পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৬: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||গল্পগুচ্ছ|৪০৭}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{কেন্দ্র|{{larger|দৃষ্টিদান}}}}
গল্পগুচ্ছ 8ՕԳ

দটিদান

শনিয়াছি, আজকাল অনেক বাঙালির মেয়েকে নিজের চেষ্টায় স্বামী সংগ্ৰহ করিতে হয়। আমিও তাই করিয়াছি কিন্তু দেবতার সহায়তায়। আমি ছেলেবেলা হইতে অনেক ব্রত এবং অনেক শিবপজা করিয়াছিলাম।
শুনিয়াছি, আজকাল অনেক বাঙালির মেয়েকে নিজের চেষ্টায় স্বামী সংগ্রহ করিতে হয়। আমিও তাই করিয়াছি কিন্তু দেবতার সহায়তায়। আমি ছেলেবেলা হইতে অনেক ব্রত এবং অনেক শিবপূজা করিয়াছিলাম।
আমার আট বৎসর বয়স উত্তীর্ণ না হইতেই বিবাহ হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু পবজন্মের পাপ-বশত আমি আমার এমন স্বামী পাইয়াও সম্পণে পাইলাম না। মা ত্রিনয়নী আমার দইচক্ষ লইলেন। জীবনের শেষমাহত পর্যন্ত স্বামীকে দেখিয়া লইবার সখ দিলেন না।

বাল্যকাল হইতেই আমার অগ্নিপরীক্ষার আরম্ভ হয়। চোদ্দ বৎসর পার না হইতেই আমি একটি মতশিশ জন্ম দিলাম, নিজেও মরিবার কাছাকাছি গিয়াছিলাম; কিন্তু যাহাকে দুঃখভোগ করিতে হইবে সে মরিলে চলিবে কেন। যে দীপ জলিবার জন্য হইয়াছে তাহার তেল অলপ হয় না; রাত্রিভোর জনলিয়া তবে তাহার নিবাণ ।
{{gap}}আমার আট বৎসর বয়স উত্তীর্ণ না হইতেই বিবাহ হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু পূর্বজন্মের পাপ-বশত আমি আমার এমন স্বামী পাইয়াও সম্পূর্ণ পাইলাম না। মা ত্রিনয়নী আমার দুইচক্ষু লইলেন। জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত স্বামীকে দেখিয়া লইবার সুখ দিলেন না।
বচিলাম বটে কিন্তু শরীরের দাবীলতায়, মনের খেদে, অথবা যে কারণেই হউক, আমার চোখের পীড়া হইল ।

আমার স্বামী তখন ডাণ্ডারি পড়িতেছিলেন। নতন বিদ্যাশিক্ষার উৎসাহ-বশত চিকিৎসা করিবার সযোগ পাইলে তিনি খুশি হইয়া উঠিতেন। তিনি নিজেই আমার চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন।
{{gap}}বাল্যকাল হইতেই আমার অগ্নিপরীক্ষার আরম্ভ হয়। চোদ্দ বৎসর পার না হইতেই আমি একটি মৃতশিশু জন্ম দিলাম, নিজেও মরিবার কাছাকাছি গিয়াছিলাম; কিন্তু যাহাকে দুঃখভােগ করিতে হইবে সে মরিলে চলিবে কেন। যে দীপ জ্বলিবার জন্য হইয়াছে তাহার তেল অল্প হয় না; রাত্রিভাের জ্বলিয়া তবে তাহার নির্বাণ।
দাদা সে বছর বি. এল. দিবেন বলিয়া কলেজে পড়িতেছিলেন। তিনি একদিন আসিয়া আমার স্বামীকে কহিলেন, “করিতেছ কী। কুমার চোখ দটো যে নস্ট করিতে বসিয়াছ। একজন ভালো ডাক্তার দেখাও।”

আমার স্বামী কহিলেন, "ভালো ডাক্তার আসিয়া আর নতন চিকিৎসা কী করিবে। ওষুধপত্র তো সব জানাই আছে।” -
{{gap}}বাঁচিলাম বটে কিন্তু শরীরের দুর্বলতায়, মনের খেদে, অথবা যে কারণেই হউক, আমার চোখের পীড়া হইল।
দাদা কিছ রাগিয়া কহিলেন, “তবে তো তোমার সঙ্গে তোমাদের কলেজের বড়োসাহেবের কোনো প্রভেদ নাই ।”

