পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৮১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Mohaguru (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||জয়পরাজয়|১৭৭}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}পুণ্ডরীক সিংহের মতাে দাঁড়াইয়াছিল, শেখর চারি দিকে ব্যাধবেষ্টিত হরিণের মতাে দাঁড়াইল। তরুণ যুবক, রমণীর ন্যায় লজ্জা এবং মেহ -কোমল মুখ, পাণ্ডুবর্ণ কপােল, শরীরাংশ নিতান্ত স্বল্প— দেখিলে মনে হয়, ভাবের স্পর্শমাত্রেই সমস্ত দেহ যেন বীণার তারের মতাে কঁপিয়া বাজিয়া উঠিবে।
জয়পরাজয় ১৭৭

পুণ্ডরীক সিংহের মতো দাড়াইয়াছিল, শেখর চারি দিকে ব্যাধবেষ্টিত হরিণের মতো দাড়াইল । তরুণ যুবক, রমণীর ন্যায় লজ্জা এবং স্নেহ -কোমল মুখ, পাণ্ডুবৰ্ণ কপোল, শরীরাংশ নিতান্ত স্বল্প— দেখিলে মনে হয়, ভাবের স্পর্শমাত্রেই সমস্ত দেহ যেন বীণার তারের মতে কঁাপিয়া বাজিয়া উঠিবে।
শেখর মুখ না তুলিয়া প্রথমে অতি মৃদুস্বরে আরম্ভ করিলেন। প্রথম একটা শ্লোক বোধহয় কেহ ভালো করিয়া শুনিতে পাইল না । তাহার পরে ক্রমে ক্রমে মুখ তুলিলেন– যেখানে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন সেখান হইতে যেন সমস্ত জনতা এবং রাজসভার পাষাণপ্রাচীর বিগলিত হইয়া বহুদূরবর্তী অতীতের মধ্যে বিলুপ্ত হইয়া গেল। স্বমিষ্ট পরিষ্কার কণ্ঠস্বর কঁাপিতে কঁাপিতে উজ্জল অগ্নিশিখার ন্যার উর্ধের্ব উঠিতে লাগিল । প্রথমে রাজার চন্দ্রবংশীয় আদিপুরুষের কথা আরম্ভ করিলেন। ক্রমে ক্রমে কত যুদ্ধবিগ্রহ, শৌর্যবীর্য, যজ্ঞদান, কত মহদমুষ্ঠানের মধ্য দিয়া তাহার রাজকাহিনীকে বর্তমান কালের মধ্যে উপনীত করিলেন। অবশেষে সেই দূরস্তুতিবদ্ধ দৃষ্টিকে ফিরাইয়া আনিয়া রাজার মুখের উপর স্থাপিত করিলেন এবং রাজ্যের সমস্ত প্রজাহৃদয়ের একটা বৃহৎ অব্যক্ত প্রতিকে ভাষায় ছন্দে মূর্তিমান করিয়া সভার মাঝখানে দাড় করাইয়া দিলেন– যেন দূর দূরাস্তর হইতে শতসহস্র প্রজার হৃদয়শ্রোত ছুটিয়া আসিয়া রাজপিতামহদিগের এই অতিপুরাতন প্রাসাদকে মহাসংগীতে পরিপূর্ণ করিয়া তুলিল— ইহার প্রত্যেক ইষ্টককে যেন তাহারা স্পর্শ করিল, আলিঙ্গন করিল, চুম্বন করিল, উর্ধ্বে অস্তঃপুরের বাতায়নসম্মুখে উখিত হইয়া রাজলক্ষ্মীস্বরূপ প্রাসাদলক্ষ্মীদের চরণতলে স্নেহাৰ্দ্ৰ ভক্তিভরে লুষ্ঠিত হইয়া পড়িল, এবং সেখান হইতে ফিরিয়া আসিয়া রাজাকে এবং রাজার সিংহাসনকে মহামহোল্লাসে শতশতবার প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল। অবশেষে বলিলেন, “মহারাজ, বাক্যেতে হার মানিতে পারি, কিন্তু ভক্তিতে কে হারাইবে।” এই বলিয়া কম্পিতদেহে বসিয়া পড়িলেন । তখন অশ্রুজলে-অভিষিক্ত প্রজাগণ ‘জয় জয়’ রবে আকাশ কাপাইতে লাগিল ।
