পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|২৯৪|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
উপস্থিত হইয়াছিল সেই কল্পনাবেগে এই আলােকময় লােকময় বাদ্যসংগীতমুখরিত দৃশ্যপটশােভিত রঙ্গভূমি তাহার চক্ষে দ্বিগুণ অপরূপতা ধারণ করিল। তাহার সেই প্রাচীরবেষ্টিত নির্জন নিরানন্দ অন্তঃপুর হইতে এ কোন্-এক সুসজ্জিত সুন্দর উৎসবলােকের প্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হইল! সমস্ত স্বপ্ন বলিয়া বােধ হইতে লাগিল।
২৯৪ গল্পগুচ্ছ

উপস্থিত হইয়াছিল সেই কক্ষপনাবেগে এই আলোকময় লোকময় বাদ্যসংগীতমুখরিত দশ্যপটশোভিত রঙ্গভূমি তাহার চক্ষে বিগণ অপরপেতা ধারণ করিল। তাহার সেই প্রাচীরবেষ্টিত নিজান নিরানন্দ অন্তঃপর হইতে এ কোন-এক সসজিত সন্দের উৎসবলোকের প্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হইল! সমস্ত স্বপন বলিয়া বোধ হইতে ठनामाढन् ।
সেদিন মানভঞ্জন অপেরা অভিনয় হইতেছে। কখন ঘণ্টা বাজিল, বাদ্য থামিয়া গেল, চঞ্চল দশকগণ মহতে স্থির নিস্তব্ধ হইয়া বসিল, রঙ্গমঞ্চের সম্মুখবতী আলোকমালা উজ্জলতর হইয়া উঠিল, পট উঠিয়া গেল, একদল সমসজিত নটী ব্ৰজাগনা সাজিয়া সংগীতসহযোগে নত্য করিতে লাগিল, দশকগণের করতালি ও প্রশংসাত্মদে নাট্যশালা থাকিয়া-থাকিয়া ধৰনিত কম্পিত হইয়া উঠিল— তখন গিরিবালার তরণ দেহের রক্তলহরী উন্মাদনায় আলোড়িত হইতে লাগিল। সেই সংগীতের তানে, আলোক ও আভরণের ছটায়, এবং সম্মিলিত প্রশংসাধন্তনিতে সে ক্ষণকালের জন্য সমাজ সংসার সমস্তই বিস্মত হইয়া গেল—মনে করিল, এমন এক জায়গায় আসিয়াছে যেখানে বন্ধনমন্ত সৌন্দৰ্যপণ স্বাধীনতার কোনো বাধামার নাই।
{{gap}}সেদিন ‘মানভঞ্জন’ অপেরা অভিনয় হইতেছে। কখন ঘণ্টা বাজিল, বাদ্য থামিয়া গেল, চঞ্চল দর্শকগণ মুহূর্তে স্থির নিস্তব্ধ হইয়া বসিল, রঙ্গমঞ্চের সম্মুখবর্তী আলােকমালা উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল, পট উঠিয়া গেল, একদল সুসজ্জিত নটী ব্রজাঙ্গনা সাজিয়া সংগীতসহযােগে নৃত্য করিতে লাগিল, দর্শকগণের করতালি ও প্রশংসাবাদে নাট্যশালা থাকিয়া-থাকিয়া ধ্বনিত কম্পিত হইয়া উঠিল—তখন গিরি-বালার তরুণ দেহের রক্তলহরী উন্মাদনায় আলােড়িত হইতে লাগিল। সেই সংগীতের তানে, আলােক ও আভরণের ছটায়, এবং সম্মিলিত প্রশংসাধনিতে সে ক্ষণকালের জন্য সমাজ সংসার সমস্তই বিস্মৃত হইয়া গেল—মনে করিল, এমন এক জায়গায় আসিয়াছে যেখানে বন্ধনমুক্ত সৌন্দর্যপূর্ণ স্বাধীনতার কোনাে বাধামাত্র নাই।

সাধো মাঝে মাঝে আসিয়া ভীতস্বরে কানে কানে বলে, “বউঠাকরন, এই বেলা বাড়ি ফিরিয়া চলো। দাদাবাব জানিতে পারিলে রক্ষা থাকিবে না।” গিরিবালা সে কথায় কৰ্ণপাত করে না। তাহার মনে এখন আর কিছুমাত্র ভয় নাই।
{{gap}}সুধাে মাঝে মাঝে আসিয়া ভীতস্বরে কানে কানে বলে, “বউঠাকরুন, এই বেলা বাড়ি ফিরিয়া চলো। দাদাবাব, জানিতে পারিলে রক্ষা থাকিবে না।” গিরিবালা সে কথায় কর্ণপাত করে না। তাহার মনে এখন আর কিছুমাত্র ভয় নাই।
অভিনয় অনেক দর অগ্রসর হইল। রাধার দজোয় মান হইয়াছে ; সে মানসাগরে কৃষ্ণ আর কিছতেই থই পাইতেছে না ; কত অননয়বিনয় সাধাসাধি কাঁদাকাঁদি, কিছুতেই কিছু হয় না। তখন গবভরে গিরিবালার বক্ষ ফলিতে লাগিল। কৃষ্ণের এই লাঞ্ছনায় সে যেন মনে মনে রাধা হইয়া নিজের অসীম প্রতাপ নিজে অনুভব করিতে লাগিল। কেহ তাহাকে কখনও এমন করিয়া সাধে নাই ; সে অবহেলিত অকমানিত পরিত্যন্ত সী, কিন্তু তব সে এক অপব মোহে স্থির করিল যে এমন করিয়া নিষ্ঠারভাবে কাঁদাইবার ক্ষমতা তাহারও আছে। সৌন্দর্যের যে কেমন দোদণ্ডপ্রতাপ তাহা সে কানে শুনিয়াছে, অনমান করিয়াছে মাত্ৰ— আজ দীপের আলোকে, গানের সরে, সদশ্য রঙ্গমঞ্চের উপরে তাহা সপেস্টরপে প্রত্যক্ষ করিল। নেশায় তাহার সমস্ত মস্তিক ভরিয়া উঠিল।

