পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৯৮: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Ahad.a007 (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|৬০৮|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
ছিল—কোনাে-এক সময়ে তাহাদের প্রচুর ঐশ্বর্য ছিল এ কথা লইয়া বৃথা গর্ব করিতে
も0bf গল্পগুচ্ছ ছিল—কোনো-এক সময়ে তাহাদের প্রচুর ঐশ্বয ছিল এ কথা লইয়া ব্যথা গবা করিতে তাহার ভারি লজ্জা বোধ হইত। আমরা গরিব এ কথাটাকে কোনো কিন্তু দিয়া চাপা দিতে সে মোটেই রাজি ছিল না। ভবানীচরণও যে তাঁহাদের ঐশ্বষের দিনের কথা গব করিয়া পাড়িতেন তাহা নহে। কিন্তু, সে যে তাঁহার সখের দিন ছিল, তখন তাঁহার যৌবনের দিন ছিল। বিশ্বাসঘাতক সংসারের বীভৎসমাতি তখনো ধরা পড়ে নাই। বিশেষত, শ্যামাচরণের সন্ত্রী, তাঁহার পরমস্নেহশালিনী ভ্রাতৃজায়া রমাসুন্দরী, যখন তাঁহাদের সংসারে গহিণী ছিলেন তখন সেই লক্ষীর ভরা ভান্ডারের বারে দাঁড়াইয়া কী অজস্র আদরই তাঁহারা লাঠিয়াছিলেন—সেই অস্তমিত সখের দিনের ক্ষতির ছটাতেই তো ভবানীচরণের জীবনের সন্ধ্যা সোনায় মণ্ডিত হইয়া আছে। কিন্তু, এই-সমস্ত সুখমতি-আলোচনার মাঝখানে ঘুরিয়া ফিরিয়া কেবলই সেই উইল-চুরির কথাটা আসিয়া পড়ে। ভবানীচরণ এই প্রসঙ্গে ভারি উত্তেজিত হইয়া পড়েন। এখনও সে উইল পাওয়া যাইবে, এ সম্বন্ধে তাঁহার মনে লেশমাত্র সন্দেহ নাই— তাঁহার সতীসাধন্বী মার কথা কখনোই ব্যথ হইবে না। এই কথা উঠিয়া পড়িলেই কালীপদ মনে মনে অসিথর হইয়া উঠিত। সে জানিত, এটা তাহার পিতার একটা পাগলামি মাত্র। তাহারা মায়ে ছেলেয় এই পাগলামিকে আপসে প্রশ্রয়ও দিয়াছে, কিন্তু শৈলেনের কাছে তাহার পিতার এই দাবীলতা প্রকাশ পায় এ তাহার কিছুতেই ভালো লাগে না। কতবার সে পিতাকে বলিয়াছে, "না বাবা, ওটা তোমার একটা মিথ্যা সন্দেহ ।” কিন্তু, এরপ তকে উলটা ফল হইত। তাঁহার সন্দেহ যে অমলেক নহে তাহা প্রমাণ করিবার জন্য সমস্ত ঘটনা তিনি তন্ন তন্ন করিয়া বিবত করিতে থাকিতেন। তখন কালীপদ নানা চেষ্টা করিয়াও কিছুতেই তাঁহাকে থামাইতে পারিত না।
তাহার ভারি লজ্জা বােধ হইত। ‘আমরা গরিব’ এ কথাটাকে কোনাে ‘কিন্তু’ দিয়া চাপা
বিশেষত, কালীপদ ইহা পাট লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছে যে, এই প্রসঙ্গটা কিছুতেই শৈলেনের ভালো লাগে না। এমন-কি, সেও বিশেষ একটা যেন উত্তেজিত হইয়া ভবানীচরণের যুক্তি খণ্ডন করিতে চেষ্টা করিত। অন্য-সকল বিষয়েই ভবানীচরণ আরসকলের মত মানিয়া লইতে প্রস্তুত আছেন, কিন্তু এই বিষয়টাতে তিনি কাহারও কাছে হার মানিতে পারেন না। তাঁহার মা লিখিতে পড়িতে জানিতেন— তিনি নিজের হাতে তাঁহার পিতার উইল এবং অন্য দলিলুটা বাক্সে বন্ধ করিয়া লোহার সিন্দকে তুলিয়াছেন; অথচ তাঁহার সামনেই মা যখন বাক্স খলিলেন তখন দেখা গেল, অন্য দলিলটা যেমন ছিল তেমনি আছে অথচ উইলটা নাই, ইহাকে চুরি বলা হইবে না তো কী। কালীপদ তাঁহাকে ঠাণ্ডা করিবার জন্য বলিত, “তা, বেশ তো বাবা, যারা তোমার বিষয় ভোগ করিতেছে তারা তো তোমার ছেলেরই মতো, তারা তো তোমারই ভাইপো । সে সম্পত্তি তোমার পিতার বংশেই রহিয়াছে— ইহাই কি কম সখের কথা।” শৈলেন এ-সব কথা বেশিক্ষণ সহিতে পারিত না, সে ঘর ছাড়িয়া উঠিয়া চলিয়া যাইত। কালীপদ মনে মনে পীড়িত হইয়া ভাবিত, শৈলেন হয়তো তাহার পিতাকে অথলোলাপ বিষয়ী বলিয়া মনে করিতেছে। অথচ, তাহার পিতার মধ্যে বৈষয়িকতার নামগন্ধ নাই, এ কথা কোনোমতে শৈলেনকে বঝাইতে পারিলে কালীপদ বড়োই আরাম পাইত।