{{gap}}শেখর মুখ না তুলিয়া প্রথমে অতি মৃদুস্বরে আরম্ভ করিলেন। প্রথম একটা শ্লোক বােধহয় কেহ ভালাে করিয়া শুনিতে পাইল না। তাহার পরে ক্রমে ক্রমে মুখ তুলিলেন- যেখানে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন সেখান হইতে যেন সমস্ত জনতা এবং রাজসভার পাষাণপ্রাচীর বিগলিত হইয়া বহুদূরবর্তী অতীতের মধ্যে বিলুপ্ত হইয়া গেল। সুমিষ্ট পরিষ্কার কণ্ঠস্বর কাঁপিতে কাঁপিতে উজ্জ্বল অগ্নিশিখার ন্যায় উর্ধ্বে উঠিতে লাগিল। প্রথমে রাজার চন্দ্রবংশীয় আদিপুরুষের কথা আরম্ভ করিলেন। ক্রমে ক্রমে কত যুদ্ধবিগ্রহ, শৌর্যবীর্য, যজ্ঞদান, কত মহদনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া তাঁহার রাজকাহিনীকে বর্তমান কালের মধ্যে উপনীত করিলেন। অবশেষে সেই দূরস্মৃতিবদ্ধ দৃষ্টিকে ফিরাইয়া আনিয়া রাজার মুখের উপর স্থাপিত করিলেন এবং রাজ্যের সমস্ত প্রজাহৃদয়ের একটা বৃহৎ অব্যক্ত প্রীতিকে ভাষায় ছন্দে মূর্তিমান করিয়া সভার মাঝখানে দাঁড় করাইয়া দিলেন যেন দূর দূরান্তর হইতে শতসহস্র প্রজার হৃদয়স্রোত ছুটিয়া আসিয়া রাজপিতামহদিগের এই অতিপুরাতন প্রাসাদকে মহাসংগীতে পরিপূর্ণ করিয়া তুলিল- ইহার প্রত্যেক ইষ্টককে যেন তাহারা স্পর্শ করিল, আলিঙ্গন করিল, চুম্বন করিল, উর্ধ্বে অন্তঃপুরের বাতায়নসম্মুখে উত্থিত হইয়া রাজলক্ষীস্বরূপা প্রাসাদলক্ষ্মীদের চরণতলে স্নেহার্দ্র ভক্তিভরে লুণ্ঠিত হইয়া পড়িল, এবং সেখান হইতে ফিরিয়া আসিয়া রাজাকে এবং রাজার সিংহাসনকে মহামহােল্লাসে শতশতবার প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল। অবশেষে বলিলেন, “মহারাজ, বাক্যেতে হার মানিতে পারি, কিন্তু ভক্তিতে কে হারাইবে।” এই বলিয়া কম্পিতদেহে বসিয়া পড়িলেন। তখন অশ্রুজলে-অভিষিক্ত প্রজাগণ ‘জয় জয়’ রবে আকাশ কাঁপাইতে লাগিল।

সাধারণ জনমণ্ডলীর এই উন্মত্ততাকে ধিক্কারপূর্ণ হাস্তের দ্বারা অবজ্ঞা করিয়া পুওরীক আবার উঠিয়া দাড়াইলেন। দৃপ্ত গর্জনে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ৰাক্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কে ” সকলে এক মুহূর্তে স্তব্ধ হইয়া গেল।
{{gap}}সাধারণ জনমণ্ডলীর এই উন্মত্ততাকে ধিক্কারপূর্ণ হাস্যের দ্বারা অবজ্ঞা করিয়া পুণ্ডরীক আবার উঠিয়া দাঁড়াইলেন। দৃপ্ত গর্জনে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাক্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কে।” সকলে এক মুহূর্তে স্তব্ধ হইয়া গেল।

{{nop}}