ব্যবহারকারী:Jayantanth/book/Oldbook: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৭৭ নং লাইন:
 
[[নওয়াজিশ খাঁ|নওয়াজিশ খাঁ]], [[কমর আলী|কমর আলী]], [[মঙ্গল (চাঁদ)|মঙ্গল]], [[আবদুন নবী|আবদুন নবী]], [[মুহম্মদ ফসীহ|মুহম্মদ ফসীহ]], [[ফকির গরীবুল্লাহ্|ফকির গরীবুল্লাহ্]], মুহম্মদ ইয়াকুব, শেখ মনসুর, শেখ চাঁদ, মুহম্মদ উজীর আলী, শেখ সাদী, হেয়াত মামুদ প্রমুখ। সৈয়দ সুলতানের নবীবংশ, মুহম্মদ খানের মকতুল হোসেন এবং শেখ চাঁদের রসুলবিজয়কে ইসলামি পুরাণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
 
 
==আরাকান বাংলা সাহিত্য==
আরাকানে বাংলা সাহিত্য মধ্যযুগের অন্তিম পর্বে বঙ্গদেশের সীমান্তবর্তী স্বাধীন ও অর্ধস্বাধীন রাজাদের রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য চর্চা হয়। উত্তরবঙ্গের কামতা-কামরূপের (অর্থাৎ কোচ রাজবংশের) রাজসভা, পূর্ববঙ্গের ত্রিপুরা ও আরাকানের (রোসাঙ্গ) রাজসভা এবং পশ্চিমবঙ্গে মল্লভূম-ধলভূমের রাজসভায় বাংলা ভাষায় বিবিধ কাব্যধারার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আরাকানি ধারা বিশিষ্ট। ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের করদ রাজ্যে পরিণত হওয়ার পর থেকে ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আরাকানি রাজগণ বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিদ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য উল্লেখযোগ্যভাবে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। এর পশ্চাতে সেখানকার বাংলাভাষী সভাসদ ও বিদ্বজ্জনদেরও অবদান ছিল। আরাকান রাজসভাতেই বাংলা ভাষার প্রথম মানবীয় প্রণয়কাব্য রচিত হয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাই আরাকান রাজসভার নাম সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
 
আরাকান রাজসভার উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় যাঁরা কাব্যচর্চা করেন তাঁদের মধ্যে দৌলত কাজী (আনু. ১৬০০-১৬৩৮) প্রাচীনতম। তাঁর সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী প্রথম মানবীয় প্রণয়কাব্য। তিনি এ কাব্যের রচনা শুরু করেন, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি; শেষ করেন আলাওল (আনু. ১৬০৭-১৬৮০)। এর মূল কাহিনী আওধী (গোহারি) ভাষায় উত্তর ভারতে প্রচলিত ছিল। কাব্যটি তিন খন্ডে বিভক্ত। এতে কবির অসাধারণ কবিত্বশক্তি ও সৌন্দর্যবোধ ফুটে উঠেছে। বৈষ্ণব পদাবলির ঢঙে তিনি নববর্ষার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বাংলা ‘বারমাস্যার’ একঘেয়েমির ক্ষেত্রে এক অপূর্ব ব্যতিক্রম।
 
বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে আলাওল সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাঁর মতো বহুগ্রন্থ প্রণেতা ও পন্ডিত কবি মধ্যযুগে বিরল। তিনি আরাকানের প্রধানমন্ত্রী কোরেশী মাগন ঠাকুরের (আনু. ১৬০০-১৬৬০) আশ্রয়ে থেকে কাব্যচর্চা শুরু করেন। পরবর্তী জীবনেও তিনি বহু সভাসদের অনুগ্রহে কাব্যসাধনা করেন। এ যাবৎ তাঁর যে পাঁচটি কাব্য পাওয়া গেছে তন্মধ্যে পদ্মাবতী শ্রেষ্ঠ। এটি হিন্দি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সীর পদুমাবত (১৬৫১) অবলম্বনে রচিত হলেও মৌলিকতার কারণে পাঠকনন্দিত। তাঁর অপর চারটি কাব্যও অনুবাদমূলক এবং সেগুলি হলো হপ্তপয়কর, তোহফা, সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল ও সিকান্দরনামা। এগুলি ছাড়া আলাওল কিছু পদাবলি ও গানও রচনা করেন। তাঁর কাব্যে মানবপ্রেম ও অধ্যাত্মপ্রেম দুয়েরই মিলন ঘটেছে।
 
