পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৫৮: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|৩৫২|মুর্শিদাবাদ-কাহিনী|৩৫২}}
{{rh|৩৫২|মুর্শিদাবাদ-কাহিনী|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
ব্রাহ্মণদিগকে তাহাদের স্বজাতিগণ সমাজে গ্রহণ করিতেন না। কাজেই তাহাদিগকে জাতিচ্যুত হইয়৷ দীনবেশে সময় কাটাইতে হইত। এইরূপে অপমানের ভয়ে, অনেক ব্রাহ্মণ দেবীসিংহের কঠোর প্রস্তাবে স্বীকৃত হইতেন; যাহারা স্বীকৃত না হইতেন, তাহারা ঐরূপ শাস্তি ভােগ করিয়া, জাতি হারাইয়৷ দেশত্যাগ করিতে বাধ্য হইতেন।
७6२ মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

ব্রাহ্মণদিগকে তাহাদের স্বজাতিগণ সমাজে গ্রহণ করিতেন না । কাজেই তাহাদিগকে জাতিচু্যত হইয়া দীনবেশে সময় কাটাইতে হইত। এইরূপে অপমানের ভয়ে, অনেক ব্রাহ্মণ দেবীসিংহের কঠোর প্রস্তাবে স্বীকৃত হইতেন ; র্যাহারা স্বীকৃত না হইতেন, র্তাহারা ঐরূপ শান্তি ভোগ করিয়া, জাতি হারাইয়া দেশত্যাগ করিতে বাধ্য হইতেন। এইরূপ দিন দিন শত শত অত্যাচারে দিনাজপুর ও রঙ্গপুর প্রদেশ শয়তানের বাসভূমি হইয়া উঠিল । জমিদার, প্রজ, ধনী, কৃষক, পুরুষ, স্ত্রী সকলেরই প্রতি সমানভাবে অত্যাচারের স্রোত প্রবাহিত হইয়াছিল । শিশুসন্তান ও কুমারীবালিকা পর্যন্ত নিস্তার পায় নাই। ভারতবর্ষে হিন্দুকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া, এরূপ পিশাচপ্রকৃতির পরিচয় বোধ হয়, আর কেহ প্রদর্শন করে নাই । কাহিনী বা উপন্যাসে এরূপ ভয়ানক কাও কেহ কখন শুনে নাই বলিয়৷ অনুমান হয়। হায়, দেবীসিংহ । যেরূপ অত্যাচারে তুমি সমগ্র উত্তরবঙ্গ প্রপীড়িত করিয়াছ, শত শত জমিদার ও প্রজার সর্বনাশ করিয়াছ, পিতাপুত্রের স্বামিন্ত্রীর সম্বন্ধ ঘুচাইয়াছ, কুমারীর কৌমার্য, পত্নীর পবিত্রতা বিসর্জন করাইয়াছ, ব্রাহ্মণের জাতিনাশ ও মানীর সম্মান নষ্ট কয়িয়াছ, না জানি তোমার জন্য কোন নরক প্রস্তুত হইয়াছে । যত প্রকার নরকের বর্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়, আমাদের বোধ হয়, সকল প্রকার নরকের ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ লইয়া, তোমার জন্য নূতন নরকের সৃষ্টি হইয়া থাকিবে । অনন্তকোটি মহারেীরবে অনন্তকাল থাকিলেও তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় না । জানি না, কতদিনে ভারতবর্ষ হইতে তোমার নাম বিলুপ্ত হইয়া সেই নবনিমিত মহানরক উজ্জ্বল করিয়া রাখিবে । এই সমস্ত ভীষণ অত্যাচারের অভিনয় করিয়াও যখন প্রজাদের নিকট হইতে আপনার আশানুযায়ী, আকাঙ্ক্ষানুযায়ী অর্থপ্রাপ্তির কিছুমাত্র সম্ভাবনা হইল না, তখন দেবীসিংহ রাজস্বসংগ্রহের সুবিধা হইবে বিবেচনা করিয়া, নিজ দেওয়ান বা রাজস্বসংগ্রাহকের পদ পরিবর্তন করিতে লাগিলেন । ১১৮৮ সালে কৃষ্ণপ্রসাদ নামে একব্যক্তি দেওয়ান নিযুক্ত হইলেন । উক্ত বৎসরের ভাদ্রমাসে র্তাহাকে বিতাড়িত করিয়া হররামকে নিযুক্ত করা হয় । ১১৮৯ সালের আষাঢ় মাসে হররাম কার্ষে ইস্তফা দেওয়ায়, সূর্যনারায়ণ তাহার পদ অধিকার করেন। অগ্রহায়ণ মাসে দেবীসিংহের ভ্রাতা বাহাদুরসিংহ মুর্শিদাবাদ হইতে গমন করিয়া সমস্ত রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধানের ভারগ্রহণ করেন। সূর্যনারায়ণ দেওয়ানরূপে কার্য করিতে থাকেন। এই সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন লোকের হস্তে পড়িয়া প্রজাগণ যৎপরোনাস্তি কষ্টভোগ করিতে লাগিল। যিনি যখনই দেওয়ান নিযুক্ত হন, তিনি অমনি নিজ ক্ষমতার পরিচয় দিবার জন্য নূতন নূতন কর বসাইতে আরম্ভ করেন। কোন কোন সময়ে, ভূমির প্রকৃত রাজস্ব ব্যতীত অতিরিক্ত কর ও বাট প্রভৃতির জন্য প্রজাদিগকে প্রতি টাকায় অতিরিক্ত আট আনা পর্যন্ত দিতে বাধ্য করা হইয়াছিল।"
