পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৬: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

+
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:


<section begin="7" />{{xxxx-larger|সপ্তম পরিচ্ছেদ}}
<section begin="7" />{{xxxx-larger|সপ্তম পরিচ্ছেদ}}

জয়সিংহের সমস্ত রাত্রি নিদ্রা হইল না। গুরুর সহিত যে কথা লইয়া আলোচনা হইয়াছিল দেখিতে দেখিতে তাহার শাখা-প্রশাখা বাহির হইতে লাগিল ( অধিকাংশ সময়েই আরম্ভ আমাদের আয়ত্ত, শেষ আমাদের আয়ত্ত নহে।)চিস্তা সম্বন্ধেও এই কথা খাটে । জয়সিংহের মনে অনিবায়ু বেগে এমন-সকল কথা উঠিতে লাগিল যাহা তাহার অশৈশব বিশ্বাসের মূলে অবিশ্রাম আঘাত করিতে লাগিল। জয়সিংহ পীড়িত ক্লিষ্ট হইতে লাগিলেন ।
জয়সিংহের সমস্ত রাত্রি নিদ্রা হইল না। গুরুর সহিত যে কথা লইয়া আলোচনা হইয়াছিল, দেখিতে দেখিতে তাহার শাখাপ্রশাখা বাহির হইতে লাগিল। অধিকাংশ সময়েই আরম্ভ আমাদের আয়ত্ত, শেষ আমাদের আয়ত্ত নহে। চিন্তা সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। জয়সিংহের মনে অনিবার্য বেগে এমন-সকল কথা উঠিতে লাগিল যাহা তাঁহার আশৈশব বিশ্বাসের মূলে অবিশ্রাম আঘাত করিতে লাগিল। জয়সিংহ পীড়িত ক্লিষ্ট হইতে লাগিলেন।
fs দুঃস্বপ্নের মতো ভাবনা কিছুতেই ক্ষান্ত হইতে চায় না । যে দেবীকে জয়সিংহ এতদিন মা বলিয়া জানিতেন গুরুদেব আজ কেন র্তাহার মাতৃত্ব অপহরণ করিলেন, কেন তাহাকে হৃদয়হীন শক্তি বলিয়া ব্যাখ্যা করিলেন ? শক্তির সন্তোষই কী আর অসন্তোষই কী ? শক্তির চক্ষুই বা কোথায় কর্ণই বা কোথায় ? শক্তি তো মহারথের ন্যায় তাহার সহস্ৰ চক্রের তলে জগৎ কৰ্ষিত করিয়া ঘর্ঘর শব্দে চলিয়া যাইতেছে ; তাহাকে অবলম্বন করিয়া কে চলিল, তাহার তলে পড়িয়া কে চূর্ণ হইল, তাহার উপরে উঠিয়া কে উৎসব করিতেছে, তাহার নিম্নে পড়িয়া কে আর্তনাদ করিতেছে, সে তাহার কী জানিবে ? তাহার সারধি কি কেহ নাই ? পৃথিবীর নিরীহ অসহায় ভীরু জীবদিগের রক্ত বাহির করিয়া কালরূপিণী নিষ্ঠুর শক্তির তৃষা নির্বাণ করিতে হইবে, এই কি আমার ব্ৰত ? কেন ? সে তে আপনার কাজ আপনিই করিতেছে—তাহার দুভিক্ষ আছে, বঙ্গ আছে, ভূমিকম্প আছে, জরা মারী অগ্নিদাহ আছে, নির্দয় । মানব হৃদয়তি হিংসা আছে, ক্ষুদ্র আমাকে তাহার আবশ্বক কী?) তাহার পরদিন যে প্রভাত হইল তাহ অতি মনোহর প্রভাত। বঁটির শেষ হইয়াছে। পূর্বদিকে মেঘ নাই। হৰ্যকিরণ মেন বর্ষার জলে

কিন্তু দুঃস্বপ্নের মতো ভাবনা কিছুতেই ক্ষান্ত চাইতে চায় না। যে দেবীকে জয়সিংহ এতদিন মা বলিয়া জানিতেন, গুরুদেব আজ কেন তাঁহার মাতৃত্ব অপহরণ করিলেন, কেন তাঁহাকে হৃদয়হীন শক্তি বলিয়া ব্যাখ্যা করিলেন! শক্তির সন্তোষই কী, আর অসন্তোষই বা কী! শক্তির চক্ষুই বা কোথায়, কর্ণই বা কোথায়! শক্তি তো মহারথের ন্যায় তাহার সহস্র চক্রের তলে জগৎ কর্ষিত করিয়া ঘর্ঘর শব্দে চলিয়া যাইতেছে, তাহাকে অবলম্বন করিয়া কে চলিল, তাহার তলে পড়িয়া কে চূর্ণ হইল, তাহার উপরে উঠিয়া কে উৎসব করিতেছে, তাহার নিম্নে পড়িয়া কে আর্তনাদ করিতেছে, সে তাহার কী জানিবে! তাহার সারথি কি কেহ নাই? পৃথিবীর নিরীহ অসহায় ভীরু জীবদিগের রক্ত বাহির করিয়া কালরূপিণী নিষ্ঠুর শক্তির তৃষা নির্বাণ করিতে হইবে এই কি আমার ব্রত! কেন? সে তো আপনার কাজ আপনিই করিতেছে– তাহার দুর্ভিক্ষ আছে, বন্যা আছে, ভূমিকম্প আছে, জরা মারী অগ্নিদাহ আছে, নির্দয়মানবহৃদয়স্থিত হিংসা আছে– ক্ষুদ্র আমাকে তাহার আবশ্যক কী!

তাহার পরদিন যে প্রভাত হইল তাহা অতি মনোহর প্রভাত। বৃষ্টি শেষ হইয়াছে। পূর্ব দিকে মেঘ নাই। সূর্যকিরণ যেন বর্ষার জলে
<section end="7" />
<section end="7" />