পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|৩২০|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}ইন্দ্রিয়ের ভ্রম মনে করিয়া পুনরায় ফিরিয়া বসিতেই, একেবারে অনেকগুলি পায়ের শব্দ শােনা গেল—যেন অনেকে মিলিয়া ছুটাছুটি করিয়া নামিয়া আসিতেছে। ঈষৎ ভয়ের সহিত এক অপরূপ পুলক মিশ্রিত হইয়া আমার সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণ করিয়া তুলিল। যদিও আমার সম্মুখে কোনাে মূর্তি ছিল না তথাপি স্পষ্ট প্রত্যক্ষবৎ মনে হইল যে, এই গ্রীষ্মের সায়াহ্নে একদল প্রমােদচঞ্চল নারী শুস্তার জলের মধ্যে স্নান করিতে নামিয়াছে। যদিও সেই সন্ধ্যাকালে নিস্তব্ধ গিরিতটে, নদীতীরে, নির্জন প্রাসাদে কোথাও কিছুমাত্র শব্দ ছিল না, তথাপি আমি যেন স্পষ্ট শুনিতে পাইলাম নির্ঝরের শতধারার মতাে সকৌতুক কলহাস্যের সহিত পরস্পরের দ্রুত অনুধাবন করিয়া আমার পাশ দিয়া স্নানার্থিনীরা চলিয়া গেল। আমাকে যেন লক্ষ করিল না। তাহারা যেমন আমার নিকট অদৃশ্য, আমিও যেন সেইরূপ তাহাদের নিকট অদৃশ্য। নদী পূর্ববৎ স্থির ছিল, কিন্তু আমার নিকট স্পষ্ট বােধ হইল, স্বচ্ছতােয়ার অগভীর স্রোত অনেকগুলি বলয়শিঞ্জিত বাহুবিক্ষেপে বিক্ষুদ্ধ হইয়া উঠিয়াছে, হাসিয়া হাসিয়া সখীগণ পরস্পরের গায়ে জল ছুঁড়িয়া মারিতেছে এবং সন্তরণকারিণীদের পদাঘাতে জলবিন্দুরাশি মুক্তামুষ্টির মতাে আকাশে ছিটিয়া পড়িতেছে।
○象o গল্পগুচ্ছ

ইন্দ্রিয়ের ভ্রম মনে করিয়া পনরায় ফিরিয়া বসিতেই, একেবারে অনেকগুলি পায়ের শব্দ শোনা গেল—যেন অনেকে মিলিয়া ছাটাছটি করিয়া নামিয়া আসিতেছে। ঈষৎ ভয়ের সহিত এক অপরপ পলক মিশ্রিত হইয়া আমার সবাঙ্গ পরিপণ করিয়া তুলিল। যদিও আমার সম্মখে কোনো মতি ছিল না তথাপি সপস্ট প্রত্যক্ষবৎ মনে হইল যে, এই গ্রীষ্মের সায়াহ্নে একদল প্রমোদচঞ্চল নায়ী শাস্তার জলের মধ্যে নান করিতে নামিয়াছে। যদিও সেই সন্ধ্যাকালে নিতম্ব গিরিতটে নদীতীরে, নিজন প্রাসাদে কোথাও কিছমাত্র শব্দ ছিল না, তথাপি আমি যেন স্পষ্ট শনিতে পাইলাম
{{gap}}আমার বক্ষের মধ্যে একপ্রকার কম্পন হইতে লাগিল; সে উত্তেজনা ভয়ের কি আনন্দের কি কৌতুহলের, ঠিক বলিতে পারি না। বড়াে ইচ্ছা হইতে লাগিল, ভালাে করিয়া দেখি, কিন্তু সম্মুখে দেখিবার কিছুই ছিল না; মনে হইল, ভালাে করিয়া কান পাতিলেই উহাদের কথা সমস্তই স্পষ্ট শােনা যাইবে—কিন্তু একান্তমনে কান পাতিয়া কেবল অরণ্যের ঝিল্লিরব শােনা যায়। মনে হইল, আড়াই শত বৎসরের কৃষ্ণবর্ণ যবনিকা ঠিক আমার সম্মুখে দুলিতেছে, ভয়ে ভয়ে একটি ধার তুলিয়া ভিতরে দৃষ্টিপাত করি—সেখানে বৃহৎ সভা বসিয়াছে, কিন্তু গাঢ় অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না।
করিয়া আমার পাশব দিয়া সনানাথিনীরা চলিয়া গেল। আমাকে যেন লক্ষ করিল না। তাহারা যেমন আমার নিকট অদশ্য, আমিও যেন সেইরূপ তাহদের নিকট অদশ্য।