অবশেষে যবনিকাপতন হইল, গ্যাসের আলো লান হইয়া আসিল, দশকগণ প্রস্থানের উপক্ৰম করিল ; গিরিবালা মন্ত্রমধের মতো বসিয়া রহিল। এখান হইতে উঠিয়া যে বাড়ি যাইতে হইবে এ কথা তাহার মনে ছিল না। সে ভাবিতেছিল, অভিনয় বঝি ফরাইবে না। যবনিকা আবার উঠিবে ; রাধিকার নিকট গ্রীকৃষ্ণের পরাভব, ইহা ছাড়া আর কোনো বিষয় উপস্থিত নাই। সধো কহিল, “বউঠাকরান, করো কী, ওঠো, এখনই সমস্ত আলো নিবাইয়া দিবে।"
{{gap}}অভিনয় অনেক দূর অগ্রসর হইল। রাধার দুর্জয় মান হইয়াছে; সে মানসাগরে কৃষ্ণ আর কিছুতেই থই পাইতেছে না; কত অনুনয়বিনয় সাধাসাধি কাঁদাকাঁদি, কিছুতেই কিছু হয় না। তখন গর্বভরে গিরিবালার বক্ষ ফুলিতে লাগিল। কৃষ্ণের এই লাঞ্ছনায় সে যেন মনে মনে রাধা হইয়া নিজের অসীম প্রতাপ নিজে অনুভব করিতে লাগিল। কেহ তাহাকে কখনও এমন করিয়া সাধে নাই; সে অবহেলিত অবমানিত পরিত্যক্ত স্ত্রী, কিন্তু তবু সে এক অপূর্ব মােহে স্থির করিল যে এমন করিয়া নিষ্ঠুরভাবে কাঁদাইবার ক্ষমতা তাহারও আছে। সৌন্দর্যের যে কেমন দোর্দণ্ডপ্রতাপ তাহা সে কানে শুনিয়াছে, অনুমান করিয়াছে মাত্র- আজ দীপের আলােকে, গানের সুরে, সুদৃশ্য রঙ্গমঞ্চের উপরে তাহা সুস্পষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করিল। নেশায় তাহার সমস্ত মস্তিষ্ক ভরিয়া উঠিল।
গিরিবালা গভীর রাত্রে আপন শয়নকক্ষে ফিরিয়া আসিল । কোণে একটি দীপ মিট মিট করিতেছে-ঘরে একটি লোক নাই শব্দ নাই— গহপ্রান্তে নিজন শষ্যার উপরে একটি পরাতন মশারি বাতাসে অলপ অলপ দলিতেছে ; তাহার প্রতিদিনের জগৎ অত্যন্ত বিশ্ৰী বিরস এবং তুচ্ছ বলিয়া ঠেকিতে লাগিল। কোথায় সেই সৌন্দর্যময় আলোকময় সংগীতময় রাজ্য—যেখানে সে আপনার সমস্ত মহিমা বিকীর্ণ

{{gap}}অবশেষে যবনিকাপতন হইল, গ্যাসের আলাে ম্লান হইয়া আসিল, দর্শকগণ প্রস্থানের উপক্রম করিল; গিরিবালা মন্ত্রমুগ্ধের মতাে বসিয়া রহিল। এখান হইতে উঠিয়া যে বাড়ি যাইতে হইবে এ কথা তাহার মনে ছিল না। সে ভাবিতেছিল, অভিনয় বুঝি ফুরাইবে না। যবনিকা আবার উঠিবে; রাধিকার নিকট শ্রীকৃষ্ণের পরাভব, ইহা ছাড়া আর কোনাে বিষয় উপস্থিত নাই। সুধো কহিল, “বউঠাকরুন, করাে কী, ওঠো, এখনই সমস্ত আলাে নিবাইয়া দিবে।”

{{gap}}গিরিবালা গভীর রাত্রে আপন শয়নকক্ষে ফিরিয়া আসিল। কোণে একটি দীপ মিট্ মিট্ করিতেছে—ঘরে একটি লােক নাই শব্দ নাই—গৃহপ্রান্তে নির্জন শয্যার উপরে একটি পুরাতন মশারি বাতাসে অল্প অল্প দুলিতেছে; তাহার প্রতিদিনের জগৎ অত্যন্ত বিশ্রী বিরস এবং তুচ্ছ বলিয়া ঠেকিতে লাগিল। কোথায় সেই সৌন্দর্যময় আলােকময় সংগীতময় রাজ্য-যেখানে সে আপনার সমস্ত মহিমা বিকীর্ণ