পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৮৬: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Md Ruhul Amin Rupu (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
+
বৈধকরণ
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
বক্তৃতার বড় জোর। সে জোর পাড়াগাঁয়ের ছেলে তিনটি হঠাৎ সামলাইতে পারিল না—ভাসিয়া গেল৷ গেল বটে, কিন্তু বনমালী এবং রাসবিহারী যেরূপ প্রকাশ্যে দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত হইল, জগদীশ সেরূপ পারিল না—ইতস্তত করিতে লাগিল। সে সর্ব্বাপেক্ষা মেধাবী বটে, কিন্তু অত্যন্ত দুর্ব্বলচিত্ত। তাহাতে তাঁহার ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত পিতা তখন জীবিত ছিলেন। কিন্তু ও দুটির সে বালাই ছিল না। কিছুকাল পূর্ব্বে পিতার পরলোক-প্রাপ্তিতে বনমালী তখন কৃষ্ণপুরের জমিদার, এবং রাসবিহারী তাহাদের রাধাপুরের সমস্ত বিষয়-আশয়ের একচ্ছত্র সম্রাট। অতএব অনতিকাল পরেই এই দুই বন্ধু ব্রাহ্ম-পরিবারে বিবাহ করিয়া বিদুষী ভার্য্যা লইয়া গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। কিন্তু দরিদ্র জগদীশের সে সুবিধা হইল না। তাহাকে যথাসময়ে আইন পাশ করিতে হইল, এবং এক গৃহস্থ-ব্রাহ্মণের এগারো বছরের কন্যাকে বিবাহ করিয়া অর্থোপার্জ্জনের নিমিত্ত এলাহাবাদে চলিয়া যাইতে হইল। কিন্তু যাঁহারা রহিলেন, তাঁহাদের যে কাজ কলিকাতায় নিতান্ত সহজ মনে হইয়াছিল, গ্রামে ফিরিয়া তাহাই একান্ত কঠিন ঠেকিল। বৌমানুষ শ্বশুরবাড়ি আসিয়া ঘোমটা দেয় না, জুতা-মোজা পরিয়া রাস্তায় বাহির হয়—তামাসা দেখিতে পাঁচখানা গ্রামের লোক ভিড় করিয়া আসিতে লাগিল; এবং গ্রাম জুড়িয়া এম‌নি একটা কদর্য্য হৈ হৈ শুরু হইয়া গেল যে একান্ত নিরুপায় না হইলে আর কেহ স্ত্রী লইয়া সেখানে বাস করিতে পারে না। বনমালীর উপায় ছিল; সুতরাং সে গ্রাম ছাড়িয়া কলিকাতায় আসিয়া বাস করিল; একমাত্র জমিদারির উপর নির্ভর না করিয়া ব্যবসা শুরু করিয়া দিল। কিন্তু রাসবিহারীর অল্প আয়। কাজেই সে নিজের পিঠের উপর একটা এবং বিদুষী ভার্য্যার পিঠের উপর একটা কুলা চাপা দিয়া কোনমতে তাহার দেশের বাটীতেই ‘একঘরে’ হইয়া বসিয়া রহিল। অতএব তিন বন্ধুর একজন এলাহাবাদে, একজন রাধাপুরে এবং আর একজন কলিকাতায় বাসা করায়, আজীবন অবিবাহিত থাকিয়া, এক বাড়িতে বাস করিয়া, এক সিন্ধুকে টাকা জমা করিয়া দেশ উদ্ধার করার প্রতিজ্ঞাটা আপাততঃ স্থগিত রহিল; এবং যে ন্যাড়া বটবৃক্ষ সাক্ষী ছিলেন, তিনি কাহারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন না করিয়া নীরবে মনে মনে বোধ করি হাসিতে লাগিলেন। এইভাবে অনেক দিন গেল। ইতিমধ্যে তিন বন্ধুর কদাচিৎ কখনও দেখা হইত বটে, কিন্তু ছেলেবেলার প্রণয়টা একেবারে তিরোহিত হইল না। জগদীশের ছেলে হইলে সে বনমালীকে সুসংবাদ দিয়া এলাহাবাদ হইতে লিখিল, ‘তোমার মেয়ে হইলে তাহাকে পুত্রবধূ করিয়া, ছেলেবেলায় যে পাপ করিয়াছি,
