পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|২৭৮|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
ডাকিয়া না খাওয়াইলে তাহার বক্ষ ব্যথিত, তাহার মুখ বিস্বাদ হইয়া উঠিত, না খাইয়া উঠিয়া পড়িত; বাষ্পরুদ্ধকণ্ঠে দাসীকে বলিয়া যাইত “আমার ক্ষুধা নাই”। মনে করিত, কিরণ সংবাদ পাইয়া এখনি অনুতপ্তচিত্তে তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইবেন এবং খাইবার জন্য বারম্বার অনুরােধ করিবেন, সে তথাপি কিছুতেই সে-অনুরােধ পালন করিবে না, বলিবে “আমার ক্ষুধা নাই”। কিন্তু কিরণকে কেহ সংবাদও দেয় না, কিরণ তাহাকে ডাকিয়াও পাঠান না; খাবার যাহা থাকে দাসী খাইয়া ফেলে। তখন সে আপন শয়নগৃহের প্রদীপ নিবাইয়া দিয়া অন্ধকার বিছানার উপর পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া ফাঁপিয়া ফাঁপিয়া মুখের উপর সবলে বালিশ চাপিয়া ধরিয়া কাঁদিতে থাকে; কিন্তু কী তাহার নালিশ, কাহার উপরে তাহার দাবি, কে তাহাকে সান্ত্বনা করিতে আসিবে। যখন কেহই আসে না, তখন স্নেহময়ী বিশ্বধাত্রী নিদ্রা আসিয়া ধীরে ধীরে কোমলকরস্পর্শে এই মাতৃহীন ব্যখিত বালকের অভিমান শান্ত করিয়া দেন।
*ፋሆ গল্পগুচ্ছ

ডাকিয়া না খাওয়াইলে তাহার যক্ষ ব্যথিত, তাহার মাখ কিবাদ হইয়া উঠিত, না খাইয়া উঠিয়া পড়িত ; বাপরম্বকণ্ঠে দাসীকে বলিয়া যাইত “আমার ক্ষধা নাই”। মনে করিত, কিরণ সংবাদ পাইয়া এখনি অনন্তপ্তচিত্তে তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইবেন এবং খাইবার জন্য বারবার অনুরোধ করিবেন, সে তথাপি কিছুতেই সে-অনরোধ পালন করিবে না, বলিবে “আমার ক্ষধা নাই”। কিন্তু কিরণকে কেহ সংবাদও দেয় না, কিরণ তাহাকে ডাকিয়াও পাঠান না ; খাবার যাহা থাকে দাসী খাইয়া ফেলে। তখন সে আপন শয়নগহের প্রদীপ নিবাইয়া দিয়া অন্ধকার বিছানার উপর পড়িয়া ফলিয়া ফলিয়া ফাঁপিয়া ফাঁপিয়া মুখের উপর সবলে বালিশ চাপিয়া ধরিয়া কাঁদিতে থাকে ; কিন্তু কী তাহার নালিশ, কাহার উপরে তাহার দাবি, কে তাহাকে সাচ্ছনা করিতে আসিবে। যখন কেহই আসে না, তখন স্নেহময়ী বিশ্ববধায়ী নিদ্ৰা আসিয়া ধীরে ধীরে কোমলকরপশে এই মাতৃহীন ব্যথিত বালকের অভিমান শান্ত করিয়া দেন।
নীলকাতের দঢ় ধারণা হইল, সতীশ কিরণের কাছে তাহার নামে সর্বদাই লাগায় ; যেদিন কিরণ কোনো কারণে গভীর হইয়া থাকিতেন সেদিন নীলকান্ত মনে করিত, সতীশের চক্লাতে কিরণ তাহারই উপর রাগ করিয়া আছেন।
{{gap}}নীলকান্তের দৃঢ় ধারণা হইল, সতীশ কিরণের কাছে তাহার নামে সর্বদাই লাগায়; যেদিন কিরণ কোনাে কারণে গভীর হইয়া থাকিতেন সেদিন নীলকান্ত মনে করিত, সতীশের চক্রান্তে কিরণ তাহারই উপর রাগ করিয়া আছেন।

