামমূলক কর্মপন্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দ্বারাই তিনি কংগ্রেসের বামপক্ষের সমর্থন লাভ করিয়াছেন—সুতরাং দক্ষিণপন্থিগণ তাঁহার সহিত কিছুতেই সহযোগিতা রক্ষা করিয়া চলিতে পারেন না। কংগ্রেসের ঐক্য ও সংহতি রক্ষাকল্পে সুভাষচন্দ্র চেষ্টার কোন ত্রুটি করেন নাই, তৎসত্ত্বেও কংগ্রেসের মধ্যে ভেদ অনিবার্য্য হইয়া উঠিল। এদিকে ইউরোপের আকাশে তখন বিশ্বযুদ্ধের মেঘ পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিতেছে—যে কোন মুহূর্ত্তেই প্রলয়ঝঞ্ঝা সুরু হইতে পারে। ভারতবর্ষেও যে তাহার প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না তাহা কে বলিতে পারে? এইরূপ অবস্থায় সুভাষচন্দ্র বলিষ্ঠ মনোভাবের পরিচয় দিতে দ্বিধা করিলেন না। তিনি পদত্যাগেচ্ছু সভ্যদের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করাই সমীচীন মনে করিলেন।

 উল্লিখিত বারজন সদস্যের পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা সুভাষচন্দ্র ২৬শে ফেব্রুয়ারী এক পত্রযোগে সদস্যবর্গকে জানাইয়া দেন। ঐ পত্রে তিনি লিখেন, “আপনারা সম্মিলিত ভাবে ২২শে ফেব্রুয়ারী ওয়ার্দ্ধা হইতে যে পদত্যাগ পত্র প্রেরণ করিয়াছেন তাহা যথাসময়ে আমার নিকট পৌঁছিয়াছে। আমার অসুস্থতার জন্য এতদিন পর্য্যন্ত উহার উত্তর দিতে পারি নাই। সাধারণ ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পুনর্ব্বিবেচনা করিতে এবং ত্রিপুরীতে আমাদের সাক্ষাৎ না হওয়া পর্য্যন্ত আপনাদের পদত্যাগ স্থগিত রাখিতে অনুরোধ করিতাম। কিন্তু আমি জানিতে পারিয়াছি যে, আপনারা বিশেষভাবে সমস্ত অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করিয়া সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন। আপনাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের যদি বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকিত, তাহা হইলে আমি নিশ্চয়ই আপনাদিগকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করিতে অনুরোধ করিতাম। বর্ত্তমান অবস্থায় এইরূপ মামুলী অনুরোধে কোন লাভ নাই। কাজেই গভীর দুঃখের সহিত আপনাদের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করিতেছি।

 আমি মনে করি, আপনাদের পদত্যাগের দ্বারা ইহা বুঝাইবে না যে, আপনারা সহযোগিতা প্রত্যাহার করিতেছেন। আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে আমার কার্য্য সম্পাদনে আমি আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা লাভে সমর্থ হইব। আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা যে মূল্যবান তা উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন। আমি আরও আশা করি, ত্রিপুরী কংগ্রেসে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য অপেক্ষা ঐক্য অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হইবে; ইহার ফলে আমরা ভবিষ্যতে সম্মিলিতভাবে কার্য্য করিতে সক্ষম হইব।”

 পণ্ডিত জওহরলাল পদত্যাগ করিয়াছেন কিনা তাহা স্পষ্টভাবে জানাইতে বলিয়া সুভাষচন্দ্র পণ্ডিতজীর নিকট এক পৃথক পত্র লিখেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে পণ্ডিত জওহরলাল লক্ষৌয়ে জনৈক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে বলেন— তিনি তাঁহার পত্রে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ ত্যাগ করেন নাই; প্রকৃতপক্ষে, ওয়ার্কিং কমিটির বারজন সদস্যের পদত্যাগের ফলে উহা স্বতঃই ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, সুতরাং এক্ষেত্রে তাঁহার পদত্যাগের কোন প্রশ্নই ওঠে না।

