পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৪৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
দেবীসিংহ
{{C|{{xx-larger|দেবীসিংহ }}}}

যদি কেহ অত্যাচারের বিভীষিকাময়ী মূতি দেখিতে ইচ্ছা করেন, যদি কেহ মানব প্রকৃতির মধ্যে শয়তানবৃত্তির পাপ অভিনয় দেখিতে চাহেন, তাহা হইলে তিনি একবার দেবীসিংহের বিবরণ অনুশীলন করিবেন ; দেখিবেন, সেই ভীষণ অত্যাচারে কত কত জনপদ অরণ্যে পরিণত হইয়াছে। কত কত দরিদ্র প্রজা আন্নাভাবে জীবন বিসর্জন দিয়াছে ! কত কত জমিদার ভিখারীরও অধম হইয়া দিন কাটাইয়াছে ! কুল-ললনার পবিত্রতা-হরণ, ব্রাহ্মণের জাতিনাশ, মানীর অপমান, এই সকল পৈশাচিক কাণ্ডের শত শত দৃষ্টান্ত ছত্ৰে ছত্রে দেখিতে পাইবেন । দেবীসিংহের নাম শুনিলে, আজিও উত্তরবঙ্গ প্রদেশের অধিবাসিগণ শিহরিয়া উঠে । আজিও অনেক কোমলহৃদয়া মহিলা মূছিত হইয় পড়েন । শিশুসন্তানগণ ভীত হইয়া জননীর ক্লোড়ে আশ্রয় লয় । সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এরূপ পাশব অত্যাচারের দৃষ্টান্ত অধিক নাই বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস । মানুষ হইয়া মানুষের প্রতি এরূপ নিৰ্দয় ব্যবহার কখনও সম্ভবপর কি না, তাহা আমরা স্থির করিয়া উঠিতে পারি না । সে চিত্র অঙ্কিত করিতে কম্পনা স্বয়ংই ভীত ও চকিত হইয়া উঠে। মানুষ কখনও সে চিত্র
দেখাইতে পারে না ; দেখাইতে হইলে, অমানুষী ক্ষমতার প্রয়োজন । কঠোরতায় হৃদয় না বঁধিলে, তাহার পূর্ণ চিত্র অঙ্কিত করা দুঃসাধ্য। মহামতি বার্ক ইংলণ্ডের মহাসমিতির নিকট সেই অত্যাচারকাহিনী বর্ণনা করিতে করিতে এরূপ অস্থির হইয়া উঠিয়াছিলেন যে, আর অধিক দূর অগ্রসর হইতে পারেন নাই। তথাপি তাহার সেই অবিনাশিনী বর্ণনা হইতে, আজ আমরা দেবীসিংহের পৈশাচিক চরিত্রের যে চিত্র দেখিতে পাই, তাহাতেই স্তম্ভিত হইতে হয়। তাই বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন—“পৃথিবীর ওপারে ওয়েস্টমিনিসটার হলে দাড়াইয়া,এদুন্দ বর্ক দেবীসিংহকে অমর করিয়া গিয়াছেন। পর্বোতোদগীর্ণ অগ্নিশিখাবৎ জ্বালাময় বাক্যস্রোতে বর্ক দেবীসিংহের দুবিষহ অত্যাচার অনন্তকালসমীপে পাঠাইয়াছেন । র্তাহার নিজ মুখে সে দৈববাণীতুল্য বাক্যপরম্পরা শুনিয়া, শোকে অনেক স্ত্রীলোক মূছিত হইয়া পড়িয়াছিল—আজিও শতবৎসর পরে, সেই বস্তৃতা পড়িতে গেলে, শরীর লোমাঞ্চিত ও হৃদয় উন্মত্ত হয় ।” নৃশংস দেবীসিংহের অত্যাচারে সমগ্র উত্তরবঙ্গ হাহাকারধ্বনিতে পূর্ণ হইয় উঠে। রঙ্গপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি প্রদেশ মহাশ্মশানে পরিণত হয়। কোম্পানীর রাজত্বারম্ভে বাঙ্গলাদেশে যে মূতিমতী অরাজকতা দেখা যায়, দেবীসিংহের অত্যাচার তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠস্থান অধিকার করে। অর্থলোলুপ কোম্পানীর কর্মচারিগণের বিশ্বগ্রাসিনী লালসার নিবৃত্তির জন্য এবং নিজের রাক্ষসী বৃত্তির পরিতুষ্টির জন্য, দেবীসিংহ মনুষ্যনামে কলক প্রদান করিয়াছে । ওয়ারেন হেস্টিংসের পোষকতায় তাহার অত্যাচার-স্রোত প্রতিনিয়ত শতমুখেই প্রবাহিত হইত। কাহারও সাধ্য ছিল না যে, সে স্রোতের গতি রোধ করে। হেস্টিংসের যতগুলি প্রিয়পাত্র ছিল, তাহদের মধ্যে কেহ এমন পিশাচ
