মানসী/পরিত্যক্ত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Mahir256 (আলোচনা | অবদান)
Mahir256 মানসী/পরিত্যক্ত (মানসী) পাতাটিকে মানসী/পরিত্যক্ত শিরোনামে কোনো পুনর্নির্দেশনা ছাড়াই স্থানান্তর করেছেন
Mahir256 (আলোচনা | অবদান)
পাতাকে '{{শীর্ষক |শিরোনাম= ../ |টীকা = |লেখক =রবীন...' দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হল
ট্যাগ: প্রতিস্থাপিত
১ নং লাইন:
<pages index="মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu" from=2 to=2/>
 
{{শীর্ষক
|শিরোনাম= [[../]]
|আদ্যক্ষর=প
|অনুচ্ছেদ = পরিত্যক্ত
|পূর্ববর্তী = [[../কবির প্রতি নিবেদন/]]
|পরবর্তী = [[../ভৈরবী গান/]]
|টীকা =
|লেখক =রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|বছর =
|প্রবেশদ্বার =
|আদ্যক্ষর=প|অনুচ্ছেদ=পরিত্যক্ত|পূর্ববর্তী=[[../নিষ্ফল উপহার/]]|পরবর্তী=[[../ভৈরবী গান/]]}}
}}
<pages index="মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu" from=১৭৮ to=১৮৩/>
<div style="padding-left:2em;">
<poem>
বন্ধু,
মনে আছে সেই প্রথম বয়স,
নূতন বঙ্গভাষা
তোমাদের মুখে জীবন লভিছে
বহিয়া নূতন আশা।
নিমেষে নিমেষে আলোকরশ্মি
অধিক জাগিয়া উঠে,
বঙ্গহৃদয় উন্মীলি যেন
রক্তকমল ফুটে।
প্রতিদিন যেন পূর্বগগনে
চাহি রহিতাম একা,
কখন ফুটিবে তোমাদের ওই
লেখনী-অরুণ-লেখা।
তোমাদের ওই প্রভাত-আলোক
প্রাচীন তিমির নাশি
নবজাগ্রত নয়নে আনিবে
নূতন জগৎরাশি।
 
 
 
একদা জাগিনু, সহসা দেখিনু
প্রাণমন আপনার—
হৃদয়ের মাঝে জীবন জাগিছে
পরশ লভিনু তার।
ধন্য হইল মানবজনম,
ধন্য তরুণ প্রাণ—
মহৎ আশায় বাড়িল হৃদয়,
জাগিল হর্ষগান।
দাঁড়ায়ে বিশাল ধরণীর তলে
ঘুচে গেল ভয় লাজ,
বুঝিতে পারিনু এ জগৎমাঝে
আমারও রয়েছে কাজ।
স্বদেশের কাছে দাঁড়ায়ে প্রভাতে
কহিলাম জোড়করে,
‘এই লহ, মাতঃ, এ চিরজীবন
সঁপিনু তোমারি তরে।’
 
 
 
বন্ধু, এ দীন হয়েছে বাহির
তোমাদেরই কথা শুনে।
সেইদিন হতে কন্টকপথে
চলিয়াছি দিন গুনে।
পদে পদে জাগে নিন্দা ও ঘৃণা
ক্ষুদ্র অত্যাচার,
একে একে সবে পর হয়ে যায়
ছিল যারা আপনার।
ধ্রুবতারা-পানে রাখিয়া নয়ন
চলিয়াছি পথ ধরি,
সত্য বলিয়া জানিয়াছি যাহা
তাহাই পালন করি।
 
 
 
কোথা গেল সেই প্রভাতের গান,
কোথা গেল সেই আশা!
আজিকে, বন্ধু, তোমাদের মুখে
এ কেমনতর ভাষা!
আজি বলিতেছ, ‘বসে থাকো, বাপু,
ছিল যাহা তাই ভালো।
যা হবার তাহা আপনি হইবে,
কাজ কী এতই আলো!’
কলম মুছিয়া তুলিয়া রেখেছ,
বন্ধ করেছ গান,
সহসা সবাই প্রাচীন হয়েছ
নিতান্ত সাবধান।
আনন্দে যারা চলিতে চাহিছে
ছিঁড়ি অসত্যপাশ,
ঘর হতে বসি করিছ তাদের
উপহাস পরিহাস।
এত দূরে এনে ফিরিয়া দাঁড়ায়ে
হাসিছ নিঠুর হাসি,
চিরজীবনের প্রিয়তম ব্রত
চাহিছ ফেলিতে নাশি।
 
 
 
তোমরা আনিয়া প্রাণের প্রবাহ
ভেঙেছ মাটির আল,
তোমরা আবার আনিছ বঙ্গে
উজান স্রোতের কাল।
নিজের জীবন মিশায়ে যাহারে
আপনি তুলেছ গড়ি
হাসিয়া হাসিয়া আজিকে তাহারে
ভাঙিছ কেমন করি!
তবে সেই ভালো, কাজ নেই তবে,
তবে ফিরে যাওয়া যাক—
গৃহকোণে এই জীবন-আবেগ
করি বসে পরিপাক!
সানাই বাজয়ে ঘরে নিয়ে আসি
আট বরষের বধূ,
শৈশবকুঁড়ি ছিঁড়িয়া বাহির
করি যৌবনমধু!
ফুটন্ত নবজীবনের’পরে
চাপায়ে শাস্ত্রভার
জীর্ণ যুগের ধূলিসাথে তারে
করে দিই একাকার!
 
 
 
বন্ধু, এ তব বিফল চেষ্টা,
আর কি ফিরিতে পারি?
শিখরগুহায় আর ফিরে যায়
নদীর প্রবল বারি?
জীবনের স্বাদ পেয়েছি যখন,
চলেছি যখন কাজে
কেমনে আবার করিব প্রবেশ
মৃত বরষের মাঝে?
সে নবীন আশা নাইকো যদিও
তবু যাব এই পথে,
পাব না শুনিতে আশিস্‌-বচন
তোমাদের মুখ হতে।
তোমাদের ওই হৃদয় হইতে
নূতন পরান আনি
প্রতি পলে পলে আসিবে না আর
সেই আশ্বাসবাণী।
শত হৃদয়ের উৎসাহ মিলি
টানিয়া লবে না মোরে,
আপনার বলে চলিতে হইবে।
আপনার পথ ক’রে।
আকাশে চাহিব, হায়, কোথা সেই
পুরাতন শুকতারা!
তোমাদের মুখ ভ্রূকুটিকুটিল,
নয়ন আলোকহারা।
মাঝে মাঝে শুধু শুনিতে পাইব
হা-হা-হা অট্টহাসি,
শ্রান্ত হৃদয়ে আঘাত করিবে
নিঠুর বচন আসি।
ভয় নাই যার কী করিবে তার
এই প্রতিকূল স্রোতে!
তোমারি শিক্ষা করিবে রক্ষা
তোমারি বাক্য হতে।
 
</poem>
</div>