ধরা কথা।

 সমস্ত জীবন যে তত্ব গুলিকে জানিয়া অসিতেছি, মাঝে মাঝে তাহাদের এক একবার আবিষ্কার করিয়া ফেলি। তাড়াতাড়ি পাশের লোককে ডাকিয়া বলি, ওহে, আমি এই তত্বটি জানিয়াছি। সে বিরক্ত হইয়া বলে, আঃ, ওত জানা কথা! কিন্তু ঠিক জানা কথা নয়। তুমি উহা জান বটে তবুও জান না। একটা তুলনা দিলে স্পষ্ট হইবে। বাতাস সর্ব্বত্রই বিদ্যমান। তথাপি এক জন যদি বলিয়া উঠে, ওহে, এই খানে বাতাস আছে, তবে তাহাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিতে পারি না, তেমনি তামরা যে সকল সাধারণ তত্বের মধ্যে বাস করিয়া থাকি, সেই তত্ত্বগুলি অবস্থাবিশেষে এক এক জনের গায়ে লাগে, অমনি সে বলে, অমুক তত্বটি পাইতেছি। এক জন বন্ধু বলিতেছিলেন যে, আজ কাল সার্ব্বজনীন-উদারতা (Humanity) প্রভৃতি কতকগুলি প্রশস্ত কথা উঠিয়াছে, সহসা মনে হয়, কত কি মূল্যবান্ তত্ব উপার্জ্জন করিতেছি, কিন্তু সে সকল তত্ব বাতাসের মত। বাতাস অত্যন্ত উপকারী পদার্থ বটে, কিন্তু এত সাধারণ যে তাহার কোন মূল্য নাই। তেমনি উপরি-উক্ত তত্বগুলি বড় বড় তত্ব বটে, কিন্তু এত সাধারণ যে তাহার কোন মূল্য নাই; অথচ আজকাল তাহাদের এমনি বিশেষ রূপে উত্থাপিত করা হইতেছে যে, যেন তাহারা কতই অসাধারণ! তাঁহার কথাটা ঠিক মানি না। মহাত্মাদিগের “বসুধৈব কুটুম্বকং,” এ কথাটি সকলই জানেন, অথচ সকলের গায়ে লাগে না। এ তত্বটি মাঝে মাঝে এক এক জনের গায়ে প্রবাহিত হয় অমনি সে বসুধৈব কুটুম্বকং প্রচার করিয়া বেড়ায়। পুরাণো কথা ধরাকথা পারত-পক্ষে কেহ বলিতে চাহে না; অতএব পুরাণো কথা যখন কাহারো মুখে শুনা যায়, তখন বিবেচনা করা উচিত, সে তাহা জানিত বটে কিন্তু আজ নুতন পাইয়াছে, আমাদের ভাগ্যে এখনো তাহা ঘটে নাই। অনেক “উড়ো-কথা”র অপেক্ষা ধরা কথাকে আমরা কম জানি। আমরা নিজের চোক দেখিতে পাই না, দর্পণ পাইলেই দেখিতে পাই; ধরা কথা ধরিতে পারি না, বিশেষ অতিজজ্ঞতা পাইলে ধরি। অতএব যাহারা জানা-কথা জানে, তাহারা সাধারণের চেয়ে অধিক জানে।