{{gap}}এইরূপ দিন দিন শত শত অত্যাচারে দিনাজপুর ও রঙ্গপুর প্রদেশ শয়তানের বাসভূমি হইয়া উঠিল। জমিদার, প্রজা, ধনী, কৃষক, পুরুষ, স্ত্রী সকলেরই প্রতি সমানভাবে অত্যাচারের স্রোত প্রবাহিত হইয়াছিল। শিশুসন্তান ও কুমারীবালিকা পর্যন্ত নিস্তার পায় নাই। ভারতবর্ষে হিন্দুকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া, এরূপ পিশাচপ্রকৃতির পরিচয় বােধ হয়, আর কেহ প্রদর্শন করে নাই। কাহিনী বা উপন্যাসে এরূপ ভয়ানক কাণ্ড কেহ কখন শুনে নাই বলিয়া অনুমান হয়। হায়, দেবীসিংহ। যেরূপ অত্যাচারে তুমি সমগ্র উত্তরবঙ্গ প্রপীড়িত করিয়াছ, শত শত জমিদার ও প্রজার সর্বনাশ করিয়াছ, পিতাপুত্রের স্বামিস্ত্রীর সম্বন্ধ ঘুচাইয়াছ, কুমারীর কৌমার্য, পত্নীর পবিত্রতা বিসর্জন করাইয়াছ, ব্রাহ্মণের জাতিনাশ ও মানীর সম্মান নষ্ট করিয়াছ, না জানি তোমার জন্য কোন্ নরক প্রস্তুত হইয়াছে। যত প্রকার নরকের বর্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়, আমাদের বােধ হয়, সকল প্রকার নরকের ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ লইয়া, তােমার জন্য নূতন নরকের সৃষ্টি হইয়া থাকিবে। অনন্তকোটি মহারৌরবে অনন্তকাল থাকিলেও তােমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় না। জানি না, কতদিনে ভারতবর্ষ হইতে তােমার নাম বিলুপ্ত হইয়া সেই নবনিমিত মহানরক উজ্জ্বল করিয়া রাখিবে।
a Glazier's Report on Rungpore, p. 21.

{{gap}}এই সমস্ত ভীষণ অত্যাচারের অভিনয় করিয়াও যখন প্রজাদের নিকট হইতে আপনার আশানুযায়ী, আকাঙ্ক্ষানুযায়ী অর্থপ্রাপ্তির কিছুমাত্র সম্ভাবনা হইল না, তখন দেবীসিংহ রাজস্বসংগ্রহের সুবিধা হইবে বিবেচনা করিয়া, নিজ দেওয়ান বা রাজস্ব সংগ্রাহকের পদ পরিবর্তন করিতে লাগিলেন। ১৯৮৮ সালে কৃষ্ণপ্রসাদ নামে একব্যক্তি দেওয়ান নিযুক্ত হইলেন। উক্ত বৎসরের ভাদ্রমাসে তাহাকে বিতাড়িত করিয়া হররামকে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৮৯ সালের আষাঢ় মাসে হররাম কার্যে ইস্তফা দেওয়ায়, সূর্যনারায়ণ তাহার পদ অধিকার করেন। অগ্রহায়ণ মাসে দেবীসিংহের ভ্রাতা বাহাদুরসিংহ মুর্শিদাবাদ হইতে গমন করিয়া সমস্ত রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধানের ভারগ্রহণ করেন। সূর্যনারায়ণ দেওয়ানরূপে কার্য করিতে থাকেন। এই সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন লােকের হস্তে পড়িয়া প্রজাগণ যৎপরােনাস্তি কষ্টভােগ করিতে লাগিল। যিনি যখনই দেওয়ান নিযুক্ত হন, তিনি অমনি নিজ ক্ষমতার পরিচয় দিবার জন্য নূতন নূতন কর বসাইতে আরম্ভ করেন। কোন কোন সময়ে, ভূমির প্রকৃত রাজস্ব ব্যতীত অতিরিক্ত কর ও বাটা প্রভৃতির জন্য প্রজাদিগকে প্রতি টাকায় অতিরিক্ত আট আনা পর্যন্ত দিতে বাধ্য করা হইয়াছিল।<ref>Glazier's Report on Rungpore, p. 21.</ref>