পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||নিশীথে|২৭১}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}গঙ্গা ছাড়াইয়া, খ'ড়ে ছাড়াইয়া, অবশেষে পদ্মায় আসিয়া পৌঁছিলাম। ভয়ংকরী পদ্মা তখন হেমন্তের বিবরলীন ভুজঙ্গিনীর মতাে কৃশনির্জীবভাবে সুদীর্ঘ শীত-নিদ্রায় নিবিষ্ট ছিল। উত্তরপারে জনশূন্য তৃণশূন্য দিগন্তপ্রসারিত বালির চর ধূ ধূ করিতেছে, এবং দক্ষিণের উচ্চ পাড়ের উপর গ্রামের আমবাগানগুলি এই রাক্ষসী নদীর নিতান্ত মুখের কাছে জোড়হস্তে দাঁড়াইয়া কাঁপিতেছে; পদ্মা ঘুমের ঘোরে এক-একবার পাশ ফিরিতেছে এবং বিদীর্ণ তটভূমি ঝুপ্‌ঝাপ্ করিয়া ভাঙিয়া ভাঙিয়া পড়িতেছে। এইখানে বেড়াইবার সুবিধা দেখিয়া বােট বাঁধিলাম।
নিশীথে ኟጫ >

গঙ্গা ছাড়াইয়া, খড়ে ছাড়াইয়া, অবশেষে পক্ষায় আসিয়া পৌছিলাম। ভয়ংকরী পদ্মা তখন হেমন্তের বিবরলীন ভুজঙ্গিনীর মতো কৃশনিজীবিভাবে সন্দীঘ শীতনিদ্রায় নিবিষ্ট ছিল। উত্তরপারে জনশন্য তৃণশন্য দিগন্তপ্রসারিত বালির চর ধন ধন করিতেছে, এবং দক্ষিণের উচ্চ পাড়ের উপর গ্রামের আমবাগানগুলি এই রাক্ষসী নদীর নিতান্ত মুখের কাছে জোড়হন্তে দাঁড়াইয়া কাঁপিতেছে; পদ্মা ঘামের ঘোরে এক-একবার পাশ ফিরিতেছে এবং বিদীণ তটভূমি ঝাপঝাপ করিয়া ভাঙিয়া ভাঙিয়া পড়িতেছে। এইখানে বেড়াইবার সুবিধা দেখিয়া বোট বধিলাম।
একদিন আমরা দুইজনে বেড়াইতে বেড়াইতে বহু দরে চলিয়া গেলাম। সযান্তের সবণ"ছায়া মিলাইয়া যাইতেই শুক্লপক্ষের নিমল চন্দ্রালোক দেখিতে দেখিতে ফটিয়া উঠিল। সেই অন্তহীন শত্র বালির চরের উপর যখন অজস্র অবারিত উচ্ছসিত জ্যোৎসনা একেবারে আকাশের সীমান্ত পৰ্যন্ত প্রসারিত হইয়া গেল, তখন মনে হইল যেন জনশন্য চন্দ্রলোকের অসীম সবগুনরাজ্যের মধ্যে কেবল আমরা দুইজনে ভ্রমণ করিতেছি। একটি লাল শাল মনোরমার মাথার উপর হইতে নামিয়া তাহার মুখখানি বেস্টন করিয়া তাহার শরীরটি আচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে। নিস্তখতা যখন নিবিড় হইয়া আসিল, কেবল একটি সীমাহীন দিশাহীন শত্রতা এবং শন্যতা ছাড়া যখন আর কিছই রহিল না, তখন মনোরমা ধীরে ধীরে হাতটি বাহির করিয়া আমার হাত চাপিয়া ধরিল; অত্যন্ত কাছে আসিয়া সে যেন তাহার সমস্ত শরীরমন জীবনযৌবন আমার উপর বিন্যস্ত করিয়া নিতান্ত নির্ভর করিয়া দাঁড়াইল । পুলকিত উদবেলিত হাদয়ে মনে করিলাম, ঘরের মধ্যে কি যথেষ্ট ভালোবাসা যায়। এইরুপ অনাবত অবারিত অনন্ত আকাশ নহিলে কি দুটি মানুষকে কোথাও ধরে। তখন মনে হইল, আমাদের ঘর নাই, বার নাই, কোথাও ফিরিবার নাই, এমনি করিয়া হাতে হাতে ধরিয়া গম্যহীন পথে উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণে চন্দ্রালোকিত শুন্যতার উপর দিয়া অবারিতভাবে চলিয়া যাইব । -
{{gap}}একদিন আমরা দুইজনে বেড়াইতে বেড়াইতে বহু দূরে চলিয়া গেলাম। সূর্যাস্তের স্বর্ণচ্ছায়া মিলাইয়া যাইতেই শুক্লপক্ষের নির্মল চন্দ্রালােক দেখিতে দেখিতে ফুটিয়া উঠিল। সেই অন্তহীন শুভ্র বালির চরের উপর যখন অজস্র অবারিত উচ্ছ্বসিত জ্যোৎস্না একেবারে আকাশের সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত হইয়া গেল, তখন মনে হইল যেন জনশূন্য চন্দ্রলােকের অসীম স্বপ্নরাজ্যের মধ্যে কেবল আমরা দুইজনে ভ্রমণ করিতেছি। একটি লাল শাল মনােরমার মাথার উপর হইতে নামিয়া তাহার মুখখানি বেষ্টন করিয়া তাহার শরীরটি আচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে। নিস্তব্ধতা যখন নিবিড় হইয়া আসিল, কেবল একটি সীমাহীন দিশাহীন শুভ্রতা এবং শূন্যতা ছাড়া যখন আর কিছুই রহিল না, তখন মনােরমা ধীরে ধীরে হাতটি বাহির করিয়া আমার হাত চাপিয়া ধরিল; অত্যন্ত কাছে আসিয়া সে যেন তাহার সমস্ত শরীরমন জীবনযৌবন আমার উপর বিন্যস্ত করিয়া নিতান্ত নির্ভর করিয়া দাঁড়াইল। পুলকিত উদ্‌বেলিত হৃদয়ে মনে করিলাম, ঘরের মধ্যে কি যথেষ্ট ভালােবাসা যায়। এইরূপ অনাবৃত অবারিত অনন্ত আকাশ নহিলে কি দুটি মানুষকে কোথাও ধরে। তখন মনে হইল, আমাদের ঘর নাই, দ্বার নাই, কোথাও ফিরিবার নাই, এমনি করিয়া হাতে হাতে ধরিয়া গম্যহীন পথে উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণে চন্দ্রালােকিত শূন্যতার উপর দিয়া অবারিতভাবে চলিয়া যাইব।

