পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|৪০০|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
এবং ইহাই সংগত। তাহার দুশ্চিন্তা সুতীব্র হইয়া উঠিল। সংসারে তাহার সন্তান নাই; স্বামী আছে বটে কিন্তু স্বামীর অস্তিত্ব সে অন্তরের মধ্যে অনুভব করে না, অতএব যাহা তাহার একমাত্র যত্নের ধন, যাহা তাহার ছেলের মতাে ক্রমে ক্রমে বৎসরে বৎসরে বাড়িয়া উঠিতেছে, যাহা রূপকমাত্র নহে, যাহা প্রকৃতই সােনা, যাহা মানিক, যাহা বক্ষের, যাহা কণ্ঠের, যাহা মাথার—সেই অনেক দিনের অনেক সাধের সামগ্রী এক মুহূর্তেই ব্যবসায়ের অতলস্পর্শ গহ্বরের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইবে, ইহা কল্পনা করিয়া তাহার সর্বশরীর হিম হইয়া আসিল। সে কহিল, ‘কী করা যায়।’
800 গল্পগুচ্ছ

এবং ইহাই সংগত। তাহার দুশ্চিন্তা সতীব্র হইয়া উঠিল। সংসারে তাহার সন্তান নাই ; স্বামী আছে বটে কিন্তু স্বামীর অস্তিত্ব সে অন্তরের মধ্যে অনুভব করে না, অতএব যাহা তাহার একমাত্র যত্নের ধন, যাহা তাহার ছেলের মতো ক্ৰমে ক্ৰমে বৎসরে বৎসরে বাড়িয়া উঠিতেছে, যাহা রপেকমাত্র নহে, যাহা প্রকৃতই সোনা, যাহা মানিক, যাহা বক্ষের, যাহা কণ্ঠের, যাহা মাথার-– সেই অনেক দিনের অনেক সাধের সামগ্রী এক মহতেই ব্যবসায়ের অতলপশ গহবরের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইবে, ইহা কল্পনা করিয়া তাহার সব শরীর হিম হইয়া আসিল । সে কহিল, কী করা যায়।’
মধ্যসদন কহিল, গহনাগুলো লইয়া এইবেলা বাপের বাড়ি চলো ’ গহনার কিছ অংশ, এমন-কি অধিকাংশই যে তাহার ভাগে আসিবে বৃদ্ধিমান মধ মনে মনে তাহার উপায় ঠাওরাইল ।
{{gap}}মধুসূদন কহিল, ‘গহনাগুলাে লইয়া এইবেলা বাপের বাড়ি চলাে।’ গহনার কিছু অংশ, এমনকি অধিকাংশই যে তাহার ভাগে আসিবে বুদ্ধিমান মধু, মনে মনে তাহার উপায় ঠাওরাইল।

মণিমালিকা এ প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ সক্ষমত হইল । আষাঢ়শেষের সন্ধ্যাবেলায় এই ঘাটের ধারে একখানি নৌকা আসিয়া লাগিল । ঘনমেঘাচ্ছন্ন প্রতুষে নিবিড় অন্ধকারে নিদ্রাহীন ভেকের কলরবের মধ্যে একখানি মোট চাদরে পা হইতে মাথা পর্যন্ত আবত করিয়া মণিমালিকা নৌকায় উঠিল । মধ্যসদন নৌকার মধ্য হইতে জাগিয়া উঠিয়া কহিল, গহনার বাক্সটা আমার কাছে দাও।' মণি কহিল, ‘সে পরে হইবে, এখন নৌকা খলিয়া দাও । নৌকা খলিয়া দিল, খরস্রোতে হহেতু করিয়া ভাসিয়া গেল। মণিমালিকা সমসত রাত ধরিয়া একটি একটি করিয়া তাহার সমস্ত গহনা সবাংগ ভরিয়া পরিয়াছে, মাথা হইতে পা পর্যন্ত আর পথনি ছিল না। বাক্সে করিয়া গহনা লইলে সে বক্স হাতছাড়া হইয়া যাইতে পারে, এ আশংকা তাহার ছিল। কিন্তু গায়ে পরিয়া গেলে তাহাকে না বধ করিয়া সে গহনা কেহ লইতে পারবে না।
{{gap}}মণিমালিকা এ প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ সম্মত হইল।
সঙ্গে কোনোপ্রকার বাক্স না দেখিয়া মধ্যসদন কিছ বুঝিতে পারিল না, মোটা চাদরের নীচে যে মণিমালিকার দেহপ্রাণের সঙ্গে সঙ্গে দেহপ্রাণের অধিক গহনাগুলি আচ্ছন্ন ছিল তাহা সে অনুমান করিতে পারে নাই। মণিমালিকা ফণিভূষণকে বুঝিত না বটে কিন্তু মধ্যসদনকে চিনিতে তাহার বাকি ছিল না।

