পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৪২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
ভাবে একটির পর আর-একটি পাপিয়া গাহিয়া গাহিয়া সারা হইতেছে, আকাশময় তারকা ফুটিয়া উঠিল। অমর কেন তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইবে এই অভিমানে কমল কুটিরে গিয়া মাতার বক্ষে মুখ লুকাইয়া কাঁদিতে লাগিল। অমর অশ্রুসলিলে শেষ বিদায় গ্রহণ করিয়া ফিরিয়া আসিল।
छिधाद्रिमी సిసిలి

ভাবে একটির পর আর-একটি পাপিয়া গাহিয়া গাহিয়া সারা হইতেছে, আকাশময় তারকা ফটিয়া উঠিল। অমর কেন তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইবে এই অভিমানে কমল কুটিরে গিয়া মাতার বক্ষে মুখ লকোইয়া কাদিতে লাগিল। অমর আশ্রসেলিলে শেষ বিদায় গ্রহণ করিয়া ফিরিয়া আসিল ।
অমর পিতার সহিত সেই রাত্রেই গ্রাম ত্যাগ করিয়া চলিল। গ্রামের শেষ প্রান্তের শৈলশিখরোপরি উঠিয়া একবার ফিরিয়া চাহিল ; দেখিল— শৈলগ্রাম জ্যোৎস্নালোকে ঘমাইতেছে, চঞ্চল নিঝরিণী নাচিতেছে, ঘুমন্ত গ্রামের সকল কোলাহল স্তব্ধ, মাঝে মাঝে দই-একটি রাখালের গানের অসফট স্বর গ্রামশৈলের শিখরে গিয়া মিশিতেছে। অমর দেখিল কমলদেবীর লতাপাতাবেষ্টিত ক্ষুদ্র কুটিরটি অসফট জ্যোৎস্নায় ঘনমাইতেছে। ভাবিল ঐ কুটিরে হয়তো এতক্ষণে শন্যহৃদয়া মমাপীড়িতা বালিকাটি উপাধানে ক্ষুদ্র মুখখানি লুকাইয়া নিদ্রাশন্য নেরে আমার জন্য কাঁদিতেছে। অমরের নেত্র আশ্রতে পরিয়া গেল।
অমর পিতার সহিত সেই রাত্রেই গ্রাম ত্যাগ করিয়া চলিল। গ্রামের শেষ প্রান্তের শৈলশিখরোপরি উঠিয়া একবার ফিরিয়া চাহিল; দেখিল— শৈলগ্রাম জ্যোৎস্নালোকে ঘুমাইতেছে, চঞ্চল নির্ঝরিণী নাচিতেছে, ঘুমন্ত গ্রামের সকল কোলাহল স্তব্ধ, মাঝে মাঝে দুই-একটি রাখালের গানের অস্ফুট স্বর গ্রামশৈলের শিখরে গিয়া মিশিতেছে। অমর দেখিল কমলদেবীর লতাপাতাবেষ্টিত ক্ষুদ্র কুটিরটি অস্ফুট জ্যোৎস্নায় ঘুমাইতেছে। ভাবিল ঐ কুটিরে হয়তো এতক্ষণে শূন্যহৃদয়া মর্মপীড়িতা বালিকাটি উপাধানে ক্ষুদ্র মুখখানি লুকাইয়া নিদ্রাশূন্য নেত্রে আমার জন্য কাঁদিতেছে। অমরের নেত্র অশ্রুতে পূরিয়া গেল।

অজিতসিংহ কহিলেন, “রাজপত-বালক ! যুদ্ধযাত্রার সময় কাঁদিতেছিস!"
অজিতসিংহ কহিলেন, “রাজপুত-বালক! যুদ্ধযাত্রার সময় কাঁদিতেছিস!
অমর আশ্র মুছিয়া ফেলিল ।

শীতকাল। দিবা অবসান হইয়া আসিতেছে। গাঢ় অন্ধকারময় মেঘরাশি উপত্যকা শৈলশিখর কুটির বন নিঝর হ্রদ শস্যক্ষেত্র একেবারে গ্রাস করিয়া ফেলিয়াছে,
অমর অশ্রু মুছিয়া ফেলিল।
বক্ষসকল শেবত মস্তকে স্তম্ভিতভাবে দণ্ডায়মান। দারণ তীব্র শীতে হিমালয়গিরিও যেন অবসন্ন হইয়া গিয়াছে। এই শীতসন্ধ্যার বিষন্ন অন্ধকারের মধ্য দিয়া, গাঢ় বাপময় সতভিত মেঘরাশি ভেদ করিয়া, একটি লানমুখশ্রী ছিন্নবসনা দরিদ্রবালিকা আশ্রমেয় নেত্ৰে শৈলের পথে পথে ভ্রমণ করিতেছে। তুষারে পদতল প্রস্তরের ন্যায় অসাড় হইয়া গিয়াছে, শীতে সমস্ত শরীর কাঁপিতেছে, মুখ নীলবণ, পাশব দিয়া দই-একটি নীরব পান্থ চলিয়া যাইতেছে। হতভাগিনী কমল করণনেত্রে একএকবার তাহাদের মুখের দিকে চাহিতেছে। কী বলিতে গিয়া বলিতেছে না, আবার আশ্রসেলিলে অঞ্চল সিক্ত করিয়া তুষারপ্তরে পদচিহ্ন অঙ্কিত করিতেছে।