 ত্রিপুরী অধিবেশনের আর কয়েকদিন মাত্র বাকী। রাষ্ট্রপতি রোগশয্যায়—তাঁহার অবস্থা উদ্বেগজনক। এদিকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের পদত্যাগের ফলে সমস্ত কাজের দায়িত্ব তাঁহার উপর পড়িয়াছে। আচার্য্য কৃপালনীও পদত্যাগ করিয়াছেন—কাজেই সম্পাদকীয় দপ্তর ও তাঁহাকেই দেখিতে হইতেছে। পার্লামেণ্টারী সাব-কমিটি ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। ইহার ফলে উক্ত সাব কমিটির সর্বপ্রকার ক্ষমতা কংগ্রেস সভাপতি ও অবশিষ্ট একমাত্র সদস্য শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র বসুর হস্তে ন্যস্ত হইয়াছে।

 সভাপতি নির্ব্বাচনের সূচনা হইতে দক্ষিণপন্থীদের পক্ষ হইতে সুভাষচন্দ্রের উপর যে সকল অভিযোগ আরোপ করার চেষ্টা হইয়াছে ঐ সকল অভিযোগের উত্তরে ৩রা মার্চ্চ সংবাদ পত্রে সুভাষচন্দ্র এক দীর্ঘ বিবৃতি প্রচার করেন। কংগ্রেসের কয়েকজন প্রধান নেতা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আপোষের ভাব পোষণ করেন, সুভাষচন্দ্র এ কথা প্রচার করিয়া অন্যায় করিয়াছেন—সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীদের ইহাই প্রধান অভিযোগ। এই অভিযোগের উত্তরে সুভাষচন্দ্র বলেন, “কংগ্রেসের প্রস্তাবে যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনমনীয় বিরোধিতা রহিয়াছে, তথাপি ইহা সত্য যে, কোন প্রতিপত্তিশালী নেতা সর্ত্তাধীনে যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করিবার জন্য প্রকাশ্যে এবং ঘরোয়াভাবে মত প্রকাশ করিতেছেন এবং এ পর্য্যন্ত দক্ষিণপন্থী কোন নেতাই এইরূপ প্রচারকার্য্যের নিন্দা করেন নাই। গান্ধীজী ও গান্ধীবাদের প্রতি তাঁহার শ্রদ্ধা ও সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া তিনি উক্ত বিবৃতিতে লিখেন, “বর্ত্তমানে এরূপ ধারণার সৃষ্টি চলিতেছে যে, গান্ধীবাদের আদর্শ ও আঙ্গিকের প্রতি আমাদের বিশ্বাস নাই। কংগ্রেসী রাজনীতির উপর যে গান্ধীবাদ আরোপ করা হয় তাহা কি? সত্য ও অহিংসাই ইহার মূল নীতি—অহিংস অসহযোগিতাই ইহার কর্মপন্থা। আমাদের মূলনীতি ও পথের বিষয়ে কংগ্রেস কর্ম্মীদের মধ্যে কোন মতানৈক্য থাকিতে পারে না। যদি গান্ধীমতবাদ বলিতে কেহ মহাত্মাজীর ব্যক্তিগত আচরণ, তাঁহার আহার-পদ্ধতি, তাঁহার জীবনযাত্রাপ্রণালী, তাঁহার পোষক-পরিচ্ছদ প্রভৃতিকেও অন্তর্ভুক্ত করিতে চান, তবে মহাত্মাজীর তথাকথিত গোঁড়া ভক্তদের মধ্যেও কতজন তাহা বিশ্বাস করেন তৎসম্পর্কে আমার আশঙ্কা হয়। আমি পুনরায় বলিতেছি যে, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অর্থ ইহা নহে যে, অন্ধের মত তাঁহার ইচ্ছা ও চিন্তাধারার অনুসরণ করিতে হইবে। আমি যদি তাঁহাকে ঠিকভাবে বুঝিয়া থাকি, তাহা হইলে আমি ইহাও বলিতে পারি যে, কোন লোক যতক্ষণ পর্য্যন্ত মহাত্মাজীর সত্য ও অহিংসার মূলনীতির বিরোধিতা না করে, ততক্ষণ সে তাহার নিজস্ব বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কাজ করিবে ইহা মহাত্মাজীর অভিপ্রেত নয়। তাঁহার প্রতি আমার নিজের মনোভাব এই যে, স্বীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়াও আমি তাঁহার বিশ্বাস অর্জ্জনের জন্য সচেষ্ট থাকিব।”