স্বামী বলিলেন, "আইন পড়িতেছ ডাক্তারির তুমি কী বোঝ। তুমি যখন বিবাহ করিবে তখন তোমার সীর সম্পত্তি লইয়া যদি কখনও মকদ্দমা বাধে তুমি কি আমার পরামশমত চলিবে ।”
{{gap}}আমার স্বামী তখন ডাক্তারি পড়িতেছিলেন। নূতন বিদ্যাশিক্ষার উৎসাহ-বশত চিকিৎসা করিবার সুযোগ পাইলে তিনি খুশি হইয়া উঠিতেন। তিনি নিজেই আমার চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন।
আমি মনে মনে ভাবিতেছিলাম, রাজায় রাজায় যন্ধ হইলে উলখেড়েরই বিপদ সবচেয়ে বেশি। স্বামীর সঙ্গে বিবাদ বাধিল দাদার, কিন্তু দুইপক্ষ হইতে বাজিতেছে আমাকেই । আবার ভাবিলাম, দাদারা যখন আমাকে দানই করিয়াছেন তখন আমার সবন্ধে কতব্য লইয়া এ-সমস্ত ভাগাভাগি কেন । আমার সুখদঃখ, আমার রোগআরোগ্য সে তো সমস্তই আমার স্বামীর।

সেদিন আমার এই এক সামান্য চোখের চিকিৎসা লইয়া দাদার সঙ্গে আমার স্বামীর যেন একটা মনান্তর হইয়া গেল। সহজেই আমার চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল, আমার জলের ধারা আরও বাড়িয়া উঠিল; তাহার প্রকৃত কারণ আমার স্বামী কিবা দাদা কেহই তখন বুঝিলেন না।
{{gap}}দাদা সে বছর বি. এল. দিবেন বলিয়া কলেজে পড়িতেছিলেন। তিনি একদিন আসিয়া আমার স্বামীকে কহিলেন, “করিতেছ কী। কুমুর চোখ দুটো যে নষ্ট করিতে বসিয়াছ। একজন ভালাে ডাক্তার দেখাও।”

{{gap}}আমার স্বামী কহিলেন, “ভালাে ডাক্তার আসিয়া আর নূতন চিকিৎসা কী করিবে। ওষুধপত্র তাে সব জানাই আছে।”

{{gap}}দাদা কিছু রাগিয়া কহিলেন, “তবে তাে তােমার সঙ্গে তােমাদের কলেজের বড়ােসাহেবের কোনাে প্রভেদ নাই।”

{{gap}}স্বামী বলিলেন, “আইন পড়িতেছ ডাক্তারির তুমি কী বােঝ। তুমি যখন বিবাহ করিবে তখন তােমার স্ত্রীর সম্পত্তি লইয়া যদি কখনও মকদ্দমা বাধে তুমি কি আমার পরামর্শমত চলিবে।”

{{gap}}আমি মনে মনে ভাবিতেছিলাম, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হইলে উলুখড়েরই বিপদ সবচেয়ে বেশি। স্বামীর সঙ্গে বিবাদ বাধিল দাদার, কিন্তু দুইপক্ষ হইতে বাজিতেছে আমাকেই। আবার ভাবিলাম, দাদারা যখন আমাকে দানই করিয়াছেন তখন আমার সম্বন্ধে কর্তব্য লইয়া এ-সমস্ত ভাগাভাগি কেন। আমার সুখদুঃখ, আমার রােগআরােগ্য সে তাে সমস্তই আমার স্বামীর।

{{gap}}সেদিন আমার এই এক সামান্য চোখের চিকিৎসা লইয়া দাদার সঙ্গে আমার স্বামীর যেন একটু মনান্তর হইয়া গেল। সহজেই আমার চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল, আমার জলের ধারা আরও বাড়িয়া উঠিল; তাহার প্রকৃত কারণ আমার স্বামী কি দাদা কেহই তখন বুঝিলেন না।
{{nop}}