লেখক:রামগতি ন্যায়রত্ন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬ নং লাইন:
}}
 
=='''পন্ডিত রামগতি ন্যায়রত্ন'''==
==সাহিত্যকর্ম==
 
ঊনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যাকাশের উজ্বল নক্ষত্র। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সচেতক তথা গ্রন্থকার '''পন্ডিত রামগতি ন্যায়র।'''
 
 
 
 
 
বাংলার এক বিস্মৃতপ্রায়
 
বঙ্গমনীষী পন্ডিত রামগতি ন্যায়রত্ন
 
ঊনবিংশ শতাব্দীর মা রত্নগর্ভা। এই শতাব্দীর প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁরই দীক্ষিত শিষ্যদের মধ্যে একজন রামগতি বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত কলেজ থেকে বিশিষ্ট বিদ্যার্জনের পর ' ন্যায়রত্ন' উপাধি তে ভূষিত হয়ে সমসাময়িক কালে যিনি রামগতি ন্যায়রত্ন নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন।
 
'এডুকেশন গেজেট' পত্রিকার সম্পাদক তথা প্রখ্যাত গ্রন্থকার, শিক্ষাবিদ সম্মানণীয়  ভূদেব মুখোপাধ্যায় যাহার সম্পর্কে উক্তি করেছেন   ঃ- 'যিনি বস্ত্তুতত্ত্ববিৎ,  ইতিবৃত্ত লেখক, বৈয়াকরণ, নাট্যকার, কাদম্বরীয় ধরণের উপন্যাসের রচয়িতা তিনি একখানা ইংরাজি ধরণের নোবেল লিখিবেন সে কিছু তাঁহার পক্ষে দুরূহ নহে"।
 
এছাড়াও "বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ"-এর অন্যতম প্রধাণ সদস্য, ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদক, বহু ভাষাবিদ পন্ডিত অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ যাহার সম্পর্কে বলেছেন - " যতদিন বাঙ্গালা ভাষা থাকিবে তাঁহার প্রণীত "বাঙ্গলা ভাষা ও বাঙ্গলা সাহিত্য বিষায়ক প্রস্তাব " তাঁহাকে  অমর করিয়া রাখিবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেই তিনি উপেক্ষিত, বিস্মৃত।
 
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগৎ যতই  আপন গরিমায় গর্বিত হোক না কেন, এই মহান সাহিত্যস্রষ্টা কে উপেক্ষা করে,সে কর্তব্য বিচ্যুত হয়েছে।
 
হুগলী জেলার পান্ডুয়ার অধিনস্থ ইলছোবা নমক এক গন্ডগ্রামে ১২৩৮ সালের ২১ শে আষাঢ় (ইং-১৮৩১খ্রীষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই) কৃষ্ণ পক্ষের দশমী, সোমবার শিক্ষাব্রতী এই মহাপুরুষের জন্মলাভ হয়।
 
ন্যায়রত্ন মহাশয় তাঁর "চন্ডী" র কাব্যানুবাদ গ্রন্থে নিজ পরিচয় দিয়েছেন এইরূপ ঃ-
 
"হুগলীর সন্নিহিত ইলছোবাগ্রাম,
 
তাহে নিবসতি বিপ্র রামগতি নাম।
 
বিপ্রকূল চুঁড়ামণি হলধরাত্মজ,
 
অপ্সরা-অপস্পরাসমা দেবীর গর্ভজ।
 
মার্কন্ডেয় পূরাণের মধ্যে  অবস্থিত,
 
দেবীর মাহাত্ম্য চন্ডী নামে সুবিদিত।"
 
রামগতির পিতা  হলধর চূঁড়ামণি ছিলেন সংস্কতজ্ঞ ব্রাহ্মণ। লক্ষীর কৃপা লাভ না করলেও, তিনি ছিলেন সরস্বতী র উপাসক। গ্রামস্থ চতুষ্পাঠী ও যজমানী পূজার যৎ সামান্য আয় থেকেই তাঁর পরিবারের ভরণপোষণ নির্বাহিত হত।
 