কুটিরে রগণা মাতা অনাহারে শয্যাগত। সমস্ত দিন বালিকা এক মস্টিও আহার করিতে পায় নাই, প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথে পথে ভ্রমণ করিতেছে। সাহস করিয়া ভীতিবিহবলা বালা কাহারও কাছে ভিক্ষা চাহিতে পারে নাই—বালিকা কখনও ভিক্ষা করে নাই, কী করিয়া ভিক্ষা করিতে হয় জানে না, কাহাকে কী বলিতে হয় জানে না। আললিত কুন্তলরাশির মধ্যে সেই ক্ষুদ্র করণ মুখখানি দেখিলে, দারণ শীতে কম্পমান তাহার সেই ক্ষুদ্র দেহখানি দেখিলে, পাষাণও বিগলিত হইত। ক্ৰমে অন্ধকার ঘনীভূত হইল। নিরাশ বালিকা ভগ্নহৃদয়ে শান্য অঞ্চলে কুটিরে ফিরিয়া যাইতেছে—কিন্তু অসাড় পা আর উঠে না ; অনাহারে দলবল, পথশ্রমে ক্লান্ত, নিরাশায় মিয়মাণ, শীতে অবসন্ন বালিকা আর চলিতে পারে না, অবশ হইয়া পথপ্রান্তে তুষারশয্যায় শইয়া পড়িল। শরীর ক্ৰমে আরও অবসন্ন হইতে লাগিল। বালিকা বুঝিল কমে সে অবসন্ন হইয়া তুষারে চাপা পড়িয়া মরিবে। মাকে স্মরণ করিয়া কাঁদিয়া উঠিল ; জোড়হন্তে কহিল, “মা ভগবতী, আমাকে মারিয়া ফেলিয়ো
শীতকাল। দিবা অবসান হইয়া আসিতেছে। গাঢ় অন্ধকারময় মেঘরাশি উপত্যকা শৈলশিখর কুটির বন নির্ঝর হ্রদ শস্যক্ষেত্র একেবারে গ্রাস করিয়া ফেলিয়াছে, অবিশ্রান্ত বরফ পড়িতেছে, তরল তুষারে সমস্ত শৈল আচ্ছন্ন হইয়াছে, পত্রহীন শীর্ণ বৃক্ষসকল শ্বেত মস্তকে স্তম্ভিতভাবে দণ্ডায়মান। দারুণ তীব্র শীতে হিমালয়গিরিও যেন অবসন্ন হইয়া গিয়াছে। এই শীতসন্ধ্যার বিষণ্ন অন্ধকারের মধ্য দিয়া গাঢ় বাষ্পময় স্তম্ভিত মেঘরাশি ভেদ করিয়া, একটি ম্লানমুখশ্রী ছিন্নবসনা দরিদ্রবালিকা অশ্রুময় নেত্রে শৈলের পথে পথে ভ্রমণ করিতেছে। তুষারে পদতল প্রস্তরের ন্যায় অসাড় হইয়া গিয়াছে, শীতে সমস্ত শরীর কাঁপিতেছে, মুখ নীলবর্ণ, পার্শ্ব দিয়া দুই-একটি নীরব পান্থ চলিয়া যাইতেছে। হতভাগিনী কমল করুণনেত্রে এক-একবার তাহাদের মুখের দিকে চাহিতেছে। কী বলিতে গিয়া বলিতেছে না, আবার অশ্রুসলিলে অঞ্চল সিক্ত করিয়া তুষারস্তরে পদচিহ্ন অঙ্কিত করিতেছে।
কুটিরে রুগ্‌ণা মাতা অনাহারে শয্যাগত। সমস্ত দিন বালিকা এক মুষ্টিও আহার করিতে পায় নাই, প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথে পথে ভ্রমণ করিতেছে। সাহস করিয়া ভীতিবিহ্বলা বালা কাহারও কাছে ভিক্ষা চাহিতে পারে নাই— বালিকা কখনও ভিক্ষা করে নাই, কী করিয়া ভিক্ষা করিতে হয় জানে না, কাহাকে কী বলিতে হয় জানে না। আলুলিত কুন্তলরাশির মধ্যে সেই ক্ষুদ্র করুণ মুখখানি দেখিলে, দারুণ শীত কম্পমান তাহার সেই ক্ষুদ্র দেহখানি দেখিলে, পাষাণও বিগলিত হইত।

ক্রমে অন্ধকার ঘনীভূত হইল। নিরাশ বালিকা ভগ্নহৃদয়ে শূন্য অঞ্চলে কুটিরে ফিরিয়া যাইতেছে— কিন্তু অসাড় পা আর উঠে না; অনাহারে দুর্বল, পথশ্রমে ক্লান্ত, নিরাশায় ম্রিয়মাণ, শীতে অবসন্ন বালিকা আর চলিতে পারে না, অবশ হইয়া পথপ্রান্তে তুষারশয্যায় শুইয়া পড়িল। শরীর ক্রমে আরও অবসন্ন হইতে লাগিল। বালিকা বুঝিল ক্রমে সে অবসন্ন হইয়া তুষারে চাপা পড়িয়া মরিবে। মাকে স্মরণ করিয়া কাঁদিয়া উঠিল; জোড়হস্তে কহিল, “মা ভগবতী, আমাকে মারিয়া ফেলিয়ো