পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৪১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
খেলিয়া বেড়াইত। অমরসিংহ সেনাপতি অজিতসিংহের পুত্র, অর্থ নাই কিন্তু উচ্চবংশজাত— এই নিমিত্ত কমল ও অমরের বিবাহের সম্বন্ধ হইয়াছে। একবার মোহনলাল নামে একজন ধনীর পুত্রের সহিত কমলের বিবাহের প্রস্তাব হয়, কিন্তু কমলের পিতা তাহার চরিত্র ভালো নয় জানিয়া তাহাতে সম্মত হন নাই।
৯১২ গল্পগুচ্ছ

খেলিয়া বেড়াইত। অমরসিংহ সেনাপতি অজিতসিংহের পত্র, অর্থ নাই কিন্তু উচ্চবংশজাত— এই নিমিত্ত কমল ও অমরের বিবাহের সম্মবন্ধ হইয়াছে। একবার মোহনলাল নামে একজন ধনীর পত্রের সহিত কমলের বিবাহের প্রস্তাব হয়, কিন্তু কমলের পিতা তাহার চরিত্র ভালো নয় জানিয়া তাহাতে সম্মত হন নাই।
কমলের পিতার মৃত্যু হইল। ক্লমে তাঁহার বিষয়সম্পত্তি ধীরে ধীরে নস্ট হইয়া গেল। ক্লমে তাঁহার প্রস্তরনিমিত আটালিকাটি আস্তে আস্তে ভাঙিয়া গেল। ক্রমে তাহার পারিবারিক সম্প্রম অলেপ আলেপ বিনষ্ট হইল এবং ক্লমে তাঁহার রাশি রাশি বন্ধ একে একে সরিয়া পড়িল । অনাথা বিধবা জীণ অট্টালিকা ত্যাগ করিয়া একটি ক্ষদ্র কুটিরে বাস করিলেন। সম্পদের সুখময় সবগ হইতে দারণ দারিদ্র্যে নিপতিত হইয়া বিধবা অত্যন্ত কষ্ট পাইতেছেন। সম্প্রম রক্ষা করিবার উপায় দরে থাক, জীবনরক্ষারও কোনো সম্প্রবল নাই— আদরিণী কন্যাটি কী করিয়া দারিদ্র্যদুঃখ সহ্য করিবে ? স্নেহময়ী মাতা ভিক্ষা করিয়াও কমলকে কোনোমতে দারিদ্র্যের রৌদ্র ভোগ করিতে দেন নাই।
কমলের পিতার মৃত্যু হইল। ক্রমে তাঁহার বিষয়সম্পত্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হইয়া গেল। ক্রমে তাঁহার প্রস্তরনির্মিত অট্টালিকাটি আস্তে আস্তে ভাঙিয়া গেল। ক্রমে তাঁহার পারিবারিক সম্ভ্রম অল্পে অল্পে বিনষ্ট হইল এবং ক্রমে তাঁহার রাশি রাশি বন্ধু একে একে সরিয়া পড়িল। অনাথা বিধবা জীর্ণ অট্টালিকা ত্যাগ করিয়া একটি ক্ষুদ্র কুটিরে বাস করিলেন। সম্পদের সুখময় স্বর্গ হইতে দারুণ দারিদ্র্যে নিপতিত হইয়া বিধবা অত্যন্ত কষ্ট পাইতেছেন। সম্ভ্রম রক্ষা করিবার উপায় দূরে থাক্‌, জীবনরক্ষারও কোনো সম্বল নাই— আদরিণী কন্যাটি কী করিয়া দারিদ্রদুঃখ সহ্য করিবে? স্নেহময়ী মাতা ভিক্ষা করিয়াও কমলকে কোনোমতে দারিদ্র্যের রৌদ্র ভোগ করিতে দেন নাই।
অমরের সহিত কমলের শীঘ্রই বিবাহ হইবে। বিবাহের আর দই-এক সপ্তাহ অবশিষ্ট আছে। অমর গ্রামের পথে বেড়াইতে বেড়াইতে কমলকে তাহার ভবিষ্যৎজীবনের কত কী সখের কাহিনী শনাইত— বড়ো হইলে দুইজনে ঐ শৈলশিখরে কত খেলা খেলিবে, ঐ সরসীর জলে কত সাঁতার দিবে, ঐ বকুলের কুঞ্জে কত ফল তুলিবে, চুপিচুপি গম্ভীরভাবে তাহারই পরামর্শ করিত। বালিকা অমরের মুখে তাহাদের ভবিষ্যৎ-ক্রীড়ার গলপ শুনিয়া আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া বিহবল নেত্রে অমরের মখের পানে চাহিয়া থাকিত। এইরপে যখন এই দুইটি বালক-বালিকা কল্পনার অসফট জোৎস্নাময় সবগে খেলা করিতেছিল তখন রাজধানী হইতে সংবাদ আসিল যে, রাজ্যের সীমায় যন্ধ বাধিয়াছে। সেনানায়ক অজিতসিংহ যন্ধে যাইবেন এবং যন্ধশিক্ষা দিবার জন্য তাঁহার পত্র অমরসিংহকেও সঙ্গে লইবেন।
অমরের সহিত কমলের শীঘ্রই বিবাহ হইবে। বিবাহের আর দুই-এক সপ্তাহ অবশিষ্ট আছে। অমর গ্রামের পথে বেড়াইতে বেড়াইতে কমলকে তাহার ভবিষ্যৎ-জীবনের কত কী সুখের কাহিনী শুনাইত— বড়ো হইলে দুইজনে ঐ শৈলশিখরে কত খেলা খেলিবে, ঐ সরসীর জলে কত সাঁতার দিবে, ঐ বকুলের কুঞ্জে কত ফুল তুলিবে, চুপিচুপি গম্ভীরভাবে তাহারই পরামর্শ করিত। বালিকা অমরের মুখে তাহাদের ভবিষ্যৎ-ক্রীড়ার গল্প শুনিয়া আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া বিহ্বল নেত্রে অমরের মুখের পানে চাহিয়া থাকিত। এইরূপে যখন এই দুইটি বালক-বালিকা কল্পনার অস্ফুট জ্যোৎস্নাময় স্বর্গে খেলা করিতেছিল তখন রাজধানী হইতে সংবাদ আসিল যে, রাজ্যের সীমায় যুদ্ধ বাধিয়াছে। সেনানায়ক অজিতসিংহ যুদ্ধে যাইবেন এবং যুদ্ধশিক্ষা দিবার জন্য তাঁহার পুত্র অমরসিংহকেও সঙ্গে লইবেন।