নদী পববৎ স্থির ছিল, কিন্তু আমার নিকট সপটে বোধ হইল, স্বচ্ছতোয়ার অগভীর
{{gap}}হঠাৎ গুমোট ভাঙিয়া হু হু করিয়া একটা বাতাস দিল-শুস্তার স্থির জলতল দেখিতে দেখিতে অপ্সরীর কেশদামের মতাে কুঞ্চিত হইয়া উঠিল, এবং সন্ধ্যাছায়াচ্ছন্ন সমস্ত বনভূমি এক মুহূর্তে একসঙ্গে মর্মরধনি করিয়া যেন দুঃস্বপ্ন হইতে জাগিয়া উঠিল। স্বপ্নই বলো আর সত্যই বলো, আড়াই শত বৎসরের অতীত ক্ষেত্র হইতে প্রতিফলিত হইয়া আমার সম্মুখে যে-এক অদৃশ্য মরীচিকা অবতীর্ণ হইয়াছিল তাহা চকিতের মধ্যে অন্তর্হিত হইল। যে মায়াময়ীরা আমার গায়ের উপর দিয়া দেহহীন দ্রুতপদে শব্দহীন উচ্চকলহাস্যে ছুটিয়া শুস্তার জলের উপর গিয়া ঝাঁপ দিয়া পড়িয়াছিল, তাহারা সিক্ত অঞ্চল হইতে জল নিষ্কর্ষণ করিতে করিতে আমার পাশ দিয়া উঠিয়া গেল না। বাতাসে যেমন করিয়া গন্ধ উড়াইয়া লইয়া যায়, বসন্তের এক নিশ্বাসে তাহারা তেমনি করিয়া উড়িয়া চলিয়া গেল।
স্রোত অনেকগুলি বলয়শিঞ্জিত বাহবিক্ষেপে বিক্ষব্ধ হইয়া উঠিয়াছে, হাসিয়া হাসিয়া সখীগণ পরস্পরের গায়ে জল ছড়িয়া মারিতেছে এবং সন্তরণকারিণীদের পদাঘাতে জলবিন্দরাশি মন্তোমটির মতো আকাশে ছিটিয়া পড়িতেছে।

আমার বক্ষের মধ্যে একপ্রকার কক্ষপন হইতে লাগিল ; সে উত্তেজনা ভয়ের কি আনন্দের কি কৌতুহলের, ঠিক বলিতে পারি না। বড়ো ইচ্ছা হইতে লাগিল, ভালো করিয়া দেখি, কিন্তু সম্মখে দেখিবার কিছই ছিল না ; মনে হইল, ভালো করিয়া কান পাতিলেই উহাদের কথা সমস্তই সপষ্ট শোনা যাইবে—কিন্তু একান্তমনে কন পাতিয়া কেবল অরণ্যের ঝিল্লিরব শোনা যায়। মনে হইল, আড়াই শত বৎসরের কৃষ্ণবণ যবনিকা ঠিক আমার সম্মুখে দলিতেছে, ভয়ে ভয়ে একটি ধার তুলিয়া ভিতরে দষ্টিপাত করি—সেখানে বহৎ সভা বসিয়াছে, কিন্তু গাঢ় অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না ।
{{gap}}তখন আমার বড়াে আশঙ্কা হইল যে, হঠাৎ বুঝি নির্জন পাইয়া কবিতাদেবী আমার স্কন্ধে আসিয়া ভর করিলেন। আমি বেচারা তুলার মাশুল আদায় করিয়া থাটিয়া খাই, সর্বনাশিনী এইবার বুঝি আমার মুণ্ডপাত করিতে আসিলেন। ভাবিলাম, ভালাে করিয়া আহার করিতে হইবে; শূন্য উদরেই সকল প্রকার দুরারােগ্য রােগ আসিয়া চাপিয়া ধরে। আমার পাচকটিকে ডাকিয়া প্রচুরঘৃতপক্ক মসলা-সুগন্ধি রীতি-মত মােগলাই খানা হকুম করিলাম।
হঠাৎ গামোট ভাঙিয়া হয় হল করিয়া একটা বাতাস দিল— শস্তোর স্থির জলতল দেখিতে দেখিতে অপসরীর কেশদামের মতো কুঞ্চিত হইয়া উঠিল, এবং সন্ধ্যাছায়াচ্ছন্ন সমস্ত বনভূমি এক মহতে একসঙ্গে মমরধনি করিয়া যেন দঃস্বপন হইতে জাগিয়া উঠিল। সবগুনই বলো আর সত্যই বলো, আড়াই শত বৎসরের অতীত ক্ষেত্র হইতে প্রতিফলিত হইয়া আমার সম্মুখে ষে-এক অদশ্য মরীচিকা অবতীণ হইয়াছিল তাহা চকিতের মধ্যে অন্তহিত হইল। যে মায়াময়ীরা আমার গায়ের উপর দিয়া দেহহীন দ্রতপদে শব্দহীন উচ্চকলহাস্যে ছটিয়া শস্তোর জলের উপর গিয়া ঝাঁপ দিয়া পড়িয়াছিল, তাহারা সিক্ত অঞ্চল হইতে জল নিকষণ করিতে করিতে আমার পাশ দিয়া উঠিয়া গেল না। বাতাসে যেমন করিয়া গন্ধ উড়াইয়া লইয়া যায়, বসন্তের এক নিশবাসে তাহারা তেমনি করিয়া উড়িয়া চলিয়া গেল ।
{{nop}}
তখন আমার বড়ো আশঙ্কা হইল যে, হঠাৎ বঝি নিজান পাইয়া কবিতাদেৰী আমার কন্ধে আসিয়া ভর করিলেন। আমি বেচারা তুলার মাশল আদায় করিয়া খাটিয়া খাই, সবনাশিনী এইবার বঝি আমার মণ্ডপাত করিতে আসিলেন। ভাবিলাম, ভালো করিয়া আহার করিতে হইবে ; শান্য উদরেই সকল প্রকার দরারোগ্য রোগ আসিয়া চাপিয়া ধরে। আমার পাচকটিকে ডাকিয়া প্রচুরঘতপক মসলা-সগন্ধি রীতিমত মোগলাই খানা হকুম করিলাম।