পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৫: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|২৭৬|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}শরৎবাবুর আশ্রয়ে চন্দননগরের বাগানে বাস করিতে করিতে নীলকান্তের উপর স্বভাবের নিয়ম অব্যাহতভাবে আপন কাজ করিতে লাগিল। সে এতদিন যে একটা বয়ঃসন্ধিস্থলে অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘকাল থামিয়াছিল এখানে আসিয়া সেটা কখন এক সময় নিঃশব্দে পার হইয়া গেল। তাহার সতেরাে-আঠারাে বৎসরের বয়ঃক্রম বেশ সম্পূর্ণভাবে পরিণত হইয়া উঠিল।
૨૧ ૭ গল্পগুচ্ছ

শরৎবাবর আশ্রয়ে চন্দননগরের বাগানে বাস করিতে করিতে নীলকাতের উপর স্বভাবের নিয়ম অব্যাহতভাবে আপন কাজ করিতে লাগিল। সে এতদিন যে একটা বয়ঃসন্ধিপথলে অস্বাভাবিকভাবে দীঘকাল থামিয়াছিল এখানে আসিয়া সেটা কখন এক সময় নিঃশব্দে পার হইয়া গেল। তাহার সতেরো-আঠারো বৎসরের বয়ঃক্ৰম বেশ সপণভাবে পরিণত হইয়া উঠিল।
তাহার সে পরিবতন বাহির হইতে কাহারও চোখে পড়িল না কিন্তু তাহার প্রথম লক্ষণ এই যে, যখন কিরণ নীলকাতের প্রতি বালকযোগ্য ব্যবহার করিতেন সে মনে মনে লজিত এবং ব্যথিত হইত। একদিন আমোদপ্রিয় কিরণ তাহাকে স্মীবেশে সখী সাজিবার কথা বলিয়াছিলেন, সে কথাটা অকস্মাৎ তাহার বড়োই কষ্টদায়ক লাগিল অথচ তাহার উপযুক্ত কারণ খুজিয়া পাইল না। আজকাল তাহাকে যাত্রার অনুকরণ করিতে ডাকিলেই সে অদশ্য হইয়া যাইত। সে যে একটা লক্ষীছাড়া যায়ার দলের ছোকরার অপেক্ষা অধিক কিছ নয়, এ কথা কিছতে তাহার মনে লইত না।
{{gap}}তাহার সে পরিবর্তন বাহির হইতে কাহারও চোখে পড়িল না কিন্তু তাহার প্রথম লক্ষণ এই যে, যখন কিরণ নীলকান্তের প্রতি বালকযােগ্য ব্যবহার করিতেন সে মনে মনে লজ্জিত এবং ব্যথিত হইত। একদিন আমােদপ্রিয় কিরণ তাহাকে স্ত্রীবেশে সখী সাজিবার কথা বলিয়াছিলেন, সে কথাটা অকস্মাৎ তাহার বড়োই কষ্টদায়ক লাগিল অথচ তাহার উপযুক্ত কারণ খুঁজিয়া পাইল না। আজকাল তাহাকে যাত্রার অনুকরণ করিতে ডাকিলেই সে অদৃশ্য হইয়া যাইত। সে যে একটা লক্ষীছাড়া যাত্রায় দলের ছােকরার অপেক্ষা অধিক কিছু নয়, এ কথা কিছুতে তাহার মনে লইত না।