আরাকানের অন্যান্য কবি হচ্ছেন মরদন (আনু. ১৬০০-১৬৪৫), মাগন ঠাকুর প্রমুখ। মরদনের কাব্যের নাম নসীরনামা এবং মাগন ঠাকুরের কাব্যের নাম চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী একটি কাহিনীকাব্য এবং রূপকথা শ্রেণির অন্তর্গত। আবদুল করীম খোন্দকার ছিলেন আলাওল পরবর্তী শক্তিশালী কবি। দুল্লা মজলিস (ফারসি গ্রন্থের ভাবানুবাদ) নামে তাঁর একটি গ্রন্থ পাওয়া গেছে, যার রচনাকাল ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দ বলে ধরা হয়। এর আগে তিনি হাজার মসায়েল ও তমিম আনসারী নামে আরও দুটি কাব্য রচনা করেন বলে মনে করা হয়। তাঁর কাব্যগুলি ইসলাম ধর্মীয়।
 
==অন্ত্য-মধ্যযুগ ==
 
এ সময়টা নানা দিক থেকে বাংলার অবক্ষয় যুগ এবং রাজনৈতিক দিক থেকে নবাবি আমল হিসেবে চিহ্নিত। এ সময় মুগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়, বাংলার নবাবদের উত্থান-পতন, ইউরোপীয় বেনিয়া শক্তির আগ্রাসন এবং কোম্পানি আমলের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে সাহিত্য সৃষ্টির স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশী যুদ্ধের পর থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সাহিত্য ক্ষেত্রে নবাবি আমলেরই জের চলতে থাকে। এ যুগেও তাই হিন্দু পৌরাণিক ও ইসলামি ভাবসমৃদ্ধ পদাবলি, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ ইত্যাদি সাহিত্যের ধারা অব্যাহত থাকে।
 
===পদাবলি===
আঠারো শতকে যাঁরা পদ রচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: নরহরি চক্রবর্তী, নটবর দাস, দীনবন্ধু দাস, চন্দ্রশেখর-শশিশেখর ও জগদানন্দ। এঁদের পদে অর্থ ও ভাবের বদলে চটুল ছন্দোবৈচিত্র্য বা ঝঙ্কারের প্রাধান্যই বেশি। বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর ক্ষণদাগীতচিন্তামণি এ সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য পদাবলি গ্রন্থ।
 
===রামায়ণমূলক রচনা===
 
এ সময় ‘রায়বার’ নামে এক বিশিষ্ট ধারার সাহিত্য সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা রাজদ্বার বা রাজস্ত্ততিকে বোঝাতো। এগুলি প্রকৃতপক্ষে রাজসভার স্থূল ও মুখরোচক কথোপকথন, যাকে পরবর্তীকালের খেউড়-তরজার পূর্বরূপ বলা চলে। আরেকটি ধারা হলো তরণীসেনের যুদ্ধ উপাখ্যান, যার সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালি হিন্দুদের ভক্তিধর্মের প্রাবল্যের কারণে। এ দুটি কাহিনী তখনকার বাঙালি-উদ্ভাবনা হিসেবে স্মরণীয়। এরূপ উপাখ্যানের প্রধান রচয়িতা দ্বিজ দয়ারাম। রামানন্দ ঘোষের রামায়ণকাব্য (১৭৮০?) এবং জগৎরাম রায়ের অদ্ভুতরামায়ণও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
 
===পাঁচালি কাব্য ===
 
বিদ্যাসুন্দরের পাঁচালি বিদ্যাসুন্দর কাব্য অনেকটা রূপক বা আধ্যাত্মিক ভাবধারায় রচিত। বিদ্যাসুন্দর কাহিনীর উৎস কাশ্মীরী পন্ডিত বিহ্লনের (১২শ শতক) চৌরপঞ্চাশৎ বলে অনুমান করা হয়। এতে দেহভোগের প্রাবাল্য দেখা যায়। বাংলায় ষোলো শতকে দ্বিজ শ্রীধর ও কবি কঙ্ক এবং সতেরো শতকে গোবিন্দদাস, কৃষ্ণরাম দাস, প্রাণরাম চক্রবর্তী ও সাবিরিদ খান এ কাহিনী রচনা করেন। কাহিনীটি পরে ‘পালা’ হিসেবে কালিকামঙ্গলে যুক্ত হয়।