পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০৭: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Ahad.a007 (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||পণরক্ষা|৬১৭}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
বংশলােপের আশঙ্কায় তাহার বাপের পরলােকেও ঘুম হইতেছে না।
পণরক্ষা osa
<br>
বংশলোপের আশংকায় তাহার বাপের পরলোকেও ঘমে হইতেছে না। * ,
পরদিন বংশী কিছ জোর করিয়াই রসিককে কাজে বসাইয়া দিল। কেননা, ইহা তো ব্যক্তিগত সংখদঃখের কথা নহে, এ যে বংশের প্রতি কতব্য। রসিক কাজে বসিল বটে, কিন্তু তাহাতে কাজের সুবিধা হইল না; তাহার হাত আর চলেই না, পদে পদে সীতা ছিড়িয়া যায়, সভ্যতা সারিয়া তুলিতে তাহার বেলা কাটিতে থাকে। বংশী মনে করিল, ভালোরাপ অভ্যাস নাই বলিয়াই এমনটা ঘটিতেছে, কিছুদিন গেলেই হাত দরক্ত হইয়া যাইবে।
{{gap}}পরদিন বংশী কিছু জোর করিয়াই রসিককে কাজে বসাইয়া দিল। কেননা, ইহা
তাে ব্যক্তিগত সুখদুঃখের কথা নহে, এ যে বংশের প্রতি কর্তব্য। রসিক কাজে বসিল
বটে, কিন্তু তাহাতে কাজের সুবিধা হইল না; তাহার হাত আর চলেই না, পদে পদে
সুতা ছিঁড়িয়া যায়, সুতা সারিয়া তুলিতে তাহার বেলা কাটিতে থাকে। বংশী মনে
করিল, ভালােরূপ অভ্যাস নাই বলিয়াই এমনটা ঘটিতেছে, কিছুদিন গেলেই হাত
দুরস্ত হইয়া যাইবে।
<br>
কিন্তু, স্বভাবপট রসিকের হাত দরপত হইবার দরকার ছিল না বলিয়াই তাহার হাত দরপত হইতে চাহিল না। বিশেষত তাহার অন্যগতবগ তাহার সন্ধানে আসিয়া যখন দেখিত সে নিতান্ত ভালোমানুষটির মতো তাহাদের বাপ-পিতামহের চিরকালীন ব্যবসায়ে লাগিয়া গেছে, তখন রসিকের মনে ভারি লজা এবং রাগ হইতে লাগিল ।
{{gap}}কিন্তু, স্বভাবপটু রসিকের হাত দুরস্ত হইবার দরকার ছিল না বলিয়াই
দাদা তাহাকে তাহার এক বন্ধর মখ দিয়া খবর দিল যে, সৌরভীর সঙ্গেই রসিকের বিবাহের সম্মবন্ধ সিথর করা যাইতেছে। বংশী মনে করিয়াছিল, এই সখবরটায় নিশ্চয়ই রসিকের মন নরম হইবে । কিন্তু, সেরাপ ফল তো দেখা গেল না। দাদা মনে করিয়াছেন, সৌরভীর সঙ্গে বিবাহ হইলেই আমার মোক্ষলাভ হইবে ? সৌরভীর প্রতি হঠাৎ তাহার ব্যবহারের এমনি পরিবতন হইল যে, সে বেচারা অচিলের প্রান্তে পান বধিয়া তাহার কাছে আসিতে আর সাহসই করিত না-সমস্ত রকমসকম দেখিয়া কী জানি এই ছোটো শান্ত মেয়েটির ভারি কান্না পাইতে লাগিল । হামোনিয়ম বাজনা সম্বন্ধে অন্য মেয়েদের চেয়ে তাহার যে একটা বিশেষ অধিকার ঘটিয়াছিল সে তো ঘুচিয়াই গেল— তার পর সবদাই রসিকের যে ফাইফরমাশ খাটিবার ভার তাহার উপর ছিল সেটাও রহিল না। হঠাৎ জীবনটা ফাঁকা এবং সংসারটা নিতান্তই ফাঁকি বলিয়া তাহার কাছে মনে হইতে লাগিল ।
তাহার হাত দুরস্ত হইতে চাহিল না। বিশেষত তাহার অনুগতবর্গ তাহার সন্ধানে