বক্তৃতার বড় জোর। সে জোর পাড়াগাঁয়ের ছেলে তিনটি হঠাৎ সামলাইতে পারিল না—ভাসিয়া গেল৷ গেল বটে, কিন্তু বনমালী এবং রাসবিহারী যেরূপ প্রকাশ্যে দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত হইল, জগদীশ সেরূপ পারিল না—ইতস্তত করিতে লাগিল। সে সর্ব্বাপেক্ষা মেধাবী বটে, কিন্তু অত্যন্ত দুর্ব্বলচিত্ত। তাহাতে তাঁহার ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত পিতা তখন জীবিত ছিলেন। কিন্তু ও দুটির সে বালাই ছিল না। কিছুকাল পূর্ব্বে পিতার পরলোক-প্রাপ্তিতে বনমালী তখন কৃষ্ণপুরের জমিদার, এবং রাসবিহারী তাহাদের রাধাপুরের সমস্ত বিষয়-আশয়ের একচ্ছত্র সম্রাট। অতএব অনতিকাল পরেই এই দুই বন্ধু ব্রাহ্ম-পরিবারে বিবাহ করিয়া বিদুষী ভার্য্যা লইয়া গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। কিন্তু দরিদ্র জগদীশের সে সুবিধা হইল না। তাহাকে যথাসময়ে আইন পাশ করিতে হইল, এবং এক গৃহস্থ-ব্রাহ্মণের এগারো বছরের কন্যাকে বিবাহ করিয়া অর্থোপার্জ্জনের নিমিত্ত এলাহাবাদে চলিয়া যাইতে হইল। কিন্তু যাঁহারা রহিলেন, তাঁহাদের যে কাজ কলিকাতায় নিতান্ত সহজ মনে হইয়াছিল, গ্রামে ফিরিয়া তাহাই একান্ত কঠিন ঠেকিল। বৌমানুষ শ্বশুরবাড়ি আসিয়া ঘোমটা দেয় না, জুতা-মোজা পরিয়া রাস্তায় বাহির হয়—তামাসা দেখিতে পাঁচখানা গ্রামের লোক ভিড় করিয়া আসিতে লাগিল; এবং গ্রাম জুড়িয়া এম‌নি একটা কদর্য্য হৈ হৈ শুরু হইয়া গেল যে একান্ত নিরুপায় না হইলে আর কেহ স্ত্রী লইয়া সেখানে বাস করিতে পারে না। বনমালীর উপায় ছিল; সুতরাং সে গ্রাম ছাড়িয়া কলিকাতায় আসিয়া বাস করিল; একমাত্র জমিদারির উপর নির্ভর না করিয়া ব্যবসা শুরু করিয়া দিল। কিন্তু রাসবিহারীর অল্প আয়। কাজেই সে নিজের পিঠের উপর একটা এবং বিদুষী ভার্য্যার পিঠের উপর একটা কুলা চাপা দিয়া কোনমতে তাহার দেশের বাটীতেই ‘একঘরে’ হইয়া বসিয়া রহিল। অতএব তিন বন্ধুর একজন এলাহাবাদে, একজন রাধাপুরে এবং আর একজন কলিকাতায় বাসা করায়, আজীবন অবিবাহিত থাকিয়া, এক বাড়িতে বাস করিয়া, এক সিন্ধুকে টাকা জমা করিয়া দেশ উদ্ধার করার প্রতিজ্ঞাটা আপাততঃ স্থগিত রহিল এবং যে ন্যাড়া বটবৃক্ষ সাক্ষী ছিলেন, তিনি কাহারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন না করিয়া নীরবে মনে মনে বোধ করি হাসিতে লাগিলেন। এইভাবে অনেক দিন গেল। ইতিমধ্যে তিন বন্ধুর কদাচিৎ কখনও দেখা হইত বটে, কিন্তু ছেলেবেলার প্রণয়টা একেবারে তিরোহিত হইল না। জগদীশের ছেলে হইলে সে বনমালীকে সুসংবাদ দিয়া এলাহাবাদ হইতে লিখিল, ‘তোমার মেয়ে হইলে তাহাকে পুত্রবধূ করিয়া, ছেলেবেলায় যে পাপ করিয়াছি,