রামগতি ব্যাতিত চূঁড়ামণি মহাশয়ের হিমনন্দিনী, কৃতার্থময়ী, নিস্তারিণী ও বিনোদিনী নামক চার কন্যা ছিল।
 
রামগতি বাল্যকাল থেকেই শান্তশিষ্ট,  বুদ্ধিমান ও মেধাবী হওয়ায় পিতার খুব প্রিয় এবং সংসারের অর্থনৈতিক ক্লেশ মোচনের আশা ভরসা হয়ে উঠেছিলেন।  সেই কারনেই পিতার কাছে তিনি "গতি" নামেই সম্বোধিত হতেন।
 
গ্রাম্য পাঠশালায় প্রাথমিক পাঠ সমাপন করে, উচ্চতর বিদ্যালাভের অভিলাষে পিতার অনুমতিক্রমে ১৮৪৪খ্রীষ্টাব্দে মাত্র তের বছর বয়সে রামগতি ভর্ত্তি হন কলিকাতাস্থিত বিখ্যাত "সংস্কৃত কলেজ" এ।
 
সেকালে সংস্কৃত কলেজে তাঁর ন্যায় মেধাবী ছাত্র খুব কমই ছিল।
 
১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে তিনি প্রথমবার জুনিয়র ছাত্রবৃত্তি পরিক্ষা দেন ও ৮টাকা মাসিক বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৫১খ্রীষ্টাব্দে তিনি প্রথমবার সিনিয়র বৃত্তি পরিক্ষা দেন ও ২০টাকা বৃত্তি লাভ করেন এই বৃত্তি পরিক্ষায় পরিক্ষক ছিলেন জি.টি.মার্শেল সাহেব। তিনি মন্তব্য করেন ঃ-
 
Among the student, special paraise is due to Ram Kamal Sharama(1st) and Ramgati Sharma of the senior Dept. Ramgati Sharma gave, on the occasion,  his first enamination in the senior Dept. and yet he stands second in the list........(General report on public Instreuction for 1850 - 51)
 
১৮৫৪-৫৫ খ্রীষ্টাব্দের শিক্ষা  বিষয়ক সরকারি রিপোর্ট পাঠে জানা যায়, ১৮৫৪-৫৫ খ্রীষ্টাব্দে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পরিক্ষা দিয়ে রামগতি প্রতিবারই ১৬টাকা সিনিয়র ছাত্রবৃত্তি পুনঃপ্রাপ্ত হন। এই রিপোর্ট পাঠে আরও প্রকাশ থাকেঃ-
 
Ram kamal Bhattacherjee and Girish Chandra Mukherjee  of the 1st class Shom Nath Mukherjee of the 2nd class and Ramgati Banerjee of the 3rd class,  desire special notice, of these again Ram Kamal and Ramgati Banerjee of the 3rd class, desire special notice, of these again Ram kamal and Ramgati stand preeminently  superior having attained great success in every branch of respective studies.
 
প্রতি পরিক্ষাতেই পরিক্ষকেরা নিজেদের লিখিত মন্তব্যে বিশেষভাবে প্রশংসা করতেন রামগতির। যে যে অধ্যাপকের কাছে তিনি অধ্যয়ন করেছেন, সকলেই তাঁর বিদ্যা, বুদ্ধি ও স্বভাব,চরিত্রের জন্য তাঁর প্রতি বিশেষ প্রীত হতেন এবং স্নেহ করতেন।
 
সংস্কৃত কলেজে দীর্ঘকাল  অধ্যায়ণ  করার পর ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর "ন্যায়রত্ন" উপাধি প্রাপ্ত হয়। এই সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
 