এখন হইতে নীলকান্ত একমনে তীব্র আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সর্বদাই দেবতার নিকট প্রার্থনা করে, “আর-জন্মে আমি যেন সতীশ হই এবং সতীশ যেন আমি হয়।” সে জানিত, ব্রাহণের একান্ত মনের অভিশাপ কখনও নিম্ফল হয় না, এইজন্য সে মনে মনে সতীশকে ব্ৰহাতেজে দগধ করিতে গিয়া নিজে দগধ হইতে থাকিত, এবং উপরের তলা হইতে সতীশ ও তাহার বউঠাকুরানীর উচ্ছসিত উচ্চহাস্যমিশ্রিত পরিহাসকলরব শানিতে পাইত।
{{gap}}এখন হইতে নীলকান্ত একমনে তীব্র আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সর্বদাই দেবতার নিকট প্রার্থনা করে, “আর-জন্মে আমি যেন সতীশ হই এবং সতীশ যেন আমি হয়।” সে জানিত, ব্রাহ্মণের একান্ত মনের অভিশাপ কখনও নিষ্ফল হয় না, এইজন্য সে মনে মনে সতীশকে ব্রহ্মতেজে দগ্ধ করিতে গিয়া নিজে দগ্ধ হইতে থাকিত, এবং উপরের তলা হইতে সতীশ ও তাহার বউঠাকুরানীর উচ্ছ্বসিত উচ্চহাস্যমিশ্রিত পরিহাসকলরব শুনিতে পাইত।
নীলকান্ত পষ্টত সতীশের কোনোরাপ শয়তা করিতে সাহস করিত না, কিন্তু সযোগমত তাহার ছোটোখাটো অসুবিধা ঘটাইয়া প্রীতিলাভ করিত। ঘাটের সোপানে সাবান রাখিয়া সতীশ যখন গঙ্গায় নামিয়া ডুব দিতে আরম্ভ করিত তখন নীলকান্ত ফস করিয়া আসিয়া সাবান চুরি করিয়া লইত ; সতীশ যথাকালে সাবানের সন্ধানে আসিয়া দেখিত, সাবান নাই। একদিন নাহিতে নাহিতে হঠাৎ দেখিল তাহার বিশেষ শখের চিকনের-কাজ-করা জামাটি গঙ্গার জলে ভাসিয়া যাইতেছে ; ভাবিল, হাওয়ায় উড়িয়া গেছে, কিন্তু হাওয়াটা কোন দিক হইতে বহিল তাহা কেহ জানে না।

একদিন সতীশকে আমোদ দিবার জন্য কিরণ নীলকান্তকে ডাকিয়া তাহাকে যাত্রার গান গাহিতে বলিলেন ; নীলকান্ত নিরক্তের হইয়া রহিল। কিরণ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোর আবার কী হল রে।” নীলকান্ত তাহার জবাব দিল না। কিরণ পনশ্চ বলিলেন, “সেই গানটা গা-না।” “সে আমি ভুলে গেছি” বলিয়া নীলকান্ত চলিয়া গেল।
{{gap}}নীলকান্ত স্পষ্টত সতীশের কোনােরপ শত্রুতা করিতে সাহস করিত না, কিন্তু সুযোেগমত তাহার ছােটোখাটো অসুবিধা ঘটাইয়া প্রীতিলাভ করিত। ঘাটের সােপানে সাবান রাখিয়া সতীশ যখন গঙ্গায় নামিয়া ডুব দিতে আরম্ভ করিত তখন নীলকাত ফস্ করিয়া আসিয়া সাবান চুরি করিয়া লইত; সতীশ যথাকালে সাবানের সন্ধানে আসিয়া দেখিত, সাবান নাই। একদিন নাহিতে নাহিতে হঠাৎ দেখিল তাহার বিশেষ শখের চিকনের-কাজ-করা জামাটি গঙ্গার জলে ভাসিয়া যাইতেছে; ভাবিল, হাওয়ায় উড়িয়া গেছে, কিন্তু হাওয়াটা কোন্ দিক হইতে বহিল তাহা কেহ জানে না।
অবশেষে কিরণের দেশে ফিরিবার সময় হইল। সকলেই প্রস্তুত হইতে লাগিল ; সতীশও সঙ্গে যাইবে। কিন্তু নীলকান্তকে কেহ কোনো কথাই বলে না। সে সঙ্গে যাইবে কি থাকিবে, সে প্রশ্নমায় কাহারও মনে উদয় হয় না।

কিরণ নীলকান্তকে সঙ্গে লইবার প্রস্তাব করিলেন। তাহাতে শাশুড়ি স্বামী এবং দেবর সকলেই একবাক্যে আপত্তি করিয়া উঠিলেন, কিরণ তাঁহার সংকল্প ত্যাগ করিলেন। অবশেষে যাত্রার দই দিন আগে ব্লাহরণবালককে ডাকিয়া কিরণ তাহাকে
{{gap}}একদিন সতীশকে আমােদ দিবার জন্য কিরণ নীলকান্তকে ডাকিয়া তাহাকে যাত্রার গান গাহিতে বলিলেন; নীলকান্ত নিরুত্তর হইয়া রহিল। কিরণ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাের আবার কী হল রে।” নীলকান্ত তাহার জবাব দিল না। কিরণ পুনশ্চ বলিলেন, “সেই গানটা গা-না।” “সে আমি ভুলে গেছি” বলিয়া নীলকান্ত চলিয়া গেল।

{{gap}}অবশেষে কিরণের দেশে ফিরিবার সময় হইল। সকলেই প্রস্তুত হইতে লাগিল; সতীশও সঙ্গে যাইবে। কিন্তু নীলকান্তকে কেহ কোনাে কথাই বলে না। সে সঙ্গে যাইবে কি থাকিবে, সে প্রশ্নমাত্র কাহারও মনে উদয় হয় না।

{{gap}}কিরণ নীলকান্তকে সঙ্গে লইবার প্রস্তাব করিলেন। তাহাতে শাশুড়ি স্বামী এবং দেবর সকলেই একবাক্যে আপত্তি করিয়া উঠিলেন, কিরণ তাহার সংকল্প ত্যাগ করিলেন। অবশেষে যাত্রার দুই দিন আগে ব্রাহ্নণবালককে ডাকিয়া কিরণ তাহাকে