পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৮: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||দৃষ্টিদান|৪১১}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
মধ্যে পরস্পরকে ব্যাকুল ঊর্ধ্বকণ্ঠে ডাকিতেছে। অন্ধের শয়নগৃহে যতক্ষণ আমি একলা থাকি ততক্ষণ প্রদীপ জালানাে হয় না, পাছে শিখা লাগিয়া কাপড় ধরিয়া উঠে বা কোনাে দুর্ঘটনা হয়। আমি সেই নির্জন অন্ধকার কক্ষের মধ্যে মাটিতে বসিয়া দুই হাত জুড়িয়া আমার অনন্ত অন্ধজগতের জগদীশ্বরকে ডাকিতেছিলাম; বলিতেছিলাম, “প্রভু, তােমার দয়া যখন অনুভব হয় না, তােমার অভিপ্রায় যখন বুঝি না, তখন এই অনাথ ভগ্ন হৃদয়ের হালটাকে প্রাণপণে দুই হাতে বক্ষে চাপিয়া ধরি; বুক দিয়া রক্ত বাহির হইয়া যায় তবু তুফান সামলাইতে পারি না; আমার আর কত পরীক্ষা করিবে, আমার কতটুকুই-বা বল।” এই বলিতে বলিতে অশ্রু উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল, খাটের উপর মাথা রাখিয়া কাঁদিতে লাগিলাম। সমস্ত দিন ঘরের কাজ করিতে হয়। হেমাঙ্গিনী ছায়ার মতাে কাছে কাছে থাকে, বুকের ভিতরে যে অশ্রু ভরিয়া উঠে সে আর ফেলিবার অবসর পাই না; অনেকদিন পরে আজ চোখের জল বাহির হইল, এমন সময় দেখিলাম, খাট একটু নড়িল, মানুষ-চলার উস্‌খুস্ শব্দ হইল এবং মুহূর্তপরে হেমাঙ্গিনী আসিয়া আমার গলা জড়াইয়া ধরিয়া নিঃশব্দে অঞ্চল দিয়া আমার চোখ মুছাইয়া দিতে লাগিল। সে যে সন্ধ্যার আরম্ভে কী ভাবিয়া কখন আসিয়া খাটেই শুইয়াছিল, আমি জানিতে পারি নাই। সে একটি প্রশ্নও করিল না, আমিও তাহাকে কোনাে কথাই বলিলাম না। সে ধীরে ধীরে তাহার শীতল হস্ত আমার ললাটে বুলাইয়া দিতে লাগিল। ইতিমধ্যে কখন মেঘগর্জন এবং মুষলধারে বর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে একটা ঝড় হইয়া গেল বুঝিতেই পারিলাম না; বহুকাল পরে একটি সুস্নিগধ শান্তি আসিয়া আমার জ্বরদাহদগ্ধ হদয়কে জুড়াইয়া দিল।
দটিদান 8పిపి