সন্ধ্যা হইয়াছে, শৈলশিখরের বক্ষচ্ছায়ায় অমর ও কমল দাঁড়াইয়া আছে। অমরসিংহ কহিতেছেন, "কমল, আমি তো চলিলাম, এখন রামায়ণ শুনিবি কার কাছে।”
সন্ধ্যা হইয়াছে, শৈলশিখরের বৃক্ষচ্ছায়ায় অমর ও কমল দাঁড়াইয়া আছে। অমরসিংহ কহিতেছেন, “কমল, আমি তো চলিলাম, এখন রামায়ণ শুনিবি কার কাছে।”
বালিকা ছলছল নেরে মুখের পানে চাহিয়া রহিল। “দেখ কমল, এই অস্তমান সন্য আবার কাল উঠিবে, কিন্তু তোর কুটির বারে আমি আর আঘাত দিতে যাইব না। তবে বল দেখি, আর কাহার সহিত খেলা করিবি ।”

কমল কিছই কহিল না, নীরবে চাহিয়া রহিল। অমর কহিল, “সখী, যদি তোর অমর যন্ধক্ষেত্রে মরিয়া যায়, তাহা হইলে—” কমল ক্ষুদ্র বাহন দলটিতে অমরের বক্ষ জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিয়া উঠিল ; কহিল, “আমি যে তোমাকে ভালোবাসি অমর, তুমি মরিবে কেন।”
বালিকা ছলছল নেত্রে মুখের পানে চাহিয়া রহিল।
আশ্রসেলিলে বালকের নেত্র ভরিয়া গেল ; তাড়াতাড়ি মাছিয়া ফেলিয়া কহিল, “কমল, আয়, অন্ধকার হইয়া আসিতেছে— আজ এই শেষবার তোকে কুটিরে পৌছাইয়া দিই।”

দইজনে হাত ধরাধরি করিয়া কুটিরের অভিমুখে চলিল। গ্রামের বালিকারা জল তুলিয়া গান গাইতে গাইতে গহে ফিরিয়া আসিতেছে, বনশ্রেণীর মধ্যে অলক্ষিত
“দেখ্‌ কমল, এই অস্তমান সূর্য আবার কাল উঠিবে, কিন্তু তোর কুটিরদ্বারে আমি আর আঘাত দিতে যাইব না। তবে বল্‌ দেখি, আর কাহার সহিত খেলা করিবি।”

কমল কিছুই কহিল না, নীরবে চাহিয়া রহিল।

অমর কহিল, “সখী, যদি তোর অমর যুদ্ধক্ষেত্রে মরিয়া যায়, তাহা হইলে—”

কমল ক্ষুদ্র বাহু দুটিতে অমরের বক্ষ জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিয়া উঠিল; কহিল, “আমি যে তোমাকে ভালোবাসি অমর, তুমি মরিবে কেন।”

অশ্রুসলিলে বালকের নেত্র ভরিয়া গেল; তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়া কহিল, “কমল, আয়, অন্ধকার হইয়া আসিতেছে— আজ এই শেষবার তোকে কুটিরে পৌঁছাইয়া দিই।”

দুইজনে হাত ধরাধরি করিয়া কুটিরের অভিমুখে চলিল। গ্রামের বালিকারা জল তুলিয়া গান গাইতে গাইতে গৃহে ফিরিয়া আসিতেছে, বনশ্রেণীর মধ্যে অলক্ষিত-