পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৩১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
 
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
মাতা শান্তিলাভ করিলেন, ইহা কি কল্পনা করা যায়?”
So রাজর্ষি

মাতা,শাস্তিলাভ করিলেন— ইহা কি কল্পনা করা যায়?”
রাজা কহিলেন, “ঠাকুর, তোমার বাক্য আমার হৃদয়ে বিদ্ধ হইয়া প্রবেশ করে। কিন্তু এবার আমাকে মার্জন করে, আমাকে আর অধিক কিছু বলিয়ে না। আমাকে বিচলিত করিবার চেষ্টা করিয়ো না । তুমি জান ঠাকুর, আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম রক্তপাত আর করিব না ; সে প্রতিজ্ঞা আমি ভাঙিতে পারি না ।”
রাজা কহিলেন, “ঠাকুর, তোমার বাক্য আমার হৃদয়ে বিদ্ধ হইয়া প্রবেশ করে। কিন্তু এবার আমাকে মার্জনা করো, আমাকে আর অধিক কিছু বলিয়ো না। আমাকে বিচলিত করিবার চেষ্টা করিয়ো না। তুমি জানো ঠাকুর, আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম রক্তপাত আর করিব না, সে প্রতিজ্ঞা আমি ভাঙিতে পারি না।”

বিম্বন কহিলেন, “তবে এখন মহারাজ কী করিবেন ?” রাজা কহিলেন, “তবে তোমাকে সমস্ত বলি। আমি ধ্রুবকে সঙ্গে " করিয়া বনে যাইব । ঠাকুর, আমার জীবন অত্যন্ত অসম্পূর্ণ রহিয়া গিয়াছে। যাহা মনে করিয়াছিলাম তাহার কিছুই করিতে পারি নাই— জীবনের যতখানি চলিয়া গেছে তাহ ফিরিয়া পাইয়া আর নূতন করিয়া গড়িতে পারিব না— আমার মনে হইতেছে ঠাকুর,অদৃষ্টযেন আমাদিগকে তীরের মতো নিক্ষেপ করিয়াছে, লক্ষ্য হইতে যদি একবার একটু বাকিয়া গিয়া থাকি তবে আর যেন সহস্ৰ চেষ্টায় লক্ষ্যের মুখে ফিরিতে পারি না । জীবনের আরম্ভ-সময়ে আমি সেই যে বাকিয়া গিয়াছি জীবনের শেষকালে আমি আর লক্ষ্য খুজিয়া পাইতেছি না। যাহা মনে করি তাহা অার হয় না । যে সময়ে জাগিলে আত্মরক্ষা করিতে পারিতাম সে সময়ে জাগি নাই,যে সময়ে ডুবিয়াছি তখন চৈতন্য হইয়াছে। সমুদ্রে পড়িলে লোকে যে ভাবে কাষ্ঠখণ্ড অবলম্বন করে আমি বালক ধ্রুবকে সেই ভাবে অবলম্বন করিয়াছি । আমি ধ্রুবের মধ্যে আত্মসমাধান করিয়া গ্রুবের মধ্যে পুনর্জন্ম লাভ করিব। আমি প্রথম হইতে ধ্রুবকে মানুষ করিয়া গড়িয়া তুলিব । গ্রুবের সহিত তিলে তিলে আমিই বাড়িতে থাকিব। আমার মানবজন্ম সম্পূর্ণ করিব । ঠাকুর, আমি মাহুষের মতে নই, আমি রাজ হইয়া কী করিব।” o
বিল্বন কহিলেন, “তবে এখন মহারাজ কী করিবেন?”
শেষ কথাটা রাজা অত্যন্ত আবেগের সহিত উচ্চারণ করিলেন। শুনিয়া

রাজা কহিলেন, “তবে তোমাকে সমস্ত বলি। আমি ধ্রুবকে সঙ্গে করিয়া বনে যাইব। ঠাকুর, আমার জীবন অত্যন্ত অসম্পূর্ণ রহিয়া গিয়াছে। যাহা মনে করিয়াছিলাম তাহার কিছুই করিতে পারি নাই– জীবনের যতখানি চলিয়া গেছে তাহা ফিরিয়া পাইয়া আর নূতন করিয়া গড়িতে পারিব না– আমার মনে হইতেছে, ঠাকুর, অদৃষ্ট যেন আমাদিগকে তীরের মতো নিক্ষেপ করিয়াছে, লক্ষ্য হইতে যদি একবার একটু বাঁকিয়া গিয়া থাকি, তবে আর যেন সহস্র চেষ্টায় লক্ষ্যের মুখে ফিরিতে পারি না। জীবনের আরম্ভ-সময়ে আমি সেই যে বাঁকিয়া গিয়াছি, জীবনের শেষকালে আমি আর লক্ষ্য খুঁজিয়া পাইতেছি না। যাহা মনে করি তাহা আর হয় না। যে সময়ে জাগিলে আত্মরক্ষা করিতে পারিতাম সে সময়ে জাগি নাই, যে সময়ে ডুবিয়াছি তখন চৈতন্য হইয়াছে। সমুদ্রে পড়িলে লোকে যেভাবে কাষ্ঠখণ্ড অবলম্বন করে আমি বালক ধ্রুবকে সেইভাবে অবলম্বন করিয়াছি। আমি ধ্রুবের মধ্যে আত্মসমাধান করিয়া ধ্রুবের মধ্যে পুনর্জন্ম লাভ করিব। আমি প্রথম হইতে ধ্রুবকে মানুষ করিয়া গড়িয়া তুলিব। ধ্রুবের সহিত তিলে তিলে আমিই বাড়িতে থাকিব। আমার মানবজন্ম সম্পূর্ণ করিব। ঠাকুর, আমি মানুষের মতো নই, আমি রাজা হইয়া কী করিব!”

শেষ কথাটা রাজা অত্যন্ত আবেগের সহিত উচ্চারণ করিলেন– শুনিয়া,