{{gap}}যদি কেহ অত্যাচারের বিভীষিকাময়ী মতি দেখিতে ইচ্ছা করেন, যদি কেহ মানব প্রকৃতির মধ্যে শয়তানবৃত্তির পাপ অভিনয় দেখিতে চাহেন, তাহা হইলে তিনি একবার দেবীসিংহের বিবরণ অনুশীলন করিবেন ; দেখিবেন, সেই ভীষণ অত্যাচারে কত কত জনপদ অরণ্যে পরিণত হইয়াছে। কত কত দরিদ্র প্রজ৷ অন্নাভাবে জীবন বিসর্জন দিয়াছে! কত কত জমিদার ভিখারীরও অধম হইয়া দিন কাটাইয়াছে। কুল-ললনার পবিত্রতা-হরণ, ব্রাহ্মণের জাতিনাশ, মানীর অপমান, এই সকল পৈশাচিক কাণ্ডের শত শত দৃষ্টান্ত ছত্রে ছত্রে দেখিতে পাইবেন। দেবীসিংহের নাম শুনিলে, আজিও উত্তরবঙ্গ প্রদেশের অধিবাসিগণ শিহরিয়া উঠে। আজিও অনেক কোমলহৃদয়া মহিলা মুছিত হইয়া পড়েন! শিশুসন্তানগণ ভীত হইয়া জননীর ক্রোড়ে আশ্রয় লয়! সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এরূপ পাশব অত্যাচারের দৃষ্টান্ত অধিক নাই বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। মানুষ হইয়া মানুষের প্রতি এরূপ নির্দয় ব্যবহার কখনও সম্ভবপর কি না, তাহা আমরা স্থির করিয়া উঠিতে পারি না। সে চিত্র অঙ্কিত করিতে কল্পনা স্বয়ংই ভীত ও চকিত হইয়া উঠে। মানুষ কখনও সে চিত্র দেখাইতে পারে না; দেখাইতে হইলে, অমানুষী ক্ষমতার প্রয়ােজন। কঠোরতায় হৃদয় না বাধিলে, তাহার পূর্ণ চিত্র অঙ্কিত করা দুঃসাধ্য। মহামতি বার্ক ইংলণ্ডের মহাসমিতির নিকট সেই অত্যাচারকাহিনী বর্ণনা করিতে করিতে এরূপ অস্থির হইয়া উঠিয়াছিলেন যে, আর অধিক দূর অগ্রসর হইতে পারেন নাই। তথাপি তাহার সেই অবিনাশিনী বর্ণনা হইতে, আজ আমরা দেবীসিংহের পৈশাচিক চরিত্রের যে চিত্র দেখিতে পাই, তাহাতেই স্তম্ভিত হইতে হয়। তাই বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন,—“পৃথিবীর ওপারে ওয়েস্টমিনিস্টার হলে দাড়াইয়া,এদ্মন্দ বৰ্ক দেবীসিংহকে অমর করিয়া গিয়াছেন। পর্বোতােদগীণ অগ্নিশিখাবৎ জ্বালাময় বাক্যস্রোতে বৰ্ক দেবীসিংহের দুর্বিষহ অত্যাচার অনন্তকালসমীপে পাঠাইয়াছেন। তাহার নিজ মুখে সে দৈববাণীতুল্য বাক্যপরম্পরা শুনিয়া, শশাকে অনেক স্ত্রীলােক মূছিত হইয়া পড়িয়াছিল—আজিও শতবৎসর পরে, সেই বক্তৃতা পড়িতে গেলে, শরীর লােমাঞ্চিত ও হৃদয় উন্মত্ত হয়।”

२२
{{gap}}নৃশংস দেবীসিংহের অত্যাচারে সমগ্র উত্তরবঙ্গ হাহাকারধ্বনিতে পূর্ণ হইয়া উঠে। রঙ্গপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি প্রদেশ মহাশ্মশানে পরিণত হয়। কোম্পানীর রাজত্বারম্ভে বাঙ্গলাদেশে যে মূতিমতী অরাজকতা দেখা যায়, দেবীসিংহের অত্যাচার তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে। অর্থলােলুপ কোম্পানীর কর্মচারিগণের বিশ্বগ্রাসিনী লালসার নিবৃত্তির জন্য এবং নিজের রাক্ষসী বৃত্তির পরিতুষ্টির জন্য, দেবীসিংহ মনুষ্যনামে কলঙ্ক প্রদান করিয়াছে। ওয়ারেন হেস্টিংসের পােষকতায় তাহার অত্যাচার-স্রোত প্রতিনিয়ত শতমুখেই প্রবাহিত হইত। কাহারও সাধ্য ছিল না যে, সে স্রোতের গতি রােধ করে। হেস্টিংসের যতগুলি প্রিয়পাত্র ছিল, তাহাদের মধ্যে কেহ এমন পিশাচ