এতদিন রসিক এই গ্রামের বনবাদাড়, রথতলা, রাধানাথের মন্দির, নদী, খেয়াঘাট, বিল, দিঘি, কামারপাড়া, ছতারপাড়া, হাটবাজার সমস্তই আপনার অনন্দে ও প্রয়োজনে বিচিত্রভাবে অধিকার করিয়া লইয়াছিল । সব জায়গাতেই তাহার একটা একটা আণ্ডা ছিল, যেদিন যেখানে খুশি কখনো বা একলা কখনো বা দলবলে কিছ-না-কিছ লইয়া থাকিত। এই গ্রাম এবং থানাগড়ের বাবদের বাড়ি ছাড়া জগতের আর-ষে কোনো অংশ তাহার জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় তাহা সে কোনোদিন মনেও করে নাই । আজ এই গ্রামে তাহার মন আর কুলাইল না। দর দরে বহন্দরের জন্য তাহার চিত্ত ছটফট করিতে লাগিল। তাহার অবসর যথেষ্ট ছিল— বংশী তাহাকে খুব বেশিক্ষণ কাজ করাইত না। কিন্তু, ঐ একটাক্ষণ কাজ করিয়াই তাহার সমস্ত অবসর পষতি যেন বিবাদ হইয়া গেল; এরপ খণ্ডিত অবসরকে কোনো ব্যবহারে লাগাইতে তাহার ভালো লাগিল না।
আসিয়া যখন দেখিত সে নিতান্ত ভালােমানুষটির মতাে তাহাদের বাপ-পিতামহের
চিরকালীন ব্যবসায়ে লাগিয়া গেছে, তখন রসিকের মনে ভারি লজ্জা এবং রাগ হইতে
লাগিল।
<br>
{{gap}}দাদা তাহাকে তাহার এক বন্ধুর মুখ দিয়া খবর দিল যে, সৌরভীর সঙ্গেই
রসিকের বিবাহের সম্বন্ধ স্থির করা যাইতেছে। বংশী মনে করিয়াছিল, এই
সুখবরটায় নিশ্চয়ই রসিকের মন নরম হইবে। কিন্তু, সেরূপ ফল তাে দেখা গেল না।
‘দাদা মনে করিয়াছেন, সৌরভীর সঙ্গে বিবাহ হইলেই আমার মােক্ষলাভ হইবে!’
সৌরভীর প্রতি হঠাৎ তাহার ব্যবহারের এমনি পরিবর্তন হইল যে, সে বেচারা আঁচলের
প্রান্তে পান বাঁধিয়া তাহার কাছে আসিতে আর সাহসই করিত না–সমস্ত রকম-সকম দেখিয়া কী জানি এই ছােটো শান্ত মেয়েটির ভারি কান্না পাইতে লাগিল।
হার্মোনিয়ম বাজনা সম্বন্ধে অন্য মেয়েদের চেয়ে তাহার যে একটু বিশেষ অধিকার
ঘটিয়াছিল সে তাে ঘুচিয়াই গেল—তার পর সর্বদাই রসিকের যে ফাইফরমাশ
খাটিবার ভার তাহার উপর ছিল সেটাও রহিল না। হঠাৎ জীবনটা ফাঁকা এবং
সংসারটা নিতান্তই ফাঁকি বলিয়া তাহার কাছে মনে হইতে লাগিল।
<br>
{{gap}}এতদিন রসিক এই গ্রামের বনবাদাড়, রথতলা, রাধানাথের মন্দির, নদী, খেয়াঘাট,
বিল, দিঘি, কামারপাড়া, ছুতারপাড়া, হাটবাজার সমস্তই আপনার অানন্দে ও
প্রয়ােজনে বিচিত্রভাবে অধিকার করিয়া লইয়াছিল। সব জায়গাতেই তাহার একটা একটা
আড্ডা ছিল, যেদিন যেখানে খুশি কখনাে বা একলা কখনাে বা দলবলে কিছু-না-কিছু
লইয়া থাকিত। এই গ্রাম এবং থানাগড়ের বাবুদের বাড়ি ছাড়া জগতের আর-যে কোনাে
অংশ তাহার জীবনযাত্রার জন্য প্রয়ােজনীয় তাহা সে কোনােদিন মনেও করে নাই।
আজ এই গ্রামে তাহার মন আর কুলাইল না। দূর দূর বহুদূরের জন্য তাহার চিত্ত
ছটফট করিতে লাগিল। তাহার অবসর যথেষ্ট ছিল—বংশী তাহাকে খুব বেশিক্ষণ
কাজ করাইত না। কিন্তু, ঐ একটুক্ষণ কাজ করিয়াই তাহার সমস্ত অবসর পর্যন্ত
যেন বিস্বাদ হইয়া গেল; এরূপ খণ্ডিত অবসরকে কোনাে ব্যবহারে লাগাইতে তাহার
ভালাে লাগিল না।