দিতে সে মােটেই রাজি ছিল না। ভবানীচরণও যে তাঁহাদের ঐশ্বর্যের দিনের কথা
এতদিনে কালীপদ ও ভবানীচরণের কাছে শৈলেন আপনার পরিচয় নিশ্চয় প্রকাশ করিত। কিন্তু, এই উইল-চুরির আলোচনাতেই তাহাকে বাধা দিল। তাহার পিতা পিতামহ যে উইল চুরি করিয়াছেন এ কথা সে কোনোমতেই বিশ্বাস করিতে চাহিল না;
গর্ব করিয়া পাড়িতেন তাহা নহে। কিন্তু, সে যে তাঁহার সুখের দিন ছিল, তখন
তাঁহার যৌবনের দিন ছিল। বিশ্বাসঘাতক সংসারের বীভৎসমূর্তি তখনাে ধরা পড়ে
নাই। বিশেষত, শ্যামাচরণের স্ত্রী, তাঁহার পরমস্নেহশালিনী ভ্রাতৃজায়া রমাসুন্দরী,
যখন তাঁহাদের সংসারে গৃহিণী ছিলেন তখন সেই লক্ষ্মীর ভরা ভাণ্ডারের দ্বারে
দাঁড়াইয়া কী অজস্র আদরই তাঁহারা লুঠিয়াছিলেন—সেই অস্তমিত সুখের দিনের
স্মৃতির ছটাতেই তাে ভবানীচরণের জীবনের সন্ধ্যা সােনায় মণ্ডিত হইয়া আছে।
কিন্তু, এই-সমস্ত সুখস্মৃতি-আলােচনার মাঝখানে ঘুরিয়া ফিরিয়া কেবলই সেই
উইল-চুরির কথাটা আসিয়া পড়ে। ভবানীচরণ এই প্রসঙ্গে ভারি উত্তেজিত হইয়া
পড়েন। এখনও সে উইল পাওয়া যাইবে, এ সম্বন্ধে তাঁহার মনে লেশমাত্র সন্দেহ নাই—তাঁহার সতীসাধ্বী মার কথা কখনােই ব্যর্থ হইবে না। এই কথা উঠিয়া পড়িলেই
কালীপদ মনে মনে অস্থির হইয়া উঠিত। সে জানিত, এটা তাহার পিতার একটা
পাগলামি মাত্র। তাহারা মায়ে ছেলেয় এই পাগলামিকে আপসে প্রশ্রয়ও দিয়াছে, কিন্তু
শৈলেনের কাছে তাহার পিতার এই দুর্বলতা প্রকাশ পায় এ তাহার কিছুতেই ভালাে
লাগে না। কতবার সে পিতাকে বলিয়াছে, “না বাবা, ওটা তােমার একটা মিথ্যা সন্দেহ।”
কিন্তু, এরূপ তর্কে উলটা ফল হইত। তাঁহার সন্দেহ যে অমূলক নহে তাহা প্রমাণ
করিবার জন্য সমস্ত ঘটনা তিনি তন্ন তন্ন করিয়া বিবৃত করিতে থাকিতেন। তখন
কালীপদ নানা চেষ্টা করিয়াও কিছুতেই তাঁহাকে থামাইতে পারিত না।
<br>
{{gap}}বিশেষত, কালীপদ ইহা স্পষ্ট লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছে যে, এই প্রসঙ্গটা কিছুতেই
শৈলেনের ভালাে লাগে না। এমন-কি, সেও বিশেষ একটু যেন উত্তেজিত হইয়া
ভবানীচরণের যুক্তি খণ্ডন করিতে চেষ্টা করিত। অন্য-সকল বিষয়েই ভবানীচরণ আর-সকলের মত মানিয়া লইতে প্রস্তুত আছেন, কিন্তু এই বিষয়টাতে তিনি কাহারও
কাছে হার মানিতে পারেন না। তাঁহার মা লিখিতে পড়িতে জানিতেন—তিনি নিজের
হাতে তাঁহার পিতার উইল এবং অন্য দলিলটা বাক্সে বন্ধ করিয়া লােহার সিন্দুকে
তুলিয়াছেন; অথচ তাঁহার সামনেই মা যখন বাক্স খুলিলেন তখন দেখা গেল, অন্য
দলিলটা যেমন ছিল তেমনি আছে অথচ উইলটা নাই, ইহাকে চুরি বলা হইবে না তাে
কী। কালীপদ তাঁহাকে ঠাণ্ডা করিবার জন্য বলিত, “তা, বেশ তাে বাবা, যারা তােমার
বিষয় ভােগ করিতেছে তারা তাে তােমার ছেলেরই মতাে, তারা তাে তােমারই ভাইপাে।
সে সম্পত্তি তােমার পিতার বংশেই রহিয়াছে—ইহাই কি কম সুখের কথা।” শৈলেন
এ-সব কথা বেশিক্ষণ সহিতে পারিত না, সে ঘর ছাড়িয়া উঠিয়া চলিয়া যাইত।
কালীপদ মনে মনে পীড়িত হইয়া ভাবিত, শৈলেন হয়তাে তাহার পিতাকে অর্থলােলুপ
বিষয়ী বলিয়া মনে করিতেছে। অথচ, তাহার পিতার মধ্যে বৈষয়িকতার নামগন্ধ নাই,
এ কথা কোনােমতে শৈলেনকে বুঝাইতে পারিলে কালীপদ বড়ােই আরাম পাইত।
<br>
{{gap}}এতদিনে কালীপদ ও ভবানীচরণের কাছে শৈলেন আপনার পরিচয় নিশ্চয় প্রকাশ
করিত। কিন্তু, এই উইল-চুরির আলােচনাতেই তাহাকে বাধা দিল। তাহার পিতা
পিতামহ যে উইল চুরি করিয়াছেন এ কথা সে কোনােমতেই বিশ্বাস করিতে চাহিল না;