পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
ছায়াঙ্কিত জ্যোৎস্না তাঁহার শীর্ণ মুখের উপর আসিয়া পড়িল। চারি দিক শান্ত নিস্তব্ধ; সেই ঘনগন্ধপূর্ণ ছায়ান্ধকারে এক পার্শ্বে নীরবে বসিয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া আমার চোখে জল আসিল।
ছায়াঙ্কিত জ্যোৎস্না তাঁহার শীর্ণ মুখের উপর আসিয়া পড়িল। চারি দিক শান্ত নিস্তব্ধ; সেই ঘনগন্ধপূর্ণ ছায়ান্ধকারে এক পার্শ্বে নীরবে বসিয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া আমার চোখে জল আসিল।


{{gap}}আমি ধীরে ধীরে কাছের গােড়ায় আসিয়া দুই হস্তে তাঁহার একটা উত্তপ্ত শীর্ণ হাত তুলিয়া লইলাম। তিনি তাহাতে কোনাে আপত্তি করিলেন না। কিছুক্ষণ এইরূপ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া আমার হদয় কেমন উদ্‌বেলিত হইয়া উঠিল; আমি বলিয়া উঠিলাম, “তােমার ভালােবাসা আমি কোনাে কালে ভুলিব না।”
{{gap}}আমি ধীরে ধীরে কাছের গােড়ায় আসিয়া দুই হস্তে তাঁহার একটা উত্তপ্ত শীর্ণ হাত তুলিয়া লইলাম। তিনি তাহাতে কোনাে আপত্তি করিলেন না। কিছুক্ষণ এইরূপ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া আমার হৃদয় কেমন উদ্‌বেলিত হইয়া উঠিল; আমি বলিয়া উঠিলাম, “তােমার ভালােবাসা আমি কোনাে কালে ভুলিব না।”


{{gap}}তখনি বুঝিলাম, কথাটা বলিবার কোনাে আবশ্যক ছিল না। আমার স্ত্রী হাসিয়া উঠিলেন। সে হাসিতে লজ্জা ছিল, সুখ ছিল এবং কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস ছিল, এবং উহার মধ্যে অনেকটা পরিমাণে পরিহাসের তীব্রতাও ছিল। প্রতিবাদস্বরূপে একটি কথামাত্র না বলিয়া কেবল তাঁহার সেই হাসির দ্বারা জানাইলেন, “কোনাে কালে ভুলিবে না, ইহা কখনাে সম্ভব নহে এবং আমি তাহা প্রত্যাশাও করি না।”
{{gap}}তখনি বুঝিলাম, কথাটা বলিবার কোনাে আবশ্যক ছিল না। আমার স্ত্রী হাসিয়া উঠিলেন। সে হাসিতে লজ্জা ছিল, সুখ ছিল এবং কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস ছিল, এবং উহার মধ্যে অনেকটা পরিমাণে পরিহাসের তীব্রতাও ছিল। প্রতিবাদস্বরূপে একটি কথামাত্র না বলিয়া কেবল তাঁহার সেই হাসির দ্বারা জানাইলেন, “কোনাে কালে ভুলিবে না, ইহা কখনাে সম্ভব নহে এবং আমি তাহা প্রত্যাশাও করি না।”
৭ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
{{gap}}ঐ সুমিষ্ট সুতীক্ষ্ণ হাসির ভয়েই আমি কখনাে আমার স্ত্রীর সঙ্গে রীতিমত প্রেমালাপ করিতে সাহস করি নাই। অসাক্ষাতে যে-সকল কথা মনে উদয় হইত, তাঁহার সম্মুখে গেলেই সেগুলােকে নিতান্ত বাজে কথা বলিয়া বােধ হইত। ছাপার অক্ষরে যে-সব কথা পড়িলে দুই চক্ষু বাহিয়া দর-দর ধারায় জল পড়িতে থাকে সেইগুলা মুখে বলিতে গেলে কেন যে হাস্যের উদ্রেক করে, এ পর্যন্ত বুঝিতে পারিলাম না।
{{gap}}ঐ সুমিষ্ট সুতীক্ষ্ণ হাসির ভয়েই আমি কখনাে আমার স্ত্রীর সঙ্গে রীতিমত প্রেমালাপ করিতে সাহস করি নাই। অসাক্ষাতে যে-সকল কথা মনে উদয় হইত, তাঁহার সম্মুখে গেলেই সেগুলােকে নিতান্ত বাজে কথা বলিয়া বােধ হইত। ছাপার অক্ষরে যে-সব কথা পড়িলে দুই চক্ষু বাহিয়া দর-দর ধারায় জল পড়িতে থাকে সেইগুলা মুখে বলিতে গেলে কেন যে হাস্যের উদ্রেক করে, এ পর্যন্ত বুঝিতে পারিলাম না।


{{gap}}বাদপ্রতিবাদ কথায় চলে কিন্তু হাসির উপরে তর্ক চলে না, কাজেই চুপ করিয়া যাইতে হইল। জ্যোৎস্না উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল, একটা কোকিল ক্রমাগতই কুহু কুহ, ডাকিয়া অস্থির হইয়া গেল। আমি বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম, এমন জ্যোৎস্নারাত্রেও কি পিকবধূ বধির হইয়া আছে।
{{gap}}বাদপ্রতিবাদ কথায় চলে কিন্তু হাসির উপরে তর্ক চলে না, কাজেই চুপ করিয়া যাইতে হইল। জ্যোৎস্না উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল, একটা কোকিল ক্রমাগতই কুহু কুহু ডাকিয়া অস্থির হইয়া গেল। আমি বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম, এমন জ্যোৎস্নারাত্রেও কি পিকবধূ বধির হইয়া আছে।


{{gap}}বহু চিকিৎসায় আমার স্ত্রীর রােগ-উপশমের কোনাে লক্ষণ দেখা গেল না। ডাক্তার বলিল, “একবার বায়ুপরিবর্তন করিয়া দেখিলে ভালাে হয়।” আমি স্ত্রীকে লইয়া এলাহাবাদে গেলাম।
{{gap}}বহু চিকিৎসায় আমার স্ত্রীর রােগ-উপশমের কোনাে লক্ষণ দেখা গেল না। ডাক্তার বলিল, “একবার বায়ুপরিবর্তন করিয়া দেখিলে ভালাে হয়।” আমি স্ত্রীকে লইয়া এলাহাবাদে গেলাম।