বিদ্যাসাগর মহাশয় রামগতি কে বড়ই স্নেহ করতেন। তিনি চেয়েছিলেন গভর্ণমেন্টে লিখে রামগতির জন্য কলেজে দু বছর বাড়িয়ে, সংস্কৃতের ন্যায় ইংরাজী বিদ্যায়ও তাঁকে পারদর্শী ও অধিক শিক্ষিত করে তুলবেন। কিন্তু সাংসারিক অভাব অনটন হেতু রামগতি, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই হিতকর প্রস্তাবে সম্মত হতে পারলেন না।
 
তিনি শিক্ষাগুরু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষাকতা কার্যে প্রবেশ করলেন।
 
১৮৫৬খ্রীষ্টাব্দে হুগলী নর্ম্মাল বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শিক্ষকের প্রয়োজন হলে, উক্ত পদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যুচ্চ উপাধিধারীরাও অনেকে আবেদন করেন।  কিন্তু ১৮৫৬খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে আগষ্ট মাসিক ৫০টাকা বেতনে রামগতিকেই উক্ত পদে নিযুক্ত করা হয়। এখান থেকেই সূচনা হয় রামগতি ন্যায়রত্নের কর্ম জীবন।
 
এই জীবনেই তাঁর শ্রেষ্ঠ বন্ধু লাভ হয়। বন্ধুটি আর কেউ নন, "হিন্দু কলেজ"-এর বিখ্যাত ছাত্র, মাইকেল মধুসূদনের সহপাঠী  শিক্ষাবিদ  ভূদেব মুখোপাধ্যায়  তিনি তখন হুগলী নর্ম্মালের প্রধাণ শিক্ষক।
 
উক্ত শিক্ষকদ্বয়ের সমন্বয়ে হুগলী নর্ম্মাল সেই সময় বঙ্গদেশে শিক্ষার আলোক প্রদায়ি নক্ষত্র  হিসাবে পরিগণিত হত। ১৮৫৭খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে রেভাঃ জেমস্ লং সাহেব দুদিনের জন্য চুঁচুড়ায় এসেছিলেন, হুগলী নর্ম্মাল বিদ্যালয়ের সুপরিচালনা সম্পর্কে বাংলার তদানিন্তন  লেঃ গভর্ণর কে এক উৎকৃষ্ট প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন। এছাড়া বঙ্গের শিক্ষাধিকারিকের  ১৮৬১-৬২ খ্রীষ্টাব্দের বিবরণী তে জানাযায় কলিকাতা, হুগলী ও ঢাকা এই তিন স্থানের নর্ম্মাল স্কুলের মধ্যে হুগলী নর্ম্মাল এর প্রথম শ্রেণীর ফলই সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট।
 
প্রথম অবস্থায় হুগলী নর্ম্মালে উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক না থাকায়, উন্নত বিদ্যালাভের জন্য ভূদেব বাবুর অনুরোধে ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদেশানুক্রমে  রামগতি পাঠ্য পুস্তক রচনায় হাত দেন।
 
নর্ম্মাল বিদ্যালয়ে অবস্থান কালেই তিনি রচনা করলেন " কলিকাতার প্রাচীন দূর্গ এবং অন্ধকূপ হত্যার ইতিহাস" ১৮৫৮,(কলিকাতার প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ), ১৮৫৮খ্রীষ্টাব্দে রচনা করলেন বস্ত্তুবিচার (পদার্থ বিজ্ঞানের উপর বাংলায় প্রথম পাঠ্যপুস্তক, বাল্যকালে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঠ্যপুস্তক ছিল)১৮৫৯খ্রীষ্টাব্দে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদেশে বাঙ্গলার ইতিহাস ১মভাগ। এছাড়া রচনা করলেন রোমাবতী(১৮৬) নামক উপন্যাস।
 
হুগলী নর্ম্মাল থেকে ১৮৬২খ্রীষ্টাব্দে রামগতি বদলী হয়ে চলে যান 'লাকুড্ডি' গুরুট্রেনিং স্কুল বর্দ্ধমানে। সেখানে তিনি প্রধান শিক্ষকের আসন গ্রহণ করেন এবং বেতন হয় ১০০টাকা।
 
