পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৪৫: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
দরিদ্র বিধবা অর্থ পাইবেন কোথায়। একে একে সমস্ত দ্রব্য বিক্রয় করিয়া ফেলিলেন। বিবাহ হইলে কমলকে দিবেন বলিয়া কতকগুলি অলংকার রাখিয়া দিয়াছিলেন, সেগুলি বিক্রয় করিলেন। তথাপি নির্দিষ্ট অর্থের চতুর্থাংশও হইল না। আর কিছুই নাই। অবশেষে বক্ষের বস্ত্র মোচন করিলেন, সেখানে তাঁহার মৃত স্বামীর একটি অঙ্গুরীয়ক রাখিয়া দিয়াছিলেন—নমনে করিয়াছিলেন, সুখ হউক, দুঃখ হউক, দারিদ্র্যই বা হউক, কখনো সেটি ত্যাগ করিবেন না, চিরকাল বক্ষের মধ্যে লুকাইয়া রাখিবেন— মনে করিয়াছিলেন, এই অঙ্গুরীয়কটি তাঁহার চিতানলের সঙ্গী হইবে—কিন্তু অশ্রুময়নেত্রে তাহাও বাহির করিলেন।
৯১৬ গল্পগুচ্ছ

দরিদ্র বিধবা অর্থ পাইবেন কোথায়। একে একে সমস্ত দ্রব্য বিক্রয় করিয়া ফেলিলেন। বিবাহ হইলে কমলকে দিবেন বলিয়া কতকগুলি অলংকার রাখিয়া দিয়াছিলেন, সেগুলি বিক্রয় করিলেন। তথাপি নিদিষ্ট অথের চতুথাংশও হইল না। আর কিছুই নাই। অবশেষে বক্ষের বস্ত্র মোচন করিলেন, সেখানে তাঁহার মত স্বামীর একটি অঙ্গরীয়ক রাখিয়া দিয়াছিলেন—মনে করিয়াছিলেন, সখে হউক, দুঃখ হউক, দারিদ্র্যই বা হউক, কখনো সেটি ত্যাগ করিবেন না, চিরকাল বক্ষের মধ্যে লুকাইয়া রাখবেন—মনে করিয়াছিলেন, এই অঙ্গরীয়কটি তাঁহার চিতানলের সঙ্গী হইবে—কিন্তু আশ্রমেয়নেত্রে তাহাও বাহির করিলেন।
সে অঙ্গরীটিও যখন তিনি বিক্রয় করিতে চাহিয়াছিলেন, তখন তিনি তাঁহার বকের এক-একখানি অন্থিও ভাঙিয়া দিতে পারিতেন, কিন্তু কেহই কিনিতে क्लार्गश्त्न ना ।
সে অঙ্গুরীটিও যখন তিনি বিক্রয় করিতে চাহিয়াছিলেন, তখন তিনি তাঁহার বুকের এক-একখানি অস্থিও ভাঙিয়া দিতে পারিতেন, কিন্তু কেহই কিনিতে চাহিল না।

অবশেষে বিধবা বারে বারে ভিক্ষা চাহিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। এক দিন গেল, দই দিন গেল, তিন দিন যায়, কিন্তু নিদিষ্ট অথের অধোকও সংগহীত হয় নাই। আজ সেই দস্য আসিবে। আজ যদি তাহার হতে অর্থ দিতে না পারেন, তবে বিধবার সংসারের যে একমাত্র বন্ধন আছে তাহাও ছিন্ন হইবে।
অবশেষে বিধবা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা চাহিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। এক দিন গেল, দুই দিন গেল, তিন দিন যায়, কিন্তু নির্দিষ্ট অর্থের অর্ধেকও সংগৃহীত হয় নাই। আজ সেই দস্যু আসিবে। আজ যদি তাহার হস্তে অর্থ দিতে না পারেন, তবে বিধবার সংসারের যে একমাত্র বন্ধন আছে তাহাও ছিন্ন হইবে।
কিন্তু অর্থ পাইলেন না। ভিক্ষা করিলেন, বারে বারে রোদন করিলেন, সম্পদের সময় যাহারা তাঁহার স্বামীর সামান্য অনচের ছিল তাহাদের নিকটও অঞ্চল পাতিলেন–কিন্তু নিদিষ্ট অথের অধোকও সংগহীত হইল না।