মধ্যে পরস্পরকে ল্যাকুল উধৰকণ্ঠে ডাকিতেছে। অন্ধের শয়নগহে যতক্ষণ আমি একলা থাকি ততক্ষণ প্রদীপ জালানো হয় না, পাছে শিখা লাগিয়া কাপড় ধরিয়া উঠে বা কোনো দীঘটনা হয়। আমি সেই নিজন অন্ধকার কক্ষের মধ্যে মাটিতে বসিয়া দুই হাত জড়িয়া আমার অনন্ত অন্ধজগতের জগদীশ্বরকে ডাকিতেছিলাম; বলিতেছিলাম, “প্রভু, তোমার দয়া যখন অনুভব হয় না, তোমার অভিপ্রায় যখন বুঝি না, তখন এই অনাথ ভগন হািদয়ের হালটাকে প্রাণপণে দুই হাতে বক্ষে চাপিয়া ধরি; বকে দিয়া রন্ত বাহির হইয়া যায় তব তুফান সামলাইতে পারি না; আমার আর কত পরীক্ষা করিবে, আমার কতটুকুই-বা বল।” এই বলিতে বলিতে অশ্র উচ্ছসিত হইয়া উঠিল, খাটের উপর মাথা রাখিয়া কাঁদিতে লাগিলাম। সমস্ত দিন ঘরের কাজ করিতে হয় । হেমাঙ্গিনী ছায়ার মতো কাছে কাছে থাকে, বকের ভিতরে যে আশ্রয় ভরিয়া উঠে সে আর ফেলিবার অবসর পাই না; অনেকদিন পরে আজ চোখের জল বাহির হইল, এমন সময় দেখিলাম, খাট একটা নড়িল, মানুষ-চলার উসখাস শব্দ হইল এবং মাহত পরে হেমাঙ্গিনী আসিয়া আমার গলা জড়াইয়া ধরিয়া নিঃশব্দে অঞ্চল দিয়া আমার চোখ মছাইয়া দিতে লাগিল। সে যে সন্ধ্যার আরম্ভে কী ভাবিয়া কখন আসিয়া খাটেই শুইয়াছিল, আমি জানিতে পারি নাই। সে একটি প্রশনও করিল না, আমিও তাহাকে কোনো কথাই বলিলাম না। সে ধীরে ধীরে তাহার শীতল হস্ত আমার ললাটে বলাইয়া দিতে লাগিল। ইতিমধ্যে কখন মেঘগজন এবং মনুষলধারে বর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে একটা ঝড় হইয়া গেল বুঝিতেই পারিলাম না; বহুকাল পরে একটি সমিগধ শান্তি আসিয়া আমার জবরদাহদগধ হৃদয়কে জড়াইয়া দিল
পরদিন হেমাঙ্গিনী কহিল, “কাকি, তুমি যদি বাড়ি না যাও আমি আমার কৈবতদাদার সঙ্গে চলিলাম, তাহা বলিয়া রাখিতেছি।” পিসিমা কহিলেন, “তাহাতে কাজ কী, আমিও কাল যাইতেছি; একসঙ্গেই যাওয়া হইবে। এই দেখ হিম, আমার অবিনাশ তোর জন্যে কেমন একটি মন্তা-দেওয়া আংটি কিনিয়া দিয়াছে।” বলিয়া সগবে পিসিমা আংটি হেমাঙ্গিনীর হাতে দিলেন। হেমাঙ্গিনী কহিল, “এই দেখো কাকি, আমি কেমন সন্দের লক্ষ্য করিতে পারি।" বলিয়া জানালা হইতে তাক করিয়া আংটি খিড়কি-পুকুরের মাঝখানে ফেলিয়া দিল। পিসিমা রাগে দুঃখে বিসময়ে কণ্টকিত হইয়া উঠিলেন। আমাকে বার-বার করিয়া হাতে ধরিয়া বলিয়া দিলেন, “বউমা, এই ছেলেমানষির কথা অবিনাশকে খবরদার বলিয়ো না; ছেলে আমার তাহা হইলে মনে দুঃখ পাইবে। মাথা খাও, বউমা !" আমি কহিলাম, “আর বলিতে হইবে না পিসিমা, আমি কোনো কথাই বলিব না।”
{{gap}}পরদিন হেমাঙ্গিনী কহিল, “কাকি, তুমি যদি বাড়ি না যাও আমি আমার কৈবর্ত-দাদার সঙ্গে চলিলাম, তাহা বলিয়া রাখিতেছি।” পিসিমা কহিলেন, “তাহাতে কাজ কী, আমিও কাল যাইতেছি; একসঙ্গেই যাওয়া হইবে। এই দেখ হিমু, আমার অবিনাশ তাের জন্যে কেমন একটি মুক্তা-দেওয়া আংটি কিনিয়া দিয়াছে।” বলিয়া সগর্বে পিসিমা আংটি হেমাঙ্গিনীর হাতে দিলেন। হেমাঙ্গিনী কহিল, “এই দেখাে কাকি, আমি কেমন সুন্দর লক্ষ্য করিতে পারি।” বলিয়া জানালা হইতে তাক করিয়া আংটি খিড়কি-পুকুরের মাঝখানে ফেলিয়া দিল। পিসিমা রাগে দুঃখে বিস্ময়ে কণ্টকিত হইয়া উঠিলেন। আমাকে বারবার করিয়া হাতে ধরিয়া বলিয়া দিলেন, “বউমা, এই ছেলেমানুষির কথা অবিনাশকে খবরদার বলিয়াে না; ছেলে আমার তাহা হইলে মনে দুঃখ পাইবে। মাথা খাও, বউমা?” আমি কহিলাম, “আর বলিতে হইবে না পিসিমা, আমি কোনাে কথাই বলিব না।”

মনে রাখিস।” আমি দই হাত বারবার তাহার মাখে বলাইয়া কহিলাম, “অন্ধ কিছ: ভোলে না, বোন; আমার তো জগৎ নাই, আমি কেবল মন লইয়াই অাছি।” বলিয়া তাহার মাথাটা লইয়া একবার আঘ্ৰাণ করিয়া চুম্বন করিলাম। ঝরঝর করিয়া তাহার কেশরাশির মধ্যে আমার আশ্র; ঝরিয়া পড়িল।
{{gap}}পরদিন যাত্রার পূর্বে হেমাঙ্গিনী আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “দিদি, আমাকে মনে রাখিস।” আমি দুই হাত বারম্বার তাহার মুখে বুলাইয়া কহিলাম, “অন্ধ কিছু ভােলে না, বােন; আমার তাে জগৎ নাই, আমি কেবল মন লইয়াই আছি।” বলিয়া তাহার মাথাটা লইয়া একবার আঘ্রাণ করিয়া চুম্বন করিলাম। ঝর্‌ঝর্ করিয়া তাহার কেশরাশির মধ্যে আমার অশ্রু ঝরিয়া পড়িল।
হেমাঙ্গিনী বিদায় লইলে আমার পথিবীটা শাক হইয়া গেল—সে আমার প্রাণের মধ্যে যে সৌগন্ধ্য সৌন্দয সংগীত, ষে উজ্জল আলো এবং যে কোমল তরণেতা আনিয়াছিল তাহা চলিয়া গেলে একবার আমার সমস্ত সংসার, আমার চারি দিকে,

{{gap}}হেমাঙ্গিনী বিদায় লইলে আমার পৃথিবীটা শুষ্ক হইয়া গেল—সে আমার প্রাণের মধ্যে যে সৌগন্ধ্য সৌন্দর্য সংগীত, যে উজ্জ্বল আলাে এবং যে কোমল তরুণতা আনিয়াছিল তাহা চলিয়া গেলে একবার আমার সমস্ত সংসার, আমার চারি দিকে,