লাকুড্ডি গুরুট্রেনিং স্কুলে থাকাকালিন তিনি রচনা করেন 'ভারতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস(১৮৬৫),
 
১৮৬৫ র ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের কার্যভার দায়িত্বশীল ভাবে পালন করেন।
 
মাত্র এই ন বছরের মধ্যেই শিক্ষকতা কার্যে রামগতি বিশেষ পারদর্শিতা র প্রমাণ রেখেছিলেন।
 
১৮৬৫খ্রীষ্টাব্দের ১৩ই ফেব্রুয়ারী মাসিক ১৫০টাকা বেতনে রামগতি যোগদান করেন বহরমপুর স্থিত রাজকীয় কলেজে (বর্তমান কৃষ্ণনাথ কলেজ)। দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি এই কলেজেই সংকৃতাধ্যাপক রূপে কার্য করেন।
 
তদকালে বহরমপুর সাহিত্যের নন্দন-কানন। বঙ্গের সেরা বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকদের মিলনস্থল। কে নেই? ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রামদাস সেন,রেভারেন্ড লালবিহারী দে, রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়,  দীনবন্ধু মিত্র, লোহারাম শিররত্ন, গঙ্গাচরণ সরকার,  অক্ষয়চন্দ্র সরকার, বৈকুন্ঠনাথ সেন,  তারাপদ চট্টোপাধ্যায়, দীননাথ গঙ্গোপাধ্যায়,  গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়,  রমেশচন্দ্র দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র ও রামগতি ন্যায়রত্নের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বহরমপুর তখন জ্বল জ্বল করছে।
 
স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তদকালে বহরমপুর কলেজে অধ্যাপক  ছিলেন। তিনি স্কুলের ছাত্রের ন্যায় পন্ডিত রামগতি ন্যায়রত্নের কাছে সংস্কৃতের বিদ্যালাভ করতেন। এবং প্রকৃত গুরুর ন্যায়ই তিনি, ন্যায়রত্ন মহাশয় কে শ্রদ্ধা করতেন।
 
বহরমপুরে থাকাকালীনই ন্যায়রত্ন মহাশয়ের সাহিত্য-সাধনার সিদ্ধিলাভ ঘটে। এখানে থাকাকালীন ই, "বাঙ্গলা ব্যাকরণ "(১৮৬৯), " ঋজুব্যাখ্যা"(১৮৬৯), "শিশুপাঠ" (১৮৬৮), "ভারতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস" (১৮৭৫) প্রভৃতি পাঠ্যপুস্তকের সাথে সাথে রচনা করন, বৈঠকি গল্পের দৃষ্টান্তমূলক গ্রন্থ " গোষ্ঠীকথা"(১৮৭৭), "কূপিত কৌশিক" (১৮৭৮), "দময়ন্তী " (১৮৬৯), "চন্ডী" (১৮৭২) বাংলায় কাব্যানুবাদ রচনার সাথে নিয়োজিত ছিলেন "বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস" সন্ধানে। বহুপ্রাচীন পুঁথিপত্র সংগ্রহ করে, বহু অনুসন্ধান চালিয়ে, বহরমপুরের কৃতবিদ্য ব্যক্তি ছাত্রসম রামদাস সেনের পাঠাগারে অধিক সময় ব্যয় করে বহরমপুর অবস্থান কালিনই তিনি রচনা করলেন, বাংলা সাহিত্য জগৎ এ তাঁর প্রধানতম কীর্তিস্তম্ভ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম প্রামাণিক ইতিহাস গ্রন্থ "বাঙ্গলা ভাষা ও বাঙ্গলা সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব" (১৮৭৩)।
 