এমন-কি, সে বাড়ির সরকারের নিকট কিছু কিছ করিয়া লেখাপড়া শিখিবার সংকলপ করিল। কিন্তু বউঠাকরুনের স্নেহভাজন বলিয়া নীলকান্তকে সরকার দুই চক্ষে দেখিতে পারিত না, এবং মনের একাগ্রতা রক্ষা করিয়া পড়াশুনো কোনো কালে অভ্যাস না থাকাতে অক্ষরগুলো তাহার চোখের সামনে দিয়া ভাসিয়া যাইত। গঙ্গার ধারে চাঁপাতলায় গাছের গড়িতে ঠেসান দিয়া কোলের উপর বই খলিয়া সে দীর্ঘকাল বসিয়া থাকিত; জল ছল ছল করিত, নৌকা ভাসিয়া যাইত, শাখার উপরে চঞ্চল অন্যমনস্ক পাখি কিচমিচ শব্দে বগত উন্তি প্রকাশ করিত, নীলকান্ত বইয়ের পাতায় চক্ষ রাখিয়া কী ভাবিত সেই জানে অথবা সেও জানে না। একটা কথা হইতে কিছতেই আর-একটা কথায় গিয়া পৌঁছিতে পারিত না, অথচ বই পড়িতেছি মনে করিয়া তাহার ভারি একটা আত্মগৌরব উপস্থিত হইত। সামনে দিয়া যখন একটা নৌকা যাইত তখন সে আরও অধিক আড়ম্বরের সহিত বইখানা তুলিয়া বিড় বিড় করিয়া পড়ার ভাণ করিত; দশক চলিয়া গেলে সে আর পড়ার উৎসাহ রক্ষা করিতে *ाब्रिएल ना ।
{{gap}}এমন-কি, সে বাড়ির সরকারের নিকট কিছু কিছু করিয়া লেখাপড়া শিখিবার সংকল্প করিল। কিন্তু বউঠাকরুনের স্নেহভাজন বলিয়া নীলকান্তকে সরকার দুই চক্ষে দেখিতে পারিত না, এবং মনের একাগ্রতা রক্ষা করিয়া পড়াশুনাে কোনাে কালে অভ্যাস না থাকাতে অক্ষরগুলাে তাহার চোখের সামনে দিয়া ভাসিয়া যাইত। গঙ্গার ধারে চাঁপাতলায় গাছের গুঁড়িতে ঠেসান দিয়া কোলের উপর বই খুলিয়া সে দীর্ঘকাল বসিয়া থাকিত; জল ছল্ ছল্ করিত, নৌকা ভাসিয়া যাইত, শাখার উপরে চঞ্চল অন্যমনস্ক পাখি কিচ্‌মিচ্ শব্দে স্বগত উক্তি প্রকাশ করিত, নীলকান্ত বইয়ের পাতায় চক্ষু রাখিয়া কী ভাবিত সেই জানে অথবা সেও জানে না। একটা কথা হইতে কিছুতেই আর-একটা কথায় গিয়া পৌঁছিতে পারিত না, অথচ ‘বই পড়িতেছি’ মনে করিয়া তাহার ভারি একটা আত্মগৌরব উপস্থিত হইত। সামনে দিয়া যখন একটা নৌকা যাইত তখন সে আরও অধিক আড়ম্বরের সহিত বইখানা তুলিয়া বিড়্ বিড়্ করিয়া পড়ার ভাণ করিত; দর্শক চলিয়া গেলে সে আর পড়ার উৎসাহ রক্ষা করিতে পারিত না।
পবে সে অভ্যস্ত গানগুলো যন্ত্রের মতো যথানিয়মে গাহিয়া যাইত, এখন সেই গানের সরগুলো তাহার মনে এক অপব চাঞ্চল্য সঞ্চার করে। গানের কথা অতি যৎসামান্য, তুচ্ছ অন্যপ্রাসে পরিপন্ণ, তাহার অথও নীলকাতের নিকট সম্যক বোধগম্য নহে, কিন্তু যখন সে গাহিত

ওরে রাজহংস, জমি বিজবংশে এমন নশংস কেন হলি রে— বল কী জন্যে, এ অরণ্যে, রাজকন্যের প্রাণসংশয় করিলি রেতখন সে যেন সহসা লোকান্তরে জন্মান্তরে উপনীত হইত; তখন চারি দিকের অভ্যন্ত জগৎটা এবং তাহার তুচ্ছ জীবনটা গানে তজমা হইয়া একটা নতন চেহারা ধারণ করত। রাজহংস এবং রাজকন্যার কথা হইতে তাহার মনে এক অপরাপ ছবির আভাস জাগিয়া উঠিত, সে আপনাকে কী মনে করিত পষ্ট করিয়া বলা যায় না, কিন্তু যাত্রার দলের পিতৃমাতৃহীন ছোকরা বলিয়া ভুলিয়া যাইত। নিতান্ত
{{gap}}পূর্বে সে অভ্যস্ত গানগুলাে যন্ত্রের মতাে যথানিয়মে গাহিয়া যাইত, এখন সেই গানের সুরগুলাে তাহার মনে এক অপূর্ব চাঞ্চল্য সঞ্চার করে। গানের কথা অতি যৎসামান্য, তুচ্ছ অনুপ্রাসে পরিপূর্ণ, তাহার অর্থও নীলকাতের নিকট সম্যক্ বােধগম্য নহে, কিন্তু যখন সে গাহিত

{{rh||ওরে রাজহংস, জন্মি দ্বিজবংশে|}}

{{rh||এমন নৃশংস কেন হলি রে-|}}

{{rh||বল্ কী জন্যে, এ অরণ্যে,|}}

{{rh||রাজকন্যের প্রাণসংশয় করিলি রে-|}}

তখন সে যেন সহসা লােকান্তরে জন্মান্তরে উপনীত হইত; তখন চারি দিকের অভ্যস্ত জগৎটা এবং তাহার তুচ্ছ জীবনটা গানে তর্জমা হইয়া একটা নূতন চেহারা ধারণ করিত। রাজহংস এবং রাজকন্যার কথা হইতে তাহার মনে এক অপরূপ ছবির আভাস জাগিয়া উঠিত, সে আপনাকে কী মনে করিত স্পষ্ট করিয়া বলা যায় না, কিন্তু যাত্রার দলের পিতৃমাতৃহীন ছোকক বলিয়া ভুলিয়া যাইত। নিতান্ত