এইরপে চলিতে চলিতে এক জায়গায় আসিয়া দেখিলাম, সেই বালকোরাশির মাঝখানে অদরে একটি জলাশয়ের মতো হইয়াছে— পদ্মা সরিয়া যাওয়ার পর সেইখানে জল বাধিয়া আছে।
{{gap}}এইরূপে চলিতে চলিতে এক জায়গায় আসিয়া দেখিলাম, সেই ঝলকারাশির মাঝখানে অদুরে একটি জলাশয়ের মতাে হইয়াছে—পদ্মা সরিয়া যাওয়ার পর সেই-খানে জল বাধিয়া আছে।
সেই মরবালকাবেটিত নিস্তরঙ্গ নিযন্ত নিশ্চল জলটুকুর উপরে একটি সাদীঘ" জ্যোৎস্নার রেখা মছিাতভাবে পড়িয়া আছে। সেই জায়গাটাতে আসিয়া আমরা দুইজনে দাঁড়াইলাম—মনোরমা কী ভাবিয়া আমার মাখের দিকে চাহিল, তাহার মাথার উপর হইতে শালটা হঠাৎ খসিয়া পড়িল। আমি তাহার সেই জ্যোৎস্নাবিকশিত মুখখানি তুলিয়া ধরিয়া চুবন করিলাম।

এমন সময় সেই জনমানবশন্যে নিঃসঙ্গ মরভূমির মধ্যে গম্ভীরুবরে কে তিনবার বলিয়া উঠিল, “ও কে। ও কে। ও কে।”
{{gap}}সেই মরুবালুকাবেষ্টিত নিস্তরঙ্গ নিষুপ্ত নিশ্চল জলটুকুর উপরে একটি সুদীর্ঘ জ্যোৎস্নার রেখা মূর্ছিতভাবে পড়িয়া আছে। সেই জায়গাটাতে আসিয়া আমরা দুইজনে দাঁড়াইলাম—মনােরমা কী ভাবিয়া আমার মুখের দিকে চাহিল, তাহার মাথার উপর হইতে শালটা হঠাৎ খসিয়া পড়িল। আমি তাহার সেই জ্যোৎস্নাবিকশিত মুখখানি তুলিয়া ধরিয়া চুম্বন করিলাম।
আমি চমকিয়া উঠিলাম, আমার স্মীও কপিয়া উঠিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই আমরা দইজনেই বুঝিলাম, এই শব্দ মানষিক নহে, অমানষিকও নহে-চরবিহারী জলচর পাখির ডাক। হঠাৎ এত রাত্রে তাহাদের নিরাপদ নিভৃত নিবাসের কাছে লোকসমাগম দেখিয়া চকিত হইয়া উঠিয়াছে।

সেই ভয়ের চমক খাইয়া আমরা দুইজনেই তাড়াতাড়ি বোটে ফিরিলাম। রাত্রে
{{gap}}এমন সময় সেই জনমানবশূন্য নিঃসঙ্গ মরুভূমির মধ্যে গম্ভীরস্বরে কে তিনবার বলিয়া উঠিল, “ও কে। ও কে। ও কে।”

{{gap}}আমি চমকিয়া উঠিলাম, আমার স্ত্রীও কাঁপিয়া উঠিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই আমরা দুইজনেই বুঝিলাম, এই শব্দ মানুষিক নহে, অমানুষিকও নহে-চরবিহারী জলচর পাখির ডাক। হঠাৎ এত রাত্রে তাহাদের নিরাপদ নিভৃত নিবাসের কাছে লােকসমাগম দেখিয়া চকিত হইয়া উঠিয়াছে।

{{gap}}সেই ভয়ের চমক খাইয়া আমরা দুইজনেই তাড়াতাড়ি বােটে ফিরিলাম। রাত্রে