এই গ্রন্থখানি রচনা কালে ন্যায়রত্ন মহাশয় কে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। এর পূর্বে কোনোও গ্রন্থকার এধরণের এধরণের গ্রন্থ রচনা করেনি। এই গ্রন্থটিই ন্যায়রত্ন মহাশয় কে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার প্রথম পথিকৃতের সম্মান দিয়েছেন। আর সকল রচনা বাদ দিলেও শুধুমাত্র এই একটি গ্রন্থের মাধ্যমেই রামগতি ন্যায়রত্ন বাংলা সাহিত্যাকাশে চিরস্মরণীয় ব্যক্তি হিসাবে বিরাজ করবে।
 
ভাষার উৎপত্তি থেকে সাহিত্য রচনার  উৎপত্তি কিভাবে ঘটেছিল? ন্যায়রত্ন মহাশয় তা,গ্রন্থটির প্রথমার্ধেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন যথা, আাদি, মধ্য এবং ইদানিন্তনকাল।পরবর্তীতে যাঁরাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেছেন, সকলেই ন্যায়রত্ন মহাশয়ের সুত্রকেই প্রধাণ অবলম্বন করেছেন।
 
বহরমপুরে দীর্ঘ ১৪ বছর শিক্ষকতার কার্য করে ১৮৭৯ খ্রীষ্টাব্দের বন্ধুবর ভূদেবের ডাকে ফিরে আসেন হুগলী নর্ম্মাল স্কুলে। সেখানে তিনি প্রধাণ শিক্ষকের কার্য্যাভার গ্রহণ করেন এবং এখান থেকেই  ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দের ১ লা জুলাই সরকারী কার্য্যভার থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
 
এরই মধ্যে তিনি "নীতিপথ" (১৮৮১),"রামচরিত"(১৮৮০) পরিণত ও প্রজ্ঞ বয়সে স্বীয় জন্মভূমি ইলছোবা গ্রাম নিয়ে ইতিহাস মিশ্রিত এক উপন্যাস "ইলছোবা" (১৮৮৮) রচনা করেন।
 
রামগতি ন্যায়রত্ন শুধুমাত্র গ্রন্থ রচনার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বহরমপুরে থাকাকালীন ই তিনি দায়িত্ব
 
সহকারে 'অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট 'এর পদও সামলেছেন।এছারা শিক্ষাগুরু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদর্শে সমাজ সংস্কারের বিভিন্নকার্যেও তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বিধবা বিবাহে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে সহমত জ্ঞাপন করা থেকে, নিজ গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন, ডাকঘর স্থাপন, চিকিৎসালয় স্থাপন, খন্যান ষ্টশন থেকে ইলছোবা প্রর্যন্ত রাস্তা নির্ম্মাণ। বহরমপুরে থাকাকালিন আজিমগঞ্জ  থেকে সৌদাবাদ রেল লাইন সম্প্রসারণ এবং বহরমপুর কলেজের ছাত্রাবাস নির্ম্মাণ তাঁর সামাজিক কার্যের অন্যতম পরিচয়।
 
সরকারী কর্মজীবনের অবসর গ্রহণের দিন থেকে ৩ বছর ২মাস পেনশন ভেগের পর ১৮৯৪খ্রীষ্টাব্দের ৯ই অক্টোবর(১৩০১সালের২৪আশ্বিন) বিজয়া দশমীর দিন চুঁচুড়া র বড়বাজারস্থিত বসতবাটীতে কর্মব্যস্ত, শিক্ষাব্রতী এই মহামানবের জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।  
 
বিস্মৃতির অতলে এই শিক্ষাদরদী, সমাজ সংস্কারক, বঙ্গ মনীষীর এখনো কোথাও জন্মদিন অথবা মৃত্যুদিনের স্মরণ অনুষ্ঠান চোখে পড়ে না। না সরকারি পর্যায়ে, না বিদ্যানিকেতনের কোনো অনুষ্ঠানে।
 
অথচ বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস রচনার গৌরবমাল্য, মহাকাল তাঁর কন্ঠেই অর্পণ করে গেছে। আমাদের পক্ষ  থেকে একটি ফুলের মালাও কি দেওয়া যায় না? আমরা কি আত্মবিস্মৃত হয়েই থাকব?
 
* বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব