চিত্রা/ঊর্ব্বশী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Mahir256 (আলোচনা | অবদান)
Mahir256 চিত্রা/উর্বশী কে চিত্রা/ঊর্ব্বশী শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
Mahir256 (আলোচনা | অবদান)
পাতাকে '{{শীর্ষক |শিরোনাম= ../ |লেখক =রবীন্দ্রনা...' দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হল
ট্যাগ: প্রতিস্থাপিত
১ নং লাইন:
<pages index="চিত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu" from=2 to=2/>
 
{{শীর্ষক
|শিরোনাম= [[../]]
|আদ্যক্ষর=উ
|অনুচ্ছেদ = উর্বশী
|পূর্ববর্তী = [[../আবেদন/]]
|পরবর্তী = [[../স্বর্গ হইতে বিদায়/]]
|টীকা =
|লেখক =রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|টীকা =
|বছর =
|প্রবেশদ্বার =
|অনুচ্ছেদ=ঊর্ব্বশী|আদ্যক্ষর=ঊ|পূর্ববর্তী=[[../আবেদন/]]|পরবর্তী=[[../স্বর্গ হইতে বিদায়/]]}}
}}
<pages index="চিত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu" from=১০৪ fromsection="ঊর্ব্বশী" to=১০৮ tosection="ঊর্ব্বশী"/>
<div style="padding-left:2em;">
<poem>
নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ, সুন্দরী রূপসী,
হে নন্দনবাসিনী উর্বশী!
গোষ্ঠে যবে সন্ধ্যা নামে শ্রান্ত দেহে স্বর্ণাঞ্চল টানি
তুমি কোনো গৃহপ্রান্তে নাহি জ্বাল সন্ধ্যাদীপখানি,
দ্বিধায় জড়িত পদে কম্প্রবক্ষে নম্রনেত্রপাতে
স্মিতহাস্যে নাহি চল সলজ্জিত বাসরশয্যাতে
স্তব্ধ অর্ধরাতে।
উষার উদয়-সম অনবগুণ্ঠিতা
তুমি অকুণ্ঠিতা।
 
 
বৃন্তহীন পুষ্প-সম আপনাতে আপনি বিকশি
কবে তুমি ফুটিলে উর্বশী!
আদিম বসন্তপ্রাতে উঠেছিলে মন্থিত সাগরে,
ডান হাতে সুধাপাত্র বিষভাণ্ড লয়ে বাম করে,
তরঙ্গিত মহাসিন্ধু মন্ত্রশান্ত ভুজঙ্গের মতো
পড়েছিল পদপ্রান্তে উচ্ছ্বসিত ফণা লক্ষ শত
করি অবনত।
কুন্দশুভ্র নগ্নকান্তি সুরেন্দ্রবন্দিতা,
তুমি অনিন্দিতা।
 
 
কোনোকালে ছিলে না কি মুকুলিকা বালিকা-বয়সী
হে অনন্তযৌবনা উর্বশী!
আঁধার পাথারতলে কার ঘরে বসিয়া একেলা
মানিক মুকুতা লয়ে করেছিলে শৈশবের খেলা,
মণিদীপদীপ্ত কক্ষে সমুদ্রের কল্লোলসংগীতে
অকলঙ্ক হাস্যমুখে প্রবাল-পালঙ্কে ঘুমাইতে
কার অঙ্কটিতে।
যখনি জাগিলে বিশ্বে, যৌবনে গঠিতা,
পূর্ণপ্রস্ফুটিতা।
 
 
যুগযুগান্তর হতে তুমি শুধু বিশ্বের প্রেয়সী
হে অপূর্বশোভনা উর্বশী!
মুনিগণ ধ্যান ভাঙি দেয় পদে তপস্যার ফল,
তোমারি কটাক্ষঘাতে ত্রিভুবন যৌবনচঞ্চল,
তোমার মদির গন্ধ অন্ধবায়ু বহে চারি ভিতে,
মধুমত্তভৃঙ্গসম মুগ্ধ কবি ফিরে লুব্ধচিতে
উদ্দাম সংগীতে।
নূপুর গুঞ্জরি যাও আকুল-অঞ্চলা
বিদ্যুৎ-চঞ্চলা।
 
 
সুরসভাতলে যবে নৃত্য কর পুলকে উল্লসি
হে বিলোলহিল্লোল উর্বশী,
ছন্দে ছন্দে নাচি উঠে সিন্ধুমাঝে তরঙ্গের দল,
শস্যশীর্ষে শিহরিয়া কাঁপি উঠে ধরার অঞ্চল,
তব স্তনহার হতে নভস্তলে খসি পড়ে তারা--
অকস্মাৎ পুরুষের বক্ষোমাঝে চিত্ত আত্মহারা,
নাচে রক্তধারা।
দিগন্তে মেখলা তব টুটে আচম্বিতে
অয়ি অসম্‌বৃতে।
 
 
স্বর্গের উদয়াচলে মূর্তিমতী তুমি হে উষসী,
হে ভুবনমোহিনী উর্বশী!
জগতের অশ্রুধারে ধৌত তব তনুর তনিমা,
ত্রিলোকের হৃদিরক্তে আঁকা তব চরণশোণিমা।
মুক্তবেণী বিবসনে, বিকশিত বিশ্ব-বাসনার
অরবিন্দ-মাঝখানে পাদপদ্ম রেখেছ তোমার
অতি লঘুভার--
অখিল মানসস্বর্গে অনন্তরঙ্গিণী,
হে স্বপ্নসঙ্গিনী।
 
 
ওই শুন দিশে দিশে তোমা লাগি কাঁদিছে ক্রন্দসী
হে নিষ্ঠুরা বধিরা উর্বশী!
আদিযুগ পুরাতন এ জগতে ফিরিবে কি আর,
অতল অকূল হতে সিক্তকেশে উঠিবে আবার?
প্রথম সে তনুখানি দেখা দিবে প্রথম প্রভাতে
সর্বাঙ্গে কাঁদিবে তব নিখিলের নয়ন-আঘাতে
বারিবিন্দুপাতে--
অকস্মাৎ মহাম্বুধি অপূর্ব সংগীতে
রবে তরঙ্গিতে।
 
 
ফিরিবে না, ফিরিবে না-- অস্ত গেছে সে গৌরবশশী,
অস্তাচলবাসিনী উর্বশী!
তাই আজি ধরাতলে বসন্তের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে
কার চিরবিরহের দীর্ঘশ্বাস মিশে বহে আসে,
পূর্ণিমানিশীথে যবে দশ দিকে পরিপূর্ণ হাসি
দূরস্মৃতি কোথা হতে বাজায় ব্যাকুল-করা বাঁশি--
ঝরে অশ্রুরাশি।
তবু আশা জেগে থাকে প্রাণের ক্রন্দনে--
অয়ি অবন্ধনে।
 
বোট। শিলাইদহ-অভিমুখে,
২৩ অগ্রহায়ণ, ১৩০২
 
</poem>
</div>