মধসদন গোমস্তার কাছে একখানা চিঠি রাখিয়া গেল যে, সে কত্রীকে পিত্রালয়ে পৌছাইয়া দিতে রওনা হইল। গোমসতা ফণিভূষণের বাপের আমলের ; সে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া হ্রসব-ইকারকে দীঘ-ঈকার এবং দন্ত্য-স’কে তালব্য-শ করিয়া মনিবকে এক পত্র লিখিল ভালো বাংলা লিখিল না কিন্তু স্ত্রীকে অযথা প্রশ্রয় দেওয়া যে পরিষোচিত নহে, এ কথাটা ঠিকমতই প্রকাশ করিল।
{{gap}}আষাঢ়শেষের সন্ধ্যাবেলায় এই ঘাটের ধারে একখানি নৌকা আসিয়া লাগিল। ঘনমেঘাচ্ছন্ন প্রত্যুষে নিবিড় অন্ধকারে নিদ্রাহীন ভেকের কলরবের মধ্যে একখানি মােটা চাদরে পা হইতে মাথা পর্যন্ত আবৃত করিয়া মণিমালিকা নৌকায় উঠিল। মধুসদন নৌকার মধ্য হইতে জাগিয়া উঠিয়া কহিল, ‘গহনার বাক্সটা আমার কাছে দাও।’ মণি কহিল, ‘সে পরে হইবে, এখন নৌকা খুলিয়া দাও।’
ফণিভূষণ মণিমালিকার মনের কথাটা ঠিক বুঝিল। তাহার মনে এই আঘাতটা প্রবল হইল যে, আমি গরে্তর ক্ষতিসম্ভাবনা সত্ত্বেও সীর অলংকার পরিত্যাগ করিয়া প্রাণপণ চেষ্টায় অর্থসংগ্রহে প্রবত্ত হইয়াছি, তব আমাকে সন্দেহ। আমাকে আজিও চিনিল না।

নিজের প্রতি যে নিদারণ অন্যায়ে কন্ধ হওয়া উচিত ছিল, ফণিভূষণ তাহাতে ক্ষুব্ধ হইল মাত্র। পরষমানুষ বিধাতার ন্যায়দণ্ড, তাহার মধ্যে তিনি বজ্রানি নিহিত করিয়া রাখিয়াছেন, নিজের প্রতি অথবা অপরের প্রতি অন্যায়ের সংঘষে সে যদি দপ করিয়া জলিয়া উঠিতে না পারে তবে ধিক তাহাকে। পরষমানুষ দাবানির মতো
{{gap}}নৌকা খুলিয়া দিল, খরস্রোতে হুহু করিয়া ভাসিয়া গেল।

{{gap}}মণিমালিকা সমস্ত রাত ধরিয়া একটি একটি করিয়া তাহার সমস্ত গহনা সর্বাঙ্গ ভরিয়া পরিয়াছে, মাথা হইতে পা পর্যন্ত আর স্থান ছিল না। বাক্সে করিয়া গহনা লইলে সে বাক্স হাতছাড়া হইয়া যাইতে পারে, এ আশংকা তাহার ছিল। কিন্তু গায়ে পরিয়া গেলে তাহাকে না বধ করিয়া সে গহনা কেহ লইতে পারিবে না।

{{gap}}সঙ্গে কোনােপ্রকার বাক্স না দেখিয়া মধুসূদন কিছু বুঝিতে পারিল না, মােটা চাদরের নীচে যে মণিমালিকার দেহপ্রাণের সঙ্গে সঙ্গে দেহপ্রাণের অধিক গহনাগুলি আচ্ছন্ন ছিল তাহা সে অনুমান করিতে পারে নাই। মণিমালিকা ফণিভূষণকে বুঝিত বটে কিন্তু মধুসূদনকে চিনিতে তাহার বাকি ছিল না।

{{gap}}মধুসূদন গােমস্তার কাছে একখানা চিঠি রাখিয়া গেল যে, সে কর্ত্রীকে পিত্রালয়ে পৌছাইয়া দিতে রওনা হইল। গােমস্তা ফণিভূষণের বাপের আমলের; সে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া হ্রস্ব-ইকারকে দীর্ঘ-ঈকার এবং দন্ত্য-স'কে তালব্য-শ করিয়া মনিবকে এক পত্র লিখিল, ভালাে বাংলা লিখিল না কিন্তু স্ত্রীকে অযথা প্রশ্রয় দেওয়া যে পুরুষোচিত নহে, এ কথাটা ঠিকমতই প্রকাশ করিল।

{{gap}}ফণিভূষণ মণিমালিকার মনের কথাটা ঠিক বুঝিল। তাহার মনে এই আঘাতটা প্রবল হইল যে, আমি গুরুতর ক্ষতিসম্ভাবনা সত্ত্বেও স্ত্রীর অলংকার পরিত্যাগ করিয়া প্রাণপণ চেষ্টায় অর্থ সংগ্রহে প্রবৃত্ত হইয়াছি, তবু আমাকে সন্দেহ। আমাকে আজিও চিনিল না।

{{gap}}নিজের প্রতি যে নিদারুণ অন্যায়ে ক্রুদ্ধ হওয়া উচিত ছিল, ফণিভূষণ তাহাতে ক্ষুদ্ধ হইল মাত্র। পুরুষমানুষ বিধাতার ন্যায়দণ্ড, তাহার মধ্যে তিনি বজ্রাগ্নি নিহিত করিয়া রাখিয়াছেন, নিজের প্রতি অথবা অপরের প্রতি অন্যায়ের সংঘর্ষে সে যদি দপ্ করিয়া জ্বলিয়া উঠিতে না পারে তবে ধিক্ তাহাকে। পুরুষমানুষ দাবাগ্নির মতাে