ভয়বিহবলা কমল গহোর কারাগারে কাঁদিয়া কাঁদিয়া সারা হইল। সে ভাবিতেছে তাহার অমরসিংহ থাকিলে কোনো দৰ্ঘটনা ঘটিত না। অমরসিংহ যদিও বালক, কিন্তু সে জানিত অমরসিংহ সকলই করিতে পারে। দস্যরা তাহাকে মাঝে মাঝে ভয় দেখাইয়া যায়। দস্যদের দেখিলেই সে ভয়ে অঞ্চলে মুখ ঢাকিয়া ফেলিত। এই অন্ধকার কারাগাহে, এই নিষ্ঠর দস্যদিগের মধ্যে একজন যবো ছিল। সে কমলের প্রতি তেমন ককশভাবে ব্যবহার করিত না। সে ব্যাকুল বালিকাকে সেনহের সহিত কত কী কথা জিজ্ঞাসা করিত, কিন্তু কমল ভয়ে কোনো কথারই উত্তর দিত না, দস্য কাছে সরিয়া বসিলে সে ভয়ে আড়স্ট হইয়া যাইত। ঐ যবোটি দস্যপতির পত্র। সে একবার কমলকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল যে, দস্যর সহিত বিবাহ করিতে কি তাহার কোনো আপত্তি আছে। এবং মাঝে মাঝে প্রলোভন দেখাইত যে, যদি কমল তাহাকে বিবাহ করে তবে সে তাহাকে মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা করিবে। কিন্তু ভীর কমল কোনো কথারই উত্তর দিত না। এক দিন গেল ও দই দিন গেল, বালিকা সভয়ে দেখিল দস্যরা মদ্যপান করিয়া ছরিকা শানাইতেছে।
কিন্তু অর্থ পাইলেন না। ভিক্ষা করিলেন, দ্বারে দ্বারে রোদন করিলেন, সম্পদের সময় যাহারা তাঁহার স্বামীর সামান্য অনুচর ছিল তাহাদের নিকটও অঞ্চল পাতিলেন— কিন্তু নির্দিষ্ট অর্থের অর্ধেকও সংগৃহীত হইল না।
এ দিকে বিধবার গহে দস্যদের দতে প্রবেশ করিল, বিধবাকে জিজ্ঞাসা করিল অর্থ কোথায় ? বিধবা ভিক্ষা করিয়া যাহা-কিছর অর্থ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন সকলই দস্যর পদতলে রাখিয়া কহিলেন, “আমার আর কিছুই নাই, যাহা কিছু ছিল সকলই দিলাম, এখন তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতেছি আমার কমলকে আনিয়া দেও।”

দস্য সে মাদাগলি সক্লোধে ছড়াইয়া ফেলিল। কহিল, “মিথ্যা প্রতারণা করিয়া
ভয়বিহ্বলা কমল গুহার কারাগারে কাঁদিয়া কাঁদিয়া সারা হইল। সে ভাবিতেছে তাহার অমরসিংহ থাকিলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিত না। অমরসিংহ যদিও বালক, কিন্তু সে জানিত অমরসিংহ সকলই করিতে পারে। দস্যুরা তাহাকে মাঝে মাঝে ভয় দেখাইয়া যায়। দস্যুদের দেখিলেই সে ভয়ে অঞ্চলে মুখ ঢাকিয়া ফেলিত। এই অন্ধকার কারাগৃহে, এই নিষ্ঠুর দস্যুদিগের মধ্যে একজন যুবা ছিল। সে কমলের প্রতি তেমন কর্কশভাবে ব্যবহার করিত না। সে ব্যাকুল বালিকাকে স্নেহের সহিত কত কী কথা জিজ্ঞাসা করিত, কিন্তু কমল ভয়ে কোনো কথারই উত্তর দিত না, দস্যু কাছে সরিয়া বসিলে সে ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া যাইত। ঐ যুবাটি দস্যুপতির পুত্র। সে একবার কমলকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল যে, দস্যুর সহিত বিবাহ করিতে কি তাহার কোনো আপত্তি আছে। এবং মাঝে মাঝে প্রলোভন দেখাইত যে, যদি কমল তাহাকে বিবাহ করে তবে সে তাহাকে মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা করিবে। কিন্তু ভীরু কমল কোনো কথারই উত্তর দিত না। এক দিন গেল ও দুই দিন গেল, বালিকা সভয়ে দেখিল দস্যুরা মদ্যপান করিয়া ছুরিকা শানাইতেছে।

এ দিকে বিধবার গৃহে দস্যুদের দূত প্রবেশ করিল, বিধবাকে জিজ্ঞাসা করিল অর্থ কোথায়? বিধবা ভিক্ষা করিয়া যাহা-কিছু অর্থ সংগ্রহ করিয়াছিলেন সকলই দস্যুর পদতলে রাখিয়া কহিলেন, “আমার আর কিছুই নাই, যাহা-কিছু ছিল সকলই দিলাম, এখন তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতেছি আমার কমলকে আনিয়া দেও।”

দস্যু সে মুদ্রাগুলি সক্রোধে ছড়াইয়া ফেলিল। কহিল, “মিথ্যা প্রতারণা করিয়া